08/07/2025
আঁধার ঘরে জোনাকি
শেখ নুরইসলাম
রাত সাড়ে দশটা।
গ্রামের এক প্রান্তে ছোট্ট এক টিনের ঘরে হঠাৎ আলো নিভে গেল। দূর থেকে কুকুরের ডাক, মাঝে মাঝে শেয়ালের হুংকার—সব মিলিয়ে একটা অজানা ভয়ের বাতাস বইছিল।
রাশেদ দেশে ফিরেছে আজ সকালেই।
দুবাইয়ে পাঁচ বছর রক্ত পানি করে টাকা কামিয়ে বাড়ি ফিরেছে বউ ফারজানাকে নিয়ে সুখের সংসার গড়বে বলে। কিন্তু তার চোখের নিচের কালো দাগ আর কাঁপা কণ্ঠে যেন কোনো সুখের রঙ ছিল না।
রাশেদ যখন বাড়ি পৌঁছায়, বউয়ের আচরণে কিছু একটা অদ্ভুত লেগেছিল।
ফারজানার মুখ শুকনো, চোখে আতঙ্ক। অথচ স্বামী ফিরে এসেছে—এমন দিনে সাধারণত স্ত্রীর চোখে আনন্দের ঝিলিক থাকার কথা।
অথচ ফারজানার চোখ যেন কিছু লুকাচ্ছিল।
রাতের খাবার শেষে, রাশেদ বারান্দায় বসে বিড়ি টানছিল।
তখনই পাশের ঘর থেকে কান পাততেই ভেসে এল চেনা গলায় ফিসফাস—
“ও ফিরে এসেছে... এখন আমাদের সাবধানে থাকতে হবে।”
আরও কয়েকটি কথা কানে এল।
আরেকজন পুরুষের কণ্ঠ—চেনা কণ্ঠ। বুক কাঁপিয়ে উঠল। এ কণ্ঠ তার ছোট ভাই রিয়াদের!
রাশেদের দুনিয়া কেঁপে উঠল।
সে জানত, বিদেশে থাকাকালীন রিয়াদই তার স্ত্রীর পাশে ছিল, সাহায্য করেছিল। কিন্তু এখন যদি সে-ই তার জায়গা দখল করে নেয়, তাহলে?
রাত বাড়ে।
রাশেদ কিছু না বলেই ঘুমানোর ভান করে।
কিন্তু তার মন ঘুমায় না। সে বুঝে গেছে, বাড়ির মধ্যে কিছু একটা গভীর ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।
দুই বছর আগে...
ফারজানার বয়স তখন মাত্র ২২। রাশেদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল আত্মীয়দের পছন্দে।
বিয়ের এক মাসের মাথায় রাশেদ চলে যায় দুবাই।
বাকি পড়ে ফারজানা—একটা একলা ঘর, কিছু শূন্যতা, আর মাঝে মাঝে রিয়াদের হাসিমুখ।
রিয়াদ বয়সে ছোট, কিন্তু ফারজানার চোখে সে একমাত্র আশ্রয় হয়ে উঠেছিল।
এক সময়ের আদরের দেবর হয়ে উঠেছিল রাতের নীরব সহচর।
প্রথমে ছোটখাটো সহানুভূতি, তারপর হাত ধরা, তারপর...
অবৈধ সম্পর্কটা গোপনে চলতে থাকে।
গ্রামের কেউ জানে না, এমনকি রাশেদের মা-ও না, যে তাদের ঘরের ভিতরে নোংরা এক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
বর্তমান...
রাশেদ পরদিন সকালে উঠে গ্রামের বাজারে যায়।
কিন্তু তার মাথায় চলছে ষড়যন্ত্রের খেলা।
সে সিদ্ধান্ত নেয়, স্ত্রীর মোবাইল ঘেঁটে দেখতে হবে কিছু।
রাতে ফারজানা গোসল করতে গেলে, সে মোবাইল খোলে।
একটার পর একটা মেসেজ—
"আজ রাতে ঠিক আগের ঘরে আসিস। রাশেদ কিছু টের পায়নি।"
"তুই না থাকলে আমি বাঁচতাম না। তোর স্পর্শ ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ…"
রাশেদ থমকে যায়। বুকের মধ্যে আগুন জ্বলে ওঠে।
সে বুঝে যায়, এসব কিছু প্রমাণ ছাড়া কোনো মানে রাখে না।
সে সব স্ক্রিনশট নেয়।
পরদিন রাত...
