Dr.Ankur Manna

Dr.Ankur Manna General Consultation and Treatment. M.D. (General Medicine) PGT
Calcutta National Medical College.

05/02/2025
      স্বাস্থ্যসচেতনতা মূলক পোস্ট Dr Belal Aliপ্রেশার বেশি থাকলে শরীরে কি কি উপসর্গ ( Symptoms)দেখা দেয়?আপাত সহজ এই প্রশ...
17/05/2024



স্বাস্থ্যসচেতনতা মূলক পোস্ট
Dr Belal Ali

প্রেশার বেশি থাকলে শরীরে কি কি উপসর্গ ( Symptoms)দেখা দেয়?

আপাত সহজ এই প্রশ্নটির উত্তর - গুগল, মায়ো ক্লিনিক, ওয়েব এমডি, প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার, চার্টার্ড আ্যকাউন্ট্যান্ট,পুলিশ অফিসার, সদাগারি অফিসের কেরানি, ওষুধ দোকানের রবুল, থেকে শুরু করে ঠেলাওয়ালা, রিকশাওয়ালা, পাড়ার মুদি দোকানের জব্বার, চা দোকানের লতিফ চাচা, ধোপা, নাপিত সহ সবাই জানে! এবং শুধু যে জানে তাইই না, সুযোগ দিলে একদম হাতে নাতে প্রমাণ ও করে দেবে!

আশ্চর্যজনক ভাবে এই প্রশ্নের উত্তরটা জানে না শুধুমাত্র এক্টাই প্রফেশনের লোকেরা - ডাক্তাররা!

এবার আসি উত্তরে -

" প্রেশার বাড়লে মাথা ঘোরে" ( ধারণা)

" আমার তো কোন অসুবিধা হচ্ছেনা, তাহলে প্রেশারের ওষুধ খাব কেন?" ( সিদ্ধান্ত)

প্রথম ধারণা এবং দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত - শুধুমাত্র এই দুটো জিনিসের যুগলবন্দীতে হাজার হাজার ফ্যামিলিকে আমি ধ্বংস হতে দেখেছি।

বেশিরভাগ মানুষ জানেইনা তার প্রেশার আছে নাকি - কেননা তার তো আর মাথা তো ঘোরে না! ( যেটা ধ্রুবসত্যের ন্যায় প্রেশারের কারণে ঘোরার কথা ছিল!)

জীবনে প্রথমবার প্রেশার ডিটেক্ট হয় - হাসপাতাল /মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সিতে অচেতন অবস্থায় স্ট্রেচারে করে আসার পর!

তারপরের সিনারিও মোটামুটি এরকম -

ডাক্তারঃ প্রেশার ছিল আগে থেকে, কোন ওষুধ খেতেন উনি?

কিছু রোগির বাড়ির লোকঃ না, ডাক্তারবাবু প্রেশারের তো কোন লক্ষ্মণ ছিলনা, কোনদিন বোঝাই যায়নি প্রেশার আছে ( যেন বোঝার কতরকম উপায় ছিল!)

অন্য কিছু রোগির ( Defaulter) বাড়ির লোকঃ মাঝে মাঝে খেত যখন প্রেশার বেড়ে যেত!

এই উত্তর শোনার পরে ডাক্তারের নিজের প্রেশার এতো বেড়ে যায় সে কহতব্য নয়!

ডাক্তারঃ ওনার কি '24 hour Ambulatory Blood Pressure মনিটরিং' - লাগানো থাকতো নাকি?? - প্রেশার বেড়ে গেলে বুঝতেন কিভাবে?

দ্বিতীয় গ্রুপ ওফ পেশেন্টের বাড়ির লোকঃ না, ওই মাথা টাথা যখন ঘুরতো, তখন আবার ওষুধ খেত!

রাগান্বিত ডাক্তারঃ খুব ভালো করত! এখন মাথায় রক্ত জমে গেছে, অপারেশন করতে হবে, পিজি নিয়ে যান!

অতঃপর অতি দ্রুততার সাথে পিজি গমন এবং ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রে ততোধিক দ্রুততার সাথে -

" Regrett, No bed vacant... Ref to SNPH/KPH/CNMC/ Any other govt. Hospitals " স্ট্যাম্প মারা একটি টিকিট নিয়ে অন্য হাসপাতালে যাওয়ার প্ল্যান করা এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আবার ব্যাট হয়ে ফেরত এসে অকূলপাথারে পড়া!

এমতাবস্থায় মুশকিল আসানে আ্যম্বুলেন্স ড্রাইভারের আবির্ভাব - এদের সবসময় তাড়া থাকে - আম্বানি, আদানি, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির থেকেও এদের সময়ের দাম অনেক বেশি - এবং সবসময় এরা একটা "ভালো নার্সিংহোম" এর কথা জানে!

অতঃপর সেই নার্সিংহোমে গমন - এবং রোগি যদি ২-৩ দিনের মধ্যে মারা যায় তাহলে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে খুবই ভালো!

কিন্তু যদি মরা বাঁচার মাঝে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় কাটিয়ে দেয় বেশ কিছুদিন - তাহলে বাড়ির লোকের সর্বশান্ত হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই।

আর এই সমস্ত কিছু শুধুমাত্র একটাই ভুল ধারণার কারণে -

"প্রেশার বাড়লে মাথা ঘোরে!"

একটা ভুল ধারণা একটা ফ্যামিলিকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে কেননা মধ্যবিত্ত শ্রেণির একটা ফ্যামিলিকে নিম্নবিত্তে পরিণত করতে - একটা হসপিটাল বিল ই যথেষ্ট!

গতকাল ও যে মানুষটি আপনাকে ভালবাসা দিয়েছে, স্নেহ করেছে আজ হঠাৎ সে আর আপনাকে চিনতেও পারছে না, তার কোন মমতা আপনাকে আর আর্দ্র করছেনা -

হঠাৎ ঘটা এ অসুখে বেঁচে গেলেও সে যেন এক অচেনা মানুষ! বাড়ির লোকের কাছে মূর্তিমান বোঝা!

অতর্কিত অসুস্থ করে ফেলা এ রোগটির নাম ''স্ট্রোক''।

ধনী-গরীব, তরুন-বৃদ্ধ নিমেষেই মারা যেতে বা বেঁচে থেকেও নির্জীব হয়ে যেতে পারে এ রোগে।

স্ট্রোকের কারণ এবং ধরণ বিবিধ - ডিটেইলস আলোচনার স্কোপ এখানে কম, সবথেকে মারাত্মক এবং খুব সহজেই প্রতিরোধ করা যায় যেটাকে সেটা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যেই আমার আজকের এই পোস্ট -

হেমারেজিক স্ট্রোক ডিউ টু হাইপারটেনশন ( প্রেশার)।

আকস্মিক স্ট্রোকের ধাক্কায় ফ্যামিলিকে নিয়ে পথে বসে যেতে না চাইলে নিচের খুব সহজেই এবং একদমই স্বল্প খরচে করা যায় এমন প্রতিরোধের উপায়গুলো ফলো করতে পারেন -

১. পরিবারের সকল সদস্য যাদের বয়স ৩৫ পেরিয়েছে তাদের প্রেশার নিয়মিত ব্যবধানে চেক করতে থাকুন ( অন্তত বছরে একবার, ৬ মাস অন্তরে হলে আরো ভালো হয় এবং একটা ডায়েরিতে তারিখ দিয়ে লিখে রাখুন) - কারও মাথা ঘুরুক বা না ঘুরুক, অন্য কোন অসুবিধা হোক বা না হোক, অন্যকোন রোগ থাকুক বা না থাকুক - মনে রাখবেন প্রেশার হচ্ছে সাইলেন্ট কিলার, এর কোন রকম কোন উপস্বর্গ নেই, অন্তত বড় বড় ডাক্তারি বইতে আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পাইনি!

