11/05/2025
প্রায় প্রতিটা ডাক্তার - মেডিকেল স্টুডেন্ট ই ফ্রাস্টেশনে ভোগে।
প্রতিবছর একরাশ মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে এক ঝাঁক ছেলেমেয়েকে মেডিকেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অফুরন্ত টাকার স্বপ্ন,সম্মান শ্রদ্ধার স্বপ্ন, সেইফ - সিকিউরড লাইফের স্বপ্ন,
ভাল জায়গায় বিয়ের স্বপ্ন, আরো কত কি!
মেডিকেলে ঢুকতে না ঢুকতে অল্প কিছুদিনের ভেতরে সেই স্বপ্ন ধূসর
হতে থাকে ক্রমশ।
যখন সদ্য ডাক্তারীতে ঢোকা ছেলেটা বোঝে, এখানে সবাই জাস্ট ব্যাচমেট, বন্ধু না।
ব্যাচমেটরা প্রায় কেউই সহযোদ্ধা না, বরং প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতিদ্বন্দ্বী , অসম্ভব আত্মকেন্দ্রিক,স্বার্থপর, তখন প্রথম দফায় সেই ছেলেটার স্বপ্নভঙ্গ হয়।
এরপর, হুট করে বাংলা মিডিয়ামে পড়া ৯৫ ভাগ ছেলে
যখন হুট করে পুরোপুরি ইংলিশ কারিকুলাম এ ঢুকে যায়,হার্পার - গ্যানং এর মত কঠিন ইংলিশে লেখা বইগুলা পড়তে হয় তখন তার স্বপ্নভঙ্গ হয়। ডক্টরস ডায়েরী। এরপর আসে বাংলাদেশ এর হাস্যকর মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা! সার্জারি পড়ে
আসা একজন এনাটমি নেন, গাইনি পড়তে থাকা কেউ বায়োকেমিস্ট্রি!
যারা নিজেরাই বিশেষ কিছু জানেন না, পড়ানোর ট্রেনিং ই নেই বলা যায়, তাদের হাতে
ডাক্তারী পড়ানোর গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেই সবার দায়িত্ব শেষ!
এই ভয়াবহ শিক্ষক সংকটের ভেতরে একজন মেডিকেল স্টুডেন্টকে ভেলায় চড়ে আটলান্টিক পাড়ি দিতে হয়। আইটেম - কার্ড - টার্ম - প্রফ! ক্লাসে যে হাতিঘোড়াই পড়াক, ভাইভার বোর্ডে উনারা ছাত্রদের কাছ থেকে একশভাগ ই আশা করেন, না হলেই শুরু হয়ে যায় অপমান - অপদস্থ, নিজেদের সাথে তুলনা, সবশেষে হাসিমুখে ফেইল।
আর, পাস না, মেডিকেলে ফেইলটাই কিন্ত স্বাভাবিক!
সবার মত এইখানে ৩৩ পাস মার্ক না, ৬০ এ পাস!
প্রতিটা সাবজেক্ট এ কতগুলা পার্ট, জানেন?
ভাইভা রিটেন অস্পি প্র্যাক্টিকাল MCQ!
এক সাবকেক্টের প্রতিটা পার্ট এ আলাদা আলাদাভাবে ৬০ না পেলে পুরা সাবজেক্ট ই ফেইল।
এক সাবজেক্ট ফেইল হলে প্রফ ই ফেইল, আবার ছয়মাস
অপেক্ষা! কোয়ালিটি বজায় রাখতে অধিকাংশ মেডিকেলেই একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক ছাত্র ঠান্ডামাথায় ফেইল করানো হয়।
এছাড়া শিক্ষকদের ব্যক্তিগত
রোষ, এন্টি জ্যাক, পলিটিকাল কারন, অসুস্থতা,পার্সেন্টেজ এসব কারনে ফেইল কম নয়।
একবার ফেইল হলে প্রচুর টাকার ধাক্কা। বেসরকারি তে তো আছেই, সরকারিতেই অংকটা একেবারে কম না।
প্র্যাক্টিকালে মেডিকেলের মামা - খালারা কাতলা মাছের মত হা করে থাকে টাকার জন্য, আমাদের বায়োকেমিস্ট্রি এক ম্যাডাম ই ব্ল্যাক মেইল করে
ছাত্রদের থেকে ফ্রিজ - ওভেন এসব কিনে নিয়েছিল,
কাকে কি বলব?
এরপর পাস করে একজন নরমাল mbbs এর যে আয় তাতে
পেট ই চলে না। একজন ইন্টার্র্নি ডক্টরের বেতন ১৫০০০ এর
অল্প কম, ভাবা যায়? আগে ছিল প্রায় 10 হাজার!
এই বেতনে ঢাকায় একজন রিকশাচালক ই চলতে পারবেন না।
৫০০ টাকা ভিজিটের গল্প শুনেছেন না?
ওই পাচশ টাকা ভিজিট mbbs এর জন্য না ভাই।
তার জন্য এফসিপিএস এমডি করে প্রতিষ্ঠিত হতে ১৫-২০ বছর লেগে
যায়, এরপরেও সেসবের নিশ্চয়তা নাই। অজস্র ডাক্তার বছরের পর বছর পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে না পেরে ছেড়ে
দেন।
বাংলাদেশের ডিগ্রিগুলা কোথাও রেকগ্নাইজড না, কোন স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা নাই। বিদেশের অনেক ভাল ভাল মেডিকেল ডিগ্রি এই দেশে অচল।
এরপর প্রতিদিন নানা কারনে কোথাও না কোথাও কোন না
কোন ডাক্তার লাঞ্ছিত হচ্ছেন, খুন হয়ে যাচ্ছেন অনেকেই।
এইভাবে একজন ডাক্তারী পড়তে আসা মানুষের
কতবার স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে, আত্মার মৃত্যু হচ্ছে, বুঝতে
পারছেন? এই ভয়াবহ ফ্রাস্টেশন থেকে যদি কেউ সুইসাইড
করে, তাকে কতটুকুই বা দোষ দেওয়া যায়? পুরা
সিস্টেমটাই কি আমাদের ভয়াবহ ফ্রাস্টেশনে ফেলে
দিচ্ছে না?
[ বারবার ফেইল করায় সুইসাইড করার ঘটনা প্রচুর আছে মেডিকেলে। সেইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা ]