24/05/2025
স্ক্যাবিস (Scabies) হলো এক ধরনের ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা সারকপটিস স্ক্যাবিই (Sarcoptes scabiei) নামক এক ধরনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরজীবী (mite) দ্বারা হয়। এই পরজীবীটি মানুষের চামড়ার নিচে ঢুকে গর্ত তৈরি করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে, যার ফলে ত্বকে চুলকানি ও ফুসকুড়ি হয়।
স্ক্যাবিস কেন হয়:-
পরজীবীর সংক্রমণ স্ক্যাবিসের মূল কারণ হলো সারকপটিস স্ক্যাবিই নামক পরজীবীর সংক্রমণ। এটি এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির শরীরের সংস্পর্শে গেলে ছড়ায়।স্বামী স্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা বা শারীরিক যোগাযোগ ও দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের সংস্পর্শে থাকলে (যেমন, একই বিছানা বা জামাকাপড় ব্যবহার করলে), স্ক্যাবিস সহজেই ছড়াতে পারে।
দীর্ঘ সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ঘনঘন কাপড় না ধোয়া, নিয়মিত গোসল না করা, এবং অপরিষ্কার বিছানায় ঘুমালে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
জায়গা ও পরিবেশ যেমন স্কুল, হোস্টেল, নার্সিং হোম, জেলখানা বা যেখানে অনেকে মিলে থাকে/গাদাগাদি করে একের অধিক মানুষ থাকে, সেসব জায়গায় স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়াতে পারে।
স্ক্যাবিসের লক্ষণ:-
চুলকানি (বিশেষ করে রাতে বেশি)।ত্বকে ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট গর্ত।ত্বকে লালচে বা ফোস্কার মতো দাগ।আঙুলের ফাঁকে, কনুই, কোমর, বুক, স্তনের নিচে, পুরুষদের যৌনাঙ্গে বা শিশুদের হাত-পায়ে বেশি আক্রান্ত হয়।
হোমিওপ্যাথিতে স্ক্যাবিস (Scabies) খুব ভালোভাবে চিকিৎসা করা যায়, তবে চিকিৎসা সফল করতে হলে একজন চিকিৎসকে রোগীকে গুরুত্বসহকারে দেখাতে হবে, কারন
রোগীর সম্পূর্ণ লক্ষণ (totality of symptoms) বিবেচনা করতে হয় একজন চিকিৎসক কেই,রোগীর মেন্টাল ও ফিজিক্যাল কনস্টিটিউশন বুঝতে হয়।এবং উপযুক্ত ইন্ডিভিজুয়ালাইজড ঔষধ নির্বাচন করতে হয় চিকিৎসক কেই।
চলুন স্ক্যাবিসের জন্য ব্যবহৃত কিছু সাধারণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নিয়ে বলার চেষ্টা করি:-
Sulphur:-প্রবল চুলকানি, বিশেষ করে রাতে ও গরমে বেড়ে যায়।চুলকাতে চুলকাতে ক্ষত তৈরি হয়ে যায়।ত্বক শুকনো, জ্বালা ধরা।ব্যক্তি হয়তো গন্ধে বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অনাগ্রহী।ইতিহাসে পুরাতন চর্মরোগ বা স্ক্যাবিস বারবার হচ্ছে।
Psorinum:-স্ক্যাবিস ঘন ঘন রিল্যাপস করছে।তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত চুলকানি।শীতে বা ঠাণ্ডায় চুলকানি বাড়ে।রোগী খুব দুর্বল ও শীতপ্রবণ।মহিলাদের ক্ষেত্রে, স্ক্যাবিসের সাথে হরমোনাল সমস্যা বা মাসিকের গোলমাল।শরীরের ভাঁজে (joint, underarms, groins) বেশি সমস্যা।
Graphites:-ঘন ও আঠালো স্রাবসহ ফুসকুড়ি।ত্বকে ফাটল, বিশেষ করে কানে বা নাভিতে।মোটা ত্বকবিশিষ্ট ও সহজে ঘাম হয় এমন রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকর।
Mercurius sol:-রাতে প্রচণ্ড চুলকানি।শরীরে দুর্গন্ধ, ঘেমে যাওয়া, জিহ্বা নরম ও দাগযুক্ত।মুখে বা গলায় ফোঁড়া হলে সহায়ক
বিশেষ পরামর্শ:-এই লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে গেলেই আপনি দোকান থেকে ঔষধ কিনে খাবেন না,এতে উপকারের চাইতে ক্ষতি হবে বেশি,কেননা রোগীর সামগ্রিক লক্ষণ বিচার করে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করা উচিত।
নিজে কিনে ঔষধ খাবেন না কেনো চলুব তা নিয়ে একটু আলোচনা করি।
হোমিওপ্যাথি ঔষধ নিজে না খেয়ে একজন ক্লাসিক্যাল হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উত্তম, এর পেছনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে চলুন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক।
