08/08/2023
চরপৌলি কমিউনিটি ক্লিনিক অস্থায়ী সাস্থ্য সেবা কেন্দ্র । কাকুয়া, সদর,টাঙ্গাইল ।
আজ ৮-৮-২০২৩ ইং, কমিউনিটি ক্লিনিকে আগোতো রোগীদের চরঅঞ্চল বন্যাত্র এলাকার স্বাস্থ্য জনসচেতনতা স্বাস্থ্য বিষয়ক স্বাস্থ্য শিক্ষা আলোচনা করা হয়।
বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে মানুষের ক্ষেত্রে জ্বর-সর্দি, ডায়রিয়া, কলেরা, রক্ত আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, ভাইরাল হেপাটাইটিস, পেটের পীড়া, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ, চোখের অসুখ প্রভৃতি সমস্যা মহামারি আকার ধারণ করে করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানুষের যেসব রোগ হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশেরও বেশি রোগ আসে পশুপাখি থেকে। বাড়ির পোষা বিড়াল ও কুকুরও রোগ ছড়াতে পারে। ইঁদুর ও গবাদিপশুর মূত্র থেকে লেপটোস্পাইরোসিস এবং বিড়ালের পায়খানা থেকে টক্সোপ্লাজমোসিস হয়, যা গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ঘটায়। কুকুর ও ইঁদুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হতে পারে। পানি ও কাদার সংস্পর্শে হাতে ও পায়ের চামড়ায় চুলকানি ও ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। বন্যা-পরবর্তী সময়ে কীটপতঙ্গের আধিক্য দেখা যায়। ফলে এসব কীটপতঙ্গ দ্বারা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া ও ডায়রিয়া হতে পারে
বন্যার সময় গবাদিপশুর সাধারণত আঘাতজনিত ক্ষত হয়, যেখানে মাছি বসে চর্মরোগ সৃষ্টি করে। এতে গরুর পানিশূন্যতা দেখা যায় এবং গরু পানি খেতে চায় না। এ ছাড়া গরুর খুরারোগ, গলাফোলা রোগ, তড়কা, বাদলা, লেপটোস্পাইরোসিস; হাঁস-মুরগির রানীক্ষেত এবং ছাগলের পিপিআর রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। পরজীবী বা কৃমির আক্রমণ বেড়ে যায়। ভেড়ার লোম দীর্ঘক্ষণ ভেজা থাকায় চামড়ায় ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবাদিপশুর খাবারে ছত্রাক জন্মে খাবারের পুষ্টিমান ও স্বাদ কমিয়ে দেয় এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গো-খাদ্যকে বিষাক্ত করে ফেলে, যা খেয়ে পশুর যকৃৎ নষ্ট হয়ে যায়। পানি ও কাদার সংস্পর্শে গবাদিপশুর পায়ে ক্ষত ও ফোড়া হয়। আর্দ্র পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বেশি জন্মানোর কারণে গবাদিপশুর নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া হতে পারে
পানিবাহিত রোগ থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং সব কাজে নিরাপদ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বন্যার পানি বা বন্যায় তলিয়ে যাওয়া নলকূপ, কুয়া বা অন্য কোনো উৎসের পানি জীবাণু দ্বারা দূষিত থাকায় কোনো অবস্থাতেই এসব পানি দিয়ে হাত-মুখ ধোয়া, কুলি করা বা পান করা যাবে না। বন্যার পানিতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, থালাবাসন পরিষ্কার করা চলবে না। যতটা সম্ভব বন্যার পানি এড়িয়ে চলতে হবে। গবাদিপশুর ক্ষেত্রেও এসব পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
বন্যার পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করা উত্তম। এ ক্ষেত্রে একটি পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করে প্রথমে কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিতে হবে। তলানি পড়লে ওপরের পরিষ্কার পানি আলাদা পাত্রে ঢেলে নিয়ে ফোটাতে হবে। তবে জ্বালানির সংকট থাকলে বা ফোটানো সম্ভব না হলে ক্লোরিনের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে এক গ্যালন পানিতে এক কাপের চতুর্থাংশ ব্লিচিং পাউডার (বা ফিটকিরি ভালোভাবে মেশানোর পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এ ছাড়া ট্যাবলেটের মাধ্যমেও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। এক লিটার পানিতে চার মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রাখলে পানি বিশুদ্ধ হবে। তবে এতে অন্যান্য জীবাণু মরলেও অনেক ভাইরাস-জাতীয় জীবাণু মরে না। একমাত্র ফোটানোর ফলে ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হয়।
নলকূপের পানি ব্যবহার করতে চাইলে এ ক্ষেত্রে এক কলস পানিতে তিন-চার চা-চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে নলকূপের ভেতর এই পানি ঢেলে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এরপর টানা আধা ঘণ্টা চেপে নলকূপের পানি বের করে ফেলে দিলে নলকূপের পানি খাওয়ার উপযোগী হবে। ব্লিচিং পাউডার পাওয়া না গেলে টানা এক ঘণ্টা চেপে টিউবওয়েলের পানি বের করে ফেলতে হবে।
অনেক মৃত প্রাণী পচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশকে দূষিত করে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। মৃতদেহ মাটির তিন মিটার নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। খালি হাতে মৃতদেহ ধরা যাবে না। মানুষ ও গবাদি পশুপাখির মলমূত্র নিরাপদে সরিয়ে নিতে হবে। মলমূত্র ত্যাগের জন্য অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা করা যেতে পারে। বন্যার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ফিটকিরি, মশার কয়েল, স্যালাইন, সাবান, ডেটল ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সরকারি ও বেসরকারিভাবে সরবরাহ করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে জনসচেতনতার পাশাপাশি মানুষ ও ভেটেরিনারি স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা প্রদান করা প্রয়োজন।
বন্যার সময় সাপ ও ইঁদুর তাদের আবাস হারিয়ে শুকনো স্থানে মানুষ ও গবাদি পশুপাখির সঙ্গে অবস্থান নেয়। এ জন্য সাপ ও ইঁদুরে কাটার পরিমাণ বেড়ে যায়। বিষহীন সাপে কাটলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বিষধর সাপে কাটলে সাপে কাটা স্থানের সামনে মোটা কাপড় বা গামছা বা রশি দিয়ে দিয়ে গিঁট দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টিভেনম এবং টিটেনাস প্রতিষেধক দিতে হবে। ইঁদুরে কাটলেও অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
পরিশেষে আমরা সকলের স্বাস্থ্য সচেতনতা অগ্রসর হই ,
এই প্রত্যাশায় সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
মোঃ আইয়ুব আলী CHCP, চরপৌলী কমিউনিটি ক্লিনিক,
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সদর, টাংগাইল ।