18/10/2024
ফেসবুক গাইডলাইন
গত ৫ বছরে ফেসবুক আমাদের জীবনে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যা ভালো এবং মন্দ দুই দিক থেকেই বিশাল প্রভাব ফেলছে। এই মাধ্যমটি যেমন মানুষের সংযোগের, তথ্য বিনিময়ের এবং ব্যবসার দিগন্ত খুলে দিয়েছে, তেমনই অনেকেই এর অপব্যবহার করে আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতিকে নষ্ট করার পথ বেছে নিয়েছে। আজকাল দেখা যাচ্ছে, অনেকেই নিজেদের ছোট ছোট বাচ্চাদের, এমনকি পরিবারের নারীদের ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে, শুধুমাত্র ভিউ এবং ফলোয়ার বাড়ানোর আশায়। এমনকি কিছু ছেলেরা নিজেদের স্ত্রীর বা বোনের ভিডিও তৈরি করছে এই আশায় যে এতে তাদের প্রোফাইল ভাইরাল হবে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, ফেসবুকে প্রত্যেকেরই অধিকার আছে ভিডিও বানানোর—হোক সে ছেলে, মেয়ে, কিংবা বয়স্ক মানুষ। ফেসবুক এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবার সমান সুযোগ রয়েছে নিজেদের মতামত, সৃজনশীলতা, ও দক্ষতা প্রদর্শনের। তবে এই অধিকার ফেসবুকের গাইডলাইন অনুযায়ী হওয়া উচিত। ফেসবুকের নিজস্ব নীতি ও নির্দেশিকা রয়েছে, যা সমাজের ভালোর জন্য তৈরি। তাই ভিডিও বানানোর সময় অবশ্যই আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, সেই কন্টেন্ট ফেসবুকের গাইডলাইনের বাইরে গিয়ে সমাজের ক্ষতি না করে।
যারা শুধুমাত্র ভিউ পাওয়ার জন্য নৈতিকতার সীমা অতিক্রম করছে, তারা আসলে নিজেদেরই ক্ষতি করছে এবং সমাজের মূল্যবোধকে নষ্ট করছে। ফেসবুকে কন্টেন্ট বানানো মানে এই নয় যে, যা খুশি তাই পোস্ট করা যাবে। সবার উচিত দায়িত্বশীলভাবে ভিডিও তৈরি করা এবং সমাজের মান উন্নয়নের দিকে নজর রাখা।
আরো দুঃখের বিষয় হলো, হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন গ্রুপ খোলা হচ্ছে যেখানে পরিকল্পিতভাবে খারাপ মন্তব্য বিনিময় করা হচ্ছে। কেউ ভাবছে, যদি আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে বাজে কথা বলি, তাহলে মানুষ বেশি দেখবে। অথচ এসব কাজ সমাজের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা কেউ ভাবছে না। আমাদের নিজেদের সন্তান, যারা এখনো জীবনের শুরুর দিকে, তারা যখন এই সব নোংরা ভিডিও দেখে, তখন তাদের মন-মানসিকতা কীভাবে বিকৃত হচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছি না। এই সব অশিক্ষিত কন্টেন্ট তাদের মস্তিষ্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে এবং তাদের ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
আমরা কি এটাই চাই? সামান্য ভিউ বাড়ানোর জন্য, কয়েকটা ফলোয়ার পাওয়ার জন্য আমরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নৈতিকতা, শিক্ষা এবং আদর্শকে নষ্ট করতে চাই? আমাদের উচিত, এসব নোংরামি বন্ধ করা। যখন কেউ ফেসবুকে ভালো এবং গঠনমূলক পরামর্শ দেয়, তখন সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সমাজ নিয়ে নোংরা আলোচনা করা বা অন্যের বিরুদ্ধে খারাপ মন্তব্য করা কোনো সমাধান নয়। বরং, এসব কন্টেন্ট যারা তৈরি করে, তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকের রিপোর্ট অপশন ব্যবহার করা উচিত, যাতে তারা বুঝতে পারে যে এমন কাজ গ্রহণযোগ্য নয়।
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর ও শিক্ষিত সমাজ উপহার দিতে হলে, আমাদের নিজেদেরই দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু নিজেদের স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে, পুরো সমাজের কল্যাণের কথা ভাবতে হবে।
ফেসবুকের মতো একটি বিশাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের হাতে দিয়েছে, কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার করা আমাদেরই দায়িত্ব। আমরা যদি সমাজের উন্নতির জন্য এর সদ্ব্যবহার না করি, তাহলে আগামী দিনগুলোতে আমরা শুধুই ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাব। কাজেই, এই মুহূর্তে আমাদের চোখ খুলতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন সঠিক পথে চলে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অযথা বাজে কন্টেন্টে সময় নষ্ট না করে, ভালো কনটেন্ট তৈরি ও শেয়ার করে সমাজকে উন্নতির পথে নিয়ে যাই।
আমাদের কাজ আমাদের করতেই হবে, কিন্তু সেই সাথে যারা সমাজের ক্ষতি করছে, তাদেরও দায়বদ্ধ করতে হবে। নৈতিকতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে। ভালো কনটেন্ট ছড়াতে হবে, আর নোংরামির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। তাহলেই আমরা একটা সুন্দর, শিক্ষিত, ও নৈতিক সমাজ গড়তে পারবো।
এই সমস্যা শুধু ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি মনে করি, এই ধরনের অনৈতিক ভিডিও এবং অশ্লীল বিষয়বস্তুগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমেরও সক্রিয় হওয়া উচিত। যেমন, ব্যাঙ্গালোর পুলিশ, আসাম পুলিশ, কলকাতা পুলিশ—এদের সক্রিয় অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজন। তারা যদি সোশ্যাল মিডিয়ার এমন নোংরা কন্টেন্টের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় এবং যারা এসব ভিডিও তৈরি করে তাদের আইনের আওতায় আনে, তাহলে সমাজে অনেক পরিবর্তন আসতে পারে।
এছাড়া, আসামের নিউজ চ্যানেল, কলকাতার নিউজ চ্যানেল, এবং অন্যান্য গণমাধ্যমগুলোরও উচিত এই বিষয়গুলো তুলে ধরা। তারা যদি এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং সমাজকে জানায় যে, এমন কন্টেন্ট আমাদের নৈতিকতার জন্য কতটা ক্ষতিকর, তাহলে মানুষ আরও সচেতন হবে। গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকা এই পরিবর্তনে অনেক বড় প্রভাব রাখতে পারে।
আমরা যদি সবাই একসাথে এই প্রয়াসে যুক্ত হই—ফেসবুক ব্যবহারকারী, পুলিশ প্রশাসন, সংবাদমাধ্যম—তাহলেই আমরা আমাদের সমাজকে নোংরামি থেকে রক্ষা করতে পারবো এবং একটি সুন্দর ও শিক্ষিত সমাজ গড়তে সক্ষম হবো।