
18/04/2025
ইউরিক এসিড কেন হয় এবং কি কি উপস্বর্গ দেখা দেয়
ইউরিক অ্যাসিড শরীরে একটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা পুরিন (purine) নামক পদার্থ ভাঙার ফলে তৈরি হয়। পুরিন শরীরে স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয় এবং কিছু খাবারেও থাকে। যখন ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা শরীরে বেশি হয়ে যায় এবং কিডনি তা ঠিকমতো নিষ্কাশন করতে না পারে, তখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড জমতে শুরু করে – একে বলে হাইপারইউরিকেমিয়া (Hyperuricemia)।
ইউরিক অ্যাসিড বেশি হওয়ার কারণ:
খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত পরিমাণে পুরিনযুক্ত খাবার খাওয়া, যেমন লাল মাংস, অর্গান মিট (লিভার, কিডনি), সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, মটরশুঁটি ইত্যাদি।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, বিশেষ করে বিয়ার।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।
কিডনির সমস্যা – কিডনি যদি ইউরিক অ্যাসিড ঠিকমতো ফিল্টার করতে না পারে।
জেনেটিক কারণ – পারিবারিক ইতিহাস থাকলে সম্ভাবনা বাড়ে।
ওষুধ – কিছু ডায়ুরেটিক্স, কেমোথেরাপির ওষুধ ইত্যাদি।
ইউরিক অ্যাসিডের উপসর্গ:
গেঁটে বাত (Gout) – এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এটি মূলত:
পায়ের আঙুল, গোড়ালি বা হাঁটুতে তীব্র ব্যথা ও ফোলা।
হঠাৎ করে ব্যথা শুরু হয়, বিশেষ করে রাতে।
আক্রান্ত জায়গা লাল, গরম ও স্পর্শকাতর হয়ে পড়ে।
জয়েন্টে স্টিফনেস বা শক্ত হয়ে যাওয়া।
রেনাল স্টোন (কিডনির পাথর) – ইউরিক অ্যাসিড জমে কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে।
ক্লান্তি, মেজাজ খিটখিটে হওয়া – কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়।
ত্বকের নিচে ছোট ছোট ইউরিক অ্যাসিডের গাঁট (tophi) – দীর্ঘমেয়াদি হাইপারইউরিকেমিয়ায় হয়।
চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাস বদল, পানি পান বাড়ানো এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
নিচে ইউরিক অ্যাসিড কমানোর জন্য একটি সাধারণ ডায়েট চার্ট দেওয়া হলো:
সকালের নাস্তা (৮টা - ৯টা)
১ গ্লাস গরম পানি + ১ টুকরো লেবু
১ বাটি ওটস (দুধ/পানি দিয়ে রান্না করা)
১টা কলা বা পেপে
মাঝখানে হালকা খাবার (১১টা):
১ কাপ গ্রিন টি
২টি বিস্কুট (সুগার-ফ্রি বা হোল গ্রেইন)
দুপুরের খাবার (১টা - ২টা):
১ কাপ ভাত/ ২টি রুটি (আটা)
১ বাটি সবজি (তরকারি, করলা, লাউ, পাটশাক ভালো)
১ বাটি ডাল (হালকা করে রান্না)
শসা, টমেটো, গাজর দিয়ে সালাদ
১ গ্লাস পানি
বিকেলের নাস্তা (৪টা - ৫টা):
১টি ফল (পেপে, আপেল, কলা, আমড়া)
১ কাপ গ্রিন টি বা লেবু পানি
রাতের খাবার (৮টা - ৯টা):
১-২টি রুটি / হালকা ভাত
১ বাটি সবজি
১ বাটি ডাল বা হালকা প্রোটিন (ডিমের সাদা অংশ)
ঘুমানোর আগে (যদি খিদে লাগে):
১ গ্লাস গরম পানি বা হালকা দুধ
এড়িয়ে চলুন:
লাল মাংস (গরু, খাসি)
অর্গান মিট (লিভার, কিডনি)
সামুদ্রিক মাছ (সার্ডিন, অ্যাঙ্কোভি)
বিয়ার ও অ্যালকোহল
মটরশুঁটি, সয়াবিন, মাশরুম
ফাস্ট ফুড ও প্রসেসড ফুড
বেশি করে খান:
পানি (প্রতিদিন অন্তত ২.৫ - ৩ লিটার)
লেবু পানি, গ্রিন টি
দুধ ও দই (লো-ফ্যাট)
শাকসবজি (যেগুলো পুরিন কম)
ধন্যবাদ
সবাইকে আয়ুর্বেদিকের সাথে থাকার জন্য