Dr. Saifur Rahman

Dr. Saifur Rahman Contact information, map and directions, contact form, opening hours, services, ratings, photos, videos and announcements from Dr. Saifur Rahman, Nutritionist, Sylhet.

বাচ্চার মাথায় যত বেশি তথ্য (ইনফরমেশন) দিব বাচ্চার মেধা ও প্রতিভা তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।আমাদের দেশে বহুদিন ধরে একটা ধারণা আম...
30/05/2025

বাচ্চার মাথায় যত বেশি তথ্য (ইনফরমেশন) দিব বাচ্চার মেধা ও প্রতিভা তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমাদের দেশে বহুদিন ধরে একটা ধারণা আমরা পোষণ করে আসছি যে, যে বাচ্চা বেশি জানে সেই বাচ্চা মেধাবী। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে এত বেশি জিনিস শিখাই যে তা প্রতিনিয়ত তার সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করছে।

ঢাকার বেশিরভাগ বাচ্চারা নাকি ৫ বছর বয়সে লিখতে, পড়তে জানে। এই বয়সে নাকি তারা পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে চান্স পেতে হয়! বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য মা বাবারা বিভিন্ন ফেসবুক ও হোয়াটস আপ গ্রুপেও খুব এক্টিভ থাকেন। কোমল মস্তিষ্কগুলো কত ভয়ঙ্করভাবে অঙ্কুরে নষ্ট করা হচ্ছে। বাচ্চাদের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে যদি তা জানত আমি নিশ্চিত তারা এগুলোর পেছনে দৌড়াত না। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় ঢাকার বাচ্চারা এই বয়সে যতটুকু পড়ালেখা করে ও জানে পৃথিবীর কোন দেশের বাচ্চারাও এতটুকু জানে না। অথচ আমরাই জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় পিছিয়ে।

৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা অনুসন্ধান, কাজ, প্রশ্ন, চেষ্টা, বারবার ব্যর্থ হওয়া, আবিষ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে শিখবে। আপনার সরাসরি ইনপুট তার মস্তিষ্ককে অকেজো করে দিচ্ছে। এটা শতভাগ প্রতিষ্ঠিত স্টাডি যে, যেসব দেশে যত কম বয়সে ফরমাল স্টাডি ইন্ট্রডিউস করা হয় সেইসব দেশের বাচ্চারা তত কম সৃজনশীল। আমাদের শিক্ষাবিদ ও আইনপ্রণেতারা এগুলো নিয়ে একেবারেই ভাবেন না।

প্রতিনিয়ত তথ্য প্রদান করে আমরা বাচ্চাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তিকে সীমিত করে ফেলছি৷ আপনার বাচ্চা 'এ' ফর আপল, 'বি' ফর বল থেকে 'জেড' ফর জিব্রা পর্যন্ত বললেই সে মেধাবী হয়ে যায় নি। সে যদি মাটি দিয়ে একটা আপেল বানাতে পারে তাহলে সেটার জন্য অধিক খুশি হোন; সে যদি বলে "আম্মু বি ফর বল কেন বলল, বার্ডও তো হয়" তাহলে বুঝে নিন তার চিন্তাশক্তি কাজ করছে। কিংবা সে ফোনেটিক জানেই না, 'বি' দিয়ে বল হয় না ক্যাট হয় জানে না। কিন্তু বল, ঘনক, ত্রিভুজ ইত্যাদি আকৃতিগুলো সে আলাদাভাবে সর্টিং করতে পারে, তাহলে বুঝে নিন তার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ভালভাবেই নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করছে, ফলে সে সক্রিয়ভাবে চিন্তা ও কাজ করতে পারছে।
বাচ্চার মস্তিষ্ককে ইনফরমেশন দিয়ে ব্যস্ত না রেখে তাকে প্রকৃতি দিন, খেলনা দিন, এবং সাথে স্বাধীনতা। তাকে না শিখিয়ে কৌতুহলী করে তুলুন। তার ফলে হয়তো শহরের সবচেয়ে নামীদামী স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে না, কিন্তু এর ফল ভবিষ্যতে পাবেন, তা নিশ্চিত।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট এলিসন গপনিক যিনি তার জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন বাচ্চাদের কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে, তিনি একবার টেড টকে বলেছিলেন, "বাচ্চারা খালি পাত্র নয় যে আপনি ইনফরমেশন ও ফ্যাক্ট দিয়ে তাকে পূর্ণ করবেন। বরং তারা সক্রিয় শিক্ষানবিশ। তারা এক্সপ্লোরেশন ও ইন্টারেকশনের মাধ্যমে নিজে জ্ঞান তৈরি করে।"
আপনি তার হাতে সিলেবাস তুলে দিলে সে তার চিন্তাভাবনা বন্ধ করে দিবে। রোবটের মত সিলেবাস থেকে ইনপুট নিবে আর আউটপুট দিয়ে আপনাকে ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে খুশি করবে। এই রোবটিক আউটপুট দিয়ে শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়, জাতির পরিবর্তন সম্ভব হয় না।

৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মস্তিষ্কের ৯০% নিউরনের আর্কিটেকচার পূর্ণ হয়ে যায়। তাই ৫ বছর বয়সী মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে এই মানুষ তার বাকি জীবনে কী করবে। আর এই নিউরনের জাল তৈরি হয় পড়ালেখার মাধ্যমে নয়, বরং স্বাধীনভাবে খেলাধুলা, অনুসন্ধান ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে।

বন্ধুবান্ধব বেশিরভাগের বাচ্চা-কাচ্চারা প্রমিত ভাষায় (শুদ্ধ ভাষা হিসেবে যেটাকে চিনি আমরা। যদিও পৃথিবীর সব ভাষাই শুদ্ধ) কথ...
05/02/2025

বন্ধুবান্ধব বেশিরভাগের বাচ্চা-কাচ্চারা প্রমিত ভাষায় (শুদ্ধ ভাষা হিসেবে যেটাকে চিনি আমরা। যদিও পৃথিবীর সব ভাষাই শুদ্ধ) কথা বলে। পরিচিত বা আত্মীয়দের মধ্যে যারা 'শিক্ষিত শ্রেণী' হিসেবে পরিচিত তারা প্রায় সবাই বাচ্চাকে প্রমিত তথা 'শুদ্ধ ভাষা' ও ইংরেজি শিখিয়েছেন। ব্যাপারটা দেখে আমারও ইচ্ছা জেগেছিল বাচ্চাদের সাথে প্রমিত ভাষায় কথা বলব। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরেই সিদ্ধান্ত বদলালাম। তার কারনগুলো একটা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করি।

ভাষা ও bilingualism বিষয়ে আমি কোন এক্সপার্ট না। তাই এক্সপার্টদের কিছু বই জোগাড় করে লেখাপড়া শুরু করলাম এবং তাদের গবেষণা ও জরিপগুলো ঘাটাঘাটি করলাম। জানতে পারলাম যে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক কোন বাড়তি চাপ ছাড়াই একইসাথে ৪-৫টা ভাষা শিখতে পারে। এতে বাচ্চাদের মস্তিষ্কে কোন খারাপ প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ আমি চাইলে আমার বাচ্চা প্রমিত বাংলা, সিলেটি ও ইংরেজি ভাষা সবগুলোই একসাথে শিখতে পারবে। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম দুই বছর বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র সিলেটি ভাষায় কথা বলব। দুই বছর বয়স থেকে শুধু ভোকাবুলারি দিয়ে ইংরেজি এক্সপোজার শুরু করব। এবং তিন বছর বয়স থেকে টুকটাক ইংরেজি কথা বলা শুরু করব। আর স্কুলে যাওয়ার পরে প্রমিত বাংলা।