হোমিওপ্যাথি হলো ব্যতিক্রমধর্মী ও ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।হোমিওপ্যাথিতে একই রোগে ভিন্ন ব্যক্তির জন্য ভিন্ন ভিন্ন ঔষধ দরকার হতে পারে। যেমন মাথাব্যথা অনেকেরই হয়, কিন্তু কারো মাথা ব্যথা রোদে বেড়ালে হয়, কারো হয় ঠাণ্ডায়, কারো আবার মানসিক চাপ বা রাগে।স্ক্যাবিসের বেলাতেই ভিন্নতা থাকে। এইসব পার্থক্য বুঝে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।
হোমিওপ্যাথিতে সঠিক পটেন্সি ও ডোজ নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ:-
কোন রোগের জন্য কোন পটেন্সিতে (30, 200, 1M ইত্যাদি) ঔষধ দিতে হবে, কতবার দিতে হবে এসব ভুল হলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি হতে পারে। সেটা ক্লাসিক্যাল ডাক্তারই সঠিকভাবে বুঝিয়ে দিতে পারেন।
রোগীর আদি কারণ (miasm), কনস্টিটিউশন, ও মানসিক-শারীরিক লক্ষণ বিশ্লেষণ করে মূল ঔষধ নির্ধারণ করা হয়। এগুলো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন না, এজন্য নিজে ঔষধ কিনে খেলেই বিপদজনক হতে পারে আপনার জন্য।
সিম্পটম সাপ্রেশন বা ভুল চিকিৎসায় রোগ ভিতরে ঢুকে যেতে পারে সহজ ভাবে বলা যায় সঠিকভাবে না বুঝে ঔষধ খেলে রোগ সাময়িক চাপা পড়ে যেতে পারে, কিন্তু পরে তা জটিল বা ক্রনিক আকার নিতে পারে।
এবার আমরা স্ক্যাবিস (Scabies) বা চুলকানিকে নিয়ে হোমিওপ্যাথির দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করি কেন এই রোগে ক্লাসিক্যাল হোমিও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
ধরা যাক রোগী নিজে দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান,
একজন রোগী চুলকানির জন্য Sulphur 200 খেয়েছিলেন এক আত্মীয়ের পরামর্শে বা আমার সংক্ষিপ্ত আকারে sulpher ঔষধের লক্ষণদেকে। প্রথমে চুলকানি কমে গেল, কিন্তু কিছুদিন পর দেখা গেল ঘনঘন সর্দি-কাশি, গ্যাস্ট্রিক আর মানসিক অস্থিরতা শুরু হলো।
কেন এমন হলো?
এই প্রশ্নটা আসতেই পারে।
কেন এমন হলো চলুন এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা যায়, Sulphur একটি গভীর Acting Remedy। কিন্তু রোগীর Constitution, মায়াজম, এবং দেহের গঠন অনুযায়ী sulpher যায় না।তবুও কিছু লক্ষনের সাথে মিল আছে বলেই পাইকারি দোকান থেকে কিনে নিয়ে খেলেন তাতে রোগীর রোগ ভালো তো হবেই না চর্মরোগ ভেতরে চাপা দিতে পারে আর দেবেই। রোগ সাময়িক চুপ করে গেলেও গভীরে গিয়ে নতুন সমস্যার জন্ম দেয়।এটাকে বলে suppression of disease।প্রথমে উপকার পেলেন চুলকানি কমে গেল। তিনি ভাবলেন রোগ ভালো হয়ে গেছে।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর দেখা গেল,
প্রচণ্ড পেটের গ্যাস হচ্ছে।
শরীরে গরম লাগে, ঘাম বেশি হয়, খিটখিটে মেজাজ।
মাঝেমধ্যে মানসিক অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা হচ্ছে।
সর্দি-কাশি বারবার হচ্ছে।
এবার একজন ক্লাসিক্যাল হোমিও ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে ডাক্তার বাবু কি করতেন তা নিয়ে বলি।
স্ক্যাবিসের ধরন বুঝতেন প্রথমে,
চুলকানি কোন সময়ে বাড়ে?
গরমে না ঠাণ্ডায় বাড়ে?
রক্ত উঠে কিনা?
মানসিক অবস্থা কেমন?
রোগীর সম্পূর্ণ Constitutional history নিতেন।
রোগীর ভিতরের Psora মায়াজম বা অন্য কোনো গভীর সমস্যা থাকলে সেটার জন্য উপযুক্ত গভীর Acting Remedy দিতেন।
তিনি রোগ ভালো হওয়ার নিয়মিত ফলোআপে লক্ষ রাখতেন, যেন কোন ঔষধ কবে পুনরায় দিতে হবে বা বন্ধ করতে হবে।
স্ক্যাবিসের মতো চর্ম রোগে শুধুমাত্র বাহ্যিক লক্ষণ দেখে ওষুধ নিলে রোগ ভেতরে ঢুকে যেতে পারে।তখন তা দম বন্ধ করা সর্দি, হাঁপানি, গ্যাস্ট্রিক, মানসিক সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। ক্লাসিক্যাল চিকিৎসক পুরো রোগীকে বুঝে একমাত্র উপযুক্ত ঔষধ দিয়ে ভিতর থেকে নিরাময় করার চেষ্টা করেন।
বিঃদ্রঃ
স্ক্যাবিস আক্রান্ত রোগীর ব্যক্তিগত জিনিস (তোয়ালে, জামা, বিছানা) আলাদা রাখা উত্তম।নিয়মিত কাপড় ধোয়া।পরিবারের অন্য সদস্যদেরও যাতে আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়।আক্রান্ত রোগী জিনিসপত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকায় উচিৎ।
সকলেই ভালো থাকবেন আজ এই পর্যন্তই।
ধন্যবাদান্তে,
লোকনাথ হোমিও হল
ডাঃ- এ কে সরকার সাগর
ডি,এইচ,এম,এস (বি,এইচ,বি)ঢাকা
রানীরহাট রোড,বনানী বাজার,বগুড়া।
যেকোন প্রয়োজনে ফোন করুণ।
০১৬৭৩৫৫৮৫২৬