"প্রেশার বেড়ে গেলে মাথা ঘোরে" এবং " আমার প্রেশার বেড়ে গেলে আমি বুঝতে পারি"

এর চেয়ে ধ্রুব মিথ্যা এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় আর একটিও নেই!

যাচাই করতে গুগলের সাহায্য নেবেন না, ডাক্তারিটা অতোটা সহজ বিষয় নয় - মনে করে দেখুন আপনার এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র বা ছাত্রীটি একের পর এক কঠিন পরীক্ষা দিয়ে পাশ করার পরেই ডাক্তার হয়েছে - সুতরাং তার মেধার উপর ভরসা করুন।

স্ক্রিনিংয়ে প্রেশার বেশি এলে তার সাহায্য নিন। নর্ম্যাল বা কম এলে ৬ মাস ব্যবধানে চেক করতে থাকুন - এটা খুব সহজেই করা যায় এবং বিশেষ কিছু টাকাপয়সাও লাগেনা এর জন্য।

২. যাদের প্রেশার বেশি আছে - বা যাদের ফ্যামিলি তে কারও প্রেশার আছে - তারা লবণ খাওয়া কম করুন, মোটামুটি ভাবে রেকমন্ডেশান হচ্ছে ৫ গ্রামের থেকেও কম লবণ খাওয়া যাবে সারাদিনে ( কাঁচা, ভাজা,সেদ্ধ সবরকম লবণ মিলিয়ে!)

৩. "প্রেশারের ওষুধ একবার খাওয়া শুরু করলে সারাজীবনই খেয়ে যেতে হবে" - এই গ্রুপের অসংখ্য রোগি আমি পেয়েছি - এনাদের নিয়ে যে কি করি - আজ পর্যন্ত ভেবে পেলাম না!

শুধু জিজ্ঞেস করি - " আপনার কাছে, অন্যকোন বিকল্প কোন পথ আছে লাইফস্টাইল মডিফিকেশন এবং ডায়েটারি চেঞ্জেস ছাড়া? কোন তাবিজ/ কবচ/ গাছ-পালা? কলা গাছের রস?"

ওষুধ শুরু এবং কন্টিনিউ করতে হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে আপনার বেসলাইন প্রেশার কত তার উপর। প্রেশার যদি অনেকটাই বেশি থাকে সেক্ষেত্রে শুধু লাইফস্টাইল / ডায়েট/ ওয়েট কন্ট্রোলে প্রেশার কন্ট্রোল হবেনা - এগুলোর সাথে সাথে ওষুধ শুরু করতে হবে - সিদ্ধান্ত নেবেন আপনার ডাক্তারবাবু, আপনি নন।

এইখানে ড্যাশ ডায়েট ( DASH Diet - Dietary Approach to Reduce Systolic Hypertension) ফলো করতে পারেন - এটা গুগল করে নিন - কোন ক্ষতি নেই! ( পাতি বাংলায় - কম লবণ, শাক সবজি, ফল মূল বেশি বেশি/ মাছ মাংস, তেল, চর্বি, প্যাকেজড ফুড, জাঙ্কফুড কম)।

৪. যাদের প্রেশার বেশি আছে এবং যারা ওষুধ অলরেডি খাচ্ছেন - তারা কন্টিনিউ করুন এবং মাঝেমাঝেই প্রেশারটা মাপান এবং সেগুলো নোট রাখুন কোথাও - ওষুদের কার্যকারিতা দেখার জন্য - প্রেশার ঠিকঠাক কন্ট্রোল আছে নাকি দেখার জন্য।

যদি দেখেন ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও প্রেশার নর্ম্যাল হচ্ছে না - তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার প্রেশারের ওষুধের ডোজ বাড়াতে হবে বা নতুন কোন শ্রেণির আ্যন্টি হাইপারটেন্সিভ ড্রাগ ( প্রেশারের ওষুধ) যোগ করতে হবে - যেটি করবেন আপনার ডাক্তারবাবু আপনার অন্যান্য কি কি কো-মর্বিডিটিস বা রোগ আছে তার উপর নির্ভর করে।

প্রেশার বেশি থাকলেও শরীরে তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়না কেন?

মনে করুন আপনি পাথর বইবার একটা ১৬ চাকা ট্রাক কিনলেন যার বহন ক্ষমতা ১০ টন - এখন আপনি যদি তাতে ওভারলোড করে ১৭ টন পাথর চাপান - তাতে কি গাড়ি আর চলতে পারবেনা নাকি প্রথম দিনেই তার টায়ার বার্স্ট করবে??

এক্ষেত্রেও গাড়ির চলতে কিন্তু কোন অসুবিধাই হবেনা- কিন্তু ওভারলোডের কারণে টায়ারের বিট বেশি বেশি করে ক্ষয় পেতে থাকবে - তাতেও গাড়ির চলতে কোন অসুবিধা হবেনা - এমন চলতে চলতে হঠাৎ একদিন টায়ার বার্স্ট করবে বা পিছলে গিয়ে কোন আ্যক্সিডেন্ট করে বসবে।

প্রেশারের কারণেও শরীরে একই জিনিস ঘটতে থাকে - এন্ড অর্গান ড্যামেজ - হঠাৎ কোনদিন স্ট্রোক এবং সেই প্রথমে লেখা ঘটনার পুনরাবৃত্তি! সুতরাং প্রেশারকে হাল্কা ভাবে নেবেন না।

"প্রেশার কমে গেলেও ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?" -

হ্যাঁ, খেয়ে যেতে হবে, হয়তো ডোজ রিডাকশন লাগতে পারে- কতটা কম আছে তার উপর নির্ভর করে।

স্ট্রোকের চিকিৎসায় চিকিৎসাবিজ্ঞান বেশ এগিয়েছে। তারপরও চিরন্তন সত্য হলো ''Prevention is better than cure''। একবার বড়মাপের স্ট্রোক হয়ে গেলে যা কিছুই করেন না কেন আগের স্বনির্ভর জীবনটা ফিরে পাওয়া যাবেনা, আপনার ব্যবসা, বাণিজ্য, আয় - ইনকাম সবকিছুই হারিয়ে যেতে পারে।

আর ছোট স্ট্রোক হয়ে গেলে ধরে নিতে হবে আরো আরো স্ট্রোক আপনার অপেক্ষায় আছে।

প্রতিরোধ বা prevention তাই যে কোন পর্যায়েই জরুরী। বিশ্বে প্রতি ৬ জনের একজন জীবনের যে কোন পর্যায়ে এসে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে বা দীর্ঘদিন পঙ্গু হয়ে থাকবে।

অথচ জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাসের কিছু নিয়মকানুন ও নিয়মিত ওষুধ খেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ স্ট্রোক থেকে নিজেকে ও স্বজনদের বাঁচানো যায়।

সুতরাং নিজে ডাক্তারি না করে আপনার ডাক্তারবাবুকে ডাক্তারিটা করতে দিন - নিয়মিত ওষুধ খেয়ে যান- নিজে বাঁচুন - আপনার ফ্যামিলিকে বাঁচান।

Doctor Belal Ali...MBBS, MD ( Medicine), CCEBDM ( Diabetes), Senior Resident...SSKM Hospital ( উপরে উল্লেখিত পিজি হাসপাতাল!)....