এই পরিকল্পনার কারন কী?
বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হল ইমোশনাল বন্ডিং। নতুন একটা ভাষা শেখানোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল কমিউনিকেশন শেখানো। যেকোন সময় বাচ্চা ভাষা শিখতে পারবে, কিন্তু ইমোশনাল বন্ডিং দরকার একেবারে শুরু থেকে। আপনার আশেপাশের লোকজন যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষা না শিখিয়ে আপনি তার আগেই দ্বিতীয় একটি ভাষা শিখিয়ে ফেললে উচ্চ শিক্ষিতদের কোন ইভেন্টে সে হয়তো কিছুটা স্মার্ট দেখাবে কিন্তু তার সোশাল ডেভেলপমেন্ট-এ একটা গ্যাপ থাকবেই, যা সুদূরপ্রসারী তাকে ভোগাবে।

এক্সপার্টদের গবেষণা আমি কিছু বাস্তব সিনারিওর সাথে মেলানোর চেষ্টা করলাম। বেশিরভাগ প্রবাসী পরিবারগুলোর বাচ্চারা তাদের মা বাবাদের মাতৃভাষায় ঠিকমত কথা বলতে পারে না। সম্ভবত মা বাবারা একটু আতঙ্কে থাকেন যে স্কুলে গিয়ে যদি বাচ্চা ঠিকমত খাপ খাওয়াতে না পারে। তাদের সাথে দাদা-দাদি ও নানা-নানিদের যোগাযোগ খুব দুর্বল। বাংলা বুঝে কিন্তু উত্তর দেয়ার সময় পুরোপুরি মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে না। এটা যথার্থ বিকাশের জন্য অবশ্যই একটা অন্তরায়। বিদেশে প্রাইমারি শিক্ষক ও প্যারেন্টিং এক্সপার্টরা বাসায় বাবাদের মাতৃভাষায় বাচ্চাদের সাথে কথা বলার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। সম্প্রতি আমার এক আত্মীয়র বাচ্চাকে দেখতে পেলাম দেশের সব আত্মীয়দের সাথে খুব সুন্দরভাবে কথা বলছে, সবার সাথে মিশছে, উপভোগ করছে। তাদের মা বাবার সাথে কথা বলে জানলাম যে তারা তাদের বড় সন্তানের এক স্কুল শিক্ষকের পরামর্শে ছোট বাচ্চার সাথে সব সময় মাতৃভাষায় কথা বলেছেন। ফলে সে উভয় কালচারে খুব স্মার্ট একটা বাচ্চা। এই বাচ্চা কখনো স্বার্থপর হবে না, আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রাখবে, সবাইকে ভালবাসবে।

আমি শুরুতে কেন প্রমিত বাংলা শেখাচ্ছি না?
বাংলা-ইংরেজির ক্ষেত্রে যদি শতভাগ প্রভাব পড়ে তাহলে প্রমিত-সিলেটির ক্ষেত্রে অন্তত ৫০% প্রভাব পড়বে আমি এটা বিশ্বাস করি। আর বাচ্চারা যেখানে প্রকৃতিগতভাবে মাল্টিলিঙ্গুয়াল, সেখানে আমি বাড়তি দুশ্চিন্তা করে লাভ কী। তাই সে বড় হোক দাদু, ফুপু ও চাচ্চুদের ভাষায় কথা বলে। স্কুলে গেলে এমনিতেই প্রমিত ভাষা শিখে ফেলবে। একাডেমিক দিক দিয়ে একটুও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নাই। আমি নিজে একটাও ইতালিয়ান শব্দ না শিখে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, কিন্তু এক বছরের মাথায় আমি পুরোপুরি ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলেছি। শতভাগ ভিন্ন ভাষা যদি আমি এক বছরে শিখতে পারি তাহলে আমার বাচ্চাও নতুন একসেন্ট ও ডায়ালেক্ট ধারণ করতে পারবে।

প্যারেন্টিং জিনিসটা আসলে খুব সহজ। আমরা বাড়তি চিন্তা করে জটিল বানিয়ে ফেলি। আমি পরামর্শ দেয়ার মত প্যারেন্টিং এক্সপার্ট না, তবুও ছোট একটা পরামর্শ প্রায়ই মানুষকে দিয়ে থাকি। নতুন ভাষা শেখানোতে এত শ্রম না দিয়ে বাচ্চাকে কথা বলার টোন শেখান, কখন কিভাবে কথা বলতে হয়। 'শেখানো'র চেয়ে অধিক উপযুক্ত শব্দ হবে 'দেখান'। আপনাকে দেখে সে নিজেই শিখবে। সবার সাথে মিশতে দিন। রোবট না বানিয়ে আবেগ, সহমর্মিতা, ভালবাসায় পরিপূর্ণ মানুষ গড়ে তুলুন।
আমার স্ত্রী প্রায়ই বাচ্চার মুখে অনুপযুক্ত শব্দ শোনলে চিন্তিত হয়ে পড়েন। আমি বলি, "সবার সাথে মিশলে ভাল খারাপ দুইটাই শিখবে এটা স্বাভাবিক। এই সুযোগে তুমি তাকে ভাল ও খারাপ কথার মধ্যে পার্থক্য শিখিয়ে দাও। এটাকে তুমি শেখানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করো।"

ছেলের জন্য বই কিনতে গিয়েছিলাম রাজা ম্যানশন একটা দোকানে। দোকানদার জানতে চাইলেন বাচ্চার বয়স কত। খুব অস্বস্তি লাগছিল উত্তর ...
03/02/2025

ছেলের জন্য বই কিনতে গিয়েছিলাম রাজা ম্যানশন একটা দোকানে। দোকানদার জানতে চাইলেন বাচ্চার বয়স কত। খুব অস্বস্তি লাগছিল উত্তর দিতে, কারন ঐপাশের রিয়েকশনটা আমার জানা আছে। বললাম, দেড় বছর (যদিও তখন বয়স এক বছর হয়েছে কিছুদিন আগে)। প্রত্যাশিত রিয়েকশনটাই পেলাম। "দেড় বছরের বাচ্চা এসবের কী বুঝবে? আপনি বরং রঙিন ছবির বই নিয়ে নেন।"

তখন অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু একটা বলতে হয়। "আমার বাচ্চা বইয়ের লেখা বুঝবে না আমি ভাল করেই জানি৷ বই কেনার উদ্দেশ্য হল আমি তাকে পড়ে শোনাব।"

৩-৪ মাসের বাচ্চাকে বই পড়ে শোনানোর ধারণাটা আমাদের দেশে এখনো হাস্যকর পর্যায়ে রয়ে গেছে। অথচ সারা বিশ্বে এটা অনেক পুরাতন প্রতিষ্ঠিত ও গবেষণালব্ধ একটা কনসেপ্ট। সদ্য প্রয়াত আমেরিকান শিক্ষাবিদ জিম ট্রিলিজের বিশদ গবেষণা রয়েছে এ বিষয়ে। তার লেখা বই 'The read-aloud handbook' পড়ে পুরো বইটির সারাংশ আমার স্ত্রীকে বুঝালাম। কারন কনসেপ্টটা বুঝতে পারলে তা অনুশীলনে আগ্রহ বাড়ে। জিম ট্রিলিজের কাছে মানুষ জানতে চাইল কোন বয়স থেকে বাচ্চাকে রিড এলাউড করব। তিনি উত্তর দিলেন, আমরা বাচ্চাকে কোন বয়স থেকে কথা শুনাই? আমরা কি অপেক্ষা করি যে বাচ্চা কথা বলা শিখবে তারপর তার সাথে কথা বলব? নাকি প্রথম দিন থেকেই কথা বলি? হ্যা, ঠিক একইভাবে আমরা রিড এলাউডও প্রথম দিন থেকেই করব।