রাশেদ আজ ভান করে ঘুমাচ্ছে।
হঠাৎ মাঝরাতে দরজা খোলে—পায়ের শব্দ।
সে চুপচাপ চোখ খুলে দেখে, ফারজানা সাদা ওড়না গায়ে চাপিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রিয়াদও ঘর থেকে বের হয়।
দুজনকে অনুসরণ করে সে।
পুরনো পুকুরপাড়ের পাশে এক পরিত্যক্ত ঘর—সেখানেই শুরু হয় রাতের আসল খেলা।
ফাঁক দিয়ে সে দেখে দুজনের কুৎসিত আলিঙ্গন।
রাশেদের মাথা ঘুরে যায়।
হাতের মোবাইলে সে ভিডিও নেয়—তাদের সমস্ত কুকর্মের।
অভিযোগ নয়, প্রতিশোধ...
রাশেদ থানায় যাবে, বিচার চাইবে—প্রথমে এমন ভাবলেও পরে থেমে যায়।
সে ভাবে, এসব বলে সমাজে নিজের অপমান বাড়িয়ে লাভ নেই।
বরং নিজেই শেষ করবে এ খেলাটা।
নিজের হাতে সাজাবে প্রতিশোধের ছক।
সে বাড়ি ফিরে আসে—ভান করে কিছু জানে না।
পরদিন বিকেলে ফারজানাকে ডাকে—
“চলো, পুকুর পাড়ে হাঁটতে যাই।”
ফারজানা দ্বিধায় পড়ে, কিন্তু যায়।
পেছনে পেছনে রিয়াদকেও সে ডেকে নেয়—
“মাকে আনতে হবে তোকে, আমাদের কিছু কথা বলার আছে।”
সন্ধ্যার পর ঘন অন্ধকারে, রাশেদ পুকুরপাড়ের নির্জন জায়গায় দাঁড়িয়ে বলে—
“তোমাদের সম্পর্কের খবর আমি জানি। তোমাদের ভিডিও আছে আমার কাছে।”
দুজনেই স্তব্ধ।
ফারজানা কান্নাকাটি করে, রিয়াদ রেগে ওঠে।
“তুই কিছুই করতে পারবি না!”
কিন্তু রাশেদ তখন বলে—
“তোমাদের জন্য একটা উপহার রেখেছি—যেটা তোমরা চিরদিন মনে রাখবে।”
হঠাৎ পকেট থেকে সে ছুরি বের করে রিয়াদের দিকে তেড়ে যায়।
কিন্তু ঠিক তখনই ঘটে অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
পুকুরপাড়ের ঘন অন্ধকারে, কুয়াশায় ভেজা বাতাসে তিনটি মানুষের শ্বাস মিলেমিশে গেছে।
রাশেদ ছুরি বের করতেই রিয়াদ চমকে উঠে—
“তুই মারবি আমাকে?”
তার ঠোঁটে তবুও একটু বিদ্রূপের হাসি—
“তুই ভাবিস আমি ভয় পাই? আগে প্রমাণ কর তো, তুই কিছু করতেও পারিস!”
রাশেদ কিছু বলে না।
তার চোখে ছিল মৃত্যুপ্রতিজ্ঞা।
কিন্তু ঠিক তখনই, পেছন থেকে ফারজানা ঝাঁপিয়ে পড়ে রাশেদের ওপর।
তার চুলের খোঁপা খুলে যায়, মুখে এক পশুর মতো হিংস্রতা।
“তুই ভাবিস তুই বিদেশ গিয়ে কিছু হইছিস? আমি তোর ছায়া হয়ে বেঁচেছি ৫ বছর। এখন তুই সব নষ্ট করবি? মর!”