On World Hypertension Day 2024, let us confront this silent killer, and motivate all to 'Measure Your Blood Pressure Acc...
17/05/2024

On World Hypertension Day 2024, let us confront this silent killer, and motivate all to 'Measure Your Blood Pressure Accurately, Control It, Live Longer'.

কানের তালা খোলার চাবিকাঠি ডাঃ সজল সুরআমি যেহেতু নাক-কান-গলা কাটা ডাক্তার আর সপ্তাহে ছয় দিন নিজের নাক-কান কেটে রোগী ও তাঁ...
16/05/2024

কানের তালা খোলার চাবিকাঠি
ডাঃ সজল সুর

আমি যেহেতু নাক-কান-গলা কাটা ডাক্তার আর সপ্তাহে ছয় দিন নিজের নাক-কান কেটে রোগী ও তাঁদের বাড়ির লোকদের গলা কাটি, তাই সপ্তাহের বাকি একটা দিন প্রায়শ্চিত্ত করতে আমার বিভাগের অসুখ ও তার প্রতিকারের মোটামুটি একটা সম্ভাব্য পথ দেখানোর ( আমার সীমিত ক্ষমতায় যতটুকু সম্ভব )।

প্রশ্ন : পাহাড় থেকে ফিরে মাঝে মাঝে কানে blockage হয়ে থাকছে | কেন?

সম্ভাব্য উত্তর :
আমাদের কানের যে সুড়ঙ্গ বাইরে থেকে দেখা যায় , তার শেষ হয়েছে কানের পর্দায় | পর্দাকে ফুটো না করে তার ওপাশে কোনোকিছুই আর যেতে পারে না, বাতাসও না | অনেকটা ঢাকের চামড়ার মতো | তো এই ঢাকের ভিতরে যেমন বাতাস থাকে, তেমনি কানের পর্দার পিছনেও বাতাস থাকে | কিন্তু এই বাতাস আসে কোথা থেকে?

নাকের পিছন থেকে গলার দিকে হাওয়া চলাচলের যে অংশ তাকে ডাক্তারি ভাষায় ন্যাসোফারিংস বলে | এই অংশের দুই পাশ থেকে দুটো সরু টিউবের ( Eustachian Tube ) মতো পথ গিয়ে শেষ হয়েছে আমাদের দুই কানের পর্দার পিছনে | এ পথেই বাতাস নাকের পিছন থেকে কানের পিছনে এসে পর্দার উপরে চাপ দেয় |

Eustachian tube একটা চুপসানো নলের মতো | ঢোক গেলা বা চিবানোর সময় তা খোলা-বন্ধ হয় | যখন কানের সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢোকা বাইরের বাতাস ও নাকের পিছন থেকে ঐ টিউবের মতো পথে কানের পিছনে আসা বাতাসের চাপ সমান হয় না , তখনি কানের পর্দা নিজের জায়গা ছেড়ে ভিতরে বা বাইরের দিকে সরে আসার চেষ্টা করে এবং এর ফল হিসাবে কানে 'blockage' অনুভূতি হয় |

উচ্চতার হেরফেরে বাতাসের চাপ বাড়ে কমে | ফলে পাহাড়ে দ্রুত ওঠা বা নামার সময় অথবা প্লেন 'টেক অফ ' বা 'ল্যান্ডিং' এর সময় কানের পর্দার বাইরের ও ভিতরের, দুদিকের বাতাসের চাপ সমান না হলেই কানে তালা ধরতে পারে |

প্রশ্ন : এর সাথে আর কি উপসর্গ থাকতে পারে?

সম্ভাব্য উত্তর :
কানে অল্প শোনার সমস্যা |
কানে ব্যথা |

প্রশ্ন : প্রতিকার কি?
সম্ভাব্য উত্তর :
যেকোনো পাহাড়ে (অধিক উচ্চতা হলে ) ধীরে ধীরে ওঠা বা নামাই যুক্তিযুক্ত | এতে 'acclimatization ' বা অভিযোজনে সুবিধা হয় |

কানের তালা ধরার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে অল্প জল খেলে, ঢোক গিললে, chewing gum চিবালে কিছুটা হলেও সুবিধা হয় | গরম সহ্য করার অসুবিধা না থাকলে গরম জলের ভাপ নাক দিয়ে নেওয়া যেতে পারে |

এছাড়াও, বাজারে পাওয়া যায় (OTC )যে সব oxymetazolin বা xylometazolin ড্রপ, তা দু তিন ফোঁটা করে দিনে দু তিন বার দিন তিনেক ব্যবহার করলেও কষ্টের উপশম হতে পারে | এর সাথে OTC ঠান্ডা এলার্জির বড়ি (antihisaminic ) কয়েকদিন নেওয়া যেতে পারে | তবে কোনোমতেই 'কম্বিনেশন মেডিসিন' (একটা ট্যাবলেট বা সিরাপ যাতে তিন চার রকম ওষুধ মেশানো থাকে ) নেওয়া যুক্তিগ্রাহ্য নয় | এন্টিবায়োটিক তো একদমই নয় |

প্রশ্ন : এতে কষ্ট না কমলে?
উত্তর :
আপনার কাছাকাছি নাক কান গলার ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো ওষুধ নেওয়া উচিত |

বিশেষজ্ঞের সতর্কতা :
কানে তালা ধরা ও তার সাথে শোনার সমস্যা কয়েকদিনের মধ্যে ঠিক না হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নাক-কান-গলার ডাক্তারবাবুর সাথে যোগাযোগ করতে হবে | একটা ভীষণ দরকারি কথা খেয়াল রাখা বাধ্যতামূলক | ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনের কানে তালা লাগা যদি উচ্চতার তারতম্য বা ঠান্ডা সর্দির কারণে হয়ে থাকে এবং এর চিকিৎসায় যদি কিছুটা দেরিও হয় তাহলেও সাধারণ ভাবে তেমন কিছু ক্ষতি হয় না | কিন্তু বাকি ১ শতাংশ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কানে শোনার নার্ভ দুর্বল হবার জন্যও একই লক্ষণ দেখা দিতে পারে | এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ( অন্তত সাত দিনের মধ্যেই, যত আগে হয় ততোই ভালো ) অসুখ সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা শুরু না করলে স্থায়ীভাবে কানে শোনার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে | পরবর্তীকালে কোনো চিকিৎসাতেই তা ঠিক হয় না |
(ডাঃ সজল সুর, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ )

16/05/2024

Few informations Regarding HPV and Cervical Cancer.

1. HPV virus are mainly 2 types - high risk and low risk.

2. 90% of s*xually active females and males( too) get HPV infection throughout whole life span.

3. Not only by unprotected s*x like other STDs, it can also be transmitted through skin to skin or skin to surface contact. Hence using condom is not only a solution here. You must use condom during s*x for many other benefits but you may not prevent HPV only by using condoms.

4. After getting infected , virus can stay in cervix near about 2 years and then go away in maximum cases. But if it stays more that 2 years and doesn't go away due to poor immunity or any other cause , then it may change cell structures gradually and finally can cause cancer step by step.High risk HPVs are most dangerous for Cancer in cervix.

5. If cell changes started , do biopsy 1st and you should treat it by tharmal ablation.

6. Now, to prevent this HPV and cervical cancer one should take HPV vaccine before her s*xual activities will be started. Suppose HPV X, HPV Y , HPV Z viruses exist.if one lady got HPV X virus infection before vaccination then vaccine will protect her only against HPV Y and Z, and not against HPV X. Hence it's better to take vaccine after 9 years of age , consultant doctor.