জিম ট্রিলিজ তার দীর্ঘ গবেষণায় রিড এলাউডের সাথে বাচ্চার ভবিষ্যৎ লেখাপড়া ও ক্যারিয়ারের কতটুকু সংযোগ ও প্রভাব রয়েছে তা জরিপসহ তুলে ধরেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, বাচ্চাকে ৬-৭ বছরের আগে পড়া শেখাবেন না, শুধু পড়ে শোনাবেন। আমাদের দেশে ঠিক উলটো কাজটা আমরা করি। পড়ে শুনাই না, পড়া শিখিয়ে ফেলি। অথচ কম বয়সে পড়া শিখিয়ে ফেলাটা বাচ্চাদের মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। অর্থাৎ সোজাসাপ্টা করে যদি বলি তাহলে ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায় যে আমাদের দেশে কিন্ডারগার্টেনগুলো বাচ্চাদের মস্তিষ্ক নষ্ট করছে।

আমার বড় ছেলের জন্মের কয়েক দিন আগে একটা হাই কনট্রাস্ট (সাদা-কালো) ফেব্রিক্স বই অনলাইন থেকে অর্ডার দিয়ে আনলাম। নবজাতক বাচ্চারা ৩০সে.মি এর অধিক দূরত্বের জিনিস দেখতে পায় না এবং সাদা কালো ব্যতীত অন্য রঙ বুঝতে পারে না। তাই হাই কনট্রাস্ট ছবি কাছে এনে ধরলে সেটা তারা উপভোগ করে। সত্যি বলতে ব্যাপারটা আমি নিজেই এত বেশি উপভোগ করেছি। ফেব্রিক্স থেকে ধীরে ধীরে হার্ডবোর্ড, প্লাস্টিক এবং এখন কাগজের বইয়ে নিয়ে এসেছি। এখন আর তাকে বই পড়ার বিষয়ে উপদেশ দেয়া লাগে না। সে-ই আমাদেরকে উপদেশ দেয়া শুরু করে দিয়েছে। আজকে বিকালে বই পড়ানোর ফাঁকে একবার হাতে মোবাইল ফোন নিয়েছিলাম, সে বলে উঠল "তুমি মোবাইল নিলে কিন্তু আমিও মোবাইল দেখা শুরু করব, ধরো বই থেকে আমাকে স্পাইডারের গল্পটা শোনাও।" প্রায়ই তার মাকে বলে, "আম্মা মোবাইল দেখা তো ভাল না, তুমি মোবাইল দেখো কেন?"
এই যাত্রাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। কিন্তু দীর্ঘ অনুশীলনের পর এখন আমরা সত্যি খুব উপভোগ করছি।

বাচ্চাদের মস্তিষ্কের মত নমনীয় ও মোলায়েম বস্তু আর পৃথিবীতেও নাই। তাকে 'শেখানো'র চেয়ে বেশি জরুরি হল 'দেখানো'।

সারা জীবন দেশেই অতিবাহিত করার পরিকল্পনা। দেশেই বাচ্চারা লেখাপড়া করবে, বড় হবে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে খুব ভাবি, চিন্তা করি। আত্মীয়স্বজনদের আমি যতটা না ডাক্তারি পরামর্শ দেই তার চেয়ে বেশি দেই প্যারেন্টিং পরামর্শ।

বাচ্চাদের মস্তিষ্ক নিয়ে স্টাডি করি, বই সংগ্রহ করি, আশেপাশের মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। কারন আমরা যত বেশি দেরি করব ব্যাপারগুলো তত কঠিন হয়। এই সুন্দর নিষ্পাপ প্রাণগুলো জাতির আগামীকে সুন্দর করবে। তাই আমার মতে প্যারেন্টিংয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর একটিও নেই।

আমার বড় ছেলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাতে মোবাইল হাতে নিতে পারি না। ঘুমানোর সময় ডিভাইস দূরে রেখে তাকে বই পড়ে শুনাই। প্রথমে খু...
15/01/2025

আমার বড় ছেলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাতে মোবাইল হাতে নিতে পারি না। ঘুমানোর সময় ডিভাইস দূরে রেখে তাকে বই পড়ে শুনাই। প্রথমে খুব উৎফুল্ল থাকে, বই দেখে দেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে, তারপর ধীরে ধীরে চোখে ঘুম নেমে আসে। রুটিনটায় এতই অভ্যস্ত হয়েছি যে প্রায় সময় একইসাথে আমারও ঘুম চলে আসে।
সপ্তাহে একদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। আজ সেই দিন। একটু আগে খবর নিয়ে জানলাম সে এখনো বিছানায় খেলনা নিয়ে ব্যস্ত। আমি ঘরে থাকলে এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়ত।
আমরা ছোটবেলায় মোবাইল ফোন পাই নি, খুব বেশি খেলনাও পাই নি। ঘুমানোর সময় কেউ একজন গল্প শোনাত বা গুনগুন করে গান শোনাত। আমাদের কল্পনার রাজ্য ছিল বিশাল। এখন বাচ্চারা কল্পনা করার সময়ই পায় না, রঙিন পর্দার সামনে সবকিছু ভেসে উঠে। ডিভাইস কল্পনাশক্তিকে কেড়ে নিয়েছে।

আইনস্টাইনের খুব বিখ্যাত একটা উক্তি "কল্পনা হল জ্ঞানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ।"
মা বাবা হিসেবে বাচ্চাদের চিন্তা করার শক্তি, কল্পনা করার শক্তি বৃদ্ধি করা আমাদের সবচেয়ে বড় একটি দায়িত্ব।

আমরা ছোটবেলা যখন 'তিন গোয়েন্দা' পড়তাম তখন পঠিত প্রতিটি ঘটনা কল্পনায় ভেসে উঠত। এই কল্পনা অনেক শক্তিশালী ছিল। মুভি দেখার চেয়েও অধিক স্পষ্ট ছিল কল্পনার দৃশ্যগুলো। মুভিতে আমরা সেটাই দেখতে বাধ্য থাকতাম যা ডিরেক্টর বানায়, আর কল্পনায় আমরা নিজেরাই একেকজন ডিরেক্টর।

আমি আমার ছেলের মাকে একটা কথা প্রায়ই বলে থাকি, "স্ক্রিনটাইম হল আকর্ষণীয় চোখের খাদ্য। আর মস্তিষ্কের খাদ্য হল চিন্তা ও কল্পনা। বাচ্চাকে চোখের খাদ্য দিয়ে ব্যস্ত রাখলে মস্তিষ্ক তার পর্যাপ্ত খাদ্য পাবে না।"

মিডিয়া লিটারেসির অভাবে আমাদের উপমহাদেশ অদূর ভবিষ্যতে খুব সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে গৃহ...
18/09/2024

মিডিয়া লিটারেসির অভাবে আমাদের উপমহাদেশ অদূর ভবিষ্যতে খুব সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থেকে গৃহযুদ্ধ কিছুই বাকি থাকবে না। আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলামে ছোট একটা অধ্যায় যোগ করলেই এই সমস্যাটা রোধ করা সম্ভব হত।

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলাম হল ফিনল্যান্ডের। ফিনল্যান্ডের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিডিয়া লিটারেসি খুব গুরুত্ব দিয়ে শেখানো হয়। তাদের শিক্ষকগণ ফেইক নিউজ ও ফেইক সিনারিও বানিয়ে পাওয়ারপয়েন্টে তা উপস্থাপন করেন। ছাত্রছাত্রীরা সেগুলো দেখে সনাক্ত করে থাকে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা। কোনটা কেন সত্য বা মিথ্যা তার ব্যাখ্যাও দিতে হয়। ফিনল্যান্ডের বাচ্চাদের খুব ছোট বয়স থেকেই নিরাপদ ইন্টারনেট ও যথাযথ সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার শেখানো হয়। ফলে তারা গুজব ও প্রোপাগান্ডা চিহ্নিত করতে পারে, স্টেরিওটাইপ চিন্তাভাবনাগুলো আলাদা করতে পারে এবং অন্যের বিশ্বাস ও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শিখে।

এই শিক্ষার ঘাটতির একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল ২০১২'র রামু তাণ্ডব। সোশাল মিডিয়ায় কিছু দেখলে আমরা যাচাই করার জন্য সময় নেই না। এ,আই দিয়ে বানানো ছবিতে লিখি মাশা'আল্লাহ, অমত হলে দেই গালি, আর মাঝেমধ্যে গুজবের উপর ভিত্তি করে ঘটে বিশাল তাণ্ডব। সম্প্রতি আওয়ামী সরকার পতনের পর ভারতের মত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে যে পরিমাণ গুজব রটানো হয়েছে তা থেকে আরো স্পষ্ট আমাদের উপমহাদেশে মিডিয়া লিটারেসির কি ভয়ঙ্কর মাত্রার ঘাটতি, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সঙ্কট তৈরি করতে পারে।

বিগত সরকারের সময় আইসিটি বিষয়টা কারিকুলামে যোগ করা হয়েছিল। ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি বিষয়ে অনেক কিছু শেখানো হয়েছে, কিন্তু ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারের শিক্ষা দেয়া হয় নি। বেসিক জ্ঞানের ব্যাপারে আমরা সব সময়ই পিছিয়ে থাকি। তাই আইসিটি বিশেষজ্ঞ হয়েও অনেকের সোশাল মিডিয়ায় অবিশ্বাস্য রকমের ইনএপ্রোপ্রিয়েট কর্মকাণ্ড আমরা দেখতে পাই। ইন্টারনেট হাতে তুলে দেয়ার আগে তাই মিডিয়া লিটারেসি বিষয়ে পাঠদান খুব জরুরি।

ফিনল্যান্ড মিডিয়া লিটারেসিকে তাদের নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করে থাকে। হ্যাপিনেস ইনডেক্সে শীর্ষে থাকা এই দেশটি তাই পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপূর্ণ একটা দেশ৷ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অবনতির সাথে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারসাম্য আনয়ন না করলে আগামীতে বিপদ অবশ্যম্ভাবী।

শিক্ষা ব্যবস্থা দুই দিনে পরিবর্তন হয়ে যাবে তার জন্য অপেক্ষা বা আশা করে লাভ নাই। তাই আপনার সন্তানকে আপনি নিজ উদ্যোগে মিডিয়া লিটারেট করে তুলুন। পর্যাপ্ত ম্যাটারিয়াল সংগ্রহ করে আপনার সন্তানকে ইন্টারনেট-নির্ভর পৃথিবীর জন্য প্রস্তুত করে ফেলুন।

ডা. সাইফুর রহমান
১৮/০৯/২৪

শিশুর মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান আমাদের প্যারেন্টিং বিষয়ে পুরো ধারণা পালটে দিতে পারে। আমাদের প্যারেন্...
21/08/2024

শিশুর মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান আমাদের প্যারেন্টিং বিষয়ে পুরো ধারণা পালটে দিতে পারে। আমাদের প্যারেন্টিংয়ে এনে দিতে পারে এক অনন্য নতুনত্ব। আজকে আমরা মস্তিষ্কের ছোট একটি অংশ 'আমিগডালা' সম্পর্কে জানব। এবং জানব মস্তিষ্কের ঊর্ধ্বাংশ ও নিম্নাংশ কিভাবে তাদের আচার-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

বিষয়টা বুঝানোর সুবিধার্থে মস্তিষ্ককে আমরা দুই তলা একটি ঘরের সাথে তুলনা করি। আমাদের ঘরে যেমন নিচ তলায় অপরিহার্য জিনিসগুলো থাকে, তেমনই মস্তিষ্কের নিচ তলা শ্বাসপ্রশ্বাস, আবেগ, আত্মরক্ষা ইত্যাদি অপরিহার্য বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
অপরদিকে উপর তলা উন্নত চিন্তাগুলোকে প্রক্রিয়া করে। যেমন সঠিক সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, আত্মউপলব্ধি, নৈতিকতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি উন্নত বিষয়গুলো প্রস্তুত করা হল এই অংশের কাজ।

মস্তিষ্কের নিচতলা জন্মগতভাবে পরিপূর্ণ। আর অপরিপক্ব উপরতলা বয়সের সাথে ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে, এবং তা পরিপূর্ণতা লাভ করে বিশের দশকের মধ্যভাগে। অপরিপক্ব উপরতলার কারনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি উন্নত চিন্তার অংশটা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বল থাকে। এই বাস্তবতাটা অনুধাবন করে বাচ্চাদের কাছ থেকে অভিভাবকদের একেক বয়সে একেক রকমের প্রত্যাশা নির্ধারণ করা উচিত। সঠিক মাত্রার প্রত্যাশা নির্ধারণ করতে পারলে তা বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক হবে।

মস্তিষ্কের নিচতলার ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ হল আমিগডালা। মস্তিষ্কের দায়িত্ববান এই পাহারাদার আপদকালীন সময়ে আমাদেরকে রক্ষা করে। গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ সামনে কোন বিপদ দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক গতি পরিবর্তনের কাজ করে এই আমিগডালা। সাপ দেখলে আপনি দৌড় দেন, তখন সাপটি বিষধর না নির্বিষ তা চিন্তা করেন না, আগে জীবন বাঁচান। এই কাজটি করে থাকে আমিগডালা।

আমিগডালা উপরতলা মস্তিষ্কের সাথে সংযোগ সিড়ি হিসেবে কাজ করে। যখনই আপনার বাচ্চার আমিগডালা ক্ষিপ্ত থাকে অর্থাৎ এই সংযোগ সিড়ি যখন বাধাগ্রস্ত হয় তখন তার উপরতলা মস্তিষ্ক তথা উন্নত চিন্তার অংশটা ঠিকমত কাজ করে না। নিচতলা মস্তিষ্ক উপরতলাকে কব্জা করে ফেলে। তাই নিচতলার আদেশেই তখন সে পরিচালিত হয়। উপরতলার উন্নত চিন্তার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় তখন সে ভুল ও অপরিপক্ব কাজটি করে থাকে। ফ্রিজে অরেঞ্জ পপসিকল শেষ হওয়া সত্ত্বেও আপনার বাচ্চা এই মুহূর্তেই তা চাইছে, অন্য ফ্লেভার দিয়েও কাজ হচ্ছে না, হাতের সামনে যা পায় তাই ছুড়ে মারছে। কারন তার আমিগডালা বা সংযোগ সিড়িটা বাধাগ্রস্ত ফলে নিচতলা মস্তিষ্ক তার সম্পূর্ণ শক্তি নিয়ে কাজ করছে। উপরতলা মস্তিষ্ক এই মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন, তাই আপনি যাই যুক্তি দেখান সে তা বুঝতে পারবে না।

এরকম পরিস্থিতিতে আপনার কাজ কী? আপনি এখন কঠোরতা অবলম্বন করলে তার সংযোগ সিড়ি আরো বেশি বাধাগ্রস্ত হবে। আপনার একমাত্র কাজ হল এই সিড়িটা উন্মুক্ত করা যাতে উপর ও নিচ তলার সংযোগ পুনরুদ্ধার হয়। বাচ্চাকে তার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে আদর যত্ন করে তাকে শান্ত করবেন। তার পছন্দের অন্যকিছুর দিকে ধাবিত করার চেষ্টা করবেন। এভাবে তাকে শান্ত করার ফলে সংযোগ সিড়িটা বাধামুক্ত হয়ে যাবে এবং উপরতলা মস্তিষ্ক এভেলেবল হবে। এখন আপনি কিছু বুঝিয়ে বললে সে তা গ্রহণ করার সম্ভবানা বেশি থাকবে।

ভয়-ভীতির ক্ষেত্রে আমিগডালার ব্যাপক ভূমিকা। ভীতসন্ত্রস্ত বাচ্চার আমিগডালা ক্ষিপ্ত থাকে ফলে উপরতলা মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করে না। তাই আপনার সাত বছর বয়সী ছেলে সাইকেল চালানো শিখতে রাজি না কারন তার অতীত অভিজ্ঞতা এক রকমের ভীতি সৃষ্টি করে রেখেছে। আপনি তার ক্ষিপ্ত আমিগডালা শান্ত করার জন্য তাকে অভয় দিবেন, আপনার নিজের ভয়গুলো শেয়ার করবেন এবং নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য পুরস্কারের মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করবেন। নিচতলা মস্তিষ্ককে শান্ত ও উপরতলা মস্তিষ্ককে কাজের জন্য এভেলেবল করতে না পারলে আপনার বাচ্চা নতুন কোন স্কিল অর্জন করতে পারবে না।

