13/07/2025
*** পুরুষ হরমোন টেসটোস্টেরন বারাবেন কিভাবে????
বহুদিন ধরেই একটি ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে পুরুষেরা যেকোনো বয়সে অনায়াসে বাবা হতে পারেন। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুক্রাণুর গুণগত মান কমতে থাকে, বিশেষ করে এতে ডিএনএ ক্ষয়ের (DNA fragmentation) হার বাড়ে। এর ফলেই গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি, অটিজম, এমনকি মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
চমকপ্রদ বিষয় হলো, বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা শুক্রাণুকে পুরুষদের “ষষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সংকেত” (Sixth Vital Sign) হিসেবে বর্ণনা করছেন। নারীদের মাসিক চক্র যেমন তাদের প্রজনন ও সামগ্রিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য দেয়, তেমনি শুক্রাণুর মানও পুরুষের সার্বিক শারীরিক অবস্থা ও সম্ভাব্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি জানাতে পারে। প্রচলিত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হলো: ১. দেহের তাপমাত্রা ২. রক্তচাপ ৩. হৃদস্পন্দনের হার ৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ৫. রক্তে অক্সিজেনের মাত্রাগবেষণাগুলো বলছে, গর্ভধারণে সমস্যার পেছনে শুক্রাণুর মান একটি বড় কারণ। প্রজনন বিশেষজ্ঞ ড. টিয়া জ্যাকসন-বে বলেন, একটি দম্পতির গর্ভধারণে সমস্যা হলে প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই সমস্যাটি পুরুষের দিক থেকে আসে। হলিউড তারকারা ৬০ বা তারও বেশি বয়সে সন্তান নিচ্ছেন দেখে অনেকেই ভাবে, পুরুষেরা সারাজীবন সন্তান নিতে পারবেন যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর। ২০২১ সালে যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪,২৭১ জন পুরুষের মধ্যে ৫১ বছরের বেশি বয়সীদের গর্ভধারণের সফলতা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।
তবে সমস্যা শুধু গর্ভধারণেই সীমাবদ্ধ নয়; নিম্নমানের শুক্রাণু গর্ভধারণে সমস্যা, গর্ভকালীন জটিলতা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলে। এর একটি বড় কারণ হল শুক্রাণুতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেনেটিক ডিএনএ ক্ষয় বা মিউটেশন জমা হওয়া। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের শুক্রাণু কোষ প্রতি ১৬ দিনে একবার বিভাজিত হয় এবং প্রতিবছর প্রায় দুটি নতুন জেনেটিক মিউটেশন জমা হয়, যা বয়সভিত্তিক জটিলতার একটি বড় কারণ হতে পারে। আরও আকর্ষণীয় বিষয় হলো, শুক্রাণু টেস্ট করার মাধ্যমে শুধু উর্বরতা নয়, বরং আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। নিয়মিত টেস্ট করে জানা যায় আপনার শুক্রাণুর সংখ্যা, গতি এবং গঠন ঠিক আছে কিনা। যদি কোনো সমস্যা ধরা পড়ে, তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপন বা চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব।
তবে সবার জন্য শুক্রাণু সংরক্ষণ করা আবশ্যক নয়। যারা ঝুঁকিপূর্ণ চাকরি করেন, যু*দ্ধে যাচ্ছেন, বা পরিবার শুরু করতে আরও অনেক বছর দেরি করতে চান—তাদের জন্য এটি বিবেচনার বিষয় হতে পারে। এ নিয়ে Yale-এর ইউরোলজিস্ট ড. স্ট্যান্টন হোনিগ বলেন, “আপনি যদি ৩০ বছর বয়সে থাকেন এবং ৫ বছরের মধ্যে সন্তান নিতে চান, চিন্তার দরকার নেই। কিন্তু যদি ১৫ বছর পিছিয়ে যান, তাহলে এটা ভাবা যেতে পারে।” এখন অনেক কোম্পানি এক্ষেত্রে বাসায় বসে শুক্রাণু নমুনা দিয়ে টেস্ট ও ফ্রিজ করার সুবিধা দিচ্ছে।কিন্তু কখন সবচেয়ে ভালো সময় শুক্রাণু পরীক্ষা করার জন্য? উত্তর হলো—যখন এই বিষয়ে প্রথম কৌতূহল জাগে বা পরিকল্পনা মাথায় আসে। অর্থাৎ সন্তান ধারণের পরিকল্পনা ভবিষ্যতের জন্য হলেও, বর্তমানেই নিজের স্বাস্থ্য ও উর্বরতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভবিষ্যতের পিতৃত্ব এখন শুধু একটি স্বপ্ন নয়, বরং সচেতন প্রস্তুতির ফল।
Copy from
Team Science Bee
fans