16/08/2024
আজ বৈদিক হিন্দু শাস্ত্র মতে একাদশী অর্থাৎ একটি মাসের প্রতি পনেরো দিন অন্তর এক পক্ষকাল হয়, আর প্রতিমাসে দুইটি অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষ অন্যটি শুক্লপক্ষ হয়, আর প্রতিটি পক্ষের ১১ তম দিনকে বলা হয় একাদশী। বৈষ্ণব ধর্মের যথাযথ কিছু ধর্মীয় কথা আছে, যা ভীষণভাবে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক। বৈষ্ণবরা এটি ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে পালন করলেও এর একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রিক উপকারিতা আছে।তবে এখানে বলাটা প্রাসঙ্গিক হিন্দু মতে একাদশী উপবাস, ইসলাম মতে রোজা বা খ্রিস্টান মতে ফাস্টিং পদ্ধতিগতভাবে সামান্য আলাদা হলেও শারীরবৃত্তিয় প্রক্রিয়ায় প্রায় সমান প্রভাব পরে। একাদশীর প্রথম উদ্দেশ্য হল মনন ও শারীরিক ইন্দ্রিয় গুলির উপর নিয়ন্ত্রণ। যার অর্থ হলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিদিনের কার্যকলাপের উপর নিয়ন্ত্রণ। যথা :
১.সারাদিন উপবাস যা আপনার শরীরকে শুদ্ধ, ডি-টক্সিফিকেশন করে।সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন লিভার, কিডনি,প্যানক্রিয়াস, হার্ট, নার্ভ ও মস্তিষ্ক ইত্যাদিকে প্রতি চৌদ্দদিনের অতিরিক্ত কার্যকাল থেকে সাময়িক অনিস্ক্রিয় বিশ্রাম দেয়। শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমায়। চিন্তাকে প্রশমিত করে। শরীর ও শরীরের ভেতরে পেটকে ঠান্ডা করে। দেহের আবর্জনা অর্থাৎ জমা মল ও আমাশয় পরিষ্কার করে।
২. ঈশ্বরের প্রতি একাগ্রতা যা এক প্রকার মেডিটেশন বা ধ্যানের কাজ করে। ফলে বাকি চৌদ্দদিন আপনি আপনার মনের প্রতি সংযম ক্ষমতা বাড়াতে চেষ্টা করেন এবং গার্হস্থ্য থেকে কর্মজীবন সবকিছু মন:সংযোগের মাধ্যমে সহজে কাজ করার প্রবৃত্তি জন্মে, যাকে একপ্রকার সাইকোলজিক্যাল থেরাপি বলা হয়।
৩. অন্যদিনের তুলনায় এইদিন আপনার কর্মব্যস্ততা কম থাকে তুলনামূলক ভাবে যার ফলে অত্যাধিক পরিশ্রম থেকে শরীর অব্যহতি পায়। ইহাতে আপনার মাংসপেশির বিশ্রাম, মাংসপেশি মেরামত হয়। অস্থির উপর বিশেষ প্রভাব পড়ে।শরীরের অতিরিক্ত তরল বেরিয়ে যায় যার ফলে শরীর রসাল হয়না।ফলে বাত বেদনার আশু উপশম হয়।
৪. আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রেশন এবং ২০০৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে দ্বারা বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে অনেক ইতিবাচক ফলাফল। যেমন:
* Heart disease বা হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত রোগ
* Diabetes বা মধুমেয় সংক্রান্ত রোগ
* Memory & brain function development বা স্মৃতি ও মস্তিষ্ক জাতীয় উন্নয়ন।
* অ্যালজাইমার
* পারকিনসন রোগ।
ইন্টারমাউন্টেইন মেডিকেল সেন্টারের একটি গবেষনায়ও দেখা গেছে যে ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে উপবাস পরম উপযোগী।
অতএব, আমি এককভাবে একাদশী এর তাৎপর্য যদি বর্ননা যদি করি তবে এমন হবে-
১.উপবাস আপনার আধ্যাত্মিকতার উন্নতি সাধন করে।
২.উপবাস আপনার মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩.সাময়িক শারীরিক ক্রিয়াকলাপে বিশ্রাম ঘটায়।
৪. বন্ধাত্ব এর ক্ষেত্রে স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিশেষ উপকারী।
৫. শরীরের ভিতরে জমে থাকা মল ও আবর্জনা বের করে।
৬. ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, পেটের রোগ,পারকিনসন ডিজিস, অন্ত্রের গোলযোগ, অতিনিদ্রা,ব্রেন ডিজিস,ক্যান্সার, আলসার,টিউমার,ক্ষুধামন্দা, মাইগ্রেন, শরীরে অধিক চর্বি জমা,হাইপ্রেশার ইত্যাদিতে বিশেষ ফলপ্রসূ।
৭. বিভিন্ন প্রকার নেশামুক্তি যা চা, কফি, মাদক দ্রব্য ত্যাগে বিশেষ সহায়ক।
অতএব, আমি আপনাদের বিশেষভাবে সুপারিশ করব যে, যে ব্যাক্তি স্বাস্থ্য সচেতন সে ধার্মিক হোন বা নাই হোন উপবাস করুন। আর যদি নিজ নিজ ধর্মে বিশ্বাসী হন তবে নিজ নিজ ধর্মানুসারে উপবাস করুন ইহাতে আধ্যাত্মিক, শারীরিক ও মানসিক উন্নতি সাধন হবেই।