বয়সের সাথে সাথে আপনার বাচ্চার উপরতলা মস্তিষ্ক ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়তে থাকবে। আবার পরিস্থিতি ভেদে তা ব্যবহারের মাত্রার মধ্যেও তফাৎ থাকবে। আপনি যত বেশি অনুশীলন করাবেন তত বেশি সে তা ব্যবহারে পারদর্শী হয়ে উঠবে। অপরদিকে আপনি উপরতলা মস্তিষ্ক ব্যবহারের অনুশীলন না করিয়ে যদি সব সময় কঠোরতা ও উপেক্ষার মাধ্যমে আমিগডালাকে ক্ষিপ্ত রাখেন, তাহলে উন্নত চিন্তা বিকাশে সে অদক্ষ ও অপরিপক্ব থেকে যাবে।

আপনার বাচ্চার বয়সের ভিত্তিতে উপযুক্ত প্রত্যাশা নির্ধারণ করতে পারলে এবং তার মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশের নির্দিষ্ট চাহিদা অনুসারে উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত রেস্পন্স দিতে পারলে সে হয়ে উঠবে উচ্চ চিন্তাশক্তি সম্পন্ন ও ধৈর্যশীল একজন মানুষ।

ডা. সাইফুর রহমান
২১.০৮.২৪

বাচ্চাদেরকে উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাল হল বর্তমান। সম্ভবত আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে একট...
04/05/2024

বাচ্চাদেরকে উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাল হল বর্তমান। সম্ভবত আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই চিন্তিত থাকি।
বাচ্চার উচ্চশিক্ষার জন্য এখন থেকে ফিক্সড ডিপোজিট করতে হবে; বাচ্চাকে বিয়ে দেয়ার জন্য, বাচ্চার ক্যারিয়ার গড়ার জন্যও টাকা সঞ্চয় করতে হবে; সন্তানের বাকি জীবন অতিবাহিত করার জন্য সিকিউরিটি হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ রেখে যেতে হবে। এই দুষ্ট চক্র মা-বাবাদেরকে বাচ্চার সাথে বসবাস করতে দেয় না, মা-বাবা বাস করে বাচ্চার ভবিষ্যৎ কালে আর বাচ্চারা একা পড়ে থাকে বর্তমানে। ভবিষ্যতকে তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত এই ছুটে চলা, এই অতিরিক্ত কর্মব্যস্ততা সন্তানের শৈশবকে করে তুলে স্মৃতিহীন আর মা-বাবাদেরকে দেয় অনুপভোগ্য প্যারেন্টিং অভিজ্ঞতা।

বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করা অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ একটা দায়িত্ব, কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নয়। ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনার চেয়ে বর্তমানকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সেদিকে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। বাচ্চাকে বয়সভিত্তিক ডেভেলপমেন্টাল খেলনা কিনে দিন। এডুকেশনাল ও ক্রিয়েটিভ টয়ের পাশাপাশি কিছু আনস্ট্রাকচার্ড টয় দিন। সঞ্চয়ের অজুহাতে এগুলো থেকে বাচ্চাকে বঞ্চিত করবেন না।

অতিরিক্ত স্ক্রিন-টাইমের বদলে বাচ্চাকে নিয়মিত প্রকৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দিন। সবুজ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি যতবেশি এক্সপ্লোর করাবেন তত বেশি তার মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হবে। এটা এক্সপেরিমেন্ট দ্বারা প্রমাণিত যে সমৃদ্ধ পরিবেশের চেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বাচ্চার মস্তিষ্কের জন্য বেশি উপকারী। ('Einstein never used flash cards' by Roberta Michnick Golinkoff)

বাচ্চার সাথে সুন্দর সুন্দর কিছু স্মৃতি তৈরি করুন। হাসি, আনন্দ, এডভেঞ্চার ইত্যাদি ব্রেইন স্টিমুলেশনের উপাদানগুলো বাচ্চাদের খুব বেশি প্রয়োজন।

দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় রিড-এলাউড এর জন্য রাখুন। ঘুমানোর আগে বাচ্চাকে বই পড়ে শোনানোর অভ্যাস করুন। এতে বই-ভীতি তৈরি হবে না এবং সারা জীবনের জন্য বইয়ের প্রতি তার ভালবাসা সৃষ্টি হবে।

খাওয়ার সময়টাকে ফ্যামিলি টাইম বানিয়ে ফেলুন। খাওয়ার সময়টুকু শুধু খাওয়ার জন্য নয়। না খেলেও টেবিলে আসতে হবে। বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয়। আপনি যা খাবেন, যেভাবে খাবেন তা-ই তার ভবিষ্যৎ খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত হবে।

বাচ্চার সাথে খেলাধুলা করুন, সামনাসামনি বসে তার সাথে কথা বলুন। এতে তার কগনিটিভ ও মটর ডেভেলমেন্ট বিলম্ব হবে না। বাচ্চার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বিকশিত করার জন্য বাচ্চাকে মা বাবার পর্যাপ্ত সময় দেয়ার কোন বিকল্প নাই। এই ভিত্তিটা তৈরি না করে যদি আপনি উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয়ের চিন্তায় সারাক্ষণ বিভোর থাকেন তাহলে কোন লাভ হওয়ার কথা না।
বাচ্চার বর্তমানে বসবাস করুন। প্যারেন্টিং উপভোগ করুন। সমৃদ্ধ বর্তমান একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলে। তাই বর্তমানকে বঞ্চিত করবেন না। আর বাচ্চাদেরকে মা বাবা থেকে বঞ্চিত করবেন না।

মা বাবাদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ হল খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত। এমন মা-বাবা খুব কম আছেন যারা তাদের বাচ্চাদের খাবারের ব...
29/12/2023

মা বাবাদের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ হল খাওয়াদাওয়া সম্পর্কিত। এমন মা-বাবা খুব কম আছেন যারা তাদের বাচ্চাদের খাবারের বিষয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট। 'আমার বাচ্চা কেন খায় না, কীভাবে খাওয়াব, কী করলে তার খাওয়ার রুচি বাড়বে?' এই প্রশ্নগুলো আমরা ডাক্তারদের সবচেয়ে বেশি শোনতে হয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি প্রায় সব প্যারেন্টই রুচি বাড়ানোর ঔষধ বা ভিটামিন প্রেসক্রাইব করলে খুশি হোন। পুরো পদ্ধতি পরিবর্তন না করে তারা শর্টকাট ঔষধভিত্তিক সমাধানে বেশি আগ্রহী। আমি আজকে বাচ্চাকে খাওয়ানো বিষয়ে খুব বেসিক কিছু কথা অতি সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব।

প্রথমেই বলে নিই, বাচ্চার স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস তৈরির জন্য কোন শর্টকাট পদ্ধতি নাই।

বাচ্চা কেন খায় না - প্রথমবার যখন আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি ইতিমধ্যেই আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। বাচ্চার খাদ্যাভ্যাস তৈরির প্রথম ধাপ হল গর্ভাবস্থায় মায়ের খাদ্যাভ্যাস। মা যে খাদ্য গ্রহণ করেন তার বাচ্চা জরায়ুর এম্নিওটিক ফ্লুইড থেকে একই খাদ্যের স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। বিশেষ করে শেষ তিন মাস ভ্রূণ এম্নিওটিক ফ্লুইড গিলার মাধ্যমে মায়ের ডায়েটের সাথে পরিচিত হয়। মা যদি কোমল পানীয় ও ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকেন তাহলে ভ্রূণ একই জিনিসের স্বাদ পায়। গবেষণায় দেখা যায় ৩-৪ বছর বয়সেও সেই বাচ্চার কোমল পানীয় ও ফাস্ট ফুডের প্রতি আগ্রহ অব্যাহত থাকে। তাহলে বোঝা গেল গর্ভাবস্থা থেকেই আপনি আপনার বাচ্চার টেস্ট বাড তৈরি করছেন। আপনি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই তৈরি করছেন। পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে।

গর্ভাবস্থায় যাদের অস্বাস্থ্যকর ডায়েট ছিল তাদের জন্য কি খুব হতাশাজনক তথ্য বলা হয়ে গেল? হতাশার কিছু নাই, সব সময় বিকল্প উপায় থাকে। গর্ভাবস্থায় আপনার ডায়েট অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকলে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়টাতে ডায়েট পরিবর্তন করে ফেলুন। এক পরীক্ষায় গর্ভবতী এক মাকে গর্ভের শেষ তিন মাস ও স্তন্যপানের ছয় মাস অধিক পরিমাণ গাজর খাওয়ানোর পর দেখা গেছে ৬ মাস বয়সের পর বাচ্চার মধ্যে গাজর খাওয়ার প্রতি অধিক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়েছে। তাই স্তন্যপানের সময়টুকু মোটেও অবহেলা করা যাবে না।

এবার বাচ্চার বয়স ৬ মাস হল। এখন বাচ্চাকে কিভাবে খাওয়াবেন? আমরা শুরুতেই বাচ্চার খাওয়ানোর সময়টাকে তাদের জন্য ভীতিময় করে তুলি। খাওয়ানো বলতে আমরা বুঝি গিলানো। বাচ্চাকে খাবার গিলালে তাৎক্ষণিক হয়তো কিছু খাবে, কিন্তু সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব পড়বে এবং খাবারের প্রতি তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে।
🔴 ৫টি ইন্দ্রিয় দিয়ে বাচ্চাকে তার খাদ্য অনুভব করতে দিন 🔴
চোখ, কান, নাক, ত্বক ও জিহ্বা হল আমাদের ৫টি ইন্দ্রিয়। খাবারটা প্রথমেই জিহ্বায় দিয়ে পুরো পদ্ধতিটা আমরা কঠিন করে ফেলি। ইন্দ্রিয়ের ক্রম অনুসরণ করা খুব জরুরি। প্রথমে আমরা বাচ্চাকে খাবারটা দেখাব (চোখ), খাবার সম্পর্কে বলার চেষ্টা করব (কান), তারপর আরেকটু কাছে নিব যাতে সে আরো ভালভাবে দেখতে পারে ও তার ঘ্রাণ নিতে পারে (নাক), তারপর তাকে খাবারটা ধরার সুযোগ দিব (ত্বক)। ধরার সুযোগ দিতে আমরা সবচেয়ে বেশি কার্পণ্য করি। কাপড় নষ্ট করে ফেলবে, খাবার ফেলে দিবে ইত্যাদি অজুহাতে আমরা এই ইন্দ্রিয় থেকে তাদের বঞ্চিত রাখি। এই ৪টা ইন্দ্রিয় যখন খাবার সম্পর্কে ভাল ধারণা পাঠাবে তার মস্তিষ্কে, তখনই সে খাবারটা মুখে দিবে (জিহ্বা)।

বাচ্চাকে খাওয়ানোর প্রক্রিয়াটা অতিরিক্ত পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে আমরা সুদূরপ্রসারী অমসৃণ এক যাত্রার আবির্ভাব ঘটাই। বাচ্চা খাবার ছুড়ে মারবে, শরীরে মাখবে, কাপড় নষ্ট করবে এগুলো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এগুলোকে বেশি ভয় পাওয়ার কারনে মা বাবারা বাচ্চাকে খাবার শুধু গিলাতে চান। বাচ্চার খাবারের সুন্দর একটা পরিবেশ গড়ে তুলুন, তার খাওয়ার সময়টা আলাদা না করে আপনাদের খাওয়ার সময়ে তাকে হাই চেয়ারে বসিয়ে তার প্লেটে খাবার রাখুন। আলাদা সময়ে খাওয়ালে হাই চেয়ারে বসিয়ে তার সামনাসামনি বসুন। তার হাতে একটা চামচ দিন, সে তার মত খাবার নিয়ে খেলা করুক, আপনি অন্য একটা চামচ নিয়ে এর মধ্যেই খাওয়ানোর কাজ চালিয়ে যান। এক বছর বয়স থেকে বাচ্চারা খুব স্বাধীনতা চায়। খাওয়ানোর সময় তাদেরকে সেই স্বাধীনতা দিলে পুরো প্রক্রিয়াটা অনেক সহজ হবে এবং খাওয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়বে।

খাওয়ার সঠিক অভ্যাস তৈরির জন্য সবচেয়ে জরুরি খাওয়ার সঠিক পরিবেশ। টিভির সামনে খাওয়ানো, মোবাইল ফোন বা যেকোন ডিভাইস, এমনকি বই হাতে দিয়ে খাওয়ানো পরিহার করা উচিত। খাওয়ানোর সময় তার শতভাগ মনোযোগ রাখা উচিত খাবারের উপর। এতে সে খাওয়ার সাথে খাবারকে অনুভবও করতে পারবে। ডাইনিং টেবিলের পাশে বাচ্চার হাই চেয়ার রাখুন। হাই চেয়ার আপনার জন্য অনেক জিনিস খুব সহজ করে তুলবে। বাচ্চাকে শেখানোর প্রয়োজন খুব কম, বাচ্চারা অনুসরণ করে নিজ থেকে শিখে। লাঞ্চ ও ডিনারকে মূল্যবান ফ্যামিলি টাইম হিসেবে প্রস্তুত করুন। বাচ্চা হাই চেয়ারে বসে বসে পরিবারের সবাইকে দেখবে ও অনুসরণ করবে।

আবারো মনে করিয়ে দিই, বাচ্চার স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস তৈরির জন্য কোন শর্টকাট পদ্ধতি নাই।

আপনার বাচ্চা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠান্ডা যাতে না লাগে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তবুও দু...
03/12/2023

আপনার বাচ্চা বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে, কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠান্ডা যাতে না লাগে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তবুও দুই দিন পর পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে, শ্বাসনালীর ইনফেকশনে ভুগছে কিংবা বারবার ডায়রিয়া হচ্ছে। ঠান্ডা না লাগানোর ব্যাপারে আপনি শতভাগ সচেতন, কিন্তু আপনার বাচ্চার সমস্যা অন্য জায়গায়। সেটা হল দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

যেসব উপাদান আপনার বাচ্চার ইমিউনিটি শক্তিশালী করবে তার মধ্যে অন্যতম হল ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-ডি, জিংক ও প্রোবায়োটিক।

ভিটামিন-সি এর অন্যতম উৎসগুলো হল পেয়ারা, কমলা, লেবু, ক্যাপসিকাম, পেপে, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি;
ভিটামিন-এ: গরুর কলিজা, দুধ, ডিম, গাজর, মিষ্টি আলু, পালং শাক (প্রাণীজ ভিটামিন-এ তথা রেটিনল অধিকতর সমৃদ্ধ);
ভিটামিন-ই: সিরিয়াল, সূর্যমুখী বীজ, কাঠবাদাম, হ্যাজেলনাট, চিনা বাদাম;
ভিটামিন-ডি: সূর্যালোক, স্যামন, টুনা, সার্ডিন, দুধ।
জিংক: দুগ্ধজাত খাদ্য, গরুর মাংস, সামুদ্রিক মাছ প্রভৃতি।

প্রোবায়োটিক হল উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে। বাচ্চাদের ডায়রিয়াসহ পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম একটি কারন হল প্রোবায়োটিকের ঘাটতি। ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাতীয় খাবার যথা দই, চিজ ইত্যাদি হল প্রোবায়োটিকের প্রধান উৎস।

