21/05/2025
♦️♦️স্ক্যাবিস♦️♦️
=================================
চিকিৎসা জানার আগে স্ক্যাবিস সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা জরুরি।
🔶স্ক্যাবিস কী?
স্ক্যাবিস (Scabies) একটি চরম সংক্রামক চর্মরোগ, যা Sarcoptes scabiei var. hominis নামক এক ধরনের পরজীবী মাইটের (mite) কারণে হয়। এটি খুবই ক্ষুদ্র, মাইক্রোস্কোপিক প্রাণী যা ত্বকে ঢুকে গর্ত (burrows) করে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। এর ফলে তীব্র চুলকানি এবং ত্বকে উদ্ভেদ বা ঘা সৃষ্টি হয়।
🔶স্ক্যাবিসের কারণ কী?
পরজীবীঃ Sarcoptes scabiei নামক মাইট
🔶সংক্রমণ ছড়ানোর উপায় কীঃ
✅ত্বকের সংস্পর্শ
✅একই বিছানা, কাপড়, তোয়ালে ইত্যাদির ব্যবহার
✅পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হলে অন্যরাও সহজেই সংক্রমিত হয়।
🔶স্ক্যাবিসের লক্ষণসমূহঃ
🔶প্রধান ৩ লক্ষণঃ
✅ক) ভয়ানক চুলকানি – বিশেষ করে রাতে বৃদ্ধি পায়।
✅খ) ত্বকে উদ্ভেদ – আঙুলের ফাঁকে, কবজিতে, পায়ে, নাভি, কোমর, স্তন ও যৌনাঙ্গের আশপাশে সহ শরীরের সবখানে উদ্ভেদ দেখা দেয়।
✅গ) চুলকানির কারণে ঘা ও সেকেন্ডারি ইনফেকশন হতে পারে।
🔶বাচ্চাদের প্রধান ২ লক্ষণঃ
✅ক) মাথা, মুখ ও হাতের তালুতে ও পায়ের আঙুলে বেশি দেখা যায়।
✅খ) মারাত্মক রুপ ধারণ করতে পারে।
🔶স্ক্যাবিসের ধাপসমূহঃ
✅ক) ইনকিউবেশন পিরিয়ডঃ
🔺প্রথম সংক্রমণে উপসর্গ দেখা দিতে ২-৬ সপ্তাহ সময় লাগে
🔺দ্বিতীয়বার সংক্রমণে ১-৪ দিনের মধ্যেই উপসর্গ শুরু হয়
✅খ) প্রাথমিক স্টেজঃ
🔺হালকা চুলকানি ও র্যাশ দেখা দেয়।
✅গ) এডভান্স স্টেজঃ
🔺তীব্র চুলকানি, উদ্ভেদ, ঘা, ইনফেকশন
🔶স্ক্যাবিসের ধরনঃ
✅ক) ক্লাসিক টাইপ: সবচেয়ে কমন। আমরা যেটা সচারাচর দেখে থাকি।
✅খ) নডুলার স্ক্যাবিস: বগল, কুচকি, লজ্জাস্থানে এর সংক্রমণ বেশি।
✅গ) বুলাস স্ক্যাবিস: ফোস্কাসহ দেখা দেয়।
✅ঘ) ক্রাস্টেড স্ক্যাবিসঃ বাংলাদেশে দেখা যায় না।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়
ত্বকে পুরু, খসখসে স্ক্যাব পড়ে
অত্যন্ত সংক্রামক
🔶ডায়াগনসিসঃ
✅ক্লিনিক্যাল লক্ষণ দেখে ডায়াগনোসিস করা সহজতর।
✅এছাড়া ত্বকের স্ক্র্যাপ নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা যায়।
🔶প্রতিরোধের উপায়ঃ
✅ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরি + জরুরি
✅আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা
✅বিছানা, জামা-কাপড় গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো
✅পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা দেওয়া
✅রোগীর জন্যঃ আক্রান্ত ব্যক্তির জামাকাপড় গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে বায়ু নিরোধক করে প্যাকেট করে রাখা উচিত।
🌺🌺🌺হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
🔺ধাতুগত শারীরিক গঠন, ধাতুগত প্রবণতা ও সংবেদনশীলতা বিবেচনায় আনা জরুরি। কিছু উদাহরণ দিলে সহজ হবে।
🎯উদাহরণ ১:
রোগীর সমস্যা স্ক্যাবিস, কিন্তু শিশুর গঠন পুরোপুরি ক্যালক কার্ব (মোটা, থলথলে, গলায় ঘাম, ডিম পছন্দ ইত্যাদি), তাহলে ধাতুগত বিবেচনায় ক্যালক কার্ব ই তাকে স্ক্যাবিস থেকে মুক্ত করবে।
🎯উদাহরণ ২:
গ্রাফাইটিসের ধাতুগত রুপ-- ভারী, মোটা, চর্ম খসখসে ও রুক্ষ, সাদামাটা চরিত্রের, ধীর।
🎯উদাহরণ ৩:
সালফার: নোংরা, অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন, অগোছালো।
