28/06/2025
বন্ধুরা “মেটিরিয়া মেডিকা: ঔষধ নির্বাচনের গুরুতাবপূর্ণ লক্ষণসমূহ” বইটির দ্বিতীয় খণ্ড আরম্ভ করেছি। দ্বিতীয় খণ্ডে ঔষধগুলি যেভাবে থাকছে-
Caulophyllum Thalictroides (Caul.)
(কলোফাইলাম থ্যালিকট্রয়িডিস)
ভূমিকা (Introduction):
• উৎস: উদ্ভিজ্জ।
• প্রচলিত নাম: ব্ল্যু কোহোশ, স্কোয়া রুট, লিওনটিস থ্যালিকট্রোয়িডস, লিওনটিস লা-লিওনটিস।
• বর্ণনা: এটি বার্বেরীডেসী জাতীয় উদ্ভিদ এবং বহুবর্ষজীবি গাছ। ১-৩ ফিট লম্বা হয়। এপ্রিল-মে মাসে ফুল ফুটে। এই উদ্ভিদ আমেরিকা এবং কানাডাতে পাওয়া যায়।
• প্রুভার: ডাঃ বার্ট, ও ডাঃ হেল এটি প্রথম পরীক্ষা করেন। তবে বেশীরভাগই ক্লিনিকাল সিমপটমস। এই ঔষধটি উচ্চশক্তিতে আরও পরীক্ষা হওয়া উচিৎ।
• ঔষধ প্রস্তুত: গাছের টাটকা শিকড় থেকে টিংচার তৈরী করা হয়।
• মায়াজম: অ্যান্টি সাইকোটিক।
• কাতরতা: শীতকাতর।
• ব্যবহার: এটি একটি পলিক্রেস্ট ঔষধ। নুতন ও পুরাতন উভয় রোগে ব্যবহৃত হয়।
• উপযোগিতা: কলোফাইলাম মহিলাদের জন্য একটি মূল্যবান ঔষধ। মূলত: এটি একটি মহিলাদের এবং বাতের ঔষধ। মূর্ছা রোগ ও বাত ধাতুগ্রস্ত মহিলা যাদের মুখে মেছতার মত দাগ থাকে তার সাথে সাদা স্রাব থাকে তাদের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।
• ক্রিয়াস্থল: জরায়ু, স্নায়ুমন্ডলী, স্ত্রীজননেন্দ্রিয়, ক্ষুদ্র সন্ধি, গোশতপেশি, গ্রীবাদেশ ইত্যাদির উপর বেশি কাজ করে।
ঔষধ নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগত লক্ষণসমূহ
(Important Characteristic Symptoms for Prescribing Medicine)
সারসংক্ষেপ (Summary)
এটি মূলত: মহিলাদের ঔষধ এবং বিশেষ করে জরায়ুর উপর বেশি কাজ করে।
ব্যথার ধরণ: এর যাবতীয় ব্যথা যেমন- মাসিকের ব্যথা, জরায়ুর ব্যথা, প্রসব ব্যথা, বাতের ব্যথা ইত্যাদি সমস্ত ব্যথা সবিরাম অর্থাৎ থেমে থেমে হয়, ব্যথা কিছুক্ষণ থাকার পর হঠাৎ চলে যায় এবং চলনশীল অর্থাৎ এক জায়গায় স্থায়ী না থেকে অন্য জায়গায় ঘুরে বেড়ায়।
স্রাব: এর সমস্ত স্রাব সবিরাম বা থেমে থেমে হয়।
সাদাস্রাব:
বন্ধ্যাকরণ: প্রচুর সাদা স্রাব, অত্যন্ত ক্ষতকর। অতিরিক্ত সাদা স্রাবের কারণে সন্তান ধারণে অক্ষমতা। স্রাব মোটা বা গাড়ো (পালস)। সাদাস্রাবের সাথে কপালে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কালো বা হলদে দাগ পড়ে (সিপিয়া), চোখের উপরের পাতা ফুলে যায়, ভারী হয় সেই সাথে দুর্বলতা (ক্যাল কার্ব)।
