12/06/2025
বিপদ-আপদ বলে কয়ে আসে না! কোনো কারণে যদি আপনার বাচ্চা বিপদে পড়ে বা তাকে হঠাৎ করেই একা পথ চলতে হয়, তখন সে কি করবে? তাই খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই তাকে শিখিয়ে রাখুন কিছু জীবনদক্ষতা। শিশুকে এখন থেকেই ট্রেনিং দিন জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য।
এই দক্ষতাগুলো তার জীবনকে যেমন সহজ করবে, তেমনি আপনাকেও করবে নিশ্চিন্ত। এগুলো সাধারণত প্রথাগত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয় না। তাই শিশুর জীবনমুখী শিক্ষার শিক্ষক হয়ে উঠতে হবে বাবা মাকেই।
আত্মরক্ষার প্রথম পাঠ:
আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর আগে শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে হবে। শিশুকে জানাতে হবে, কোনো পরিস্থিতিতেই মনোবল হারানো চলবে না, নিজের প্রতি বিশ্বাস হারানো যাবে না। শারীরিকভাবেও সুস্থ থাকা এবং দৌড়ঝাঁপের অভ্যাস জরুরি। আত্মরক্ষার প্রাথমিক পাঠ হলো কোথায় আঘাত করতে হবে, সেটা জানা। শিশুর জন্য সহজ হলো আক্রমণকারীর হাঁটুতে আঘাত করে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া। এ ছাড়া আক্রমণকারীর ঘাড়, চোখ, কান ও নাকও সহজ লক্ষ্যবস্তু হতে পারে; যেখানে আঘাত করলে সহজেই কিছু সময়ের জন্য হামলাকারীকে বিভ্রান্ত করা যায় ও ব্যস্ত রাখা যায়।
মানচিত্র শেখানো এবং দিক চেনানো:
এটা বেশ ছোট বয়স থেকেই শেখানো যায়। শিশুর হাতে একটি গ্লোব দিয়ে দিন এবং ঘরের দেয়ালে টানিয়ে দিন নিজের দেশের বড় একটি মানচিত্র। শিশু নিজেই অনেক কিছু শিখে যাবে। ছুটির দিনে বা সময় পেলে তাকে নিয়ে বসে দিক চেনান, বাড়ির আশপাশের এলাকাগুলো চিনিয়ে রাখুন। এতে কোনো দিন পথ হারালে বা ভুল করেও যদি কখনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, তাহলে সে নিজেই বাড়ি চিনে ফিরে আসতে পারবে।
বাড়ির ঠিকানা ও টেলিফোন নম্বর শেখানো:
যখনই শিশু কথা বলতে শিখবে, তাকে বাড়ির ঠিকানা ও মা বাবার ফোন নম্বর শিখিয়ে ফেলুন। যেন কখনো বিপদে পড়লে সে মা বাবার নাম, ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর বলতে পারে।
বিপদের বন্ধু চেনান:
শিশুকে চেনান বিপদে কে বন্ধু হতে পারে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পোশাক চেনান। কখনো ভিড়ের মধ্যে আপনাকে খুঁজে না পেলে যেন সে পোশাক দেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে যেতে পারে এবং তাকে বিপদের কথা বুঝিয়ে বলতে পারে।
"না" বলতে শেখান:
আপনার শিশুকে "না" বলতে শেখান। যেন মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কেবল সমাজের চাপে তাকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। ছোটবেলা থেকেই এই অভ্যাস গড়ে তুললে বড় হয়েও সে স্বাধীনভাবে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। মেয়ে শিশুকে আলাদাভাবে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল রপ্ত করান। সে যেন অপরিচিত পুরুষের সাথে একা কোথাও না যায় বা হুট করে কাউকে বিশ্বাস করে না ফেলে এই শিক্ষা তাকে দিন।
প্রাথমিক চিকিৎসা:
খেলতে গিয়ে কেটে-ছিঁড়ে গেলে কিংবা বন্ধুর হাত-পা কেটে গেলে শিশু যেন আতঙ্কিত না হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু দিতে পারে, তাকে সে জ্ঞান দিন। স্যাভলন বা অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার, ব্যান্ডেজ বাঁধার মতো সহজ কাজগুলো শিখিয়ে দিন। ঠিক কতটুকু কেটে গেলে দ্রুত বড়দের সাহায্য নিতে হবে, তাও বুঝিয়ে বলুন।
অর্থ ব্যবস্থাপনা:
শিশুকে অর্থের মূল্য শেখান। তার হাতখরচ যেন সে কোনো ভালো কাজে ব্যয় করতে পারে, সেটা শেখান। অযথা খেলনা বা খাবারে অর্থ খরচ না করে কীভাবে অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার করা যায়, টাকা জমিয়ে শখের জিনিস বা প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা যায়, সে শিক্ষা তাকে দিন।
রান্নাঘরের ছোটখাটো কাজ:
আজকাল বাজারে শিশুদের ব্যবহারের জন্য প্লাস্টিকের ছুরি পাওয়া যায়। সেসব ব্যবহার করে টুকটাক সবজি কাটা, খাবার বানানো, সাত বছর বয়সের পর গ্যাসের চুলার ব্যবহার শেখান। কোনো দিন মা–বাবা বাড়িতে না থাকলে সে যেন ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে খেতে পারে বা নিজেই বড় পাত্র থেকে ছোট পাত্রে খাবার নিয়ে খেতে পারে, সেটুকু তাকে শিখিয়ে দিন। তাছাড়া বাড়িতে যখন আপনারা রান্না করবেন, তাকে সহায়তা করতে উৎসাহ দিন। ছোটখাটো কাজ, যেমন পেঁয়াজ-রসুনের খোসা ছাড়ানো, ফ্রিজ থেকে সবজি বের করে আনা, সিংক থেকে প্লেট চামচ নিয়ে যথাস্থানে রাখা, খাবার টেবিলে প্রত্যেকের গ্লাসে পানি ঢেলে দেওয়ার মতো কাজের দায়িত্ব শিশুকে দিন।
এভাবে ছোটখাটো কাজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে আপনার শিশু যেমন আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, তেমনি ভবিষ্যৎ জীবনের জন্যও তৈরি হতে শুরু করবে। বাড়ি থেকে কখনো দূরে পড়তে গেলে বা নতুন পরিবেশে গেলে খুব সহজেই সে মানিয়ে নিতে পারবে, নিজের যত্নও নিতে পারবে ঠিকভাবে। সবচেয়ে বড় কথা, তাকে নিয়ে আপনাকে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না।
# collected # # #