01/12/2025
রক্তক্ষরণজনিত রোগ: কোন লক্ষণগুলো সতর্ক হওয়ার ইঙ্গিত দেয়?
রক্ত আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোনো আঘাত লাগলে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য শরীরে বিশেষ ব্যবস্থা থাকে, যাকে বলা হয় ‘ক্লটিং সিস্টেম’। কিন্তু কোনো কারণে এই ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে গেলে সহজেই রক্তপাত শুরু হয় এবং থামতেও দেরি হয়। এটিকেই সাধারণভাবে ‘ব্লিডিং ডিজঅর্ডার’ বলা হয়। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের সমস্যার লক্ষণগুলো আগে থেকেই চিনে নিতে পারলে বড় জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
১. বারবার নাক থেকে রক্ত পড়া:
আঘাত না লাগলেও নাক দিয়ে ঘনঘন রক্ত পড়া ব্লিডিং ডিজঅর্ডারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
২. সামান্য আঘাতেই বড় কালশিটে:
হালকা ধাক্কা, টেবিলে হাত লেগে যাওয়া বা ব্যাগের স্ট্র্যাপ ঘষা—এই ধরনের স্বাভাবিক ঘটনায় শরীরে বড় আকারের নীল বা বেগুনি দাগ (ব্রুইজ) হয়ে গেলে তা অস্বাভাবিক। রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে গেলে এমন দাগ সহজেই তৈরি হয়।
৩. দাঁত ব্রাশ করার সময় মাড়ি থেকে রক্ত:
মাড়ি থেকে সামান্য রক্ত পড়া সাধারণ সমস্যা হলেও প্রতিদিন বা খুব অল্প চাপেই যদি রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে তা শরীরের ক্লটিং সিস্টেমে সমস্যা নির্দেশ করতে পারে।
৪. মেয়েদের অতিরিক্ত বা দীর্ঘ সময়ের মাসিক রক্তপাত:
প্রজননক্ষম নারীদের মধ্যে অত্যধিক মাসিক রক্তপাত (যা সাত দিনের বেশি স্থায়ী হয় বা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি) ব্লিডিং ডিজঅর্ডারের অন্যতম পরিচিত লক্ষণ। অনেকে এটিকে সামান্য সমস্যা বলে এড়িয়ে যান, কিন্তু এটি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
৫. আঘাত বা অস্ত্রোপচারের পর রক্তপাত থামতে দেরি:
কাটা, সামান্য সার্জারি, দাঁত তোলা বা ইনজেকশন নেওয়ার পর বহুক্ষণ রক্তপাত চলতে থাকলে তা অবশ্যই সতর্ক হওয়ার কারণ। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত কয়েক মিনিটের মধ্যে জমাট বাঁধা শুরু করে।
৬. প্রস্রাব বা পায়খানায় রক্ত দেখা:
পায়খানায় কালো রঙের মল (ডাইজেস্টেড ব্লাড), উজ্জ্বল লাল রক্ত বা প্রস্রাব লালচে—এসবই শরীরের ভিতরে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের লক্ষণ। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন।
৭. জোড়ায় ব্যথা বা ফোলা:
কিছু ব্লিডিং ডিজঅর্ডারে, বিশেষ করে হিমোফিলিয়ায়, শরীরের ভিতরে জোড়া বা পেশীতে রক্তক্ষরণ হয়। এতে আকস্মিক ব্যথা, ফোলা ও নড়াচড়া করতে অসুবিধা দেখা দিতে পারে।
কি করণীয়?
- এই ধরনের লক্ষণ বারবার দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত।
- পরিবারের কেউ ব্লিডিং ডিজঅর্ডারে ভুগলে অন্য সদস্যদেরও পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
রক্তক্ষরণজনিত রোগ অনেকসময় জন্মগত, আবার অনেকসময় ওষুধ, সংক্রমণ বা অন্যান্য অসুখের কারণে দেখা দেয়। তাই লক্ষণগুলো অবহেলা না করে প্রাথমিক অবস্থায়ই চিকিৎসা নিলে জটিলতা কমানো সম্ভব।