28/12/2022
বিগত কয়েক দশকে মানুষ সব ক্ষেত্রেই অনেক উন্নতি করেছে। তাতে যেমন মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, বদল হয়েছে খাদ্যাভ্যাসও। এখন মানুষের হাতে সময় অনেক কম। তাই খাবার বানিয়ে খাওয়ার থেকে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেটজাত প্রসেসড খাবার আমরা সহজেই বেছে নিচ্ছি। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দু'পা ছাড়া ছাড়া ঝাঁ চকচকে দোকানের ভেতরে দেখা যাচ্ছে থরে থরে সাজানো প্লাস্টিকে মোড়া নানা ধরনের খাবার। টাকা দিলেই মিলছে হাতেনাতে গরমা গরম। স্বাদেও বেশ মুখরোচক।
তাছাড়াও আজকালকার দিনে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ ফ্যামিলিতে বাবা-মা দুজনেই ওয়ার্কিং। সুতরাং বাচ্চার জন্য খাবারের অপশনেও এসেছে নতুনত্ব। অন্তত আমরা ছোটবেলায় যেসব খাবার খেয়ে বড় হয়েছি তার থেকে তো অনেকটাই আলাদা। চলুন দেখে নেওয়া যাক আমরা এখন কি খাচ্ছি, বাচ্চাদেরই বা কি খাওয়াচ্ছি, কতটা স্বাস্থ্যসম্মত সেসব খাবার।
■ জাঙ্ক ফুড কী? এর ক্ষতিই বা কী?
যেসব খাবারে ফ্যাট, সুগার বা লবণের পরিমাণ অনেক বেশি পরিমাণে থাকে এবং পুষ্টিগতভাবে অসম্পূর্ণ ও অনুপযুক্ত, তাকেই সাধারণভাবে আমরা জাঙ্ক ফুড বলে থাকি। বেশিরভাগ প্রসেসড ফুড যেখানে অত্যাধিক পরিমাণে মেশানো থাকে ফ্লেভার, কালার বা অন্য কোন অ্যাডিটিভ তা জাঙ্ক ফুডের মধ্যে পড়ে। ক্যালরির দিক থেকে দেখতে গেলে এসব খাবার সবসময়ই ক্যালরিতে ভরপুর। কিন্তু পুষ্টিগতভাবে এগুলি অসম্পূর্ণ এবং অনুপযুক্ত ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই খাবার খাওয়ার সাথে সাথে ওজন বাড়তে থাকবে এবং নিঃশব্দে বাড়তে থাকবে অনেক রোগের ঝুঁকি যেমন ওবেসিটি,ডায়াবেটিস,হার্টের রোগ,উচ্চ রক্তচাপ,কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি। খাবারে মেশানো অ্যাডিটিভ অনেক সময় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অনেক সময় আপনি যেটা কিনে খাচ্ছেন, জানেনও না সেটা কতদিন আগে তৈরি, ফলে ব্যাকটেরিয়া কনটামিনেশন হয়ে থাকলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত ক্যাফেইন যুক্ত ড্রিঙ্কস ঘুমের সমস্যা ডেকে আনে।
■আজকালকার দিনে ব্রেকফাস্টে ব্রেড এর চল অনেক বেশি দেখা যায়। প্যাকেট থেকে বের করে সেঁকে খেয়ে নিলাম। কিন্তু পুষ্টিগতভাবে দেখলে দেখা যায় ব্রেড এ থাকে অনেক বেশি পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি কিন্তু খুব কম প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, মিনারেল এবং অত্যাবশ্যক নিউট্রিয়েন্টস। তাই ব্রেড খাওয়ার থেকে বাড়িতে বানানো রুটি খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যসম্মত।
■ বাড়িতে যদি আমি ফাস্টফুড বানিয়ে খাই তাহলে কি কোন ক্ষতি আছে? তখনও কি এটাকে জাঙ্ক ফুড বলা হবে?
