12/08/2024
মানুষের দেখার জন্য চোখের কর্নিয়া ও লেন্স খুবই প্রয়োজনীয়। চোখের স্বচ্ছ লেন্স বয়সজনিত বা অন্যকোনো কারণে অস্বচ্ছ হলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। চোখের লেন্স অস্বচ্ছ হওয়াকে ছানি বলে। বয়স বাড়ার সাথে, আঘাত লাগলে চোখে অন্য কোনো প্রদাহ হলে, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হলে, দীর্ঘদিন চোখে কিছু ড্রপ ব্যবহার করলে চোখে ছানি পড়ে। ছানি প্রধানত তিন ধরনের হয়- ১) নিউক্লিয়ার, ২)কর্টিক্যাল ও ৩) সাব ক্যাপসুলার
ছানির চিকিৎসা কী?
ছানির একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন, ওষুধ কিংবা চশমা দিয়ে ছানির চিকিৎসা সম্ভব নয়।
ছানির জন্য কি অপারেশন করা হয়?
ছানি অপারেশনে চোখের ভেতরের অস্বচ্ছ লেন্স বের করে তার জায়গায় কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়। ছানির অপারেশন বিভিন্নভাবে করা হয়। যেমন- ফ্যাকো সার্জারি ও প্রচলিত ছানি অপারেশন (SICS)। ছানির চিকিৎসা না করলে দৃষ্টি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। বেশি দেরি করলে গুকোমা বা চোখের প্রেসার, চোখে প্রদাহ ও তীব্র ব্যথাসহ পুরোপুরি অন্ধ হওয়ার মতো মারাত্মক জটিলতা বয়ে আনতে পারে।
ফ্যাকো সার্জারি কী?
ছানিকে গলিয়ে বের করে চোখে কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়।
ফ্যাকো সার্জারি চালু হওয়ায় ছানি অপারেশনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এটা যদি আমরা তুলনামূলক বিচার করি তাহলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ফ্যাকো অপারেশন-
১) এখানে লেন্সকে গলিয়ে বের করা হয়।
২) এ পদ্ধতিতে রক্তক্ষরণ হয় না।
৩) ২.৫-৩ মি. মি. ছিদ্র করা হয়।
৪) সেলাইবিহীন
৫) অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি যাওয়া যায়।
৬) এ অপারেশনে শুধুমাত্র ৭ দিন চোখে পানি দেয়া নিষেধ।
৭) দ্রুত সেরে উঠে।
ফ্যাকো সার্জারির সুবিধাসমূহ:
(১) সেলাইবিহীন; (২) দ্রুত সেরে ওঠে; (৩) ৩-৪ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারা, এর মধ্যে - গাড়ি চালানো, লেখাপড়া করা, টিভি দেখা, অফিস করা; (৪) অপারেশনের কিছু সময় আগে ভর্তি হওয়া; (৫) অপারেশনের পর বাসায় চলে যাওয়া; ৬) Surface/Local Anaesthesia এর মাধ্যমে অপারেশন করা হয়; (৬) যে সমস্ত রোগী সহযোগিতা করতে পারেন তাদের ইনজেকশন না দিয়ে শুধুমাত্র ড্রপের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়; (৭) ইনজেকশন না দিলে এবং ডাক্তার উপযুক্ত মনে করলে অপারেশনের পর চোখে ব্যান্ডেজ না দিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারেন; (৮) জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে এবং (৯) অপারেশনের পরপরই স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন।
অপারেশন করতে হলে কী করতে হবে?
চক্ষু ডাক্তারগন অপারেশন করার উপদেশ দিলে, পরামর্শ মতো অপারেশনের পূর্বে ৩-৪টি বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হবে। যেমন- (ক) ডায়াবেটিসের জন্য ব্লাড সুগার; (খ) ই.সি.জি.; (গ) চোখে যে লেন্স বসানো হবে তার মাপের জন্য বায়োমেট্রিক; (ঘ) চোখের কর্ণিয়ার মাপের জন্য কেরাটোমেট্রি; (ঙ) চোখের প্রেসার পরীক্ষা ও (চ)
syringing পরিক্ষা (SPT)
ফোল্ডেবল লেন্স:
১) এই লেন্স, লেন্সের সর্বশেষ সংস্করণ। ২) এই লেন্স নরম এবং ভাঁজ করা যায়। ৩) এই লেন্সের ক্ষেত্রে মাত্র ২.৫-৩ মি.মি. কাটতে হয়। ৪) এক্ষেত্রে অপারেশনের পর লেন্সের পেছনে অস্বচ্ছ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। ৫) এক্ষেত্রে চোখ অতি দ্রুত সেরে ওঠে।
অপারেশন পরবর্তী করণীয়:
(১) অপারেশনের পর ডাক্তারের কাছ থেকে ছাড়পত্র বুঝে নিয়ে বাড়ি যেতে হয়। (২) ছাড়পত্রে লিখিত ওষুধ নিয়ম মাফিক ব্যবহার করা। (৩) ৭ দিন চোখে সরাসরি পানি না লাগানো। (৪) অপারেশনের পরের দিন, ৭ দিন পর এবং একমাস পর মোট তিনবার ডাক্তারের কাছে আসতে হবে। এর মধ্যে যে কোনো সময় কোনো অসুবিধা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।