08/07/2025
🩺 সিনকোপ (Syncope): হটাৎ অজ্ঞান হওয়া
সিনকোপ হলো একটি অস্থায়ী অজ্ঞান হওয়া (Transient Loss of Consciousness), যা ঘটে মস্তিষ্কে সাময়িকভাবে রক্ত সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে। এর বৈশিষ্ট্য:
▪️দ্রুত শুরু
▪️স্বল্পস্থায়ী
▪️স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়া।
সিনকোপ নিজে কোনও রোগ নয়, বরং একটি উপসর্গ। এর কারণ নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
🔹রোগের প্রক্রিয়া (প্যাথোফিজিওলজি):
➤সিস্টেমিক রক্তচাপ হঠাৎ কমে গেলে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ কমে যায়।
➤এতে ব্রেইনস্টেমের রেটিকুলার অ্যাক্টিভেটিং সিস্টেম ব্যাহত হয়, যা সচেতনতা নিয়ন্ত্রণ করে।
➤সাধারণত, ২০ সেকেন্ডের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসে, এবং সিজারের মতো বিভ্রান্তি বা জড়তা থাকে না।
🔹 সিনকোপের প্রকারভেদ :
সিনকোপকে মূলত তিনট ভাগে ভাগ করা যায়:
১.রিফ্লেক্স (স্নায়ুবাহিত) সিনকোপ:
➤ভ্যাসোভ্যাগাল (সাধারণ অজ্ঞান): ভয়, ব্যথা বা গরমে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে হয়।
➤সিচুয়েশনাল সিনকোপ: প্রস্রাব, পায়খানা, কাশির সময় হতে পারে।
➤ক্যারোটিড সাইনাস অতিসংবেদনশীলতা: গলা ঘোরানো, টাইট কলার পরা বা শেভ করার সময় হতে পারে।
২.অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন:
➤দাঁড়ালে সিস্টোলিক BP ≥২০ mmHg বা ডায়াস্টোলিক ≥১০ mmHg কমে গেলে এটি বলা হয়।
➤কারণ: পানিশূন্যতা, স্নায়ুরোগ (যেমন: পারকিনসন), ওষুধ (যেমন: ডাইইউরেটিক, হাইপারটেনসিভ ওষুধ)।
৩.কার্ডিয়াক সিনকোপ:
➤হৃদস্পন্দনের গোলমাল (ব্র্যাডিকার্ডিয়া, ট্যাকিকার্ডিয়া) অথবা হৃদযন্ত্রের গঠনগত সমস্যার কারণে হয় (যেমন: অ্যাওর্টিক স্টেনোসিস)।
➤সাধারণত অত্যন্ত হঠাৎ হয়, পূর্বাভাস ছাড়া।
➤এই ধরনটি সবচেয়ে বেশি জীবনহানিকর।
⚠️ সতর্কতা সংকেত:
নিম্নলিখিত উপসর্গ থাকলে অবিলম্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন:
➤ব্যায়াম বা শুয়ে থাকার সময় অজ্ঞান হওয়া।
➤অজ্ঞান হওয়ার আগে বুক ধড়ফড় বা বুক ব্যথা
➤পারিবারিকভাবে আকস্মিক মৃত্যুর ইতিহাস
➤হার্টের রোগের ইতিহাস
➤ECG তে অস্বাভাবিকতা
🔹প্রয়োজনীয় পরীক্ষা:
➤ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা – সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
➤ECG (ইসিজি): হৃদস্পন্দনের ছন্দে সমস্যা শনাক্তে
➤ইকোকার্ডিওগ্রাম: হৃদপিণ্ডের গঠনগত বা ভাল্বের ত্রুটি খুঁজে বের করতে
➤২৪ ঘণ্টার হল্টার মনিটর: মাঝে মাঝে হওয়া অ্যারিথমিয়া শনাক্তে
➤টিল্ট টেবিল টেস্ট: স্নায়ুবাহিত সিনকোপ শনাক্তে
➤অর্থোস্ট্যাটিক BP মাপা: শুয়ে ও দাঁড়িয়ে রক্তচাপের পরিবর্তন মূল্যায়নে
🩺 চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা:
কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা নির্ধারিত হবে:
✅ ভ্যাসোভ্যাগাল সিনকোপ:
➤আশ্বস্ত করা
➤পানি ও লবণের পরিমাণ বাড়ানো
➤শরীরের পেশি শক্ত করে ধরা (counter-pressure maneuvers)
➤গরম বা ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলা
✅ অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন:
➤পানিশূন্যতা সংশোধন
➤ওষুধের মাত্রা ঠিক করা
➤যে রোগের কারণে হচ্ছে তার চিকিৎসা করা।
✅ কার্ডিয়াক সিনকোপ:
➤কার্ডিওলজিস্টের মাধ্যমে যথাযথ মূল্যায়ন
➤প্রয়োজন হলে পেসমেকার, ওষুধ বা ক্যাথেটার অ্যাবলেশন।
তাই সিনকোপের কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য একজন চিকিৎসক কে দেখান।
ডা. মোঃ #জামিরুল ইসলাম
সহকারী রেজিস্ট্রার
নিউরোমেডিসিন বিভাগ
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
#চেম্বার : সেবা ক্লিনিক, শান্তিমোড়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
#সাক্ষাত: রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার।
#সময়: বিকেল ৪টা হতে রাত ৯টা পর্যন্ত।
#সিরিয়াল: ০১৩৩১৭৪৭৪২২