রাশেদ ছুরিটা ফেলে দিতে গিয়েও পারল না।
হাত কাঁপছিল। মুখে ঘাম।
রিয়াদ পেছন থেকে লাঠি দিয়ে এক আঘাত করল তার মাথায়।
রাশেদ ছিটকে পড়ে গেল মাটিতে।
তার চোখের কোণে ঝাপসা হয়ে গেল সবকিছু।
ঘণ্টাখানেক পরে...
রাত তখন গভীর।
পুকুরঘাটে গাঢ় অন্ধকার।
ফারজানা আর রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে, রাশেদের নিথর দেহের সামনে।
“মরে গেছে তো?”—রিয়াদ জিজ্ঞেস করল।
ফারজানা গায়ে থাকা শাড়ির আঁচল দিয়ে রাশেদের মুখ পরীক্ষা করল।
না, এখনো নিঃশ্বাস চলছে... হালকা, কিন্তু চলছে।
“মারতে হবে এখনই। না হলে ও আমাদের শেষ করে দেবে,” ফারজানার কণ্ঠে ছিল দানবীয় শীতলতা।
রিয়াদ ছুরিটা তুলে নিল।
একবার হাত কাঁপল।
তবে এক মুহূর্ত পরই সে ছুরিটা বসিয়ে দিল রাশেদের বুকের বাঁ দিকটায়।
একবার...
দুইবার...
তিনবার...
শেষবার রাশেদের নিঃশ্বাস থেমে গেল।
পুকুরঘাটে একেবারে নীরবতা নেমে এল।
দেহ গায়েব করার খেলা
দুজন মিলে রাশেদের মৃতদেহ গাছে পুঁতে ফেলল।
মাটি সরিয়ে একটা ৩-৪ ফুট গভীর গর্ত তৈরি করে তাতে ফেলে দিল।
সঙ্গে পুড়িয়ে ফেলল রাশেদের ফোন—যেখানে ভিডিও প্রমাণ ছিল।
সাবধানতার সঙ্গে ছুরি মুছে ফেলা হল, পুকুরে ছুড়ে দেওয়া হল রক্তমাখা কাপড়।
সব কিছু এমনভাবে করা হল, যেন রাশেদ হারিয়ে গেছে—কোনো প্রমাণ নেই, কোনো চিৎকার নেই, কিছুই না।
পরদিন সকাল
“রাশেদ ভাই সকালে ঘরেই ছিল, কিন্তু এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না”—ফারজানার কণ্ঠে আতঙ্কের অভিনয়।
রিয়াদ নাটক করল, “আমরা থানায় রিপোর্ট করি, হয়তো কাউকে না জানিয়ে কোথাও গেছে…”
তবে একমাত্র একজন সন্দেহ করল—
রাশেদের মা, রওশন আরা বেগম।
তিনি জানতেন ছেলেটা এমন করে যায় না।
তার মনের ভিতরে অজানা ভয় ঢুকে পড়েছিল।
বহুদিন ধরে তিনি ফারজানার আচরণ লক্ষ্য করছিলেন।
আজ সেটা যেন তলোয়ার হয়ে সামনে এলো।
তদন্ত শুরু
দুই দিন পর থানায় জিডি করা হল—“রাশেদ নিখোঁজ”।
গ্রামে কানাঘুষো—“না জানি কী হল, রাশেদ তো ভালো মানুষ ছিল।”
পুলিশ আসে।
তদন্ত শুরু হয়।
কিন্তু কিছুই মেলে না।
মাটি এত নিখুঁতভাবে চাপা দেওয়া, যেন কবর ছিল বহুদিন আগের।
রিয়াদ আর ফারজানা স্বাভাবিক আচরণ করে।
তবে পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর, ইকবাল হোসেন, একদিন চা খেতে খেতে রওশন আরাকে প্রশ্ন করেন—
“আপনি কি ভাবেন, আপনার ছেলের অনুপস্থিতির পেছনে কারো হাত থাকতে পারে?”
রওশন আরার উত্তর ছিল একটাই:
“আমার ছেলের স্ত্রী আর ছোট ছেলে, এই দুজনকে আলাদা করে জিজ্ঞেস করুন।”
একটা ভুল, যা শেষ করে দিল সব...