ছোট ছোট মেয়েদের প্রচুর ক্ষতকর সাদাস্রাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ (Calc.)।
প্রসবকালীন জটিলতা: প্রসবের সময় জরায়ুর মুখ (os ) শক্ত থাকে এবং প্রসব ব্যথা নিম্ন গতিতে বৃদ্ধি না পেয়ে অনিয়মিত ও এলোমেলো ব্যথা হয়। ফলে জরায়ুর মুখ সহজে খোলেনা (Gels., Cham.)। এই ক্ষেত্রে কলোফাইলাম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। প্রসব ব্যথা নিম্ন গতিতে বাড়ায় এবং সত্বর প্রসব করায়।
জরায়ু সংক্রান্ত রোগের কারণে বিভিন্ন রোগ: জরায়ু সংক্রান্ত রোগের কারণে- জরায়ুর দুর্বলতা হেতু রক্তস্রাব প্রবণতা, মাথাব্যথা, মুখে কালো বা হলদে ছোট ছোট দাগ, মৃগী, হিষ্টিরিয়া, জরায়ুর পেশীর শিতিলতার জন্য গর্ভপাত, অতিরিক্ত ক্ষতকর সাদা স্রাব এবং জরায়ুর দুর্বলতার কারণে গর্ভধারণে সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ হয়।
বাতের ব্যথা: হাতের কব্জি, পায়ের গোঁড়ালি, আঙ্গুলের ছোট ছোট গিড়ায় ব্যথা ও ফুলে যায় (একটিয়া স্পাইকেটা)। ব্যথা চলনশীল, এক সন্ধি বা গিড়া থেকে অন্য গিড়ায় যায় ও আক্রান্ত গাঁটের আড়ষ্টতা (stiffness) থাকে। ব্যথা কিছুক্ষণ থাকার পর হঠাৎ কমে যায়। আবার অনেক সময় বাত সন্ধি ছেড়ে ঘাড়ে যায়। তখন ঘাড় বামদিকে বেঁকে যায়, মাথা এপাশ ওপাশ করতে পারেনা। ব্যথা ঠান্ডাতে বাড়ে এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ সময় মাসিকের আগে বাড়ে এবং মাসিক আরম্ভ হলে আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এটি মহিলাদের বাতের ব্যথায় বেশী কাজ করে।
ভ্রমণশীল বাত: Abor., Aur., Benz-ac., Bry., Cact., Calc-c., Colch., Caul., Caust., Kali-bi., Kalm., Led., Med., Puls., Radium, Syph.
কাঁপুনি: ব্যথার সময় শারীরিক দুর্বলতা ও শরীরের আভ্যন্তরে কম্পন অনুভুতি থাকে।
১। মানসিক লক্ষণসমূহ (Mental Generals)
কলোফাইলামের মানসিক লক্ষণ পালসেটিলার উল্টো। রোগী খুব খিটখিটে, শঙ্কাগ্রস্তা, সহ্য ক্ষমতা একেবারেই কম। অস্থির প্রকৃতির ও উত্তেজনা প্রবণ। বুকের মধ্যে কাঁপে কিন্তু বাহির থেকে বুঝা যায়না।
২। সর্বদৈহিক লক্ষণসমূহ (Physical Generals)
