23/11/2021
▌স্বামী-কে পরকীয়া থেকে রক্ষা করার ১০টি উপায়!
"পরকীয়া" সমাজের এক বিষাক্ত ভাইরাস। যার কালো থাবায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য অন্যায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বামীদের পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার কারনে প্রতিদিন অসংখ্য বোনের ডিবোর্স হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক অসহায়ত্ব, দূর্দশাগস্থ জীবনের কালো অধ্যায়।
নিম্নে স্বামীকে পরকীয়া থেকে রক্ষার ১০টি উপায় উল্লেখ করা হলো:
❏ এক: স্বামীর আনুগত্য করুন। স্বামী যা আদেশ করে তা গুরত্ব সহকারে মেনে চলুন। যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকুন।
স্বামীর মর্যাদা ও আনুগত্যের কথা বলতে গিয়ে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, "যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য সিজদা করা জায়েজ হত, তবে নারীদেরকে বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীর পায়ে সিজদা করে।"
[আবু দাউদ,হাদিস: ২১৪০]
❏ দুই: স্বামীর জন্য সাঁজুন
আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারীরা কোথাও যাওয়ার পূর্বে খুব সুন্দর করে সেজেগুজে, পরিপাটি হয়ে যায়। আর বাড়িতে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, মেল্লছের মত হয়ে থাকে। যার কারনে আস্তে আস্তে স্বামী তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে।
একটা গোলাপ যার সৌন্দর্য ও ঘ্রাণ যেকোন মানুষকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু গোলাপটির উপর যদি নোংরা ময়লা-আবর্জনা লেগে থাকে তবে সেটার প্রতি আকর্ষিত হওয়া তো দূরে থাক তার প্রতি মানুষ ভ্রুক্ষেপও করে না। ঠিক তেমনি একজন স্বামীর কাছে তার স্ত্রী গোলাপের চাইতেও বহুগুনে মূল্যবান, আকর্ষণের বস্তু। কিন্তু সে যখন অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন হয়ে থাকে তখন তার প্রতি স্বামী আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে, অতঃপর অন্যকারো প্রতি আকর্ষিত হয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। তাই স্বামীর সামনে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, যথাসম্ভব সাজুগুজু করে থাকুন।
❏ তিন: স্বামীর বাবা-মাকে ভালোবাসুন
শশুড়-শাশুড়িকে ভালোবাসা, তাদের খেদমতের উপর স্বামীর ভালোবাসা নির্ভর করে। প্রিয় বোন! যতদিন আপনি আপনার শশুড়-শাশুড়িরে মন থেকে ভালো না বাসবেন ততদিন আপনাকে আপনার স্বামী মন থেকে কখনো ভালোবাসবে না।
আর শশুড়-শাশুড়িকে ভালোবাসলে একদিকে যেমন স্বামীর ভালোবাসা পাবেন অন্যদিকে এই মুরব্বিদের খেদমতের কারনে আপনার আমলনামায় আল্লাহ অফুরন্ত সাওয়াব দান করবেন।
❏ চার: স্বামীর একাদিক বিবাহে বাধা দিবেন না
জানি এই পয়েন্ট-টা নিয়ে আপনারা আপত্তি তুলবেন। কারন, পৃথীবির কোন মেয়েই তার স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিতে চায়না। তবুও আল্লাহর সন্তুুষ্টি, স্বামীর আনুগত্যের কথা লক্ষ্য করে অনেকসময় ছাড় দিতে হয়।
কিছু পুরুষের শারীরিক চাহিদা একটু বেশিই থেকে থাকে। সেজন্য একজন স্ত্রীকে নিয়ে সে পরিতৃপ্ত হতে পারেনা। আর এদিকে পরিবার মানবে না বলে দ্বীতিয়.. বিয়েও করতে পারেনা। যার কারনে সে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
❏ পাঁচ: 'আমি বলে তোমার সংসার করছি, অন্য কোন মেয়ে হলে সেই কবেই তোমাকে ছেড়ে যেত!'--স্বামীকে কখনো এমন কথা বলবেন না। এমন কথায় স্বামী মনে কষ্ট পায়। এবং অনেকসময় জিদের বর্শবর্তী হয়ে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়।
❏ ছয়: আপনার কোন বান্দবিকে আপনার স্বামীর সাথে একান্তে পরিচয়, কথাবার্তা বলার সুযোগ করিয়ে দিবেননা এবং আপনার দাম্পত্যজীবনের কথাবার্তা আপনার কোন বোন, বান্দবিকে বলবেন না। যদি তারা জিঙ্গাসা করে কেমন সংসার করছোস? স্বামী কেমন?--তবে এক কথায় উত্তর দিবেন "আলহামদুলিল্লাহ ভালো"। কিন্তু আপনি যদি খুটিয়ে খুটিয়ে বলতে শুরু করেন আপনার স্বামী আপনাকে অনেক ভালোবাসে, ঘুরতে নিয়ে যায়, রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়ায় ইত্যাদি তবে এগুলো শুনার পর তারা হিংসে করবে এবং একটা সময় এই বান্দবিই আপনার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াবে। সো বি কেয়ারফুল...