রিয়াদ নতুন ফোন কিনে একদিন পুরনো মেমোরি কার্ড ঢুকিয়ে কিছু ছবি দেখতে চাচ্ছিল।
আর তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।
পুরনো মেমোরি কার্ডে এক অটো-ব্যাকআপ ভিডিও উঠে আসে—যা রাশেদ আগের মোবাইল দিয়ে রেকর্ড করেছিল।
রিয়াদ সেটা মুছতে না মুছতেই—তার ছোটভাই সালমান মোবাইলটা হাতে নিয়ে নেয়।
বাচ্চা ছেলে, সে ভিডিওটা দেখে চমকে যায়—
“এইটা ফারজানা আপু আর ভাইয়া...!!”
সে ভিডিওটা এক বন্ধুর কাছে শেয়ার করে, সেখান থেকে পৌঁছে যায় থানায়।
শেষ অধ্যায়: ধরা পড়ে যাওয়া
পুলিশ ভিডিও দেখে চমকে ওঠে।
রিয়াদ আর ফারজানাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রথমে অস্বীকার করলেও, পরে কড়া জিজ্ঞাসাবাদে ফারজানা ভেঙে পড়ে।
সে কাঁদতে কাঁদতে বলে—
“সে শুধু আমার স্বামী ছিল, কিন্তু আমি তো ছিলাম একটা বন্দি! আমি ভালবাসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সমাজ আমাকে সুযোগ দেয়নি। তাই... তাই আমি ভুল করেছিলাম, কিন্তু আমি একা না... রিয়াদও সমান অপরাধী।”
রিয়াদ চিৎকার করে ওঠে—
“ওই মাগি নিজেই সব করেছে, আমিও ফাঁসে গেছি!”
দুজনেই একে অপরকে দোষ দিতে থাকে।
অবশেষে পুকুরপাড় থেকে উত্তোলন করা হয় রাশেদের মৃতদেহ।
ডিএনএ রিপোর্ট, ফরেনসিক প্রমাণ, ভিডিও—সব মিলিয়ে দুইজনকেই আদালত আজীবন কারাদণ্ড দেয়।
শেষ দৃশ্য
রওশন আরা বেগম ছেলের কবরের পাশে বসে চুপচাপ কাঁদছেন।
তার পাশে ছোট নাতি সালমান দাঁড়িয়ে।
তার হাতে ছিল সেই পুরনো মোবাইলটা—যা একসময় রাশেদ দিয়ে গিয়েছিল।
একটা ভিডিও চালু ছিল—
রাশেদ বলছে,
“এই ফোনে যা আছে, যদি কোনোদিন আমার কিছু হয়, এটা দেখে বুঝবি কারা আমার সর্বনাশ করেছে...”
বছরখানেক পরে...
নাটোর জেলা কারাগার।
ফারজানা আর রিয়াদ এখন কয়েদি। কিন্তু জেলের ভেতরে এসে জীবন থেমে থাকেনি—বরং শুরু হয়েছে এক নতুন রকমের খেলা।
রিয়াদ এখনো ভাবে—একদিন না একদিন সে বেরিয়ে আসবে।
তার মনটা কুটিল, চতুর।
সে জেলের ভেতরেই "ভাই ভাই" সম্পর্ক গড়ে তুলেছে কিছু অপরাধীর সঙ্গে।
কারো সঙ্গে দালালি করে, কারো জন্য জোগাড় করে মাদক, কারো কানে ফিসফিস করে একদিন "বড় প্ল্যান" করার কথা বলে।
এদিকে ফারজানা...
