10/08/2025
মুখের দুর্গন্ধ (হ্যালিটোসিস) একটি সাধারণ কিন্তু বিব্রতকর সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ মুখগহ্বরের ভেতরে থাকে এবং সঠিক যত্নে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে যা করণীয়:
# # # ১. **মৌলিক মুখগহ্বরের পরিচ্ছন্নতা:**
* **দাঁত ব্রাশ:** দিনে অন্তত **দুইবার** (সকালে নাশতার পর + রাতে ঘুমানোর আগে) নরম ব্রাশ ও ফ্লোরাইড টুথপেস্ট দিয়ে কমপক্ষে ২ মিনিট ধরে ব্রাশ করুন। দাঁতের সব পৃষ্ঠ (বাইরে, ভেতরে, চিবানোর অংশ) পরিষ্কার করুন।
* **ডেন্টাল ফ্লস/ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ:** শুধু ব্রাশে দাঁতের ফাঁক পরিষ্কার হয় না। প্রতিদিন **অন্তত একবার** ফ্লস বা ইন্টারডেন্টাল ব্রাশ ব্যবহার করুন।
* **জিহ্বা পরিষ্কার:** জিহ্বা ব্যাকটেরিয়ার আড্ডাখানা! ব্রাশের পেছনের খাঁজকাটা অংশ বা আলাদা **জিহ্বা পরিষ্কারক** দিয়ে জিহ্বার পিছনের দিক থেকে সামনের দিকে আলতো করে স্ক্র্যাপ করুন।
# # # ২. **মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখা:**
* **পর্যাপ্ত পানি পান:** মুখ শুকনো হলে (জেরোস্টোমিয়া) ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। সারাদিন ধরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি পান করা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
* **চিনিমুক্ত চুইংগাম বা লজেন্স:** লালা নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা প্রাকৃতিকভাবে মুখ ধুয়ে দেয় এবং ব্যাকটেরিয়া কমায়।
# # # ৩. **খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন:**
* **গন্ধযুক্ত খাবার সীমিত করা:** পেঁয়াজ, রসুন, ঝাল মসলাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত কফি, অ্যালকোহল ইত্যাদি সাময়িক বা দীর্ঘস্থায়ী দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে।
* **ধূমপান ও তামাক পরিহার:** ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য মুখ শুষ্ক করে, মাড়ির রোগ বাড়ায় এবং নিজেই তীব্র দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। ছাড়াই একমাত্র সমাধান।
* **মিষ্টি ও কার্বোহাইড্রেট কমানো:** চিনি ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য। অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, সফট ড্রিংকস, স্ন্যাকস ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
# # # ৪. **মাউথওয়াশ (যদি ব্যবহার করেন):**
* **অ্যালকোহলমুক্ত মাউথওয়াশ বেছে নিন:** অ্যালকোহলযুক্ত মাউথওয়াশ মুখ শুষ্ক করতে পারে। ক্লোরহেক্সিডিন বা সেটাইলপাইরিডিনিয়াম ক্লোরাইড (CPC) যুক্ত অ্যান্টিসেপটিক মাউথওয়াশ কার্যকর, তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ব্যবহার করবেন না।
* **সতর্কতা:** মাউথওয়াশ মুখের দুর্গন্ধের **অস্থায়ী সমাধান** মাত্র। এটি মৌলিক ব্রাশিং, ফ্লসিং ও জিহ্বা পরিষ্কারের **বিকল্প নয়**।
# # # ৫. **নিয়মিত ডেন্টাল চেকআপ:**
* **ছয় মাসে একবার** দন্তচিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত ও মাড়ির পরীক্ষা এবং প্রফেশনাল ক্লিনিং করান। দাঁতে ক্যারিজ (গর্ত), মাড়ির রোগ (জিনজিভাইটিস, পেরিওডোনটাইটিস), জমে থাকা প্লাক বা টারটার, ফোঁড়া ইত্যাদি মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ।
# # # ৬. **যদি ঘরোয়া যত্নে উন্নতি না হয়:**
* **দন্তচিকিৎসক বা ডাক্তার দেখান:** যদি উপরের সব নিয়ম মেনেও দুর্গন্ধ না কমে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ হতে পারে:
* দাঁত বা মাড়ির গভীর সমস্যা
* টনসিলের পাথর (টনসিলোলিথ)
* সাইনুসাইটিস, নাকে পলিপ, নাক ডাকা
* গ্যাস্ট্রিক/অ্যাসিডিটি, লিভারের সমস্যা (কম সাধারণ)
* কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
# # বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন রোজা রাখাকালীন):
* সাহরি ও ইফতারে প্রচুর পানি পান করুন।
* জিহ্বা পরিষ্কার করুন, ফ্লস ব্যবহার করুন।
* চিনিমুক্ত চুইংগাম ব্যবহার করা যেতে পারে (যদি ধর্মীয়ভাবে অনুমোদিত হয়)।
* খুব গন্ধযুক্ত বা অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার এড়িয়ে চলুন।
**স্মরণীয়:** মুখের দুর্গন্ধ প্রায়ই নিজের টের পাওয়া যায় না, কিন্তু অন্যেরা লক্ষ্য করে। নিয়মিত ও সঠিক মুখের যত্নই মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধ ও নিরাময়ের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।