
07/05/2025
সরকারি চাকুরি করবো বা করতে হবে এটা কোনো পুষ্টিবিদ বা পথ্যবিদের motto হওয়া উচিত নয়। পুষ্টিবিদ মানেই সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যার অবস্থান। এখানে সরকারি বা বেসরকারি খাত ছাড়া কোনো সুযোগ নেই এমনটা না। সুযোগের বিষয় নয়, আমরা সর্বোত্র বিদ্যমান এভাবেই ভাবতে হবে সবাইকে।
একটু বুঝিয়ে বলি,
- মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রথমেই আছে খাদ্য। আমাদের শরীরের চালিকা শক্তির জন্য প্রয়োজন পুষ্টি। অতএব, নিউট্রিশন ছাড়া মানুষ বাঁচে কীভাবে!!! নিউট্রিশন থাকবে আর নিউট্রিশনিস্ট থাকবে না!!
- আমরা যা কিছু খাবো বা খাই তা আমাদেরকে চাষাবাদ করে উৎপাদন করতে হয়। আর সেই খাবার কীভাবে এবং কোন কোন খাবার মিশিয়ে সম্পূরক খাবার তৈরি করে অপুষ্টি দূর করতে হয়, সেখানেও নিউট্রিশনিস্টের প্রয়োজন নয় কী!!! যিনি চাষাবাদের সাথে যুক্ত তার পুষ্টি নিশ্চিত করতেও পুষ্টিবিদদের প্রয়োজন।
- আমাদের দেহের যে ইমিউনিটি সিস্টেম সেটা কিন্তু ওষুধের চেয়ে পুষ্টির
মাধ্যমেই রোগ প্রতিরোধ নিশ্চিত হয় বেশি। তার মানে এখানেও
আমাদের পুষ্টিবিদেরাই প্রাধান্য।
- একটা খাবারকে কীভাবে প্রসেস করলে শরীরের জন্য গ্রহণযোগ্য করা
যায় বা কতদিন প্যাকেটজাত খাবার ভালো থাকবে এখানেও পুষ্টিবিদের প্রয়োজন।
- যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে কমদামী খাবারের
মাধ্যমে কীভাবে আস্থা রাখা যায় সেখানেও পুষ্টিবিদের ভূমিকাই
সবচেয়ে বেশি।
- একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বিভিন্ন থেরাপির সঙ্গে পুষ্টির প্রয়োজনিয়তা অপরিহার্য। তার মানে এখানেও পুষ্টিবিদের প্রয়োজন।
- সুস্থ মা জন্ম দিতে পারে সুস্থ শিশুর। এক্ষেত্রেও পুষ্টিবিদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
- অনেক শ্রমিক যেখানে একসাথে কাজ করে তাদের কম আয়ে দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি ও কর্মক্ষম করতেও পুষ্টিবিদের প্রয়োজন অনেক বেশি।
- স্বাস্থ্যকর স্কুল টিফিন তৈরিতে পুষ্টিবিদ ছাড়া চিন্তাও করা যায় না।
আমি যখন প্রথম ২০০৪ সালে ডায়েট কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করি, তখন মানুষ বলেছিলো, “বাংলাদেশ কী আমেরিকা হয়ে গেলো নাকি, যে পয়সা খরচ করে পুষ্টিবিদের কাছে আসবে?” আমি তখন সবসময় বলতাম “আসবে”। কারণ আমি জানি “আসতেই হবে”। এখন বাংলাদেশের অবস্থা দেখলে আমরা কী দেখছি! হাসপাতাল, ক্লিনিক, এনজিও, রিসার্চ সেক্টর, হেলথ কমপ্লেক্স, কনসালটেন্সি, কাউন্সেলিংয়ে, বিউটি পার্লারে, লেজার সেন্টারগুলোতে, জিমে কোথায় নেই পুষ্টিবিদ!!??
এ অবস্থাগুলোতে আসতে তো কাউকে সরকারি চাকুরি করে আসতে হয়নি। একটা বিষয় কী, আকাশে যদি সূর্য বা চাঁদ ওঠে সবাই দেখতে পায়। মেঘে ঢেকে গেলেও আবার ঠিকই দৃশ্যমান হয়। সবাই পুষ্টিবিদের প্রয়োজনিয়তা সম্পর্কে জানে এবং বোঝে। আরো জানবে, আরো বুঝবে। সারা বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে, কোনায় কোনায় পুষ্টিবিদেরা ছড়িয়ে পরবে, ইং শা আল্লহ।
যারা জুনিয়র আছো, নিজেদেরকে তৈরি করো, নিজেদের জ্ঞান প্রসার করো। আমাদের ছাড়া কোনো সেক্টরের কাজই সম্পূর্ণ নয়। মনে রাখবে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল। স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে পুষ্টি ও পুষ্টিবিদের কথা ভাবতেই হবে। সুতরাং শুধুমাত্র সরকারি চাকুরির পেছনে ছুটো না। নিজেদেরকে একেকজন এমনভাবে গড়ে তোলো যেন আমরা প্রত্যেকেই একেকজন “বাংলাদেশ”।।।
©