17/10/2025
বিয়ের দিন।
বরযাত্রী নিয়ে গেলাম ২৪৬ জন।
মেয়ের বাবা আড়ালে আমাকে ডেকে নরম স্বরে বললেন—
“বাবা, তোমাদের তো ১০০ জন বরযাত্রী আসার কথা ছিল? এতজন কেনো?”
আমি হাসিমুখে বললাম—
“বাবা, আমি পরিবারের ছোট ছেলে। সবাই শখ করে আসতে চেয়েছে। বললে কি করে না করি বলুন?”
তিনি একটু থেমে বললেন—
“তা ঠিক আছে, তবে আগে থেকে জানালে ভালো হতো। এখন ওদেরকে বলে দাও, খাবারে সামান্য দেরি হবে। আমরা সবার জন্য একসাথে আয়োজন করছি।”
আমি বললাম—
“বাবা, আপনি টেনশন করবেন না। আমি বলে দিচ্ছি।”
এভাবেই বিয়েটা হয়ে গেল।
আমি আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব—কাউকে বাদ দিইনি। মনে হয়েছিল, এরা-ই আমার আপনজন।
বছর ঘুরে এলো স্ত্রীর ডেলিভারির দিন।
হাসপাতালে দাঁড়িয়ে আমার নিঃশ্বাস আটকে আসছে।
চরম জরুরি অবস্থায় দরকার এ নেগেটিভ রক্ত।
আত্মীয়-স্বজন অনেকের সাথেই রক্ত মিলে যায়, কিন্তু তারা নানান অজুহাতে পাশ কাটিয়ে গেলো।
হতাশায় রিকশায় উঠে ছুটলাম কলেজের দিকে, ভাবলাম হয়তো কোনো স্বেচ্ছাসেবক সাহায্য করতে পারবে।
আমার ছটফটানি দেখে রিকশাওয়ালা মামা জিজ্ঞেস করলো—
“মামা, এত চিন্তিত কেন? কী হইছে?”
আমি বললাম—
“স্ত্রীর ডেলিভারি, এ নেগেটিভ রক্ত লাগবে। কোথাও পাই নাই।”
রিকশাওয়ালা মামা কিছু না ভেবেই বললো—
“মামা, আমার রক্তই তো এ নেগেটিভ। আমারটা নিবেন?”
অবশেষে, সেই অচেনা রিকশাওয়ালা মামার রক্তেই আমার স্ত্রীর ডেলিভারি হলো।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম—
বিয়েতে যাদের দলে দলে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালাম, যাদের আপন ভেবেছি, আজ সেই বিপদে কেউ নেই। পাশে দাঁড়ালো কেবল একজন অচেনা মানুষ—রিকশাওয়ালা মামা।
তারপর থেকে যখনই বাসায় ভালো খাবার রান্না হয়, আমি তাকে ফোন করে ডেকে আনি। কারণ, আপন বলতে তিনিই প্রমাণ দিয়েছেন।
মানুষের ভিড়েই সবসময় আপনজন পাওয়া যায় না।
আসল আপনজন সেই, যে বিপদের দিনে পাশে দাঁড়ায়।
অচেনা মানুষও আপন হয়ে উঠতে পারে, আর যাদের আপন ভেবেছিলাম তারা অনেক সময় দূরে সরে যায়।
Collected
কেমন লাগলো কমেন্টে বলে যাবেন প্লিজ।