16/08/2025
ঘুম ঠিকমতো না হলে মস্তিষ্কের কি কি ক্ষতি হতে পারে?
সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, ঘুমের অভাব খুব বেশি হলে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলতে শুরু করে। এর অর্থ হলো, নির্ঘুমতার কারণে মস্তিষ্কের কোষগুলোর বর্জ্য ধ্বংস করে যেসব কোষ, তারা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে পড়ে।
মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার জন্য ঘুমের কোনো বিকল্প নেই- এটা আমরা সবাই জানি। আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখন সারা দিনের জমা হওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো ধ্বংস হয়। এতে ঘুম থেকে ওঠার পর শরীর মন চাঙ্গা হয়, মস্তিষ্ক সুস্থ ও সঠিকভাবে কাজ করতে শুরু করে।
মস্তিষ্ককে পরিষ্কার রাখার এই কাজের একটি অংশ হলো মাইক্রোগ্লিয়া কোষগুচ্ছ, যারা স্নায়ুতন্ত্রের বর্জ্য, ক্লান্তি এবং মৃত কোষের বর্জ্য পরিষ্কার করে। আরও এক ধরণের কোষ, অ্যাস্ট্রোসাইট মস্তিষ্কের বেশ কিছু কাজ একসাথে করে। এদের অনেকগুলো কাজের মাঝে একটি হলো মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় সিন্যাপ্সগুলোকে ছেঁটে ফেলা।
নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় চার দল ইঁদুরের ওপর।
প্রথম দলকে ইচ্ছেমত ঘুমোতে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় দলকে সময়মত ঘুম থেকে ওঠানো হয়।
তৃতীয় দলকে অতিরিক্ত আট ঘন্টা জাগিয়ে রাখা হয়।
আর চতুর্থ দলকে জাগিয়ে রাখা হয় টানা পাঁচদিন।
আরাম করে ঘুমানো ইঁদুরদের মস্তিষ্কে অ্যাস্ট্রোসাইট সক্রিয় ছিল ৬% সিন্যাপ্সে। আট ঘন্টা ঘুমানো ইঁদুরদের ৮%, আর ৫ দিন না ঘুমানো ইঁদুরদের ১৩.৫% সিন্যাপ্সে অ্যাস্ট্রোসাইট সক্রিয় ছিল। তার অর্থ হল ঘুমের অভাবে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে অ্যাস্ট্রোসাইট কোষগুলো।
“ঘুমের অভাব হলে সিন্যাপ্সের কিছু অংশ খেয়ে ফেলে অ্যাস্ট্রোসাইট, এটা আমরা প্রথমবারের মত দেখতে পেয়েছি” বলেন এ গবেষণার নিউরোসায়েন্টিষ্ট মাইকেল বেলেসি। তবে ঘুমের প্রচণ্ড অভাবের সময়ে এই বিষয়টি মানব শরীরের জন্য উপকারী নাকি অপকারী সেটা তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
তবে যে ব্যাপারটি বেশি দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে, তা হলো মাইক্রোগ্লিয়ার কার্যক্রম। তারা অতিরিক্ত ঘুমের অভাবের ফলে সক্রিয় হয়। আর এর সক্রিয়তা থেকে দেখা দিতে পারে আলঝেইমার্স রোগ এবং মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষয় হওয়ার মতো অন্যান্য রোগগুলো।
গবেষকেরা বলেন, “অতিরিক্ত ঘুমের অভাব মাইক্রোগ্লিয়া কোষকে সক্রিয় করে এবং তাদের ফ্যাগোসাইটিক [কোষের বর্জ্য খেয়ে ফেলা] কাজে অনুপ্রেরণা দেয়, নিউরো ইনফ্লামেশনের কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই। এ থেকে বোঝা যায় বড় সময়ের জন্য ঘুমের অভাব মাইক্রোগ্লিয়াকে প্রভাবিত করে এবং অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে মস্তিষ্ককে সংবেদনশীল করে তোলে।” অন্য গবেষণায় উঠে আসছে, মস্তিষ্কের ১৩% পর্যন্ত ব্রেইন এভাবে খেয়ে ফেলে বা ক্ষয় হয় পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে।
প্রাণীদেহের সবচাইতে জটিল অঙ্গ মস্তিষ্ক প্রতিনিয়তই নতুন করে নিজেকে তৈরি করে, আর ভাঙ্গাগড়ার ভেতর দিয়ে নিজেকে পুনর্গঠিত করে। এটা একটি অসীম প্রক্রিয়া, যেখানে কিছু কাঠামো ভাঙ্গে আর কিছু নতুন কাঠামো তৈরি হয়। এ নিয়ে আরো গবেষণা হলে বোঝা যাবে এই অ্যাস্ট্রোসাইট এবং মাইক্রোগ্লিয়ার সক্রিয়তা মস্তিষ্কের ওপর আসলে কতটা প্রভাব রাখে। আর গবেষকদের পরামর্শ সেটা না জানা পর্যন্ত যথেষ্ট ঘুমানোটাই নিরাপদ।
তথ্যসূত্রঃইন্টারনেট।
fans