01/08/2025
#নফস
আল্লাহ নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়ে মাটির তৈরি আদমকে জীবন্ত করেছেন (সূরা হিজর-১৫ : ২৯, সূরা সাদ-৩৮ : ৭২ এবং সূরা সাজদা- ৩২ : ৭-৯)। আল্লাহ মানুষের ঘাড়ের রগের চেয়েও নিকটতর (সূরা কাফ-৫০ : ১৬)। মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝখানে আল্লাহ অবস্থান করেন (সূরা আনফাল-৮ : ২৪)। মানুষ যেখানেই থাকুক না কেন, আল্লাহ মানুষের সাথেই থাকেন (সূরা হাদীদ-৫৭ : ৪)। আল্লাহ সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন (সূরা নিসা-৪ : ১২৬)।
আবার ইবলিস-শয়তানও মানুষের নিত্যসঙ্গী (সূরা কাফ-৫০ : ২৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যার সঙ্গে তার সহচর (কারিন) শয়তান নিযুক্ত করে দেওয়া হয়নি। সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনার সঙ্গেও কি? তিনি বললেন, আমার সঙ্গেও। তবে আল্লাহর সাহায্যে সে (শয়তান) আমার অনুগত হয়ে গেছে।
মানুষের নফসই প্রকৃতপক্ষে ইবলিস-শয়তান, যা মানুষের প্রতিটি রক্তকণায় মিশে গিয়ে নিত্যসঙ্গী (কারিন) হয়ে আছে (সূরা কাফ-৫০ : ২৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শয়তান মানুষের রক্তধারায় চলাচল করে’ (বুখারি-৫/৩০৫১, সৃষ্টির সূচনা অধ্যায়)। নফস বা শয়তানই মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। আল্লাহ বলেন, “মানুষের নফস যে কুমন্ত্রণা দেয় আল্লাহ তা জানেন (সূরা কাফ-৫০ : ১৬)।
কোরআনে আল্লাহ মানুষের নফসকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন। যেমন-
(১) নফসে আম্মারা অর্থাৎ মন্দ কাজের আদেশদানকারী নফস। কোরআনে বর্ণিত আছে যে, ইউসূফ (আ.) বলেন, “আমি আমার নাফসকে নির্দোষ বলি না, নিশ্চয়ই নফস মন্দ কাজের আদেশদাতা (সূরা ইউসুফ-১২ : ৫৩)।
(২) নফসে লাওয়্যামাহ বা অনুশোচনাকারী নফস। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “আমি শপথ করছি তিরস্কারকারী বা অনুশোচনাকারী নফসের (সূরা কিয়ামা-৭৫ : ২)।
(৩) নফসে মুতমাইন্নাহ বা শান্তিপ্রাপ্ত নফস। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে প্রশান্ত বা শান্তিপ্রাপ্ত নফস! তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো (সূরা ফাজর-৮৯ : ২৭-৩০)।
মানুষ মূলত রূহ (পরমাত্মা) এবং নফস (শয়তান) এ দুয়ের সমন্বয়ে গঠিত। মানুষের রূহের মৃত্যু হয় না, মৃত্যু হয় নফসের। যেমন কোরআনে আল্লাহ বলেন, "প্রত্যেক নফসকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে"(সূরা আম্বিয়া-২১/৩৫ এবং সূরা আনকাবূত-২৯/৫৭)। রূহ এবং নফস দেহের প্রতিটি রক্তকণায় মিশে থাকে। রূহ যখন নফস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দেহত্যাগ করে তখন তাকে মৃত্যু বলে।
রূহ আল্লাহর নিকট থেকে প্রাপ্ত এবং নফস ইবলিস-শয়তানের প্রতিভূ। নফসকে পরিশুদ্ধ ও অনুগত করার সাধনা করতে হয়, কিন্তু রূহের নয়। যিনি নিজের নফস বা শয়তানকে অনুগত বা বশীভূত করতে পারেন তিনি নফসে মুতমাইন্নাহ বা শান্তিপ্রাপ্ত নফসে উন্নীত হন এবং জান্নাতের অধিকারী হন।