🌺🌺🌺এছাড়া যেসকল ওষুধ খুব প্রয়োজন হবেঃ
🎯নং ১: ফ্যাগোপাইরাম ৩০,২০০: স্ক্যাবিসের সকল স্টেজে এটা খুবই কার্যকর মেডিসিন। ভয়ানক চুলকানি। চুলকানি রাতে বাড়ে। চুলকানি ঠান্ডায় উপশম।
🎯নং ২: এন্টিম ক্রুড ৬, ৩০: প্রাথমিক স্টেজে খুবই প্রয়োজনীয়। যখন উদ্ভেদগুলো দেখা শুরু, অনেক সময় বুঝাও যায় না, এগুলো স্ক্যাবিস নাকি অন্য চুলকানি। অনেকসময় মনে হবে ঘামাচির মতো। অর্থাৎ একদম শুরুতে এটি প্রয়োগ করা গেলে আর কিছুর প্রয়োজন হবে না। ৬ শক্তি দিলে দৈনিক ১-২ বার, ৩০ শক্তি দৈনিক বা ১-৭ দিন পরপর। এন্টিম ক্রুড চেনার আরেকটি উপায় এর জিহবা লেপাবৃত।
কিছু কেসে এন্টিম ক্রুডের পর সালফার ৬ প্রয়োজন হতে পারে।
🎯নং ৩:
হিপার সালফার ৩০,২০০: রোগী বেশ দেড়ি করে ফেলেছে। সেকেন্ডারি ইনফেকশন শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে হাত, হাতের আঙুলে ইনফেকশন শুরু হয়েছে। উদ্ভেদগুলো পেকে হাত ফুলে উঠেছে। ভয়ানক ব্যথা, চুলকানি, পুঁজ। স্পর্শ ও সহ্য হয় না। এক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগের পর নিয়মিত রোগীর থেকে ফলোআপ নিতে হবে। ডোজ বেশি হলে এগ্রাভেশন যাতে না হয় এজন্য পর্যবেক্ষণ ভিত্তিতে ডোজ নির্ধারণ করতে হবে।
হিপারের পর অনেক সময় মার্কসল ৩০,২০০ এর প্রয়োজন হয়।
🎯নং ৪ঃ
মার্কসল ৩০,২০০: পুরাতন ইনফেকশন, গরম একদম অসহ্য। মুখ থেকে লালা পড়ে। মুখে দূর্গন্ধ।
হিপারের অসমাপ্ত কাজ সম্পাদনে প্রয়োজন হয়।
🎯নং ৫ঃ
ক্যালক সালফ ২০০,১০০০ঃ
পুরাতন ইনফেকশন, পুজ তৈরি বন্ধ ই হচ্ছে না। হলুদ পুরু পুঁজ।
হিপার প্রয়োগে ব্যথা কমার পর এর প্রয়োজন হতে পারে।
🎯নং ৬ সালফার ৬,৩০:
সেকেন্ডারি ইনফেকশন শেষ হলেও চুলকানি থেকে গেলে ৬ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত প্রাথমিক স্টেজে এ চমক দেখায়।
সালফারের চুলকানি রাতে বাড়ে, চুলকিয়ে রক্ত বের করে ফেলে, এরপর ভয়ানক জ্বালাপোড়া। গোসলে বৃদ্ধি সালফারের চারিত্রিক লক্ষণ হলেও স্ক্যাবিসে এ লক্ষ্মণ সবসময়ই ভেরিফাই করার প্রয়োজন নেই। তবে মিলে গেলে আরও ভালো ভালো।
🎯নং ৭ ক্রটন টিগ ৩০: নডিউলার স্ক্যাবিসে কার্যকর। এছাড়া প্রাথমিক স্টেজে চুলকানির প্রাধান্য জননাঙ্গে দেখা দিলে এর প্রয়োজন হয় (ডি/ডি: এন্টিম ক্রুড)
🎯নং ৮ রাসটক্স ও রাস ভেন ৬,৩০:
ফোস্কা দেখা দিলে। এছাড়া প্রাথমিক স্টেজে উপকারী। এর চুলকানি গরম পানিতে বা গরম প্রয়োগে উপশম। চুলকানি রাতে বৃদ্ধি। অস্থিরতা।
🎯নং ৯ঃ আর্স এলব ৩০: সকল স্টেজে উপকারী। ভয়ানক চুলকানি। ভয়ানক অস্থিরতা। রোগীর অবস্থা দেখে মনে হবে এর চুলকানি, কষ্ট, অস্থিরতা এক্ষুনি থামানোর মতো কোনো জাদুকরী ওষুধের প্রয়োজন। সাধারণত সিঙ্গেল ডোজ দিতে হবে।
🎯নং ১০: গ্রাফাইটিস ৩০,২০০,১০০০
পুরাতন কেস। হযবরল। আক্রান্ত স্থানে ক্ষত। পুরু, চটচটে স্রাব নিঃসরণ হয়। ক্ষতস্থানে জামাকাপড় আঠার মতো লেগে যায়। ১০০০ শক্তি দিলে সিঙ্গেল ডোজই যথেষ্ট।
☪️☪️☪️নোট☪️☪️☪️
✅ছোট বাচ্চাদের কেসে সবচেয়ে বেশি সতর্কতার সাথে চিকিৎসা দিতে হবে।
✅মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ছুটির ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো।
✅যারা এখনো আক্রান্ত হয়নি তাদের ধাতুগত চিকিৎসা দিতে হবে।
✅এলার্জিক সকল খাবার পরিহার করতে হবে।
🛑ধন্যবাদান্তে-----🛑
ডা. মিল্টন মজুমদার
বিএইচএমএস [ঢা.বি.]
চেম্বারঃ আইডিয়াল হোমিও কেয়ার
চিতলমারী, বাগেরহাট।
মোবাইলঃ ০১৯২২-৩০৭০০৭