কাতরতা: শীতকাতর এবং ঠান্ডা সব কষ্ট বাড়ে।
ক্ষুধা ও পিপাসা বেশি।
বৃদ্ধি: ঋতুস্রাবের সময়, মাসিক চাপা পড়লে, খোলা বাতাসে, গর্ভাবস্থায়, সঞ্চালনে, সন্ধ্যাকালে ও কফি পানে। ঠন্ডা সহ্য হয়না।
উশম: ঘরের মধ্যে, উত্তাপে।
পছন্দ: সবসময় গায়ে গরম কাপড় জড়িয়ে রাখাতে ভালো বাসে।
অপছন্দ: টক।
৩। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগত লক্ষণসমূহ (Other Important Generals)
অতীত ইতিহাস:
মহিলাদের মাসিকের সময় পেট ব্যথা তার সাথে সাদাস্রাব এবং হাত পায়ের ছোট ছোট গিড়ায় ব্যথার ইতিহাস থাকে।
মেয়েদের প্রথম মাসিক আরম্ভ হওয়ার সময় মূর্ছা যাওয়া, মৃগী বা নর্তনরোগ ইত্যাদি হওয়ার ইতিহাস থাকতে পারে।
বালিকাদের প্রথম মাসিক দেরিতে হওয়ার ইতিহাস থাকে (Puls.)।
প্রবণতা:
পেটে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে (GF, Abortion, tendency to, p-715: Apis., Caul., Cimic., Kali-c., Plb., Sabin., Sep. Vibernum Pornipolium)।
জরায়ুর দুর্বলতা হেতু গর্ভস্রাব ও রক্তস্রাব প্রবণতা।
গাউট বা গিঁটে বাতের প্রবণতা।
মাসিক: এটি মূলত: মহিলাদের ঔষধ এবং বিশেষ করে জরায়ুর উপর বেশি কাজ করে। জরায়ুর নিষ্ক্রিয়তা (inertia) এবং জরায়ুর কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা হয়, মাসিক পরিমানে খুব কম হয় কিন্তু পেটে ও কোমড়ে খুব ব্যথা থাকে। মাসিকের পূর্বে জরায়ুতে, কোমড়ে ও নিম্নাঙ্গে খিলধরা ব্যথা হয়। তবে অধিকাংশ সময় মাসিকের প্রথম দুই দিন ব্যথা বেশি থাকে। ব্যথা থেমে থেমে হয় এবং ব্যথা অন্যদিকে ছড়িয়ে যায় (পালস)। মাসিক চলার সময় অর্শ ও খিঁচুনি দেখা দেয় এবং রোগীনি দুর্বলতা ও শীত অনুভব করে। মাসিকের সময় গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা থাকতে পরে (সেবাইনা)।
প্রসববেদনা: প্রসব ব্যথা অনিয়মিত, ব্যথা বার বার আসে যায়, কৃত্রিম প্রসব ব্যথা, এলোমেলো ভাবে থেমে থেমে হয় (False pain: Cimic., Puls.),। জরায়ুর মুখ (os ) শক্ত থাকে, সহজে খোলেনা (Gels., Cham.)। এই ক্ষেত্রে কলোফাইলাম ম্যাজিকের মতো কাজ করে। প্রসব ব্যথা বাড়ায় এবং সত্বর প্রসব করায়।
Pain, labor pains, false, p-739: Calc., Caul., Cham., Cimic., Puls).
Rigidity of os during labor, P-744: Caul., Cham., Gels.