আপনি যদি ফাস্টফুড যেমন পিজ্জা বার্গার এসব বলেন যে বাড়িতে বানিয়ে খাবো তাহলে হ্যাঁ সেটা বাজার থেকে কেনা খাবারের থেকে অনেকাংশেই ভালো হবে। কারণ তাতে থাকছে না কোন প্রিজারভেটিভ, কোন আর্টিফিশিয়াল কালার, কোন টেস্ট বাড়ানোর কেমিক্যাল। যদি বাচ্চারা একান্তই বায়না করে তাহলে সপ্তাহে একদিন খাওয়ানো যেতেই পারে। তবে পরিমাণ অবশ্যই খুব বেশি হবে না। আর বাড়িতে বানানো খাবারকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে কিছু জিনিস মাথায় রাখুন- যেমন সব সময়ই ফ্রেশ তেল ব্যবহার করা উচিত, আগের থেকে পোড়ানো কোন তেল নয়। কালার বা ফ্লেভার না দেওয়াই ভালো, চিনির ব্যবহার কম করুন, গুড় ব্যবহার করা যেতে পারে, লবণ খুব বেশি নয়। হাইজিন মেন্টেন করুন আর তৈরি করা খাবার পরে খাওয়ার জন্য তুলে না রেখে ফ্রেশ খাওয়াই ভালো।
■ ফ্রুট জুস এবং ড্রিংকস?
অনেক বাচ্চাই ফ্রুট জুস, নানা ধরনের ড্রিংকস খেতে খুব পছন্দ করে। কিন্তু প্যাকেজড ফ্রুট জুস বা ড্রিংকস কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়। স্বাদ বাড়াতে এতে অনেক সময় বেশি পরিমাণে সুগার যুক্ত করা থাকে। ফ্রুট জুস থেকে সব সময় গোটা ফল খাওয়ানো অনেক বেশি ভালো। কারণ তাতে থাকছে অনেক বেশি পরিমাণে ফাইবার, বেশি নিউট্রিয়েন্টস। যদি বাচ্চা একান্তই জুস খেতে চাই, তাহলে ফ্রেশ ফল থেকে ফ্রেস জুস বানিয়ে খাওয়ান। তবে সেক্ষেত্রে কিভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হাইজিন খারাপ হলে মাইক্রোবিয়াল কনটামিনেশন এর অনেক ঝুঁকি থাকে, তাহলে হিতে বিপরীত হবে।
■ বাচ্চাদের খাবার বানাতে কোন তেল ব্যবহার করব?
ফ্যামিলিতে যে তেল ব্যবহার করা হয় সেটাই ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটা জেনে রাখা দরকার যে কোন তেলই আইডিয়াল নয়। তাই কোন একটি পরিবারে বারবার এক প্রকার তেল ব্যবহার না করে বিভিন্ন ধরনের তেল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ব্যবহার করা উচিত। যেমন একবার সয়াবিন অয়েল, পরেরবার সান ফ্লাওয়ার, অলিভ অয়েল ইত্যাদি। আর একবার তেল কোন ভাজার কাজে ব্যবহার হওয়ার পরে সেই পোড়া তেল বারবার ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তেল একবার পোড়ানো হলে তাতে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকে যা অত্যন্ত ক্ষতিকারক শরীরের পক্ষে।
■ বাচ্চাকে কি চা বা কফি খাওয়াতে পারব?
পাঁচ বছরের নিচের বাচ্চাকে কোন চা বা কফি দেওয়া যাবে না। পাঁচ থেকে দশ বছর অব্দি প্রতিদিন হাফ কাপ (১০০ মিলি) দেওয়া যেতে পারে। 10 থেকে 18 বছর অব্দি প্রতিদিন এক কাপ(২০০ মিলি) দেওয়া যেতে পারে। তবে এটা খেয়াল রাখা দরকার যে ওই দিন বাচ্চা যাতে আর কোন ক্যাফিন যুক্ত খাবার না খায় (যেমন কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট ইত্যাদি)।
■ তাহলে বাচ্চাকে খাওয়াবো কি?
খাওয়াবার অনেক অপশন আছে। যেমন ধরুন খিচুড়ি, বিভিন্ন ধরনের সবজি সিদ্ধ, ভাত, ডাল, আলু সেদ্ধ, রুটি, সুজি, ডালিয়া, বিভিন্ন ধরনের ফল, ডিম, মাছ, মাংস এবং বাড়িতে তৈরি ফ্রেশ যে কোন খাবার যাতে নুন ও চিনির পরিমাণ কম এবং প্রোটিন বেশি।