
02/06/2025
“ধূমপানের ভয়াল ফল, নিঃশ্বাসই যখন হয়ে ওঠে মৃত্যুবার্তা ”
🤔ভাবুন......
আপনি আর আপনার সন্তান সকালে হাঁটতে বের হচ্ছেন। শীতের হালকা কুয়াশা, পাখির ডাক—সবই চমৎকার। কিন্তু আপনি হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থেমে যান। শ্বাস নিতে পারছেন না... বুক চেপে আসে... মাথা ঘুরছে...
আপনার সন্তান চিন্তিত হয়ে বলে, “আব্বু, আপনি ঠিক আছেন তো?” আপনি মাথা নাড়েন, কিন্তু কণ্ঠে কোনো শব্দ নেই। এমন একটি ক্ষণেই আপনার দীর্ঘ দিনের ধূমপানের হিসেব চুকিয়ে দেয় ফুসফুস নামের নিষ্ঠাবান অঙ্গটি।
সিওপিডি (COPD) কী?
সিওপিডি (COPD) হলো এমন এক প্রাণঘাতী রোগ যা ধীরে ধীরে ফুসফুসকে নষ্ট করে ফেলে।
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ক্রমাগত শ্বাসকষ্টে ভোগে, এবং শেষমেশ নরমাল জীবনযাপনও অসম্ভব হয়ে ওঠে।
👉 এটি আসলে দুই ধরনের প্রধান রোগের সমন্বয়:
1. ক্রনিক ব্রংকাইটিস (Chronic Bronchitis) – যেখানে শ্বাসনালীতে অতিরিক্ত কফ জমে এবং কাশি লেগেই থাকে।
2. এমফিসেমা (Emphysema) – যেখানে ফুসফুসের অভ্যন্তরীণ এয়ারস্যাকস (বায়ুথলি) ধ্বংস হয়ে যায়।
🚬 প্রধান কারণ ধূমপান – নিঃশ্বাস কেড়ে নেওয়া যার অভ্যাস ☹️
>>>> “একটা বিড়ি মাত্র ৩ টাকা…..
কিন্তু এই ৩ টাকায় আপনি ধীরে ধীরে গিলে ফেলছেন নিজের ফুসফুস।”
📌 কিছু ভয়ঙ্কর তথ্য-
>> ধূমপান করা ব্যক্তিদের মধ্যে ৮০%-এর বেশি মানুষ এক পর্যায়ে সিওপিডিতে আক্রান্ত হন।
>> নিয়মিত ধোঁয়ায় বসবাসকারী মানুষ (যেমন রান্নার ধোঁয়া, ফ্যাক্টরির গ্যাস) অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
>> যারা ধূমপান না করেও "প্যাসিভ স্মোকার" হিসেবে অন্যের ধোঁয়া গ্রহণ করেন, তারাও এই রোগে আক্রান্ত হন।
❗ আর কী কী কারণে সিওপিডি হতে পারে?
🔹 রান্নার সময় পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে।
🔹 ধুলাবালি, কেমিকেল বা গ্যাসযুক্ত পরিবেশে নিয়মিত থাকা।
🔹 শিশু বয়সে নিয়মিত শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া হওয়া।
🔹 বংশগত কারণে (বিশেষ ধরনের প্রোটিনের অভাব)।
🔹 কোনো কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ হলে এবং সময়মত চিকিৎসা না হলে।
😰 সিওপিডি আক্রান্ত মানুষ কেমন জীবনযাপন করেন?
শ্বাস নিতেই যেন লড়াই করতে হয় প্রতিটি মুহূর্তে, দিনে ১০ বার ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। সিঁড়ি উঠা দূরের কথা, বিছানা থেকে উঠতেই ক্লান্ত হয়ে যায়। বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, রাতে ঘুম ভেঙে যায় – কারণ শ্বাস আটকে আসে, পায়ে পানি জমে যায়, মুখ ফুলে যায়, কথা বলার মাঝেও কাশি ও হাঁপানি লেগে থাকে, একসময় অক্সিজেন সিলিন্ডার হয় জীবনের একমাত্র ভরসা
এই মানুষগুলোর হৃদয় চায় একটু মুক্ত বাতাস। কিন্তু ফুসফুস আর সেটা দিতে পারে না...🥺🥹
🔍 লক্ষণগুলো কী কী?
✔️ প্রতিদিন কাশি এবং কফ জমে থাকা।
✔️ সামান্য হাঁটাহাঁটিতেই শ্বাসকষ্ট।
✔️ বুকে চাপ লাগা ও শ্বাসের সময় হাঁপ ধরার অনুভব।
✔️ নাক-কান-গলা বারবার বন্ধ থাকা।
✔️ ঠান্ডা লাগলে দীর্ঘদিন সেরে না উঠা।
✔️ নি:শ্বাসে সাঁই সাঁই শব্দ।
✔️ ক্লান্তি ও ঘন ঘন ঘুম।
✔️ একসময় ওজন কমে যাওয়া, পেট ফোলা অনুভব হওয়া।
🚨 সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ:
> ধূমপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন এখনই।
> রান্নার চুলা যেন ভেন্টিলেটেড থাকে এটি গ্রামের মায়েদের জন্য বড় পরামর্শ।
> কাজের সময় ধুলো, গ্যাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে মাস্ক পরুন।
> ফুসফুসের সমস্যা থাকলে নিয়মিত ডাক্তার দেখান।
> ঠান্ডা, কাশি, কফ ইত্যাদি অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন।
> ইনহেলার বা ওষুধ ব্যবহারে নিয়ম মেনে চলুন।
> ব্যায়াম, হাঁটাচলা ও শ্বাস প্রশ্বাস ব্যায়াম (ব্রিদিং এক্সারসাইজ) করুন।
> ফুসফুসের কার্যক্ষমতা জানতে নিয়মিত স্পিরোমেট্রি পরীক্ষা করুন।
"সিওপিডি প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু একবার হলে আর পুরোপুরি সারানো যায় না। তাই আজই সচেতন হোন, পরিবারকে নিরাপদ রাখুন।"
সচেতনতায়-
ডা: মাসুম পারভেজ
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
বি.পি.টি. ( ইন্ডিয়া)