7. There are 2 types of HPV vaccines available. One price is near about 3500 and another one 10800. Costly one has more field coverage and recommended by us.

8. Now the age limitations of HPV vaccine has been increased to 45 years. From 9-16 years you may need only 2 vaccine. And after 16 years you may need 3 vaccines. Doctor will tell you the date and timings during consultation.

9. If you are more than 30 years and didn't take any HPV vaccine ever. Then go for HPV screening 1st. And then take vaccines under the guidance of doctors.

10. In Kolkata Tata medical centre Kolkata has an seperate department called " Preventive Oncology" , who can guide you properly.
--
Dr Gourab Ray
Consultant Physician.

12/05/2024

জঙ্গলের রাজা সিংহ মশাই ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিলো - "কোনো শিশুকে নিরক্ষর রাখা চলবে না।। সবার জন্য যথাযথ শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে।।"
সব ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে।।
পড়াশুনা শেষ হলে,, সবাইকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।।

শুরু হলো সর্ব শিক্ষা অভিযান!!
হাতির বাচ্চা স্কুলে এলো।‌।
বাঁদর,, মাছ,, কচ্ছপ,, বিড়াল,,উট ,, জিরাফ,, সবার বাচ্চা স্কুলে পৌঁছে গেলো।।
শুরু হলো ধুমধাম করে পড়াশোনা।‌।
"ফার্স্ট ইউনিট টেষ্ট" হলো।। হাতির বাচ্চা ফেল।।
- "কোন সাবজেক্টে ফেল ??" হাতি এসে প্রশ্ন করে।‌।
-- "গাছে ওঠা" সাবজেক্টে ফেল করেছে।।"

হাতি পড়লো মহা চিন্তায়।। তার ছেলে ফেল ?? এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না।।
শুরু হলো খোঁজাখুঁজি,, ভালো টিউটর পেতেই হবে।। সন্তানের শিক্ষার ব্যাপারে কোনো রকম কম্প্রোমাইজ করা যাবে না।।
হাতির এখন একটাই টেনশন,, যেভাবেই হোক,, ছেলেকে গাছে চড়া শেখাতে হবে !!
"গাছে ওঠা' সাবজেক্টে টপার করে তুলতে হবে।।
ফার্স্ট সেশন অতিক্রান্ত।।
ফাইনাল রেজাল্ট আউট হলো।।
দেখা গেলো - হাতি,, উট,, জিরাফ,, মাছ,, সবার বাচ্চা ফেল।।

বাঁদরের বাচ্চা টপার হয়ে গেছে।।
প্রকাশ্য মঞ্চে বিভিন্ন গেষ্টদের আমন্ত্রিত করে,, বিরাট অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলো।।
সেখানে টপার হিসাবে বাঁদরের বাচ্চার গলায় মেডেল পরিয়ে দেওয়া হলো।।
চুড়ান্ত অপমানিত হয়ে হাতি,, উট,, জিরাফ,, নিজ নিজ সন্তানকে দারুণ পিটুনি দিলো।।
এতো টিউশন,, এতো খরচ,, এর পরেও চূড়ান্ত অসম্মান!!
তারা মেনে নিতে পারলো না।।

-- "ফাঁকিবাজ,, এতো চেষ্টা করেও তোর দ্বারা গাছে চড়া সম্ভব হলো না ?? নিকম্মা কোথাকার।।
শিখে নে, বাঁদরের বাচ্চার কাছে শিক্ষা নে,, কিভাবে গাছে চড়তে হয়।।"

ফেল কিন্তু মাছের ছেলেও হয়ে গেছে।।
সে আবার প্রত্যেক সাবজেক্টে ফেল,, কেবলমাত্র "সাঁতার" কাটা ছাড়া।।
প্রিন্সিপাল বললো -- "আপনার সন্তানের এ্যটেন্ডেন্স প্রবলেম।। পাঁচ মিনিটের বেশী ক্লাসে থাকতে পারে না।।"
মাছ নিজের সন্তানের দিকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।।
বাচ্চা বলে --" মা-গো,, দম নিতে পারি না,,
ভীষণ কষ্ট হয়।। আমার জন্য জলের মধ্যে কোনো স্কুল দেখলে হতো না ??"

মাছ বলে -- "চুপ কর বেয়াদব।।
এতো ভালো স্কুল আর কোথাও খুঁজে পাবি না।। পড়াশোনায় মন দে,, স্কুল নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।।"
হাতি,, উট,, জিরাফ,, নিজের নিজের ফেলিওর বাচ্চাকে পিটুনি দিতে দিতে বাড়ি ফিরে চলেছে।। পথিমধ্যে বুড়ো খেঁকশিয়ালের সঙ্গে দেখা।।
শিয়াল বলে --
"কি হয়েছে সেটা তো বলো ??"
হাতি বলে -- "এত বড়ো শরীর নিয়ে,, গাছে চড়তে পারলো না।।
বাঁদরের ছেলে টপার হলো,, মান ইজ্জত কিছুই অবশিষ্ট থাকলো না।।"

শিয়াল অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।।
শিয়াল বলো -- "তোমাদের গাছে চড়ার কি প্রয়োজন সেটাই তো বুঝতে পারলাম না‌।।
শোনো হাতি,, তুমি নিজের বিশালাকার শুঁড় উঠিয়ে ধরো,, গাছের সবচেয়ে বড়ো ফলটি পেড়ে ভক্ষণ করো।। তোমার গাছে ওঠা লাগবে না।।"

-- "উট ভাই,, তোমার অনেক উঁচু ঘাড় রয়েছে।। ঘাড় বাড়িয়ে দাও,, গাছের সর্বশ্রেষ্ঠ ফল,, পাতা পেড়ে খাও।।"
-- "বোন মাছ,, তোমার সন্তানকে নদীর স্কুলে ভর্তি করে দাও।।
ওকে মনভরে সাঁতার কাটতে শেখাও।।
দেখবে,, একদিন তোমার ছেলে নদী অতিক্রম করে সমুদ্রে পাড়ি দেবে।।

সাত সমুদ্র পার করে,, তোমার নাম উজ্জ্বল করে দেবো।।
ওকে রাজার স্কুলে মোটেও পাঠিও না।।
ও মারা যাবে।।"
মনে রাখতে হবে,, *শিক্ষা আপনার সন্তানের জন্য,, শিক্ষার জন্য আপনার সন্তান নয়*
প্রত্যেক শিশুর মধ্যেই কিছু না কিছু স্পেশালিটি আছে।
আমাদের দায়িত্ব হলো, সেটা খুঁজে বের করা।
তাকে সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়া।
তাহলেই দেখবেন,,
সে নিজেই নিজের গন্তব্য খুঁজে নেবে 🌸
(সংগৃহীত)

29/04/2024

প্রেগনেন্ট হবার পরে হবু বাবা মায়ের কাছে যে বিষয়ে সব থেকে বেশি ফোন আসে তার একটা হল বাচ্চার কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ। এর খরচও খুব কম নয়। এই নিয়ে বিভ্রান্ত বাবা মায়েদের মনে প্রচুর প্রশ্ন থাকে। তাই এই লেখা।

আমেরিকান সোসাইটি ফর ব্লাড অ্যান্ড ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন অনুযায়ী নিজের কর্ড ব্লাড থেকে কোনও শিশুর উপকার পাওয়ার সম্ভাবনা মাত্র ০.০৪ থেকে ০.০০০৫%।