সে ভেঙে পড়েছে।
দিনে দিনে শুকিয়ে গেছে মুখ।
খাবার খায় না ঠিকমতো।
জেলের ভেতর তার জীবনের সমস্ত অর্থ যেন মুছে গেছে।
রাতের মধ্যে এক অন্ধকার চিঠি
এক রাতে ফারজানার কাছে এক কয়েদি গোপনে একটা চিঠি দিয়ে যায়।
চিঠিতে লেখা:
"তোকে বাঁচাতে পারি আমি। একটা পথ আছে। কিন্তু তার জন্য তুই আমাকে সাহায্য করবি।"
– রিয়াদ
ফারজানার গা কাঁপে।
সে বুঝে যায়—রিয়াদ থেমে নেই।
তার ভেতরে এখনো খেলা চলছে।
পরদিন কারাগারের কাজের সময় রিয়াদ তাকে কাছে ডাকে।
“তুই চুপচাপ থাকলে, আমার পেছনে লাগবি না, তাহলে আমি এক নতুন লোকের সাহায্যে কেস ঘুরিয়ে দেব। তোকে মুক্ত করিয়ে দেব।”
সে ফিসফিস করে।
ফারজানা জবাব দেয় না।
শুধু তাকিয়ে থাকে, যেন এক বিষাক্ত সাপকে দেখছে।
আদালতের নতুন ঘটনা
বিচারপতি বদলানো হয়েছে।
নতুন বিচারপতি মামলা পুনরায় খোলেন, কারণ ডিফেন্স পক্ষ দাবি করে—রাশেদের মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা যথাযথ ছিল না।
এটা ছিল রিয়াদের ছড়ানো গুজবের ফল।
সে একসময় নিজের আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রভাব ফেলতে পেরেছিল।
কিন্তু এই ঘটনাই খোলে আরও বড়ো সত্য।
এক অজানা নাম—'আজাদ'
নতুন তদন্তে উঠে আসে এক নাম—আজাদ।
সে একজন ডাকাত দলের সাবেক সদস্য, বর্তমানে পলাতক।
ভিডিও ফুটেজের প্রমাণ ঘাঁটতে গিয়ে দেখা যায়—রিয়াদ এক সময় আজাদের সঙ্গে দেখা করেছিল।
পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রাশেদের হত্যার পর রাতেই রিয়াদ আরেকজন লোককে বাড়ির পেছনে ডেকে এনে কিছু "মুছে" ফেলেছিল।
সেই লোকই ছিল আজাদ।
সে ছুরির হাতল থেকে রাশেদের আঙুলের ছাপ মুছে দিয়েছিল, গর্তের চিহ্ন মুছে ফেলেছিল।
অর্থাৎ, ফারজানা সত্যিই জানত না যে রিয়াদ অন্যকেও জড়িয়েছিল।
ফারজানার সিদ্ধান্ত
ফারজানা বুঝতে পারে, সে শুধু প্রেমিক নয়, এক বিকৃত অপরাধীর হাতের পুতুল ছিল।
সে পুলিশকে গোপনে জানায়—
“আমাকে বাইরে নিয়ে যান। আমি সাক্ষ্য দেব। সব বলব।”
আবারও আদালত
ফারজানার সাক্ষ্যে ভেঙে পড়ে গোটা কোর্ট।
সে খোলাখুলি বলে—
“আমার ভুল ছিল, আমি গন্ধ মাখা আবেগে ভুল পথে গিয়েছিলাম। কিন্তু রিয়াদ পরিকল্পিত খুনি। ও শুধু রাশেদকে মেরে থেমে থাকেনি, আজাদ নামের একজন খুনিকে এনেছে প্রমাণ গায়েব করতে।”
সাক্ষ্য মেনে আদালত রিয়াদের ফাঁসির আদেশ দেয়।
ফারজানার শাস্তি কমে গিয়ে ১০ বছর সাজা নির্ধারণ হয়, কারণ সে অপরাধ স্বীকার করেছে এবং তদন্তে সাহায্য করেছে।
জেল ফেরার রাতে...
রিয়াদ রেগে যায়।
সে রাতে তার সেলের ভেতর গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
শেষ চিঠিতে সে লিখে যায়—
“আমার বিচার আমি নিজেই করেছি। কিন্তু ও (ফারজানা) বিশ্বাসঘাতক। তার শেষ আমি দেখে যাব।”
ফারজানার ভয়
কারাগারের প্রহরীরা তাকে সুরক্ষা দেয়।
তবে তার চোখে এখনো ভয়।
রিয়াদ হয়তো মরেছে, কিন্তু রিয়াদের হাত ছিল বড়ো।
আজাদ এখনো বাইরে।
৩ বছর পর...
