24/06/2025
                                            শিশুর ঘাড়ে, গলায় বা কানের পেছনে গাঁট বা টিউমার?
দিন দিন শারীরিক ও মানসিক অবনতি হচ্ছে?
ভুল খাবার ও অনিয়মিত জীবনই হতে পারে ভয়ঙ্কর রোগের সূচনা!**
বর্তমান সমাজে শিশুদের অসুস্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় যে অব্যক্ত শত্রু কাজ করে যাচ্ছে, তা হলো—ভেজাল ও পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস, অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। শিশুর ঘাড়ে, গলায়, কানের পাশে বা মাথার পেছনে হঠাৎ দেখা দেওয়া গাঁট বা ফোলাভাব হয়তো আপনাকে প্রথমে ভয় না দিলেও, এর শিকড় বহু গভীরে বিস্তৃত।
এই গাঁটকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় Lymphadenopathy, যা শরীরের লিম্ফনোডের অস্বাভাবিক ফোলাভাব। এটি কোনো নিরীহ প্রদাহ নয় বরং বড় কোনো অভ্যন্তরীণ সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
মূল কারণ: ভেতরের বিষাক্ত জীবনধারা
❖ ভেজাল ও কৃত্রিম খাদ্যপণ্য: শিশুরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাচ্ছে—চিপস, রঙিন আইসক্রিম, ক্যান্ডি, ফাস্টফুড, মসলা মিশ্রিত নুডুলস, কার্বনেটেড কোমল পানীয়—এইসব খাবারে থাকে উচ্চমাত্রার কেমিক্যাল, রঙ ও কৃত্রিম সংরক্ষক। এগুলো দেহে জমে থেকে লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমে চাপ সৃষ্টি করে এবং গাঁট তৈরি করে।
❖ অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড সেবন: সর্দি, কাশি, জ্বর হলেই শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো এখন অনেক পরিবারের নিত্য অভ্যাস। এতে দেহের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং লিম্ফনোডে প্রদাহ সৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ে। অনেক সময় বাজারের নকল বা নিম্নমানের ওষুধও এই সমস্যার জন্য দায়ী।
❖ অনিয়মিত ঘুম ও খাওয়ার সময়সূচি: সময়মতো না খাওয়া, ঘুম না হওয়া, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার বা স্ক্রিন টাইম শিশুদের দেহে হরমোনাল ভারসাম্য ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে রক্ত ও লিম্ফ প্রবাহ সঠিক না হয়ে গাঁট দেখা দেয়।
❖ পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সূর্যালোকের অভাব: শিশুরা এখন মাঠে খেলা ভুলে গেছে, দৌড়ঝাঁপ কমে গেছে, দিনে রোদে বের হয় না। এতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয় এবং দেহে টক্সিন জমা হতে থাকে।
---
শরীর ও মস্তিষ্কে গাঁটের প্রভাব কীভাবে পড়ে?
এই গাঁট বা ফোলাভাব শুধু বাহ্যিক লক্ষণ নয়, বরং এর প্রভাব অনেক গভীর। গলার পাশে বা ঘাড়ে গাঁট থাকলে অনেক সময় মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। এর ফলে দেখা দেয়:
মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা
ঘন ঘন ক্লান্তি
চোখে ঝাপসা দেখা বা দৃষ্টি অস্পষ্ট হওয়া
কান ভার লাগা বা শুনতে সমস্যা
মনোযোগ হ্রাস পাওয়া
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া
---
শিশুর আচরণগত ও মানসিক লক্ষণ যেগুলো এই গাঁটের সঙ্গে জড়িত হতে পারে
অতিরিক্ত রাগ, ধৈর্যহীনতা
খিটখিটে মেজাজ, ছোটখাটো বিষয়েও উত্তেজিত হওয়া
এক কথা বারবার বলা বা কথা ভুলে যাওয়া
অল্পতেই বিরক্ত হওয়া, একঘেয়েমি
কিছুতেই মন না বসা, পড়াশোনায় আগ্রহ হারানো
আচরণে পরিবর্তন—চুপচাপ হয়ে যাওয়া বা হঠাৎ চঞ্চলতা
বন্ধুদের থেকে দূরে থাকা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি
কথা বলার সময় অস্পষ্টতা
রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া বা দুঃস্বপ্ন দেখা
এইসব পরিবর্তন শিশুরা নিজের মুখে প্রকাশ করতে পারে না, কিন্তু সচেতন অভিভাবক হিসেবে আপনাকে বুঝতে হবে—এগুলো নিছক মেজাজ নয়, বরং দেহের অভ্যন্তরীণ বিপর্যয়ের সংকেত।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা: 
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় শুধুমাত্র গাঁট নয়, বরং গাঁটের সঙ্গে যুক্ত দেহ-মন-আচরণের সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে চিকিৎসা করা হয়। শিশুর খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, আচরণ, মনোভাব, ভয়, গলা বা ঘাড়ে গাঁটের ধরন অনুযায়ী ওষুধ নির্বাচন করা হয়।
❖ চিকিৎসা অবশ্যই রোগীর বিস্তারিত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিতে হবে। নিজে থেকে ওষুধ প্রয়োগ বিপজ্জনক।
একটি গাঁট, একটি আচরণগত পরিবর্তন কিংবা একটি নিঃশব্দ অস্বস্তি—সবকিছুর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক রোগ। তাই সন্তানের গলার পাশে বা ঘাড়ে গাঁট দেখা দিলে, অথবা আচরণে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করলে অপেক্ষা করবেন না।
শিশুর ভবিষ্যৎ যেন অন্ধকার না হয়, তা নিশ্চিত করতে এখনই সচেতন হোন।
ডাঃ নীলিমা রানী সাহা 
(ডিএইচএমএস ঢাকা)
বিএসসি (অনার্স)
এমএসসি (প্রাণিবিদ্যা)
চেম্বার :
ডক্টরস হোমিও কেয়ার 
দরগাহ রোড, (মেডিনোভা হাসপাতাল সংলগ্ন) 
সিরাজগঞ্জ।
মোবাইল নম্বর :০১৭২৩-৪৬৭২০৬                                        
 
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                         
   
   
   
   
     
   
   
  