আমাদের দেশে ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট অ্যান্ড রুলস ১৯৪৫ এর অধীনে কেবলমাত্র 'প্রাইভেট' কর্ড ব্লাড ব্যাংক আছে। ইউরোপেও কর্ড ব্লাড ব্যাংক আছে তবে তা 'পাব্লিক' কর্ড ব্লাড।সেখানে বিভিন্ন দাতার থেকে কর্ড ব্লাড সংগ্রহ করে তার টিস্যু অ্যান্টিজেনিক স্টেটাস (HLA status) অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়। আর তা লিউকোমিয়ার মতো বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসায় কাজে লাগানো হয়। সবচেয়ে বড় কথা, এই সব পাব্লিক ব্লাড ব্যাংকে কর্ড ব্লাড রাখার জন্য কোনও টাকাও দিতে হয়না এবং তা অন্য রুগীর প্রয়োজনে ব্যবহারও করা যায়।

কিন্তু আমাদের দেশে চিত্রটা একেবারেই আলাদা। চিকিৎসকদের বৃহত্তম সংস্থা ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পিডিয়াট্রিশিয়ান বা সংক্ষেপে আই.এ.পি, ২০১৮ সালে একটি বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে।সেখানে সমালোচনা করে এও বলা হয়েছে, বেসরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাংকের নজরকাড়া প্রচার ও লোকেদের বোকা বানিয়ে টাকা রোজগার করাটা প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নিজেদের সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আর খানিকটা আশঙ্কায় জর্জরিত হয়ে অভিভাবকরা আর্থিকভাবে এই ধরনের সংস্থার কাছে প্রতারিত হতে থাকেন।

'ভবিষ্যতে বহু রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করবে'-বেসরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাংকগুলি এভাবেই প্রচার করে।যদিও বাস্তবে সন্তানের সমস্যায় তা খুব কম ক্ষেত্রেই কাজে আসে। কাজেই প্রচারে যা বলা হয় তা একেবারেই নির্ভরযোগ্য নয়।একথা বলাই যেতে পারে যে বেসরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাংকের বিজ্ঞাপন, যাকে 'বায়োলজিক্যাল ইনসিওরেন্স' বলা হয় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তিকর।

কর্ড ব্লাড ব্যাংকের গুণগত মান এবং তার দেখাশোনা মোটেও ভালভাবে করা হয়না আর তার ওপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণও দেখা যায় না।বেশিরভাগ সংস্থার হেড কোয়ার্টার দেশের বাইরে আর সংস্থা যারা চালান তাদের যোগ্যতা নিয়েও সংশয় আছে।এই সংস্থাগুলো আমাদের দেশের জনগণকে শুধুমাত্র ব্যবসার জন্য কাজে লাগায়।

আসলে বেসরকারি সংস্থায় কর্ড ব্লাড সংরক্ষণ করার মানে হল কোনও কাজে না এলেও তার জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থ খরচ করা। আই.এ.পি. জানিয়েছে, জেনেটিক বা বংশগত রোগ নিরাময়ের জন্য নিজের কর্ড ব্লাড ব্যবহার করা যায় না, কারণ তাতে সেই একই মিউটেশন থাকবে।কর্ড ব্লাড কাজে লাগে হাই রিস্ক টিউমারের চিকিৎসায়। যদিও এক্ষেত্রে রোগীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা স্টেম সেল নিয়ে চিকিৎসা করলেও একই ফল পাওয়া যায়।সংগ্রহীত কর্ড ব্লাডের পরিমাণ অল্প হওয়ায় একটি পূর্ণ বয়স্ক রোগীর ক্ষেত্রে তার যথাযথ প্রয়োগ নিয়ে এখনো বেশ কিছু প্রশ্ন অমিমাংসিত রয়েছে।

ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পিডিয়াট্রিশিয়ান এই বিষয়ের ওপর পর্যালোচনা করে ২০১৮ সালে এক বিবৃতিতে জানান, প্রায় ৬০% ডাক্তার নির্ধারন করতে পারেন না, কোন ধরনের চিকিৎসায় কর্ড ব্লাড সেল ট্রান্সপ্লান্ট করা উচিত।প্রকৃতপক্ষে, ৯০% ডাক্তার বিশ্বাসও করেন যে আমবিলিক্যাল কর্ড ব্লাড ব্যবহার করা যায় সেই শিশুরই থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার ক্ষেত্রে, যা আসলে সঠিক নয়।

ভারতে বেসরকারি কর্ড ব্লাড ব্যাংকের ব্যবসার পরিমাণ আনুমানিক ১০০০ কোটি টাকা।বাস্তবে ২০ বছর ধরে এই ধরনের ব্যাংকে কর্ড ব্লাড রাখার খরচ পড়ে এক থেকে তিন লাখ টাকা অবধি।এককালীন অথবা মাসিক কিস্তিতে টাকা দিতে হয়।যদিও ঠিক কজন রোগী তাদের কর্ড ব্লাড ভবিষ্যতে ব্যবহার করেছেন তার কোনও সঠিক তথ্য কর্ড ব্লাড ব্যাংকের কাছে নেই অথবা তারা দিতে চান না।কেউ নিজেই নাকি অন্য কোন রুগীর চিকিৎসায় সেই কর্ড ব্লাড ব্যবহার করা হয়েছে সেই বিষয়েও কোন স্বচ্ছ উত্তর পাওয়া যায়না।এভাবেই চলছে এই বৃহত্তর অসামাজিক ব্যবসা।

তথ্য-ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি অফ পিডিয়াট্রিশিয়ান-২০১৮ নিয়মাবলী
(-- From Dr Indranil Saha )

29/04/2024
25/04/2024

#সাধারণের_গল্প

★আলো ছায়া★
©ডাঃ ঐন্দ্রিল ভৌমিক

বেশিরভাগ মানুষই আসলে একটা মুখোশের আড়ালে বাস করেন। মুখ দেখে, কাজ দেখে যেমন মনে হয়, মানুষটি মোটেই তেমন নন। অন্য কোথাও জন্মালে, পরিস্থিতি অন্যরকম হলে তিনি অন্য মানুষ হতেন। যিনি রান্নাঘরে দিনগত পাপক্ষয় করছেন আর শাশুড়ির গালমন্দ শুনছেন সুযোগ পেলে হয়তো জাতীয় স্তরে একশ মিটার দৌড়তেন।

আমি খুপরিজীবী চিকিৎসক। কর্পোরেট হাসপাতালে নয়, নিজস্ব ছোট্ট খুপরিতে বসে ঘামতে ঘামতে সারাদিন রোগী দেখি। আসলে রোগী নয়, মানুষ দেখি। কত রঙের মানুষ, কত বিচিত্র সমস্যা, কতো আশ্চর্য অনুভূতি। আমি যদি লেখক হতাম, তাহলে এসব নিয়ে গল্প লিখে বিখ্যাত হয়ে যেতাম- এমন কী নামের শেষে একটা ‘শ্রী’-ও এতদিনে জুড়ে যেত হয়তো।

সমস্যা হলো আমি লেখক নই। আবার যারা লেখক তাঁরা কখনো এইসব ঘটনার সাক্ষী হবেন না। তাহলে এসব কে লিখে রাখবে? এতো সব আশ্চর্য ঘটনাকে তো হারিয়ে যেতে দেওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে আমিই লিখছি। ‘না- লেখকের’ এই ধৃষ্টতা ক্ষমা ঘেন্না করে দেবেন।

এক মহিলা মাঝে মাঝেই খুপরিতে আসেন। প্রতি দু-তিন সপ্তাহে একবার। তাঁর নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা নেই এবং সমস্যা প্রত্যেকবারই পালটে যায়।

