
21/06/2025
ঘুরে এলাম সিঙ্গাপুরের চাইনিজ গার্ডেন
====== মশিউর রহমান =======
দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে বসবাস করলেও অনেক কিছুই এর দেখা হয়ে উঠে নি। তাই নতুন করে এই দেশটিকে (কিংবা শহরও বলতে পারেন) ঘুরে দেখার জন্য "Rediscover Singapore" নামে একটি ব্যক্তিগত প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আজকে আপনাদেরকে নিয়ে যাচ্ছি সিঙ্গাপুরের চাইনিজ গার্ডেন। স্মার্ট শহরের একটি স্মার্ট উদ্যানে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এই উদ্যানটির সংস্কারকাজ চলছিল এবং নতুনভাবে এটি উদ্বোধন করার কারণে, গিন্নীকে বললাম চলো বাগানটি দেখে আসা যাক। চলুন আমাদের সাথে আপনারও এই উদ্যানটি ভ্রমণ করে আসি।
সিঙ্গাপুর, এই ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্রটি শুধু অর্থনীতির জন্য নয়, বরং পরিকল্পিত নগরায়ণ ও সবুজ পরিবেশের জন্যও বিশ্বজুড়ে খ্যাত। এর মধ্যে এক অনন্য নিদর্শন হচ্ছে — চাইনিজ গার্ডেন, যা মূলত প্রাচীন চীনা সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের এক জীবন্ত প্রতিফলন।
সিঙ্গাপুরের পশ্চিমাংশে জুরং লেক অঞ্চলে এই চাইনিজ গার্ডেনটি অবস্থিত। খুব সহজেই চাইনিজ গার্ডেন স্টেশন থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের হাঁটা পথেই এই বাগানে পৌঁছানো যায়। এটি প্রায় ১৪ হেক্টর কিংবা ১০০ বিঘা জায়গা জুড়ে বিস্তৃত একটি ঐতিহ্যবাহী উদ্যান। বোঝবার সুবিধার জন্য বলা যায় - বাংলাদেশের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম এর তিনগুণ পরিমাণ জায়গা নিয়ে এই বাগানটি।
চাইনিজ গার্ডেন ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর পুরো ডিজাইনটি করেন তাইওয়ানের ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেক্ট ইয়ু ইয়ুয়েন চেন। এর স্থাপত্যে মূলত সুং রাজবংশ (Song Dynasty) এবং তাং রাজবংশ (Tang Dynasty)-এর ঐতিহ্যবাহী বাগানশৈলীর ছাপ স্পষ্ট। এখানে ঢুকলেই মনে হয় যেন চীনের কোনো রাজবাড়ির প্রাঙ্গণে এসে পড়েছেন।
চলুন দেখা যাক এই উদ্যানের প্রধান আকর্ষণসমূহ:
সেভেন-স্টোরিড প্যাগোডা নামে এই উঁচু এই প্যাগোডা দেখে মনে হবে যেন পুরোনো চীনের কোনো পাহাড়ি মন্দিরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ৭ তলা প্যাগোডা থেকে পুরো বাগান আর জুরং লেকের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।
এরপরে চোখে পড়বে সাদা পাথরের ব্রিজ। এটিকে বলা যায় চাইনিজ গার্ডেনের মূল প্রতীক। এই ব্রিজটি মূল উদ্যানে প্রবেশের প্রধান পথ। এটি একটি অর্ধচন্দ্রাকার কাঠামো যা প্রাচীন চৈনিক সেতুর মতো তৈরি করা হয়েছে।
বনসাই গার্ডেনে রয়েছে অসংখ্য ছোট আকারের বনসাই গাছ, যেগুলো চীনা উদ্যানচর্চার এক অনন্য শিল্পরূপ। মেডিটেশন, মন শান্ত করা, কিংবা ধ্যান করার জন্য দারুণ একটি জায়গা।
এছাড়া এই উদ্যানের বিভিন্ন জায়গায় চোখে পড়বে চীনাদের ঐতিহাসিক বীরদের মূর্তি। এক প্রান্তে রয়েছে Confucius, Hua Mulan, এবং অন্যান্য বিখ্যাত ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মূর্তি।
এই উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে প্যাভিলিয়ন। এইগুলির ছাদ, রং, কারুকাজ — সব কিছুতেই চীনা ঐতিহ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।
চাইনিজ গার্ডেন বিশেষ করে বসন্ত ও শরতে অপরূপ রঙে সেজে ওঠে। লাল-হলুদ পাতার সৌন্দর্য দেখতে তখন এখানে বেড়াতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। পাখির কিচিরমিচির, ঠান্ডা বাতাস, আর পরিষ্কার লেকের ধারে বসে কাটানো সময় যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
যারা ছবি তুলতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য চাইনিজ গার্ডেন একটি স্বপ্নের জায়গা। এখানে প্রি-ওয়েডিং ফটোশুট, ন্যাচারাল ফটোগ্রাফি এবং আর্কিটেকচারাল ফটোগ্রাফির জন্য প্রচুর মানুষ আসেন।
চাইনিজ নিউ ইয়ার কিংবা মিড-অটাম ফেস্টিভ্যাল উপলক্ষ্যে এই উদ্যানে আলোর উৎসব ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। তখন পুরো চাইনিজ গার্ডেন রঙিন লন্ঠন ও ঐতিহ্যবাহী সজ্জায় সেজে ওঠে।
চাইনিজ গার্ডেন সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং বিনামূল্যে প্রবেশ করা যায়। খোলা থাকে।
সিঙ্গাপুরের ব্যস্ত জীবন থেকে কয়েক ঘণ্টার জন্য হলেও নিজেকে আলাদা করতে চাইলে চাইনিজ গার্ডেন হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য। সবুজে ঘেরা, ইতিহাসে রঙিন এই উদ্যানে সময় কাটিয়ে মনে হবে, আপনি যেন এক নতুন যুগে পা রেখেছেন — যেখানে প্রকৃতি, শান্তি ও সংস্কৃতি হাত ধরাধরি করে চলে।
আপনি কি কখনও চাইনিজ গার্ডেনে গিয়েছেন? আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে লিখে জানান! পোস্টটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন এবং Dr. Mashiur Rahman পেজে লাইক দিন আরও লেখা পড়তে!
লেখক: মশিউর রহমান (লেখক ও বিজ্ঞানী, mashiur@ymail.com)