 
                                                                                                    17/07/2025
                                            “পাথরে পরিণত হওয়া কার্বন: এক ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়ার মহান কাজ”
ভাবুন তো, আমাদের ভবিষ্যতের দেয়ালগুলো শুধু মাথার ওপর ছাদই দেবে না, বরং বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে পৃথিবীকে বাঁচাবে! কল্পনা নয়—এবার বিজ্ঞান বলছে, এটাই হতে চলেছে বাস্তব।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম দায়ী অপরাধী হলো অতিরিক্ত CO₂ গ্যাস। এই গ্যাস যে শুধু বাতাসকে ভারী করছে, তা নয়—বরং পৃথিবীর আবহাওয়া, বরফ, বৃষ্টি, সব কিছুই পাল্টে দিচ্ছে। তাই বিজ্ঞানীরা বছরের পর বছর ধরে ভাবছেন, কিভাবে এই গ্যাসকে ধরা যায়, আটকে রাখা যায়, অথবা এমন কিছু বানানো যায়, যাতে এই গ্যাস নিজেই লুকিয়ে পড়ে চিরতরে।
এমন সময়ই আবির্ভাব ঘটে এক ক্ষুদ্র অথচ অসাধারণ জীবের—Bacillus megaterium নামের এক ব্যাকটেরিয়া।
---
🧫 এক ব্যাকটেরিয়া, যেটি গ্যাসকে বানায় পাথর!
এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের চেনা-জানা মাটিতে বাস করে। আগে ভাবা হতো, এটি শুধুই ভিটামিন B12 বা উদ্ভিদ-বান্ধব এনজাইম তৈরি করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন এক আশ্চর্য ক্ষমতা—এটি বাতাসের CO₂ গ্যাসকে প্রকৃত পাথর (চুনাপাথর বা Calcium Carbonate) বানিয়ে ফেলে!
ঠিক যেন:
> গ্যাস ➡️ ব্যাকটেরিয়ার যাদু ➡️ পাথর!
এই গবেষণাটি করেছে সুইজারল্যান্ডের EPFL ও SUPSI এর একদল বিজ্ঞানী, এবং এখন Medusoil নামের একটি স্টার্টআপ চেষ্টা করছে এই প্রক্রিয়াকে শিল্পে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে।
---
🔬 কিভাবে কাজ করে এই ব্যাকটেরিয়া?
Bacillus megaterium দুটি রাসায়নিক রাস্তায় হাঁটতে পারে:
1️⃣ Ureolysis – ইউরিয়া ভেঙে পাথর তৈরি করলেও পাশে পাশে অ্যামোনিয়া তৈরি করে, যা পরিবেশের ক্ষতি করে।
2️⃣ Carbonic Anhydrase পথ – এখানে CO₂ সরাসরি পরিণত হয় বাইকার্বোনেটে, এবং কোনো দূষণ ছাড়াই হয় চুনাপাথর উৎপাদন!
গবেষণায় দেখা যায়, যখন ব্যাকটেরিয়াকে CO₂-র উচ্চচাপে (বায়ুচাপের প্রায় ৪৭০ গুণ বেশি) রাখা হয়, তখন সে নিজে থেকেই দ্বিতীয় পথ বেছে নেয়—যেটি পরিবেশবান্ধব ও কার্যকর।
❗শুধু তাই নয়, ব্যাকটেরিয়া তৈরি করা চুনাপাথরের ৯৪% কার্বন আসে সরাসরি CO₂ গ্যাস থেকে!
---
🏗️ ভবিষ্যতের দালান হবে কার্বন-খাদক!
সিমেন্ট ও নির্মাণশিল্প বিশ্বের মোট CO₂ নিঃসরণের প্রায় ৮% ঘটায়। যদি এই ব্যাকটেরিয়া-নির্ভর চুনাপাথর সিমেন্টে ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিবছর মিলিয়ন টন কার্বন আটকে রাখা যাবে পাথরের মাঝে।
👉 Medusoil-এর পরীক্ষামূলক রিয়্যাক্টর দিয়ে ইতিমধ্যে শক্ত পাথর তৈরি করে পরীক্ষা চলছে—৩০০ বারেরও বেশি জমাট বাঁধা পরীক্ষার পরেও ব্লকগুলো মাত্র ২% শক্তি হারিয়েছে!
---
🧬 ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: গ্যাস ধরার দেয়াল!
জিন সম্পাদনার মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়াকে আরও উন্নত করা হচ্ছে, যেন সাধারণ বায়ুমণ্ডলের CO₂-ও সে ধরে ফেলতে পারে।
ক্যালসিয়াম উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে:
ডেসালিনেশন ব্রাইন (লবণ-মুক্ত পানি),
খনিজ বর্জ্য,
পুরনো কংক্রিট।
🧱 একটি দেয়াল তখন শুধু ইট-কাঠের নির্মাণ নয়—বরং হবে এক একটি কার্বন ভল্ট।
---
🌍 কেন এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ?
এটি শুধুমাত্র জীববিজ্ঞানের নয়—জলবায়ুর, নির্মাণশিল্পের, এবং আগামী প্রজন্মের টিকে থাকার এক মাইলফলক।
CO₂ কে শত্রু হিসেবে দেখে শুধু দূরে ঠেলে নয়, বরং বন্ধুর মতো কাছে এনে পাথরে পরিণত করে—এটাই এক নতুন দর্শন।
---
📚 তথ্যসূত্র ও আরও জানুন:
মূল প্রতিবেদন: Earth.com
গবেষণা নিবন্ধ: Terzis et al., Scientific Reports, Nature
DOI: 10.1038/s41598-025-07323-9                                        
At Earth.com, our goal is to provide the internet with a homepage for anything and everything about our planet Earth and the environment.
 
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                         
   
   
   
   
     
   
   
  