জরায়ু এবং গর্ভসক্রান্ত:
প্রসবের সময় জরায়ু মুখে খিঁচুনির মতো সংকোচন হয় (Contractions, os, spasmodic, during labor, p-716: Bell., Caul., Cimic.।
জরায়ুতে মাঝে মাঝে প্রসব বেদনার মতো বা খিল ধরার (cramping) মতো ব্যথা হয় (cramping, Uterus, p-737: Caul., Cham., Nux-v., Sabin., Sec., Ust.)। ব্যথা জরায়ু থেকে মূত্রথলি, পিউবিস বা কুচকি, কোমর থেকে পিউবিস পর্যন্ত এমনকি পদদ্বয়েও সঞ্চালিত হতে পারে। ব্যথা হঠাৎ আসে আবার হঠাৎ কিছুক্ষণ পর চলে যায়। জরায়ুর দুর্বলতার জন্য গর্ভস্রাব (এলিট্রিস) এবং বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। আর জরায়ুর পেশীর দুর্বলতার কারণে জরায়ু নিচে নামার অনুভূতি এমনকি অনেক সময় জরায়ু বের হয়ে আসে
প্রসবের পর জরায়ু স্বাভাবিক আকারে ফিরে না আসলে এবং ফুল না পড়লেও কলোফাইলাম ভাল কাজ করে।
লোকিয়া স্রাব: প্রসবের পর অনেকদিন পর্যন্ত ব্যথাসহ রক্তস্রাব চলতে থাকে (বেলেডোনা, সিকেলিকর, নাইট্রিক এসিড, স্যাবাইনা, ট্রিলিয়াম), স্রাব কালো এবং তরল। ব্যথা পেটের একদিক থেকে অন্য দিকে সঞ্চালিত হয়, কোমর থকে পিউবিস পর্যন্ত বেদনা কলোফাইলামে নির্দিষ্ট। তার সাথে রোগীর দুর্বলতা এবং আভ্যন্তরীন কম্পন থাকে।
পায়খানা: পায়খানা নরম তথাপি ১ দিন পর ১ দিন পায়খানা হয়।
অভিমত:
১। অনেকে বলেছেন গর্ভের শেষের দিকে বিশেষ করে ৭ম/৮ম মাস থেকে গর্ভিনীকে দুই এক মাত্রা করে কলোফাইলাম সেবন করানো হলে সুপ্রসব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে আমি গর্ভিনী গরমকাতর হলে পালসেটিলা এবং শীতকাতর হলে সিমিসিফিউগা ২০০ সম্ভাব্য প্রসব তারিখের ১৫/২০ পূর্বে তিনদিন সকাল খালি পেটে খেতে দিয়ে থাকি। বিস্তারিত জানার জন্য আমার ১ম খন্ডে “প্রসবকালীন জটিলতা” দেখুন।
২। ডাঃ নীলমণি ঘটক বলেছেন, অনেক সময় গর্ভিনীর ৮ মাস থেকে মাঝে মাঝে প্রসব ব্যথার মতো মিথ্যা (false) ব্যথা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অরিরিক্ত চিন্তা ভাবনা বা গবেষণার না করে কলোফাইলাম ৬ থেকে ২০০ যে কোন শক্তি এক/দুই মাত্রা দেয়া হলে ফলস পেইন সাথে সাথে বন্ধ হবে আর প্রকৃত ব্যথা হলে তা সাথে সাথে নিম্ন গতিতে বৃদ্ধি করে প্রসব কার্য সম্পন্ন করবে।
৩। আমার মতে গর্ভাবস্থায় এই ঔষধটি ২০০ শক্তির নিচে ব্যবহার অনুচিৎ।
৪। ডাঃ ন্যাশ বলেছেন, কলোফাইলামের ব্যথার সময় রোগিণী দুর্বলতা ও অভ্যন্তরীণ কম্পন অনুভব করেন এবং এটি তিনি বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছেন। আর এই দুইটি লক্ষণ বর্তমান থাকলে তিনি কলোফাইলাম ব্যবহার করে উপকার পেয়েছেন।
মন্তব্য: উপরোক্ত লক্ষণ সাদৃশ্যে ঔষধটি ব্যবহার করা হলে, যে নামের রোগই হোক না কেন তা আরোগ্য হবে।
শত্রুভাব: কফিয়া।
পরবর্তী ঔষধ: শত্রুভাবাপন্ন ঔষধ ছাড়া লক্ষণ পাওয়া গেলে যে কোন ঔষধ ব্যবহার করা যায়।
ক্রিয়ার স্থায়িত্ব: ১ দিন।
ব্যবহৃত শক্তি: ৬ থেকে উচ্চশক্তি ও ৫০ সহশ্রতকিক ১ থেকে উচ্চশক্তি।
ঔষধ চলাকালীন বর্জনীয় খাবার: কফি।
Send a message to learn more