❏ সাত: চাহিদাকে সীমিত রাখুন। অল্পে তুষ্টি ও পরিতৃপ্তি কে নিজের সঙ্গী বানিয়ে নিন। স্বামী যা খেতে ও পড়তে দেয় সেগুলোতেই আলহামদুলিল্লাহ বলুন। স্বামীর আয়ের উপর নিজের চাহিদাকে সীমাবদ্ধ রাখুন।
❏ আট: স্বামীর জন্য ত্যাগ স্বিকার করুন। তাকে মন-প্রান দিয়ে ভালোবাসুন। তার প্রেমিকা হয়ে খুটসুটি আর ভালোবাসায় তার মন মাতিয়ে রাখুন। তার সংসারের প্রতি আন্তরিক হোন। সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম প্রফুল্লচিত্তে আন্তরিকতার সাথে করুন। সংসারে কখনো অভাব-অনটন দেখা দিলে, তখন চিন্তাগ্রস্ত স্বামীর হাতে হাত রেখে তাকে অভয় দিন, তাকে বলুন হতাশ হবেননা আল্লাহ একটা ব্যবস্থা করে দিবেন ইনশা আল্লাহ। স্বামী অফিসে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় নিজ হাতে জুতা, জামাকাপড় পড়তে এগিয়ে দিন। বাড়িতে ফেরার পর তার সাথে মুচকি হেসে কথা বলুন, এইসময় আপনার হাসিমাখা মুখ দেখে মূহুর্তেই আপনার স্বামী সারাদিনের সমস্ত ক্লান্তির কথা ভুলে যাবে। খাওয়ার সময় স্বামীর জন্য অপেক্ষা করুন সে আসলে একসাথে খান। আপনার এইসব স্বভাব আপনার স্বামীর মন জয় করবে এবং সে আপনাকে ছেড়ে অন্যকোন নারীকে তার জীবনে কল্পনাও করবে না।
❏ নয়: স্বামীকে দাম্পত্যজীবনে স্বামী-স্ত্রীর অধিকার, হালাল-হারাম, পাপের শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ে ইসলামিক বইপত্র পড়তে দিন। এইক্ষেত্রে শাইখ সালিহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লার লেখা "নবীজির সংসার", শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইজি আল মাদানি হাফিজাহুল্লার লেখা "আদর্শ বিবাহ ও দাম্পত্য" বইদুটো পড়তে দিতে পারেন। এছাড়াও আরো ভালো ভালো লেখকের বিভিন্ন ইসলামিক বই পড়তে দিন। এগুলো পড়ার পর তার অন্তরে আল্লাহর ভয় জন্ম নিবে, যার ফলে সে পরকীয়ার মত নোংরা পাপে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকবে ইনশা আল্লাহ।
❏ দশ: বিবাহের পূর্বেই দ্বীনদার, মুত্তাকি, চরিত্রবান ছেলে দেখে বিবাহ করুন। তাহলে পরকীয়া নিয়ে টেনশন করতে হবেনা ইনশা আল্লাহ। কেননা, দ্বীনদার ছেলেরা হালালেই সন্তুষ্ট থাকে, হারাম থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করে।
সর্বপরি, স্বামীর জন্য দোআ করুন।
স্বামীর হেদায়াতের জন্য,সুন্দর একটি সংসারের জন্য, স্বামীকে পরনারী থেকে হেফাজতে থাকার জন্য বেশি বেশি আল্লাহর নিকট দোআ করুন। একমাত্র মহান রবের অনুগ্রহই পারে আপনার স্বামীকে সুপথে রাখতে এবং আপনাকে একটি সুখময় দাম্পত্যজীবন দান করতে।
পরিশেষে দোআ করি---
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সমস্তপ্রকার অশ্লিলতা, যিনা-ব্যাভিচার থেকে হেফাজত করুন। আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে আরো দৃঢ় করুন। [আ-মীন]
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