
07/07/2025
রিংওয়ার্ম (Ringworm) দাদ: একটি পরিচিত চর্মরোগ,এক প্রকার ছত্রাক সংক্রমণ।
দাদ মূলত ডার্মাটোফাইট (Dermatophyte) নামক ছত্রাকের কারণে হয়। এই ছত্রাকগুলো মাটি, প্রাণী এবং মানুষের ত্বকে বাস করে।
এটি শরীরের যেকোনো স্থানে হতে পারে, যেমন - ত্বক, নখ ও চুল।
এই ছত্রাকগুলো উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই শরীরের ভাঁজযুক্ত স্থান, যেমন - কুঁচকি, বগল এবং পায়ের আঙুলের ফাঁকে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
দাদের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
গোলাকার লালচে ফুসকুড়ি: এটি দেখতে অনেকটা আংটির মতো, যার কিনারা উঁচু ও লালচে হয় এবং মাঝখানটা পরিষ্কার বা হালকা রঙের থাকে।
তীব্র চুলকানি: আক্রান্ত স্থানে প্রচণ্ড চুলকানি হয়, বিশেষ করে রাতে বা উষ্ণ পরিবেশে।
ত্বকের শুষ্কতা ও আঁশ: আক্রান্ত স্থানের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং আঁশের মতো উঠতে পারে।
জ্বালা পোড়া: অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে জ্বালাপোড়ার অনুভূতি হয়।
নখে দাদ: নখ মোটা ও বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে।
মাথার ত্বকে দাদ: মাথার ত্বকে হলে চুল পড়তে পারে এবং টাক পড়ে যেতে পারে।
দাদ সংক্রমণের কিছু সাধারণ কারণ:
সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ: দাদ আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে এলে।
সংক্রমিত পোষা প্রাণী: দাদ আক্রান্ত পোষা প্রাণী (যেমন - কুকুর, বিড়াল) থেকে সংক্রমণ হতে পারে।
নোংরা পরিবেশ: অপরিষ্কার বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে বসবাস করলে।
ভেজা পোশাক: দীর্ঘক্ষণ ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে পোশাক পরলে।
দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের দাদ হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।
আর্দ্রতা ও উষ্ণতা: উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ছত্রাকের বৃদ্ধি সহজ হয়।
দাদ রোগের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
হোমিওপ্যাথি দাদ রোগের চিকিৎসায় একটি সুপরিচিত পদ্ধতি। এটি রোগের মূল কারণকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং শরীরের নিজস্ব নিরাময় ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। দাদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু গুরুত্বপূর্ণ হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নিচে উল্লেখ করা হলো:
১. আর্সেনিকাম অ্যালবাম (Arsenicum Album)
যদি দাদ শুষ্ক, আঁশযুক্ত হয় এবং চুলকানি, জ্বালাপোড়া থাকে যা রাতে বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাড়ে। রোগী অস্থির এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে।
বৈশিষ্ট্য: চুলকানি এবং জ্বালাপোড়ার পর জ্বালা অনুভূত হয়। উষ্ণ প্রয়োগে উপশম হয়।
২. টেলুরিয়াম (Tellurium)
দাদ যদি গোলাকার হয়, বিশেষত কানের পিছনে বা মাথার ত্বকে দেখা যায়। এতে তীব্র চুলকানি থাকে এবং আক্রান্ত স্থান থেকে দুর্গন্ধযুক্ত রস নিঃসৃত হতে পারে।
বৈশিষ্ট্য: চুলকানি সন্ধ্যায় এবং রাতে বৃদ্ধি পায়। আক্রান্ত স্থানে ফোলা ও লালচে ভাব দেখা যায়।
৩. গ্রাফাইটিস (Graphites)
দাদ যদি ত্বকের ভাঁজে, যেমন - কুঁচকি বা আঙুলের ফাঁকে হয়। আক্রান্ত স্থান থেকে আঠালো, মধু রঙের রস নিঃসৃত হয় এবং শুকালে শক্ত আঁশ তৈরি হয়। ত্বক শুষ্ক ও ফন্ডলযুক্ত হয়।
বৈশিষ্ট্য: শীতকাতর রোগীদের জন্য বেশি কার্যকর। চুলকানি রাতে বাড়ে।
৪. সেপিয়া (Sepia)
বাদামী বা কালো রঙের দাদ, যা ঋতুস্রাবের সময় বাড়ে। এটি শরীর ও হাত-পায়ে বেশি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: রোগীর মধ্যে বিরক্তি ও উদাসীনতা দেখা যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় বাড়ে এবং উষ্ণ প্রয়োগে উপশম হয়।
৫. থুজা অক্সিডেন্টালিস (Thuja Occidentalis)
দাদ যদি আর্দ্র এবং ওয়ার্টস বা আঁচিলের মতো হয়। এটি বিশেষত যৌনাঙ্গের আশেপাশে বা শরীরের অন্যান্য গোপন অংশে হতে পারে।
বৈশিষ্ট্য: ত্বক তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল হয়। টিকা বা ভ্যাকসিনেশনের পরে সমস্যা দেখা দিলে এটি কার্যকর।
৬. রাস টক্স (Rhus Tox)
দাদ যদি ভেজা বা আর্দ্র হয় এবং ছোট ছোট জলযুক্ত ফুসকুড়ি থাকে। চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অস্থিরতা থাকে।
বৈশিষ্ট্য: ঠান্ডায় বাড়ে এবং উষ্ণতায় আরাম লাগে। নড়াচড়ায় উপশম হয়।
৭. নেট্রাম মিউর (Natrum Mur)
দাদ যদি চুলকানিযুক্ত হয়, বিশেষত চুলের গোড়ায় বা শরীরের অন্যান্য স্থানে। আক্রান্ত স্থানে শুকনো আঁশ থাকে।
বৈশিষ্ট্য: মানসিক চাপ বা দুঃখের কারণে দাদ বৃদ্ধি পেতে পারে। লবণাক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
৮. সালফার (Sulphur)
যেকোনো ধরনের দীর্ঘস্থায়ী দাদ, যেখানে তীব্র চুলকানি থাকে এবং চুলকানোর পর জ্বালা হয়। ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ এবং নোংরা দেখায়।
বৈশিষ্ট্য: রাতে বা গরমে চুলকানি বাড়ে। স্নানের পর চুলকানি বাড়ে।
গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য: হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচনের জন্য রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ, জীবনযাপন পদ্ধতি এবং রোগের বিস্তারিত ইতিহাস বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। তাই নিজে নিজে ঔষধ সেবন না করে একজন অভিজ্ঞ রেজিস্টার্ড হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সঠিক ঔষধ নির্বাচনের মাধ্যমে দাদ রোগের কার্যকর ও স্থায়ী নিরাময় সম্ভব।
ডাঃ রাজিয়া সুলতানা।