11/09/2025
ক্রোধ (Krodha) সাধককে ধ্বংস করে, কারণ—
🔱 ১. শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা
গীতা (১৬.২১):
> “ত্রिविधং নারকস্যেদং দ্বারং নাশনমात्मনঃ।
কামঃ ক্রোধস্তথা লোভস্তস্মাদেতৎ ত্রयं ত্যজেত্॥”
অর্থাৎ— কাম, ক্রোধ ও লোভ — এই তিনটিই আত্মাকে ধ্বংসের দিকে টেনে নেয়। তাই সাধকের উচিত এগুলো ত্যাগ করা।
ক্রোধে জ্ঞান ঢেকে যায়, ধ্যান ভঙ্গ হয়, এবং সাধকের ভিতরে “অবিদ্যা” বাড়ে। শাস্ত্রে একে বলা হয়েছে “বিনাশক দ্বার”।
🔱 ২. যোগদর্শনের দৃষ্টিতে
পতঞ্জলি যোগসূত্রে বলেছেন—
ধ্যানের মূল শর্ত হলো চিত্তপ্রশান্তি। ক্রোধ হলে মন অস্থির হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস অগোছালো হয়ে যায়, ফলে প্রণায়াম ও ধ্যান ভেঙে যায়।
অস্থির চিত্তে শক্তি ধারণ হয় না, সাধকের সাধনক্ষেত্র শুকিয়ে যায়।
🔱 ৩. তান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি
তন্ত্রে বলা হয়েছে, “সাধনা মানেই শক্তিকে ধারন।”
কিন্তু ক্রোধ হল অগ্নিরূপ তামসিক বিকার—
এটি চেতনা ক্ষয় করে।
সাধকের মধ্যে রক্তচঞ্চলতা বাড়ায়।
কুণ্ডলিনী শক্তি উর্ধ্বমুখী না হয়ে নীচের দিকে নেমে যায়।
ফলে যে শক্তি দিয়ে দেবীর ধ্যান করা সম্ভব, সেই শক্তিই অভিশাপ হয়ে নিজের সাধনক্ষেত্র ভস্ম করে দেয়।
🔱 ৪. দার্শনিক ব্যাখ্যা
ক্রোধ = অহংকারের সন্তান।
সাধনা = অহংকার ভঙ্গের পথ।
অতএব, ক্রোধ যত বাড়বে, অহংকার তত শক্তিশালী হবে; আর অহংকার যত শক্তিশালী হবে, তত দূরে যাবে আত্মসাক্ষাৎকার ও মুক্তি।
🔱 ৫. সহজ উদাহরণ
যেমন—
একজন কৃষক যদি সদ্য বোনা ধানক্ষেতে আগুন ধরায়, তার সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
ঠিক তেমনি—
সাধকের হৃদয়ক্ষেত্রে ক্রোধের আগুন ধরলে সাধনার বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার আগেই ভস্ম হয়ে যায়।
👉 তাই শাস্ত্র বারবার বলছে—
“শান্তিঃ, ধৈর্য, সহনশীলতা” — এটাই সাধকের আসল অলঙ্কার।
ক্রোধ হলে শক্তি ভস্ম হয়ে যায়,
কিন্তু ক্ষমাশীল হলে শক্তি দেবীরূপে প্রকাশিত হয়।