মহিলার মূল সমস্যা আবর্তিত হয় পেটকে কেন্দ্র করে। পেট ফুলে থাকে, ব্যথা ব্যথা করে, ঢেকুর ওঠে না, পায়খানা মনোমত হয় না। তার সাথে বুকে চাপ চাপ ভাব। ঘুম আসে না।

সবচেয়ে মুশকিল হলো একটা সমস্যা ঠিক হলে আরেকটা সমস্যা শুরু হয়। টুকটাক পরীক্ষা করা হলো। সবই স্বাভাবিক। বুঝতে পারছিলাম মহিলার সমস্যা দেহে নয়, আসল সমস্যা রয়েছে মনে। ভদ্রমহিলা মানসিক অবসাদ ও উত্তেজনায় ভুগছেন।

ততদিনে ওনার ঠিকুজি কুলুজী সব জেনে ফেলেছি। ওনার বয়স পঁয়ত্রিশ। স্বামী কাপড়ের ব্যবসায়ী। বিধাননগর আর কলকাতায় মোট তিনটি কাপড়ের দোকান আছে।

তবে মহিলার সাথে তাঁর স্বামীর তেমন ভাব ভালোবাসা নেই। যেটুকু সময় স্বামী বাড়িতে থাকেন, মহিলা ভয়ে তটস্থ থাকেন। পান থেকে চুন খসলে স্বামী গালিগালাজ করেন।

মহিলার একটাই কাজ। সারাদিন তাঁর স্বামী আর দুই যমজ ছেলের খেয়াল রাখা। সময় মতো খাবার দাবার যোগান দেওয়া। তাঁদের জামা- কাপড় পরিষ্কার রাখা, ঘরদোর সাফ করা… ইত্যাদি।

বাবার দেখাদেখি দুই ছেলেও ইদানীং মার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করেছে। খাবার পছন্দ না হলে খাবার সমেত থালা ছুড়ে ফেলে দেয়। জামা কাপড় ইস্ত্রি করা না থাকলে মাকে গালি গালাজও করে।

সব শুনে বললাম- চিকিৎসা তো আপনার স্বামী আর দুই ছেলের বেশি প্রয়োজন। ওদের ডাক্তার দেখাতে বলুন।

-আমি বলব? আমার কথা শোনে নাকি কেউ? আমি হচ্ছি বাড়ির বিনা মাইনের কাজের লোক। কাজের লোক তবু মাসে দু’চারদিন ছুটি নেয়। আমার সে উপায়ও নেই।

-একদিন সঙ্গে করে আপনার স্বামীকে আনবেন তো… কথা বলে দেখবো।

-আমার সঙ্গে আসবে… তাহলেই হয়েছে। আসার জন্য বলতে গেলেই আমার চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দেবেন। জানেন ডাক্তারবাবু, আমার আর বাড়িতে এক মুহূর্তও থাকতে ইচ্ছে হয় না। মনে হয় কোথাও চলে যাই। অনেক দূরে। কিন্তু যাবই বা কোথায়? এভাবে বাঁচার থেকে মরে যাওয়া ভাল।

বললাম- আজ কী সমস্যা? পেটের সমস্যা কমেনি?

-মিথ্যা কথা বলব না। সেটা কমেছে। কিন্তু আরেকটা নতুন সমস্যা শুরু হয়েছে। ঘাড়ের পেছনে জ্বালা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জ্বালা হচ্ছে বিকালে। মনে হচ্ছে ঐ জায়গায় যেন কেউ লঙ্কা বাটা লাগিয়ে দিয়েছে।

ভদ্রমহিলা মনের জ্বালা যন্ত্রণা প্রকাশ করতে পারছেন না সেগুলো প্রকাশ পাচ্ছে শরীরের নানা রকম সমস্যা হিসাবে। ডাক্তারি পরিভাষায় বলে সোমাটোফর্ম ডিজঅর্ডার। বললাম- আপনার যা সমস্যা সে জন্য আপনাকে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো উচিৎ। আমার কাছে তো অনেকবার এলেন। আমি একজনের কাছে পাঠাচ্ছি- একবার দেখিয়ে আসুন।

ভদ্রমহিলা বললেন- আমি কোথাও যাব না। আপনি যা পারেন করুন। আপনি চেনা জানা হয়ে গেছেন- আপনার উপর বেশ একটা বিশ্বাস চলে এসেছে। এই তো আপনি আমার এতদিনের পেটের সমস্যাটা দিব্যি সারিয়ে দিলেন। অচেনা জায়গায় কেন যাব। তাছাড়া যে কোনো অচেনা জায়গায় গেলেই আমার বুক ধড়ফড় হয়। পেট গোলায়।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম- ঠিক আছে। তাহলে ওষুধ খান। এক মাস বাদে আসবেন।

উনি বললেন- একমাস নয়, আমি পনেরো দিন বাদেই আসব। আসলে আপনার এখানে আসলে তবু বাড়ির বাইরে একটু বেরোনো হয়। দুটো মন খুলে কথা বলা যায়। আপনার এখানে যে ঘণ্টা খানেক লাইনে অপেক্ষা করি- কী চমৎকার লাগে। কতো লোকজনের গল্প শুনি।

ডাক্তারের চেম্বারে অপেক্ষা করতে যে কারো ভালো লাগে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আধঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করতে হলেই সকলেই দেখি কেমন তিতি বিরক্ত হয়ে ওঠেন। নিজেদের মধ্যে লাইন নিয়ে গণ্ডগোল শুরু করেন। তবে আপাতত এনাকে বিদায় জানানো দরকার। কারণ এর পরের রোগী ইতিমধ্যেই দরজা দিয়ে বার দুয়েক উঁকি মেরেছেন।

দু-সপ্তাহের আগেই ভদ্রমহিলা এলেন। তবে এবার সজ্ঞানে নয়। অজ্ঞান হয়ে। সঙ্গে এই প্রথমবার তার স্বামী এসেছেন। তিনি এসে বললেন- ডাক্তারবাবু, রোগী এনেছি। আপনারই পেশেন্ট। কিছুতেই গাড়ি থেকে নামাতে পারছি না।

অগত্যা খুপরি থেকে বেরলাম। গাড়ির দরজা খুলে দেখি, সেই মহিলা। দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। হাত পা গুলো টানটান। কনভার্শান ডিজঅর্ডার। নিশ্চিত ভাবে বাড়িতে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে, যেটা মহিলা আর সহ্য করতে পারেনি। সেই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই তাঁর অবচেতন মন, এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।

ভদ্রমহিলার স্বামী বললেন- কী হয়েছে? স্ট্রোক? ভর্তি করতে হবে? বাঁচার সম্ভাবনা কতোটা?

বললাম- খুব ভয়ের কিছু নেই মনে হচ্ছে। একটু দেখতে হবে।

ভদ্রমহিলার স্বামী আর একজন মহিলা ধরাধরি করে ওনাকে চেম্বারের পাশের একটি ঘরে শোয়ালেন। প্রেশার, নাড়ির গতি সবই ঠিক আছে। গৌড়কে দুটো ইনজেকশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আমি রোগী দেখায় মন দিলাম।

মিনিট পনেরো বাদে দেখি ভদ্রমহিলার স্বামী দরজা দিয়ে উঁকি মারছেন। বললাম- কিছু বলবেন?

উনি বললেন- ইয়ে… ওর জ্ঞান ফিরে এসেছে। উঠে বসেছে। মোটামুটি স্বাভাবিক। ওকে কি বাড়ি নিয়ে যাব?

