23/08/2025
📗 সৌদি আরবের ইফতা বোর্ড ধর্মসমূহের ঐক্যের (ইউনিটি অব রিলিজিয়ন/বাইতুল ইবরাহিমি) ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালো 📗👉
📗 সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি “ধর্মের ঐক্য” বা তথাকথিত বাইতুল ইবরাহিমি প্রসঙ্গে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে ফতোয়া প্রদান করেছে। নিচে ফতোয়া নং (১৯৪০২) পূর্ণরূপে তুলে ধরা হলো।
📗 সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ একক এবং অদ্বিতীয় সত্তার জন্য, আর দরুদ ও সালাম সেই নবীর উপর যার পর আর কোনো নবী নেই, তাঁর পরিবার, সাহাবিগণ এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের সঠিকভাবে অনুসরণ করে।
এরপর বলা হলো— স্থায়ী কমিটি বিভিন্ন প্রশ্ন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত মতামত ও প্রবন্ধ পর্যালোচনা করেছে যেখানে বলা হচ্ছে ইসলাম, ইহুদী ধর্ম ও খ্রিস্টধর্মকে একত্র করে “ধর্মের ঐক্য” গঠন, একই স্থানে মসজিদ-গির্জা-মন্দির নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়-মহানগর ও বিমানবন্দরে এসব প্রকল্প, একই মলাটে কুরআন-তাওরাত-ইঞ্জিল প্রকাশনা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড—এবং এসব প্রচারণার জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মেলন, সেমিনার, সংগঠন ইত্যাদি আয়োজন করা হচ্ছে। গভীরভাবে পর্যালোচনা শেষে কমিটি নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত দেয়:
☘️ প্রথমত:
ইসলামের আকীদার অন্যতম মূলনীতি, যা “দীনের প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত” এবং "মুসলিমদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত" তা হলো— আল্লাহর কাছে একমাত্র সত্য দীন হলো ইসলাম। ইসলামই শেষ ও চূড়ান্ত দীন, পূর্ববর্তী সব শরিয়ত ও ধর্মকে বাতিল করেছে। সুতরাং পৃথিবীতে আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য একমাত্র দীন ইসলাম। আল্লাহ বলেন: “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে দীন হলো ইসলাম।”
☘️ দ্বিতীয়ত:
ইসলামের আকীদার আরেকটি মূলনীতি হলো— কুরআনুল কারীম আল্লাহর সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এটি পূর্ববর্তী সব কিতাবকে (তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ইত্যাদি) নাসিখ করেছে এবং এগুলোর উপর হাকিম ও মুজাহিদ।
☘️ তৃতীয়ত:
তাওরাত ও ইঞ্জিল কুরআন দ্বারা নাসিখ হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে বিকৃতি ও পরিবর্তন ঘটেছে—সংযোজন, বিয়োজন, বিকৃত অর্থ—যার বিস্তারিত আল্লাহ তাআলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন।
☘️ চতুর্থত:
আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী ও রাসূল। তাঁর পর আর কোনো নবী নেই।
☘️ পঞ্চমত:
ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস হলো— যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি, যেমন ইহুদী, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী—তাকে কাফের হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে (যার উপর হুজ্জত কায়েম হয়েছে অর্থাৎ ইসলামের বাণী ও দাওয়াত পৌঁছেছে)। তারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনদের শত্রু। তাদের পরিণতি জাহান্নাম।
☘️ ষষ্ঠত:
উপরোক্ত আকীদার আলোকে বলা যায়— “সকল ধর্মের ঐক্য”র (Unity of Religions) আহ্বান একটি ধূর্ত ও কু-প্রচেষ্টা। এর উদ্দেশ্য হলো হক ও বাতিলকে মিশিয়ে দেওয়া, ইসলামকে ধ্বংস করা, মুসলিমদের ধর্মচ্যুতির পথে ঠেলে দেওয়া।
☘️ সপ্তমত:
এই ভ্রান্ত মতবাদের ফলাফল হবে— ইসলাম ও কুফরের পার্থক্য মুছে যাওয়া, হক ও বাতিল, ভালো ও মন্দের মধ্যে কোনো সীমারেখা না থাকা। মুসলিম ও কাফেরের মাঝে যে বৈরিতা ও দূরত্ব থাকা উচিত, তা নষ্ট করা। এর ফলে ওয়ালা ও বারা’, জিহাদ ও আল্লাহর কালেমা উঁচু করার লড়াই সবই হারিয়ে যাবে।
☘️ অষ্টমত:
“সকল ধর্মের ঐক্য”র আহ্বান যদি কোনো মুসলিম দেয়— তবে এটি স্পষ্টত ইসলাম ত্যাগ বা প্রকাশ্য কুফর। কারণ এটি ইসলামের আকীদার মূল ভিত্তির বিপরীত, কুফরকে মেনে নেওয়া, কুরআনের সত্যতাকে অস্বীকার করা এবং পূর্ববর্তী সব ধর্ম নাসিখ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করা। তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে এটি কঠোরভাবে হারাম, এবং ইসলাম, কুরআন, হাদিস ও ইজমার খিলাফ।
☘️ নবমত:
তাহলে স্পষ্ট হলো:
✍🏻 কোনো মুসলিমের পক্ষে এই ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করা, সমর্থন করা, মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া, এর সম্মেলন-সেমিনারে অংশ নেওয়া বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংগঠনে যুক্ত হওয়া বৈধ নয়।
✍🏻 মুসলিমদের জন্য তাওরাত-ইঞ্জিল আলাদাভাবে মুদ্রণ করা জায়েজ নয়, আর কুরআনের সঙ্গে একই মলাটে ছাপানো তো আরো গুরুতর ভ্রান্তি। কারণ এতে হক (কুরআন) ও বিকৃত/বাতিল কিতাব একত্র করা হয়।
✍🏻 একই স্থানে মসজিদ-গির্জা-মন্দির নির্মাণও মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। কারণ এটি এমন ধর্মকে স্বীকৃতি দেওয়ার শামিল—যা আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য নয়। অথচ ইসলাম স্পষ্টত বলে দিয়েছে— ইসলাম সব ধর্মকে নাসিখ করেছে। এগুলোকে সমান বলে স্বীকার করা কুরআন-সুন্নাহ ও মুসলিমদের সর্বসম্মতির বিরোধী এবং তা কুফর ও ভ্রান্তি।
📗 (সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটি) 📗
📗 সুতরাং, আগে এই ভ্রান্ত “বাইতুল ইবরাহিমি” ধারণা প্রত্যাখ্যান ও অস্বীকার করুন, এরপর মানুষকে সতর্ক করুন, শিক্ষা দিন, আহ্বান করুন এবং আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশায় প্রচার করুন। 📗
©️শায়খ ড: আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া (হাফিযাহুল্লাহ)