প্রিবায়োটিক (না, প্রোবায়োটিক বলি নি। প্রিবায়োটিক ভিন্ন জিনিস) হল উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার খাদ্য কিংবা জ্বালানি। প্রিবায়োটিকের প্রধান উৎসগুলো হল কলা, পেঁয়াজ, রসুন, এসপারাগাস, গম, বার্লি, কিসমিস, টম্যাটো ইত্যাদি।

এই উপাদানগুলো আপনার বাচ্চার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে তাদের ইমিউনিটি তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠবে।


বাচ্চাদের মস্তিষ্কের সিংহভাগ হল ফ্যাট। তাই ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ফ্যাট। কী ধরণের ফ্যাট? পলি-আনস্য...
18/10/2023

বাচ্চাদের মস্তিষ্কের সিংহভাগ হল ফ্যাট। তাই ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার ফ্যাট। কী ধরণের ফ্যাট? পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সবচেয়ে বেশি জরুরি। এর মধ্যে আছে ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬, তন্মধ্যে ওমেগা-৩ ব্রেইনের জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য।
আর এই ওমেগা-৩ এর সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস হল সামুদ্রিক মাছ। ম্যাকরল, স্যামন, টুনা, হেরিং, কড ও সার্ডিন প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছে সর্বোচ্চ পরিমাণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সমৃদ্ধতম হল ম্যাকরল ও স্যামন। দুইটিই আটলান্টিক মহাসাগরের মাছ। ম্যাকরলের দুইটি প্রজাতি ভারত মহাসাগরে (ইন্ডিয়ান ম্যাকরল ও চাব ম্যাকরল) পাওয়া গেলেও স্যামনের কোন প্রজাতিই আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই আমাদের দেশে ক্যানড স্যামন পাওয়া গেলেও আস্ত স্যামন মাছ খুবই দুর্লভ।

সামুদ্রিক মাছ সহলভ্য নয়, আর ফ্রেশ সামুদ্রিক মাছ তো অসম্ভব। তাই আমাদের দেশে ওমেগা-৩ এর ভাল উৎস হিসেবে কার্প জাতীয় মাছ, রুই ও ইলিশকে বেছে নিতে পারেন। কার্প বলতে বোঝায় কাতলা, কমন কার্প (কার্পু), গ্রাস কার্প, সিলভার কার্প, মৃগেল, বিগহেড ইত্যাদি। এর মধ্যে সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎস সিলভার কার্প হলেও অতিরিক্ত কাঁটার জন্য বাচ্চাদের জন্য বিপদজনকও বটে। একই কথা প্রযোজ্য ইলিশের ক্ষেত্রেও, যদিও তা ওমেগা-৩ এর মোটামুটি ভাল উৎস। ভাল খবর হল বেশিরভাগ মাছে কম বা বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। তাই আপনার বাচ্চার প্রতিদিনের ডায়েটে এক টুকরো মাছ থাকলে ওমেগা-৩ এর চাহিদা পূরণ হয়ে যাবার কথা।

ওমেগা-৩ এর প্লান্ট সোর্স হল তিসি বীজ (flaxseed), চিয়া বীজ, আখরোট(walnut), এভোকাডো ইত্যাদি।
তিসি তেল ওমেগা-৩ এর সর্বোত্তম উৎস ও অন্যান্য ফ্যাটের সমন্বয়ে সবচেয়ে ব্যালেন্সড তেল হলেও এর স্মোক পয়েন্ট কম। তাই উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা যাবে না তবে সস বা ড্রেসিং হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে। নিম্ন তাপমাত্রায় রান্নায় ব্যবহার করা যাবে।

আমিষ, জিংক, আয়রন, আয়োডিন, কোলিন, ফোলেট, ভিটামিন- এ, ডি, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদির পাশাপাশি বাচ্চাদের মস্তিষ্কের বিকাশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বাচ্চার প্রতিদিনের ডায়েটে রাখলে তার স্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধির সাথে সাথে উন্নত মস্তিষ্ক গঠিত হবে।

ছবি: healthifyme

বেবি ওয়াকার বাচ্চাকে দ্রুত হাঁটা শেখাতে সাহায্য করে নাকি বাচ্চার স্বাভাবিক ডেভেলপমেন্টকে বাধাগ্রস্ত করে?কানাডার মত দেশ ক...
14/10/2023

বেবি ওয়াকার বাচ্চাকে দ্রুত হাঁটা শেখাতে সাহায্য করে নাকি বাচ্চার স্বাভাবিক ডেভেলপমেন্টকে বাধাগ্রস্ত করে?
কানাডার মত দেশ কেন বেবি ওয়াকার নিষিদ্ধ করল?

প্রথমেই বেবি ওয়াকারে বাচ্চাদের শরীরের পজিশন সম্পর্কে একটু জেনে নিই। বেবি ওয়াকারে বাচ্চারা সামনের দিকে একটু ঝুকে বসে; তাদের পাগুলো থাকে পেছনের দিকে ছড়ানো এবং কিছুটা ভাঁজ করা (Flexion); পায়ের পাতাগুলো থাকে বাহিরের দিকে বাঁকানো (External rotation); পায়ের অগ্রভাগ দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করে যার কারনে পাতাগুলো নিচের দিকে ভাঁজ করা থাকে (Plantar flexion)।

এই পজিশনগুলো নিঃসন্দেহে এক অস্বাভাবিক ওয়াকিং প্যাটার্ন তৈরি করে এবং পায়ের টেন্ডন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। বেবি ওয়াকারে বাচ্চা শুধুমাত্র পা দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করে। কিন্তু বাচ্চার হাঁটা শেখার অন্যতম উপাদান হল পায়ের উপর শরীরের সম্পূর্ণ ভর গ্রহণ করা ও ভারসাম্য ঠিক রাখা। বেবি ওয়াকারে কোমর বাঁধা থাকে ও পা ঝুলন্ত থাকে যার ফলে এই দুইটি দক্ষতা বিলম্বিত হতে থাকে। এছাড়া হাঁটা শেখার জন্য পায়ের পাশাপাশি চোখেরও কিছু দায়িত্ব আছে। পায়ের গতিবিধি ও ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য চোখ ও মস্তিষ্কের সংযোগ প্রয়োজন। কিন্তু বেবি ওয়াকারে হাঁটার সময় বাচ্চা পা দেখতে পারে না।
তাই স্বাভাবিক বাচ্চার চেয়ে বেবি ওয়াকারে অভ্যস্ত বাচ্চাদের হাঁটা শিখতে অন্তত এক মাস বেশি সময় লাগে।

যুক্তরাষ্ট্রে এক জরিপে দেখে গেছে বেবি ওয়াকার ব্যবহারের ফলে প্রতিদিন দুই হাজার শিশু বিভিন্ন দুর্ঘটনার শিকার হয়। তন্মধ্যে মাথা ও ঘাড়ের আঘাত বেশি পাওয়া গেছে। সম্প্রতি আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স (AAP) দেশে বেবি ওয়াকারের ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। কানাডা এক ধাপ এগিয়ে দেশে বেবি ওয়াকারের উৎপাদন, আমদানি, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।

বেবি ওয়াকারের বিকল্প কী?
আসলে বিকল্পের খুব বেশি প্রয়োজন নাই। স্বাভাবিক নিয়মেই বাচ্চা হাঁটা শিখবে। তবুও বিকল্পের প্রয়োজন হলে বেবি পুশ ওয়াকার ব্যবহার করতে পারেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাকে খুব পছন্দ করেছি। বাচ্চারাও এটা দিয়ে হাঁটতে খুব ভালবাসে।

সন্তানদের সাথে কানেকশন কিভাবে তৈরি করব? আচ্ছা আমরা তো এমনিতেই বাচ্চাদের সাথে কানেক্টেড আছি, তাহলে আবার কানেকশন নিয়ে কথা ...
10/10/2023

