25/02/2024
আজকে আমার আলোচ্য বিষয় হচ্ছে মুত্রকষ্ট বা মুত্রের জ্বালার কয়েকটি ঔষধের উপর আলোচনা । আমরা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মুত্রের জ্বালা-যন্ত্রণার রোগী কমবেশী পেয়ে থাকি এবং চিকিৎসাও দিয়া থাকি । আমি যে বিষয়টি আলোচনা করতে চাচ্ছি সেটি হচ্ছে রোগীরা সাধারণতঃ এসে বলে ডাঃ আমার মুত্রের প্রচণ্ড জ্বালা হচ্ছে তাড়াতাড়ি ঔষধ দিন । আমরা সচরাচর রোগীর কাছে শুনেছি যে – কোন রোগী বলে প্রস্রাব করিবার পূর্বে জ্বালা, কোন রোগী বলে প্রস্রাব করিবার সময় জ্বালা, এবং কোন রোগী বলে প্রস্রাব করিবার পর জ্বালা ।
আমরা এখানে রোগীর নিকট হইতে তিনটি লক্ষণ পেলাম – প্রস্রাব করিবার পূর্বে, প্রস্রাব করিবার সময়ে এবং প্রস্রাব করিবার পরে জ্বালা ।
♦♦♦ প্রস্রাব করিবার পূর্বে জ্বালা >
এই লক্ষণের সাহায্যে আমরা সাধারণতঃ যে কয়টি ঔষধের কথা মনে করতে পারি তার মধ্যে আমরা আলোচনা করব – এপিস, বার্বারিস, বোরাক্স, ক্যানাবিস ইন্ডিকা, মার্ক – সল, মার্ক-কর, নেট্রাম-কার্ব, নাইট্রিক অ্যাসিড, পালসেটিলা ও সালফার নিয়ে ।
♦♦♦ এপিস >
প্রস্রাব করিবার সময় মুত্রনলীর মধ্যে অত্যন্ত জ্বালা ও হুলফোটান ব্যথা, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, কিন্তু মাত্র ২/১ ফোঁটা প্রস্রাব নির্গত হয় । প্রস্রাবের বেগ আসিলে রোগী এক মিনিটিও তাহা ধারন করিতে পারে না, জ্বালা-যন্ত্রণার সহিত রক্তস্রাব, মুত্রকৃচ্ছতা, ব্রাইটস-ডিজিজ । ওলাউঠা রোগের ইউরিমিক-অবস্থায় উহার অন্যান্য লক্ষণসহ এপিসের চরিত্রগত লক্ষণ পিপাসা না থাকিলে – ক্যান্থারিস, টেরিবিস্থিনা প্রভৃতির মত ইহাতেও প্রস্রাব নিঃসরণে সহায়তা করে । “ In Cystitis dysuria and stranguiry Apis is only, secondary to Cantharis in usefulness ” The urine is highly albuminous and contains tube casts . ★ এপিসের দুধের মত সাদা প্রস্রাবও আছে ।
♦♦♦ বার্বারিস ভলগ্যারিস > পিত্ত-পাথরী ও মুত্র-পাথরী ( Biliarycal cali . Renal calculi ) উভয়বিধ পীড়াতেই পাথরী নিঃসরণকালে যখন বেদনায় মনে হয় যেন কি ফোটাইতেছে, নড়িবার ক্ষমতাটি থাকে না, বেদনা কিডনী হইতে আরম্ভ হইয়া পায়ের দিকে নামিয়া আসে, রোগী পুনঃ পুনঃ প্রস্রাবত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন বার্বারিসে বিশেষ উপকার হয় । * কিডনী হইতে মুত্রথলী পর্যন্ত কাঁটাইছেঁড়ার মত বেদনা । * বাম কিডনী হইতে বেদনা আরম্ভ হইয়া ইউরেটারের মধ্যদিয়া ব্ল্যাডারে ও তথা হইতে ইউরেথ্রায় পরিচালিত হয় । * কোমরে ভয়ানক বেদনা এবং কোমরে ও কিডনীর স্থানে যেন কি বুজবুজ করে । প্রস্রাবের সময় উরুতে ও কোমরে বেদনা । * কোমর শক্ত ও আড়ষ্ট, পাছায় ও কোমরে ভীষণ বেদনা । * প্রস্রাব সবুজাভ কিম্বা রক্তের মত লালবর্ণ, তলানিতে ঘন শ্লেষ্মা । * প্রস্রাব পাইলে বেগ ধারণ করা যায় না, নড়িলে-চড়িলেই প্রস্রাব সম্বন্ধীয় যন্ত্রণার বৃদ্ধি । প্রস্রাবের সময় নহে, অন্য সময় জ্বালা ।