আমি বললাম- দাঁড়ান, একবার দেখে নি।

মহিলা উঠে বসেছেন ঠিকই- কিন্তু চোখের দৃষ্টি কেমন ফ্যালফ্যালে। তিন চারবার জিজ্ঞাস করার পর একটা কথার জবাব দিচ্ছেন। ওনার স্বামীকেই জিজ্ঞাসা করলাম- বাড়িতে কোনো সমস্যা হয়েছে? কোনো ঝগড়া ঝাটি?

মহিলার স্বামী রেগে মেগে জবাব দিলেন- ঝগড়া কেন হবে? কোন্‌ অভাব রেখেছি ওর। গত মাসেই সাতভরি হার বানিয়ে দিয়েছি। গরম লাগছিল বলে দু সপ্তাহ আগেই ঘরে এসি লাগিয়ে দিয়েছি। শুধু শুধু আমাকে বেইজ্জতি করার চেষ্টা।

মহিলাকে দেখে দুটো ওষুধ লিখে বাড়ি নিয়ে যেতে বললাম। ওনার স্বামীকে বললাম- দয়া করে ওনাকে একবার সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাবেন। ওনাকেও অনেকবার বলেছি। উনি গা করেন নি। আমার যতদূর মনে হয়েছে, ওনার সমস্যার মূল জায়গা ওনার শরীরে নয়, মনে।

মহিলার স্বামী আমার কথায় সহমত হলেন। বললেন- আপনি একেবারে ঠিক জায়গায় ধরেছেন। ওর মাথায় গণ্ডগোল আছে। তাহলে বুঝুন, আমি কী যন্ত্রণায় আছি। পাগলের সাথে দিনের পর দিন ঘর করছি। অন্য কেউ হলে এতদিনে লাথি মেরে ঘর থেকে বের করে দিত।

বোঝাতে যাচ্ছিলাম, মানসিক সমস্যা আর পাগল দুটো মোটেই এক নয়। এক্ষেত্রে রোগীর যেমন সুচিকিৎসা দরকার তেমনি পরিবারের সদস্যদের বন্ধুর মতো পাশে থাকার দরকার। কিন্তু ওনার স্বামীর অত সব শোনার ধৈর্য নেই। তিনি একরকম টানতে টানতে স্ত্রীকে গাড়িতে তুললেন। আমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। এই রোগ মুক্তির জন্য প্রিয়জনের যে সহানুভূতি দরকার, সেটা এই মহিলা পাবেন না। ফলে ওনার রোগ কমবে না। বরঞ্চ আস্তে আস্তে বাড়বে।

দিন কয়েক পরেই মহিলা এসে হাজির। বললেন- সেদিন কিছু বলতে পারিনি ডাক্তারবাবু, উনি সাথে ছিলেন। আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে।

-মানে? আবার কী হলো?

-আমার স্বামী অন্য মহিলার সাথে রাত কাটাচ্ছেন। আগেই সন্দেহ হয়েছিল। মোবাইল রেখে স্নানে ঢুকেছিলেন, হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ দেখে স্পষ্ট হলো। কী নোংরা ম্যাসেজ, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। স্বামীকে চেপে ধরতেই কোথায় লোকানোর চেষ্টা করবেন, তার বদলে বললেন, বেশ করেছেন। তাঁর টাকায় সংসার চলে। তিনি যা ইচ্ছা তাই করবেন। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। দুই ছেলে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে চলে এসেছিল। উনি ছেলেদের সামনেই আমাকে চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে বুকে লাথি মারতে শুরু করেন। তারপর আর কিছু মনে নেই। পাঁজরে এখনও প্রচণ্ড ব্যথা।

আমি বললাম- এতসব হলো, আপনি চুপচাপ মেনে নেবেন। আপনি থানায় গিয়ে এফআইআর করুন। লোকাল কাউন্সিলারকে সব জানান। আইন কিন্তু মেয়েদের পক্ষে। আপনি অভিযোগ করলে পুলিশ আপনার বরকে জেলে ঢুকিয়ে দেবে।

মহিলা শিউরে উঠলেন। বললেন- তারপর জেল থেকে বেরিয়ে উনি আমাকে খুনই করে ফেলবেন।

কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম- তাহলে আর এসব নিয়ে আলোচনা করে লাভ নেই। ব্যথার ওষুধ লিখে দিচ্ছি। বাড়ি গিয়ে ওষুধ খান। মলম লাগাম।

কয়েকদিন পর ভদ্রমহিলা আবার এলেন। এবারো অজ্ঞান অবস্থায়। সঙ্গে দুটি ষোলো সতেরো বছরের ছেলে। জিজ্ঞেস করলাম- এমন কী করে হলো?

একটি ছেলে জানালো- কাল রাতে বাবাকে পুলিশে তুলে নিয়ে গেছে। তার পর থেকেই মা ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।

মনটা একটু ভালো হলো। যাক, মহিলাকে যতটা ভীতু ভেবেছিলাম, উনি ততটা ভীতু নন। শেষ পর্যন্ত সাহস সঞ্চয় করে পুলিশের কাছে গেছেন। তবে মহিলার জ্ঞান ফেরার পর বুঝতে পারলাম, ঘটনা আমি যেরকম ভাবছিলাম, মোটেই সেরকম নয়।

মহিলার স্বামী গ্রেফতার হয়েছেন অন্য এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে। মহিলার স্বামী নাকি মিথ্যে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সাথে দিনের পর দিন সহবাস করেছেন। তিনি ওই মহিলাকে বলেছিলেন, স্ত্রীর সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে বিয়ে করবেন।

বলতে বলতে মহিলা কাঁদতে আরম্ভ করলেন। আমার বেশ বিরক্তিই লাগল। বিন্দুমাত্র আত্মসম্মান বোধ থাকলে কেউ এমন স্বামীর জন্য চোখের জল ফেলে না।

তারপর মাস চারেক চলে গেছে, মহিলা আর আসেন না। বৈশাখ মাসের ঠা ঠা রোদের দুপুরে রেল লাইন পার হচ্ছি এক মহিলা - ‘ডাক্তারবাবু, ডাক্তারবাবু’ করে ডাকলেন। দেখি সেই মহিলাই।

জিজ্ঞাস করলাম- কেমন আছেন? আপনাদের সমস্যা মিটেছে? স্বামী ছাড়া পেয়েছেন?

ভদ্রমহিলা বললেন- না, এখনও পাননি। তবে ছাড়া পাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আপনি কাল বসবেন তো? কাল আপনার কাছে যাব।

-কেন? আপনার কী আবার সমস্যা হচ্ছে?

-না না। আমার কোনো সমস্যা নেই। আমি ঠিক আছি। ব্যবসার সব কিছু দেখতে হচ্ছে। নিঃশ্বাস ফেলারই সময় পাচ্ছি না। অন্য একটা ব্যাপারে আপনার মতামত দরকার।

পরেরদিন দুপুরে মহিলা খুপরিতে এসে হাজির। সেদিন বাইরে ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্র। লোকজন বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন। রোগীর চাপ একেবারেই নেই। যে কজন আসছেন, সকলেরই এমারজেন্সি।

ফাঁকা চেম্বার দেখে মহিলা বললেন- ভালই হয়েছে। আপনার সঙ্গে একটা জরুরী কথা ছিল। সেটা বিস্তারিত বলতে পারব।

-বলুন।

-যে মহিলা আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কেস করেছিল, সে কেস তুলে নিতে চায়। কিন্তু সে টাকা দাবী করেছে। দশ লক্ষ টাকা। স্বামীর সাথে আমার সব যৌথ একাউন্ট। উনি গ্রেফতার হওয়ার আগে কিছুই জানতাম না। কিন্তু গত চারমাসে ব্যবসার জন্য আমাকে সবই জানতে হয়েছে। ছেলেরা এখনও স্কুলে পড়ে। কাকেই বা ভরসা করব। কাজেই আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হয়েছে। দশ লাখ টাকা সব কটা ব্যাংকের সেভিংস একাউন্ট মেলালেই হয়ে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো টাকাটা দেওয়া উচিৎ হবে কিনা? আপনার কী মনে হয়?