সন্তানদের সাথে কানেকশন কিভাবে তৈরি করব?
আচ্ছা আমরা তো এমনিতেই বাচ্চাদের সাথে কানেক্টেড আছি, তাহলে আবার কানেকশন নিয়ে কথা বলার প্রয়োজন আছে?
আচ্ছা আরেকবার নিজেকে প্রশ্ন করি, আমরা কি আসলেই সব সময় বাচ্চাদের সাথে কানেক্টেড থাকি? নাকি শুধু সুসময়ে কানেক্টেড থাকি, আর দুঃসময়ে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়?
আপনার বাচ্চা যখন হাসিখুশি থাকে তখন তার সাথে সময়টা খুব উপভোগ করেন। কিন্তু আত্মীয়র বাসায় দাওয়াতে যখন সে বারবার জ্বালাতন করে সবার সামনে বিব্রত করছে তখন কি পরিস্থিতিটা সঠিকভাবে সামাল দিতে পারছেন, নাকি মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন? এই জায়গায় কি কানেকশনে ফাটল ধরছে?
(কানেকশন শব্দটি প্যারেন্টিং মেথডোলজির একটা বিশেষ টার্ম, তাই বারবার অনুবাদ ছাড়াই ব্যবহার করছি)

চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে আমরা বুঝে উঠতে পারি না কিভাবে প্রতিক্রিয়া করলে আমাদের বাচ্চার মস্তিষ্কের জন্য উপকার হবে। বিষয়টা বুঝতে হলে বাচ্চাদের মস্তিষ্ক নিয়ে অল্পবিস্তর জানা দরকার। মস্তিষ্ককে যদি দুই ভাগে ভাগ করি - ডান ও বাম। ডান মস্তিষ্ক আমাদের আবেগ অনুভূতি নিয়ে কাজ করে, এটি জন্মগতভাবেই মোটামুটি বিকশিত থাকে। অর্থাৎ বাচ্চারা প্রায় পরিপূর্ণ ডান মস্তিষ্ক নিয়েই জন্মায়। অন্যদিকে বাম মস্তিষ্ক হল আবেগী ডান মস্তিষ্কের যুক্তিবাদী বড় ভাই। বাম মস্তিষ্ক আবেগের ধার ধারে না, এখানে সব কাজ হয় যুক্তির সাথে। বাচ্চারা অনুন্নত বাম মস্তিষ্ক নিয়ে পৃথিবীতে আসে এবং পরবর্তী দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এর মেরামত কাজ চলতে থাকে।

শহীদ সাহেবের ৫ বছর বয়সী ছেলে রাফি যখন রাত ১১টার সময় আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে তখন তার ব্রেইন পুরোপুরি আবেগী ডান অংশের দখলে। যৌক্তিক বাম অংশ তখন শুধুই দর্শক। এই সময় তিনি কিভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবেন? আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে, নিউমোনিয়া হবে এরকম একটা জ্ঞানগর্ভ লেকচার দিবেন? অথবা রাতে সব দোকান বন্ধ তাই আইসক্রিম পাওয়া সম্ভব না এটা বোঝাবেন? নাকি তার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে আইসক্রিমের বিষয়টা ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন? কোনটি তার মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে?

এই মুহুর্তে তার অপরিপক্ব ডান মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন অন্য একটি ডান মস্তিষ্ক। তাহলেই এই মিডনাইট ট্যানট্রাম থেকে বাঁচতে পারবেন শহীদ সাহেব। এখানে খুব মজার একটা সূত্র আছে : "কানেক্ট উইথ রাইট & রিডিরেক্ট উইথ লেফট।"
যুক্তরাষ্ট্রের ইউ,সি,এল,এ স্কুল অব মেডিসিনের সাইকায়াট্রি বিভাগের ক্লিনিকাল প্রফেসর ড্যানিয়েল জে সিগ্যাল হলেন এই সূত্রের প্রবক্তা। সহজভাবে বললে তিনি এটা বুঝাতে চেয়েছেন যে আপনার ডান মস্তিষ্কের সাথে বাচ্চার ডান মস্তিষ্কের সংযোগ ঘটাবেন, তারপর যৌক্তিক বাম মস্তিষ্ক দিয়ে সঠিক রাস্তা দেখাবেন।

বাচ্চার ট্যানট্রামের সময় আগে তাকে শান্ত না করলে তার বাম মস্তিষ্ক কাজ করার জন্য কখনো উপযোগী হবে না। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল বাচ্চার অনুভূতিকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। "তোমার এই আবদার অযৌক্তিক।" "তোমার এই কথাটা হাস্যকর।" এভাবে তার অনুভূতিকে নাকচ করা যাবে না। শহীদ সাহেব প্রথমে ডান মস্তিষ্ক দিয়ে সংযোগ এবং বাম মস্তিষ্ক দিয়ে রিডিরেক্ট করবেন কিভাবে একটু দেখা যাক।

কানেক্ট উইথ রাইট: "আইসক্রিম খেতে না পারায় তোমার মন খুব খারাপ, তাই না রাফি?"
"আমি পুরোপুরি অনুভব করছি তোমার কতটুকু খারাপ লাগছে।"
"তোমার মন খারাপ হওয়া খুব স্বাভাবিক। তোমার জায়গায় আমি হলেও মন খারাপ করতাম।"
শহীদ সাহেব হাঁটু গেড়ে রাফির চোখের লেভেলে এসে কথাগুলো বলছেন এবং তাকে উষ্ণ স্পর্শ দিচ্ছেন এবং জড়িয়ে ধরছেন।
ধীরে ধীরে রাফি শান্ত ও স্বাভাবিক হয়ে আসলো।
শহীদ সাহেব এভাবে তার ডান মস্তিষ্ক দিয়ে তার ছেলের ডান মস্তিষ্কের সংযোগ ঘটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেন।

রিডিরেক্ট উইথ লেফট: ট্যানট্রামের সময় বাম মস্তিষ্ক কাজ করে না। এই সময় প্যারেন্ট যদি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন বা বাচ্চাকে উপেক্ষা করেন তখন ডান মস্তিষ্ক আরো প্রকট আকার ধারণ করে এবং বাম মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত হয়। বাচ্চাকে যখন আপনি শান্ত করবেন তখন তার বাম মস্তিষ্ক তথ্য গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।
এখন শহীদ সাহেব তার বাম মস্তিষ্ক দিয়ে রিডিরেক্ট করার উপযুক্ত সময়।
"কালকে বিকালে পার্কে যাওয়ার সময় আইসক্রিম খেলে অনেক মজা হবে না?"
"আমরা যদি একটা নিয়ম করি যে মধ্যরাতে ঘরের সবার জন্য আইসক্রিম খাওয়া নিষেধ, তাহলে কেমন হয়? তোমার মতামত কী? খুব ভাল হয় না?"

এখন রাফির বাম মস্তিষ্ক কাজ করা শুরু করেছে। ডান মস্তিষ্ক দিয়ে সংযোগ না ঘটিয়ে এই কথাগুলো বললে কোন কাজই হত না। তাই প্রতিটি ট্যানট্রামকে পজেটিভলি নিন, প্রতিটি ট্যানট্রামকে বাম মস্তিষ্কের মেরামত কাজের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন।

প্রতিবার ট্যানট্রামের সময় যদি আপনি 'কানেক্ট & রিডিরেক্ট' পদ্ধতিটা অনুসরণ করেন তাহলে আপনার বাচ্চার বাম মস্তিষ্কের অনুশীলন হবে। যত বেশি অনুশীলন হবে তত দ্রুত তার বাম মস্তিষ্কের উন্নতি হবে। এবং এর মাধ্যমে তার মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সহনশীলতা বাড়বে। সর্বোপরি আপনার সন্তানের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ হবে এবং প্যারেন্টিং উপভোগ করতে পারবেন।

Address

Sylhet

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr. Saifur Rahman posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share