
17/01/2024
'এক জোড়া জুতো'
নীলা খুব আত্মবিশ্বাসী, নির্ভীক, বুদ্ধিমতি একজন।ছোটো বেলা থেকে অনেকগুলো ভাই -বোনের মাঝে খুব আদর বা আহ্লাদে বেড়ে না উঠলেও শৈশব থেকে সবকিছু ভাগাভাগি করে ভালো থাকাটা শিখে নিয়ে ছিল সে।সবাই জানত নীলা সাহসী আর পড়াশোনায়ও ভালো। কলেজে পড়ার সময় পরিচয় হয় তমাল এর সাথে। বয়সে একটু ছোট হলেও তমালের ব্যক্তিত্ব এবং বাচনভঙ্গি কেমন যেন খুব শান্ত , বহতা নদীর মত। মনের অজান্তেই পরিচয় থেকে পরিণয়ে বদলে যায় তমাল ও নীলার সম্পর্ক টি , পালিয়ে বিয়ে করে নেয় তারা।
ভাললাগা ও ভালবাসায় পার হয়ে গেছে নয়টি বছর, দেশের স্বনামধন্য অনেক গাইনী চিকিৎসক আশা ছেড়ে দিয়েছেন। সবার পরামর্শ চেন্নাইতে চিকিৎসা করাতে যেতে হবে; চিকিৎসাও ব্যয়বহুল, চিকিৎসা শেষে সফলভাবে বাচ্চা প্রসব করাও অনিশ্চয়তায় ঘেরা। বারান্দায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই নীলা তমালের হাতটা ধরে বলে, চল! চেন্নাই চলে যাই, নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে!
চেন্নাইতে সফলভাবে যমজ সন্তান গর্ভধারণ করে দেশে চলে আসে নীলা, কিন্তু সাত মাসের গর্ভকালীন সময়ে চিকনগুনিয়া হওয়ায় প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি হয়। পৃথিবীর আলো দেখে - ফুটফুটে সুন্দর দুই বোন- ধ্বনি ও কথা।
সময়ের সাথে সাথে বেড়ে উঠছিল তারা। ডাকলে সাড়া দিতে দেরী হয় ধ্বনির, সময় মত হামাগুড়ি দেয়া-বসতে পারেনা সে, কথা ও ফোটেনি মুখের, তমাল ও নীলার মনে ভয় জাগে কিন্তু কেউ কাউকে কিছুই বলে না। অন্যদিকে কথা নয় মাসেই হাটছে, শব্দ বলছে।তমাল দুই মেয়েকে সব কিছু সমানভাবে কিনে দেয়। মেয়েদের জুতো কেনার সময় নীলা ভাবে, অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তমাল এর দিকে। অনেক জোড়া জুতো সাজানো আছে কেবিনেটে, সবগুলো ধ্বনির।
কিছুদিন হল ধ্বনি একটি বিশেষায়িত স্কুলে যায়, স্পেশাল চেয়ার ব্যবহার করে। বিশেষ চাহিদা অনুযায়ী তার থেরাপি দেওয়া হয়। নীলা লক্ষ্য করে, ধ্বনি একা দাঁড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে, হামাগুড়ি দেয়ার প্রবণতাও কমে গেছে। আট বছর বয়সে ধ্বনি একটু একটু করে হাঁটতে শিখেছে। এখন বাইরে বেড়াতে যাবার সময় ধ্বনি ও কথা একই রকম জুতো পড়ে যায়। নীলার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে, নির্বাক তাকিয়ে থাকে মেয়েদের দিকে।
রিহেবিলিটেশন সার্ভিসগুলো নিয়ে সমাজে একীভূতকরণ সম্ভব সকল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর। তমাল ও নীলার মত অফুরন্ত ইচ্ছেশক্তি সম্পন্ন মা-বাবার একাগ্রতা ও নিয়মিত পরিকল্পিতভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেয়ার অবদানস্বরূপ এখন হাঁটছে ধ্বনি।
বি.দ্র. Rehabilitation Sector এ কাজ করার জন্য এরকম আরও অনেক এগিয়ে যাবার গল্প আমার চোখ ভিজিয়ে দেয়। তমাল ও নীলার এই গল্পটি সত্যি ঘটনার ছায়ায় লেখা। ইচ্ছে ও চেষ্টায় সব স্বপ্ন পূরণ হয়।