♦♦♦ বোরাক্স > শিশু প্রায় ঘন ঘন প্রস্রাব করে এবং প্রত্যেকবার প্রস্রাবের সময় কাঁদিয়া উঠে, এই লক্ষণসহ প্রস্রাবে অত্যন্ত দুর্গন্ধ এবং প্রস্রাব গরম থাকিলে – বোরাক্স – উপকারি । যদি শিশুর প্রস্রাবের তলানি বালিকনার মত হয়, অর্থাৎ - পাথরী পীড়ার লক্ষণ থাকে, তাহা হইলে – লাইকোপোডিয়াম, সার্সাপ্যারিলা উপযোগী , কিন্তু উহা মুত্রনলী প্রদাহজনিত হইলে – ক্যান্থারিস উপকারী । পেট্রোসেলিনিয়মে – হঠাৎ প্রস্রাবের
বেগ আসে, ছেলে কাঁদিয়া উঠে ও প্রস্রাব করে ।
♦♦♦ ক্যানাবিস ইন্ডিকা > মুত্রনলীর ( ইউরেথ্রার ) মধ্যে ভয়ানক জ্বালা ও সুচফোটান ব্যথা, এই দুইটি কষ্টকর উপসর্গ – প্রস্রাব করিবার পূর্বে, প্রস্রাব করিবার সময়ে ও প্রস্রাব করিবার পরে অত্যন্ত অধিক হয়, প্রস্রাব শেষ হইলে ফোঁটা ফোঁটা করিয়া মুত্র ঝরিতে থাকে । * কচলিরিয়া – প্রমেহ কিম্বা অন্য কোনও পীড়ায় গ্ল্যান্স-পেনিসে ( লিঙ্গমুণ্ডে ) জ্বালা, কাটাছেঁড়ার মত বেদনা এবং প্রস্রাবের পূর্বে, সময়ে ও পরে জ্বালা থাকিলে উপকারী ।
♦♦♦ মার্ক–সল >কিডনী বা মুত্রগ্রন্থির প্রদাহে পিঠের দিকে কোমরের উপর দুই পার্শ্বে অর্থাৎ যেখানে কিডনী আছে সেখানে একপ্রকার তীব্র বেদনা, সময়ে সময়ে সেই বেদনা – মুত্রথলীতে, অণ্ডকোষে ও উরুতে পর্যন্ত পরিচালিত হয় । নড়িতে-চড়িতে, উঠিতে বসিতে, চিৎ হইয়া শুইতে, কোমরে ভয়ানক যন্ত্রণা, বারবার প্রস্রাব ত্যাগের ইচ্ছা, অল্প-প্রস্রাব হওয়া বা প্রস্রাব বন্ধ, প্রস্রাবের সময় কোঁথানি, বেগে প্রস্রাব সহ রক্ত-পুঁজ-শ্লেষ্মা নিঃসরণ, বমি, কাঁপ দিয়া জ্বর হওয়া প্রভৃতি কতকগুলি এই বিশেষ লক্ষণ এবং ইহাতে – মার্কুরিয়াস-ভাইভাস বা মার্কুরিয়াস-কর উভয়ই উপযোগী । ♦ মার্কুরিয়াসের জিহ্বা – মোটা, ফোলা-ফোলা এবং থলথলে দেখায়, মুখ দিয়া লালা পড়ে, পীড়ার উপসর্গ সমূহ রাত্রিতে বৃদ্ধি হয় । প্রস্রাবের সঙ্গে কিম্বা প্রস্রাবের পর সুতার মত পদার্থ নির্গমন ( সাইলিসিয়া ) প্রস্রাবকালে জ্বালা ।
♦♦♦ মার্ক-কর > মুত্রনলীর কোঁথানি, মুত্রনলীর মধ্যে জ্বালা, প্রস্রাব গরম, পরিমাণে অল্প, অত্যন্ত যন্ত্রণাসহ ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব নির্গমন, রক্ত-প্রস্রাব । প্রমেহের দ্বিতীয়বস্থায় – সবুজবর্ণের স্রাব, অত্যন্ত জ্বালা, কোঁথানি । মুত্রথলীর প্রদাহে – প্রস্রাবের ভয়ানক বেগ, কোঁথানি ও জ্বালা, প্রস্রাবে-রক্ত, শ্লেষ্মা ও পুঁজ । প্রস্রাব অনেক সময় হয় না, বন্ধ হইয়া যায় কিম্বা অনেক কষ্টে ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হয়, সেই সঙ্গে মুত্রনলীতে ও মুত্রথলীর গ্রীবাদেশে ভীষণ জ্বালা । ** ডাঃ কালি বলেন ওলাউঠা পীড়ায় মুত্রথলীতে প্রস্রাব না জমিলে ও তৎসহ পেটে বেদনা থাকিলে – মার্কুরিয়াস-কর ৩০ শক্তি একমাত্রা প্রয়োগে আশাতীত উপকার হয় ।
