24/03/2023
Diabetes &Ramadan
১.মাগরেবের আজানের সাথে সাথে পানি খেয়ে ওষুধ / ইনসুলিন নিয়ে খাবার খেয়ে নিবেন। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। তবে কিছু ইনসুলিন আছে যেগুলো রক্তে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, কিন্তু খরচ বেশি। ( Apidra)। রোজার আগে সকাল বেলায় যে ওষুধ গুলো আপনি খেতেন রোজায় তা (ওষুধ, অথবা ইনসুলিন) ইফতারে নিবেন। অনেকে সকালে দুই রকম ইনসুলিন দেখতে ঘোলা অথবা স্বচ্ছ, ( Humulin R , Humulin N ) নিয়ে থাকেন, ইফতারে সময় পুরো ডোজ নিয়ে নিবেন । তার মানে, সকালে নাস্তার আগে ২০ ইউনিট ইনসুলিন নিলে ইফতারে তাই থাকবে। মূল ব্যাপার সকালে যে ওষুধ/ ইনসুলিন নিতাম ইফতারে সে ওষুধ পুরোটা আর রাতে যে ওষুধ / ইনসুলিন নিতাম সেহরির সময় সে ওষুধ / ইনসুলিন অর্ধেক ডোজ হবে।
২. এক টার বেশি খেজুর খাওয়া একেবারেই উচিৎ না। কম মিষ্টির শরবত খাওয়া যাবে। ভাজা পোড়া না খাওয়াই ভালো।
সারা রাত পানি যত বেশি খাওয়া যায়, তা ভালো। বেশি মিষ্টির খাবার খেলে গ্লুকোজ চট করে বেড়ে যায়।
৩.ব্যায়াম করার দরকার নাই, তারাবির লম্বা নামাজই যথেষ্ট। করোনা পরিস্থিতিতে ঘরেই নামাজ পড়বেন। আল্লাহ সব জানেন, বুঝেন।
৪.সন্ধ্যা রাতের খাবার ( যা আমরা তারাবির পর খেয়ে থাকি) না খেলে ইনসুলিন অথবা টেবলেট খাওয়ার দরকার নাই। কম খাবার খেলে ইনসুলিনের ডোজ কম হবে।
৫. সেহরির খাবার কখনই বাদ দিবেন না, শেষ সময়ের দিকে খাবেন। বেশি আগে খাবেন না। অনেকে রাত ১ টায় খেয়ে ঘুমিয়ে যায়, ডায়াবেটিস রোগীদের এরকম করা নিষেধ। ভাত খাওয়া যাবে পরিমান মত। রোজার আগে রাতের বেলা আমরা যে ওষুধ অথবা ইনসুলিন নিতাম, সেহরিতে তার অর্ধেক মাত্রা নিবেন। যেহেতু সারাদিন না খেয়ে থাকবেন, তাই পরিমান কম হবে। অর্থাৎ রোজার আগে রাতে একটা টেবলেট খেলে সেহরিতে তার অর্ধেক খাবেন ইনসুলিনের মাত্রা ২০ ইউনিট ছিলো, এখন সেহরিতে নিবেন ১০ ইউনিট। আর কেউ যদি দুই টা ইনসুলিন নিলে ( Humulin R , Humulin N ) দেখতে ঘোলা অথবা স্বচ্ছ) দুটো থেকেই আগের রাত্রের মাত্রার অর্ধেক কম নিবেন।
অনেকে আছেন খাওয়ার আগে একটা ইনসুলিন তিন বেলা এবং শোয়ার আগে আরেকটা ইনসুলিন মোট ৪ বার ইনসুলিন নিয়ে থাকেন। রোজায় উনি সকালের পুরো ডোজ ইফতারে, দুপুরের ডোজ রাত ১০ টায় যদি খেয়ে থাকেন, না খেলে বাদ, কম খেলে ডোজ কম নিবেন। আর রোজার আগের রাতের খাওয়ার আগে যে পরিমান ইনসুলিন ডোজ নিতেন তার অর্ধেক হয়ে চলে যাবে সেহরির সময়। আর যে ইনসুলিনটা ঘুমানের আগে একটা fixed সময়ে নিতেন সে ইনসুলিন ( Lantus , detemir, ) একই সময়ে নিবেন। গ্লুকোজ কমার ভয় থাকলে আগের চেয়ে ৪ অথবা ৬ ইউনিট কমিয়ে দিবেন।
৬. চেষ্টা করবেন একটা গ্লুকোমিটার কিনে নিতে। রোজায় গ্লুকোজ পরীক্ষা করলে রোজা নষ্ট হয় না বলে দেশে বিদেশে অনেক আলেম বলেছেন।
দিনের বেলা গ্লুকোজ ৪ এর কম হলে অবশ্যই রোজা ভেংগে ফেলবেন। এরপর দিন থেকে, ওষুধ অথবা ইনসুলিনের পরিমান কমিয়ে দিবেন। রক্তে গ্লুকোজ ১৬ এর বেশি হলে, শরীরে পানি কমে গেলে, শরীরের চর্বি ভেঙে রক্তে কিটোন চলে আসে, যা খুবই খারাপ। হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তাই শরীর খারাপ লাগলেই গ্লুকোমিটারে রক্ত পরীক্ষা করবেন। সেহরি, ইফতারের আগে ও ২ ঘন্টা পর, দিনের ১০টা থেকে ৩ / ৪ টার ভিতরে গ্লুকোজ পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা ঠিক কমবেশি করতে হবে।
৭. জিলিপী, মিষ্টি, চর্বি জাতীয় খাবার খাবেন না।
৮ রক্তচাপ কমে গেলে ব্লাডপ্রেসারের ওষুধের মাত্রা কমাতে হবে।
৯.দিনের বেলা শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করা যাবে না।
১০.গ্লুকোজ কমে গেলে হাত পা কাপবে, বুক ধড় ফড় করবে, মাথা ঘুড়াবে, ঘাম হবে, চিন্তা করতে অসুবিধা হবে, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাবেন, সাথে সাথে চিনি, মিষ্টি খাবেন। পরদিন যাতে এর কম অবস্থা না হয়, ওষুধের মাত্রা কমিয়ে দিবেন।
১১. ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে গলা শুকিয়ে যাবে, মাথা ঘুরাবে, বার বার পস্রাব হবে।
১২. অনেকেই থাইরয়েডের ওষুধ খেয়ে থাকেন, সেহরির ঘুম ভাংগার সাথে সাথে খালিপেটে ওষুধ খেয়ে নিবেন।