ফারজানা এখন সাতক্ষীরা মহিলা কারাগারে।
দিন যায়, রাত যায়—জীবন চলে বিষণ্ণ গতিতে।
তার সাজা কমে এখন আর ২ বছর বাকি।
সে এখন ধর্ম-কর্ম করে, জেলের মেয়েদের সেলাই শেখায়।
কিন্তু তার মাথায় একটাই কথা—
“আজাদ বেঁচে আছে।”
রিয়াদ মরার আগে বলে গিয়েছিল,
“আজাদ জানে সবকিছু। সে একদিন ফিরবে।”
এক অজানা চিঠি
এক সন্ধ্যায় ফারজানার কাছে চিঠি আসে।
ভিতরে লেখা ছিল:
“মাফ করে দিলাম না। অপেক্ষা কর।”
— A
ফারজানার মুখ সাদা হয়ে যায়।
সে জানে—এটা আজাদ।
সালমান এখন বড় হয়েছে
রাশেদ আর ফারজানার ছেলে সালমান এখন ১৪ বছর বয়সী।
সে থাকে দাদির সাথে।
চোখে ঘৃণা ফারজানার প্রতি, কারণ সে জানে মাকে সে হারায়নি—মা-ই বাবাকে খুন করেছিল।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে বুঝে যায়, মা শুধু খুনি নয়, একজন প্রতারিত নারীও ছিল।
সে ঠিক করে, মায়ের নতুন শুরু হবে।
কারাগার থেকে মুক্তি
ফারজানা ৫ বছর সাজা ভোগের পর ভালো আচরণের জন্য মুক্তি পায়।
সে বাড়ি ফিরে না গিয়ে ঢাকায় একটা মহিলা সেফ হাউজে থাকতে শুরু করে।
নতুন জীবন শুরু করতে চায়।
কিন্তু...
আজাদের ফিরে আসা
ঢাকার উত্তরা।
এক সন্ধ্যায়, সেফ হাউজ থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে দাঁড়াতেই, এক পুরুষ গলা নিচু করে বলে—
“তুই ভাবলি, তোকে ছেড়ে দিব?”
ফারজানা ঘুরে দাঁড়ায়।
আজাদ।
চোখে আগুন।
হাতে একটা ছোট ব্লেড।
তার চোখে রিয়াদের প্রেতাত্মা।
“তুই আমাকে ফাঁসানোর কথা বলেছিলি রিয়াদকে? তুই রিয়াদরে মাইরা এখন শান্তিতে থাকবি?”
আজাদ ঝাঁপিয়ে পড়ে।
শেষ মুহূর্তে সালমান
ঠিক তখনই একটা বাইকের শব্দ হয়।
একজন ছেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আজাদের ওপর।
সালমান।
সে পুলিশে খবর দিয়েছিল আগেই, কারণ সে মায়ের গতিবিধি লক্ষ করছিল অনেকদিন।
আজাদ ছুরিকাঘাত করে সালমানের হাতে, কিন্তু পালাতে পারে না।
স্থানীয়রা ধরে ফেলে।
পুলিশ এসে গ্রেফতার করে।
শেষ দৃশ্য: কবরের পাশে মা-ছেলে
ফারজানা রাশেদের কবরের পাশে বসে।
তার পাশে দাঁড়িয়ে সালমান, হাতে মোবাইলে রাশেদের সেই পুরনো ভিডিও।
যেখানে রাশেদ বলেছিল—
“আমি জানি, ফারজানা আমার মতো করে ভালোবাসে না। কিন্তু আমি চাই, সে একটা নতুন জীবন পাক।”
ফারজানা কাঁদে।
সালমান তার হাত ধরে।
বলল—
“বাবার হত্যার বিচার হয়েছে।
এখন সময়, তুমি নিজেকে ক্ষমা করো, মা।”
#নষ্টের_ফেরিওয়ালা