♦♦♦ নেট্রাম-কার্ব > এই ঔষধটির পুনঃপুনঃ পরীক্ষিত লক্ষণ এর হ্রাস-বৃদ্ধি । মানসিক পরিশ্রমেই সবকিছুর বৃদ্ধি হয় । রোগী কোন মানসিক কাজ করতে গেলেই মাথা ধরা, মাথা ঘোরা, মস্তিস্কের জড়তা উপস্থিত হয় । শুধু এই লক্ষণটিই একে একটি মুল্যবান ঔষধ বলে প্রতিষ্ঠিত করেছে । মানসিক লক্ষণ বিমর্ষতা, শব্দে বিশেষতঃ গানবাজনার শব্দে অতিরিক্ত অনুভুতি, দুগ্ধ সহ্য হয় না, দুধ খাইলেই উদরাময়, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, পায়ের গোছের দুর্বলতা প্রভৃতি আনুসাঙ্গিক লক্ষণ দেখে একে নির্বাচন করতে হয় ।
♦♦♦ নাইট্রিক অ্যাসিড > অল্প হউক, অধিক হউক, প্রস্রাবে প্রায়ই রক্ত থাকে, ঘোড়ার প্রস্রাবের ন্যায় প্রস্রাবে ঝাঁজাল গন্ধ ( অ্যাসিড-বেঞ্জো ) ; It is also useful in Oxaluria . ক্রমাগত প্রস্রাবের বেগ, কিন্তু একটু একটু করিয়া প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের সময় অত্যন্ত জ্বালা করে, মুত্রনলীর মধ্যে জ্বালা হয়, সেই জ্বালা নিবারণের জন্য রোগী ক্রমাগত প্রস্রাবত্যাগের চেষ্টা করে, কিন্তু তাহাতে আরও অধিক যন্ত্রণা বৃদ্ধি হয়, এই লক্ষণগুলি প্রায়ই নাইট্রিক অ্যাসিডে দেখতে পাওয়া যায় । * প্রমেহ পীড়ার কিম্বা অন্য কোনও কারণে মুত্রনলীর মধ্যে ক্ষত হইলে – নাইট্রিক অ্যাসিড বিশেষ উপকারী ।
♦♦♦পালসেটিলা > প্রমেহপীড়ার প্রথম অবস্থায় প্রস্রাবে অত্যন্ত জ্বালা, লিঙ্গে বেদনা ও ফোলা, রাত্রিতে অত্যধিক লিঙ্গোদ্গম ( কর্ডি ) থাকিলে কখনও কখনও পালসেটিলার পর – ক্যানাবিস স্যাটাইভা প্রয়োজন হয় । পালসেটিলার শান্ত স্বভাব ও অতি সহজেই বশ্য প্রকৃতি, সকল সময়েই কাঁদে বিমর্ষতা ও হতাশা, সব কিছুতেই চোখের জল ফেলা, এমনকি চোখের জলের জন্য রোগী তার রোগের লক্ষণগুলি বলতে পারে না ।
♦♦♦ সালফার > প্রমেহ পীড়ায় প্রস্রাবত্যাগকালে জ্বালা থাকিলে ও প্রস্রাবদ্বারের চতুর্দিকে লালবর্ণ হইলে স্রাব যে প্রকারেরই হউক না কেন – সালফারে উপকৃত হইবে ।
♦♦♦ তবে কারো যদি এরূপ ধারণা হয় যে তিনি শুধু নিদান-শাস্ত্র বিশারদই ( Pathologist ) হবেন এবং কেউ যদি শুধু লক্ষণতত্ত্বরুপে ( Symptomtologist ) থাকতে চান তাহলে উভয়েই ভুল করবেন । নিদান শাস্ত্র ( Pathology ) এবং লক্ষণতত্ত্ব উভয়ই মুল্যবান ও অভিন্ন, কোনটিই বাদ দেওয়া চলে না । তবে নিদান তত্ত্ব বলতে বুঝায় চিকিৎসক যা বলতে পারেন ( Doctor can tell sometimes ) এবং লক্ষণ তত্ত্ব বলতে বুঝায় রোগী যা বলতে পারেন ( Patient can tell ) ।
Mandal Homeo Chikitshaloy, Dokhin Kandapara, Shahibari, Sirajgonj.
+880 1718-177122