15/10/2023
স্ট্রোক-পরবর্তী ফিজিওথেরাপি:-
মস্তিষ্কের নিজস্ব রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলে মস্তিষ্কের স্মায়ুকোষ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একে স্ট্রোক বলে। সাধারণত দুটি কারণে স্ট্রোক হয়ে থাকে। যেমন: মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হলে, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটলে।
কাদের স্ট্রোক বেশি হয়-
বয়স সাধারণত ৫০-এর ওপরে হলে (যেকোনো বয়সেই স্ট্রোক হতে পারে), পরিবারে স্ট্রোকের রোগী থাকলে, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে, রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল থাকলে, ধূমপায়ী হলে, ডায়াবেটিস থাকলে, ইতিপূর্বে একবার স্ট্রোক হয়ে থাকলে, অ্যালকোহলিক হলে, রক্তের নালিতে কোনো সমস্যা থাকলে।
স্ট্রোকের প্রাথমিক উপসর্গ
হঠাৎ অতিরিক্ত মাথাব্যথা, মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া (সাধারণত শরীরের যেকোনো এক পাশ), হঠাৎ কথা বলতে এবং বুঝতে সমস্যা হওয়া, হঠাৎ এক চোখে অথবা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া, দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা, মাথা ঘুরানো এবং হাঁটতে সমস্যা হওয়া।
স্ট্রোক-পরবর্তী সমস্যা
স্ট্রোকে শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ অবশ হয়ে যায়। মাংসপেশির টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যায়, পরে আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে, হাত ও পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ণ অথবা আংশিক কমে যেতে পারে। মাংসপেশি শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে। হাঁটাচলা, ওঠাবসা, বিছানায় নড়াচড়া ইত্যাদি কমে যেতে পারে। নড়াচড়া কমে যাওয়ার ফলে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে, শোল্ডার বা ঘাড়ের জয়েন্ট সরে যেতে পারে।
স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, রক্তনালির কোনো ধরনের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসা করা, ধূমপান বন্ধ করা, কোলেস্টেরল, সোডিয়াম এবং ফ্যাটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, চর্বি ও শর্করাজাতীয় খাবার (যেমন: ফাস্টফুড, মাখন, ঘি, মিষ্টি, পোলাও, গরু-খাসির গোশত, চিংড়ি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি) কম খাওয়া, অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা, ডায়াবেটিসের সঠিক চিকিৎসা করা, নিয়মিত ৪৫ মিনিট হাঁটা বা ব্যায়াম করা, অতিরিক্ত ওষুধ সেবন না করা।
স্ট্রোক-পরবর্তী ফিজিওথেরাপি
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় রোগীর রোগ বর্ণনা, ফিজিক্যাল এক্সামিনেশনসহ বিভিন্ন রেডিওলজিক্যাল এবং প্যাথলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে কী ধরনের স্ট্রোক এবং কী ধরনের শারীরিক সমস্যা আছে, তা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। অতঃপর রোগীর সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয়। এর মধ্যে থাকতে পারে ব্যায়ামের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকীকরণ, সঠিক পজিশনিং, মাংসপেশির স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য বজায় রাখা, মাংসপেশির স্বাভাবিক টান ফিরিয়ে আনা, হাতে, মুখে ও পায়ে শক্তি ফিরিয়ে আনা, শরীরের স্বাভাবিক অ্যালাইনমেন্ট ফিরিয়ে আনা, শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নাড়ানোর ক্ষমতা বা মুভমেন্ট ফিরিয়ে আনা, ব্যালেন্স ও কো-অর্ডিনেশন উন্নত করা, স্বাভাবিক হাঁটার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা, রোগীর কর্মদক্ষতা বাড়ানো, রোগীর মানসিক অবস্থা উন্নত করা।
রোগীর শারীরিক সমস্যা দূর করে কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা অপরিসীম। তবে ফিজিওথেরাপির নামে শুধু মেশিন যেমন: হিট, ভাইব্রেশন, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে যে অপচিকিৎসা দেয়া হয় তা থেকে বেঁচে থাকাই ভালো। ভুল চিকিৎসায় রোগীর ভালোর পরিবর্তে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিন, সুস্থ থাকুন।