01/09/2024
| পুলিশ বড্ড অসহায় |
বুদ্ধদেববাবু রিজওয়ানুর কান্ডের ২৪দিনের মাথায় অবশেষে ঢোক গিলে তার প্রিয় পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখার্জিকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের পতনের প্রথম ধাপ ওটাই ছিল। মানুষের বিশ্বাস আর ফিরে পায়নি সরকার। অভয়াকাণ্ডের ঠিক ২৪দিন হলো। মমতা ব্যানার্জি বিনীত গোয়েলকে চেয়ারে রেখে বোধহয় এটা প্রমাণ করছেন, মানুষ নয় শাসকই ঠিক করবে কোন চেয়ারে কে বসবে। এ ক্ষেত্রে আমি তো বলবো পুলিশ বড্ড অসহায়, তাদের একজন অযোগ্য লিডারকে সহ্য করে চলতে হচ্ছে। শৃঙ্খলাপরায়ণ হয়ে রোজ গাল খেতে হচ্ছে কমিশনারের জন্য।
আজ পুলিশ দিবস। নিচুতলার অসহায় পুলিশকর্মীদের আমার সমবেদনা। যে ট্রাফিক সার্জেন্ট রোজ অফিস যাওয়ার সময় মুচকি হাসে, যে কনস্টেবল সব খবর রাখে, যে সাইবার সেলের ভাইটি রোজ গুড মর্নিং মেসেজ পাঠায়, যে হোমিসাইডের দাদা ভালো গান গায়, যে দারোগাবাবু আমাকে টিভিতে দেখে, যে সব ইন্সপেক্টর গোপনে আগাম খবর দিয়ে রাখে- তাদের সব্বাইকে সমবেদনা। হ্যাঁ শুভেচ্ছা নয়, সমবেদনা। সমস্ত অন ডিউটি অফিসার যারা রিটায়ার করেন নি তাদের সমবেদনা। ঐতিহ্যের লালবাজারকে যারা পার্টি অফিস বানিয়ে ছেড়েছে, গর্বের সাদা পোশাককে যারা পার্টি ক্যাডারের নিরাপত্তা কর্মীতে পরিণত করেছে, তাদের অর্ডার যাদের দিনরাত মুখ বুঝে শুনে যেতে হচ্ছে, একটা বাচ্চা মেয়ের খুনিদের আড়াল করতে দিনরাত মিথ্যে বলে যেতে হচ্ছে চাকরি বাঁচাতে, তাদের আর কী বা দেবো?
পুলিশ বড্ড অসহায়। ওকে রোজ ১২৩২টা নোটিস পাঠাতে হচ্ছে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের। বড়বাবু বলেছেন সমন করো ঢালাও, ওপর থেকে অর্ডার আছে- ব্যাস কোর্ট থেকে মুখঝামটা খাবে জেনেও শুরু করো দমন পীড়ন। পুলিশ বড্ড অসহায়, ওর ট্রান্সফারের ভয় আছে। পাড়ার নেতার মুখঝামটা শোনার ভয় আছে। এ রাজ্যে আরজি করের সিকিউরিটি গার্ডও সিএমএর নাম করে ধমক দেন কলেজের প্রিন্সিপালকে!
নিচুতলার পুলিশ বড্ড অসহায়, ওর পাশে দাঁড়াও। যে পুলিশকে টেবিলের তলায় লুকোতে হয় বেশিরভাগ। ভেউ ভেউ করে ক্যামেরার সামনে কাঁদতে হয় থানা জ্বালিয়ে দিলে। কিছু নির্দিষ্ট নেতার সামনে মিউমিউ করতে হয়, রাজপথে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় ফ্যালফ্যাল করে দেখতে হয় শুধু হেলমেট ছাড়া বাইক বাহিনীর দাপাদাপি তাদের জন্য সহানুভূতি রইল।
পুলিশ বড্ড অসহায়। ওর পাশে দাঁড়াও। ৩৬৪ দিন তোষামোদি, সাহেবের বাচ্চাকে স্কুল ছেড়ে দেওয়া, দাপুটে নেত্রীর চাপকানোর হুমকি শোনা। ওর পাশে দাড়াও। পুলিশ বড্ড অসহায়। ওকে রোজ মানুষের বিরুদ্ধে লড়তে হয়। মানুষের বিরুদ্ধে বড়বাবুর কথায় মানুষকে ফাঁসানোর কেস সাজাতে হয় এখন। পুলিশ বড্ড অসহায় তাঁকে রোজ একটা করে মিথ্যা বলতে একটা করে প্রেস কনফারেন্স করতে হয়।
নিচুতলার পুলিশকর্মীরা, যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, যারা রোজ নিয়ম করে আমার অনুষ্ঠান জবাব চায় বাংলা দেখেন, যাদের বাড়িতে অভয়ার বয়সী মেয়েরা রয়েছে, তাদের এক লাইনও ক্লারিফিকেশন দিতে হবে না। আমি জানি মাস গেলে স্যালারি ঢোকার মেসেজটা দেখতে ঠিক কতটা ভালো লাগে। কিন্তু তবু, যদি সম্ভব হয়, অফ ডিউটি থাকাকালীন, আবার বলছি যদি সম্ভব হয়,
পুলিশ তুমি আওয়াজ তোলো, অভয়ার জন্য তুমিও লড়ো।
একটা সিভিক সঞ্জয়, একটা অযোগ্য পুলিশ কমিশনার, একজন দায় এড়ানো পুলিশমন্ত্রী, গুটিকয়েক টপ পুলিশ অফিসারের জন্য গোটা কলকাতা পুলিশের সাদা ধপধপে উর্দিতে আলকাতরা লাগছে। গোয়েন্দাপীঠ লালবাজারে কাদা ছোড়া হচ্ছে। পৃথিবীর প্রথম ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যুরোর দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে, ব্রিটিশ আমলের পুলিশ কমিশনার স্টুয়ার্ড হগ, যার নামে হগ মার্কেট, সেই তার বানানো লালবাজারের ফরেনসিক টিমের দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।
সময় এসেছে এবার আপনার সিনিয়র অফিসারদের জানান। রক্ষক বড্ড অসহায় হলে, কথায় কথায় মার খেলে, ঘুষখোর বললে আর তার পালটা যুক্তি দিয়ে ঘন ঘন পোস্ট করলে চোর, জোচ্চররা পেয়ে বসবে যে।
—— ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