আমি বললাম- আমি কী বলব। এটা তো সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার।

মহিলা বললেন- এই চারমাসে আমি অনেক পালটে গেছি ডাক্তারবাবু। প্রথম দিকে ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম। এই ব্যবসা কী করে সামলাব। দুই ছেলের পড়াশুনো কি করে চালিয়ে যাব। তারপর সাহস করে মাঠে নামার পর আস্তে আস্তে ভয় কেটে গেছে। তিনটে কাপড়ের দোকান দিব্যি সামলাচ্ছি। ওখানকার কর্মচারীরা বলছেন আমি নাকি আমার স্বামীর চাইতে আরো ভালো চালাচ্ছি। এমনকি ছেলেরাও আজকাল আমাকে সমঝে চলে। উঁচু গলায় কথা বলতে সাহস পায় না। তারাও বুঝতে পেরেছে মার জন্যই তাদের উপর এ যাত্রা ঝড় ঝাপটা এসে পড়েনি।

বললাম- তাহলে তো এখন নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারা উচিৎ। আমাকে শুধু মুধু শোনাচ্ছেন কেন?

-কাউকে তো শোনাতে হবে। এই যে আপনাকে শোনালাম, এই শোনাতে শোনাতেই আমার ডিসিশন নেওয়াটা সহজ হয়ে গেল। টাকাটা আমি দিয়ে দেব- তবে আর কয়েকদিন যাক।

মহিলা চলে গেলেন। যাওয়ার সময় পেছন থেকে ভালো করে লক্ষ করলাম। সত্যিই ওনার চলাফেরা একেবারে পালটে গেছে। আগের সেই দ্বিধা দ্বন্দ্ব নেই। একেবারে অন্য মানুষ। হ্যাঁ, এই প্রথমবার ওনাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বলে মনে হল। গৃহপালিত জন্তুর কোনো লক্ষণ যেখানে অনুপস্থিত।

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ হলে এটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা যেত। কীভাবে পরিবেশ- পরিবারের প্রভাব একজন মানুষের জীবনের উপর প্রভাব ফেলে তাই নিয়ে প্রবন্ধ লেখা যেত। কিন্তু আমি জেনারেল ফিজিশিয়ন। সর্দিকাশি, পেটে ব্যথা, সুগার প্রেশারের রোগী দেখে দিনগত পাপক্ষয় করি। পড়াশুনো প্রায় করিনা। ‘এম ডি’ করার সময় যেটুকু শিখেছিলাম তাও প্রায় ভুলতে বসেছি। এমন কী বিভিন্ন জার্নালে কীভাবে প্রবন্ধ লিখতে হয়, সেসবও ভুলে মেরে দিয়েছি। আমি আজকাল আর চিন্তা ভাবনা প্রায় করিনা। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়া সারাদিনের রোগী দেখা শেষ করতে পারলেই খুশি। কাজেই ওই মহিলার কথা আমার মাথা থেকে বেরোতে বেশি সময় লাগল না।

এইভাবে আস্ত একটা ঋতু চলে গেল। একদিন খুপরিতে ঢুকেছি, পার্থ বলল- ডাক্তারবাবু, ওই যে এক মহিলা আপনার কাছে আসতেন না, কলকাতায় তিনটে কাপড়ের দোকান আছে- ওনার স্বামী কাল রাতে মারা গেছেন।

দেখলাম অনেকেই খবরটা জানে। উনি কালই জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই আনন্দে সন্ধ্যায় কিছু বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে মদের পার্টি বসিয়েছিলেন। রাত বারোটা অবধি তাঁদের মদ্যপান চলে। তারপর ইয়ার দোস্তরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেই ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে তার স্ত্রী তাকে মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেন।

এতদিন পরে ওই মহিলার কথা আবার মনে হল। বছর খানেক আগে এমন ঘটনা ঘটলে নিশ্চিত ভাবে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসতে হতো। ঘটনার অভিঘাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য তাঁর অবচেতন মন কনভার্সন রিয়াকশানের আশ্রয় নিত। কিন্তু আজ বেশ জানি তাঁর চেতন মন- অবচেতন মনের থেকে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এক ভয়ের আড়ালে এই চেতন মন লুকিয়ে ছিল। একবার যখন ভয় কাটিয়ে উঠেছেন, কোনো ভাবেই তিনি অবচেতন মনের আজ্ঞায় আর চলবেন না।

ঘটনাটা অদ্ভুততও লাগল। মহিলার স্বামীর কোনো রোগ ছিলো বলে তো আগে শুনিনি। তিনি কীভাবে হঠাত করে মারা গেলেন? তাও ঠিক যেদিন জেল থেকে ছাড়া পেলেন!!

তবে আমি বিশেষ মাথাও ঘামালাম না। আমি সর্দি জ্বরের- প্রেশার সুগারের ডাক্তার… জাহাজের খবর নিয়ে আমার লাভ নেই।

দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছিল। কয়েকমাস পরে ওই মহিলা এসে আবার গণ্ডগোল পাকিয়ে দিলেন। মধ্যমগ্রামে একটা দোকান খুলছেন। সেই উপলক্ষে নিমন্ত্রণ জানাতে এসেছেন। ওনার চেহারা একেবারে পালটে গেছে। চোখের তলায় কালি উধাও। আত্মবিশ্বাসে ঝলমল করছেন। একটা মানুষকে এভাবে পালটে যেতে দেখে কেমন আশ্চর্য লাগছিল। বুঝতে পারছিলাম না কোনটা সত্যিকারের মুখ আর কোনটা মুখোশ।

বললাম- নিশ্চয়ই যাব। তবে একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

-করুন?

-আপনার হাজব্যান্ডের কী আগে থেকে কোনো হার্টের সমস্যা ছিল? মানে যেভাবে হঠাত করে?

মহিলা হাসলেন- না ছিলনা, কিন্তু তাতে কী হয়েছে?

-সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ অবশ্য হতেই পারে। আগে থেকে কোনো লক্ষণ নাও থাকতে পারে। তবে… আচ্ছা ওনার বংশে কী কারো এরকম…?

-দয়া করে এই নিয়ে আর মাথা ঘামাবেন না। উনি মারা গিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান করে গেছেন। জানেন, মৃতদেহ দেখার পর আমি প্রচণ্ড কেঁদেছি। তেমন ভাবে আমি আগে কোনো দিনও কাঁদিনি। আপনি কী ভাবছেন- আমি লোককে দেখানোর জন্য কেঁদেছি। একেবারেই তা নয় ডাক্তারবাবু- আমি ভেতর থেকে কেঁদেছি। স্বাধীনতার আনন্দে যে এতো তীব্র কান্না পায় আগে তা বুঝিনি।

Address

Kolkata

Telephone

+917479244146

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Dr.Ankur Manna posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Practice

Send a message to Dr.Ankur Manna:

Share

Category