
30/05/2025
বাচ্চার মাথায় যত বেশি তথ্য (ইনফরমেশন) দিব বাচ্চার মেধা ও প্রতিভা তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমাদের দেশে বহুদিন ধরে একটা ধারণা আমরা পোষণ করে আসছি যে, যে বাচ্চা বেশি জানে সেই বাচ্চা মেধাবী। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই আমরা তাদেরকে এত বেশি জিনিস শিখাই যে তা প্রতিনিয়ত তার সৃষ্টিশীলতাকে বাধাগ্রস্থ করছে।
ঢাকার বেশিরভাগ বাচ্চারা নাকি ৫ বছর বয়সে লিখতে, পড়তে জানে। এই বয়সে নাকি তারা পরীক্ষা দিয়ে স্কুলে চান্স পেতে হয়! বাচ্চাদের পড়ালেখার জন্য মা বাবারা বিভিন্ন ফেসবুক ও হোয়াটস আপ গ্রুপেও খুব এক্টিভ থাকেন। কোমল মস্তিষ্কগুলো কত ভয়ঙ্করভাবে অঙ্কুরে নষ্ট করা হচ্ছে। বাচ্চাদের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে যদি তা জানত আমি নিশ্চিত তারা এগুলোর পেছনে দৌড়াত না। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় ঢাকার বাচ্চারা এই বয়সে যতটুকু পড়ালেখা করে ও জানে পৃথিবীর কোন দেশের বাচ্চারাও এতটুকু জানে না। অথচ আমরাই জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় পিছিয়ে।
৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চারা অনুসন্ধান, কাজ, প্রশ্ন, চেষ্টা, বারবার ব্যর্থ হওয়া, আবিষ্কার ইত্যাদির মাধ্যমে শিখবে। আপনার সরাসরি ইনপুট তার মস্তিষ্ককে অকেজো করে দিচ্ছে। এটা শতভাগ প্রতিষ্ঠিত স্টাডি যে, যেসব দেশে যত কম বয়সে ফরমাল স্টাডি ইন্ট্রডিউস করা হয় সেইসব দেশের বাচ্চারা তত কম সৃজনশীল। আমাদের শিক্ষাবিদ ও আইনপ্রণেতারা এগুলো নিয়ে একেবারেই ভাবেন না।
প্রতিনিয়ত তথ্য প্রদান করে আমরা বাচ্চাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তিকে সীমিত করে ফেলছি৷ আপনার বাচ্চা 'এ' ফর আপল, 'বি' ফর বল থেকে 'জেড' ফর জিব্রা পর্যন্ত বললেই সে মেধাবী হয়ে যায় নি। সে যদি মাটি দিয়ে একটা আপেল বানাতে পারে তাহলে সেটার জন্য অধিক খুশি হোন; সে যদি বলে "আম্মু বি ফর বল কেন বলল, বার্ডও তো হয়" তাহলে বুঝে নিন তার চিন্তাশক্তি কাজ করছে। কিংবা সে ফোনেটিক জানেই না, 'বি' দিয়ে বল হয় না ক্যাট হয় জানে না। কিন্তু বল, ঘনক, ত্রিভুজ ইত্যাদি আকৃতিগুলো সে আলাদাভাবে সর্টিং করতে পারে, তাহলে বুঝে নিন তার মস্তিষ্কের নিউরনগুলো ভালভাবেই নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করছে, ফলে সে সক্রিয়ভাবে চিন্তা ও কাজ করতে পারছে।
বাচ্চার মস্তিষ্ককে ইনফরমেশন দিয়ে ব্যস্ত না রেখে তাকে প্রকৃতি দিন, খেলনা দিন, এবং সাথে স্বাধীনতা। তাকে না শিখিয়ে কৌতুহলী করে তুলুন। তার ফলে হয়তো শহরের সবচেয়ে নামীদামী স্কুলে ভর্তির সুযোগ পাবে না, কিন্তু এর ফল ভবিষ্যতে পাবেন, তা নিশ্চিত।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজিস্ট এলিসন গপনিক যিনি তার জীবনের বড় একটা অংশ কাটিয়েছেন বাচ্চাদের কগনিটিভ ডেভেলপমেন্ট নিয়ে গবেষণা করে, তিনি একবার টেড টকে বলেছিলেন, "বাচ্চারা খালি পাত্র নয় যে আপনি ইনফরমেশন ও ফ্যাক্ট দিয়ে তাকে পূর্ণ করবেন। বরং তারা সক্রিয় শিক্ষানবিশ। তারা এক্সপ্লোরেশন ও ইন্টারেকশনের মাধ্যমে নিজে জ্ঞান তৈরি করে।"
আপনি তার হাতে সিলেবাস তুলে দিলে সে তার চিন্তাভাবনা বন্ধ করে দিবে। রোবটের মত সিলেবাস থেকে ইনপুট নিবে আর আউটপুট দিয়ে আপনাকে ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে খুশি করবে। এই রোবটিক আউটপুট দিয়ে শুধু পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায়, জাতির পরিবর্তন সম্ভব হয় না।
৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মস্তিষ্কের ৯০% নিউরনের আর্কিটেকচার পূর্ণ হয়ে যায়। তাই ৫ বছর বয়সী মস্তিষ্কের উপর নির্ভর করে এই মানুষ তার বাকি জীবনে কী করবে। আর এই নিউরনের জাল তৈরি হয় পড়ালেখার মাধ্যমে নয়, বরং স্বাধীনভাবে খেলাধুলা, অনুসন্ধান ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে।