05/12/2024
মসনবী শরীফ (২য় খন্ড )
অনুবাদক :চেরাগে রওনক শাহ্ সুফি ডা. ময়েজউদ্দিন মোঃ আবদুর রশিদ আল জাহাঙ্গীর
روی هر يك مینگر میدار پاس
(১৫৯) রোয়ে হার এক মী নগর মীদ আর পাস
بو که گردی تو ز خدمت بو شناس
(১৬০) বু কেহ গরদীদ তুযে খেদমত বু শানাস
অনুবাদ: প্রত্যেকটি অবয়ব (চেহারা) দেখো এবং সম্মান (তাজিম) করো, হতে পারে এই খেদমতের কারণেই তুমি একজন বিখ্যাত (মানুষ) হতে পারো।
ديدن دانا عبادت این بود
(১৬১) দীদানে দানা এবাদত ঈ বুওয়াদ
فتح ابواب سعادت، این بود
(১৬২) ফতহে আবওয়াব সাআদাত ঈ বুওয়াদ
অনুবাদ: জ্ঞানী (বিজ্ঞ) জনদেরকে দেখাটাই একটা এবাদত, হতে পারে সূচনাতেই বিজয়ের বা সৌভাগ্যের দ্বার উম্মোচিত হতে পারে।
ব্যাখ্যা: ১০৩-১৬২নং পংক্তিমালা গুলোতে রুমী (রঃ আঃ) অত্যন্ত সুন্দর ভাবে আমাদেরকে যে শিক্ষাটি দিচ্ছেন তা হলো অনেকগুলো বিষয়ের তুলনা করে আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন এবং বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে, তুমি সত্যকে উপলব্ধি করতে চাও তাহলে তোমার একজন সত্যিকারের বন্ধু বা প্রেমিক বা গুরুর প্রয়োজন। যিনি তোমাকে সত্য পথের সন্ধান দিবেন এবং ভালো মন্দ উপলব্ধি করার অনুভূতি তৈরী করে দিবেন। আর এই কষ্টিপাথর বা অনুভূতি শক্তিটি তখনই তৈরী হয়, যখন তোমার মাতৃগর্ভ হতে আসা এই দেহটিকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে নতুন আরেকটি দেহ নির্মাণ করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মাতৃগর্ভ হতে আশা এই দেহটি দ্বিতীয়ত্ব অর্জিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুষ্ঠ অনুভূতি শক্তিও তৈরী হবে না। যা আমরা মহানবীর হাদিস গ্রন্থ হতেও জানতে পারি- মরার আগে মরে যাও। যদি তুমি মরার আগে মরতে পারো তাহলে তোমার আর মরণ নাই। তাই সত্যিকারের অনুভূতি শক্তি তৈরী করতে হলে তোমাকে অবশ্যই একজন কামেল গুরুর বা পীরের খেদমতে আত্মনিয়োগ করতে হবে এবং তার দেওয়া নিয়ম কানুনগুলো মেনে চলতে হবে। ধ্যান সাধনার মাধ্যমে নিজের এ দেহ খাঁচাটিকে দ্বিতীয়ত্ব রূপ বা স্নাতকোত্তর অথবা মাওলানায় পরিণত করতে পারলেই সঠিক অনুভূতি শক্তি তৈরী হয়। মানুষের তথা কামেল গুরুর খেদমতের মাধ্যমেই এটা সম্ভব বলে অধম বিশ্বাস করি। এই বিশ্বাসের উপরেই পথ চলতে হয়। এই পৃথিবীতেই এরকম উদাহরণ দেওয়া যায় যে, মানুষ তার কর্মের মাধ্যমেই প্রকাশমান হয়েছেন। কর্ম এবং গোলামী ব্যতীত জগতে একজন প্রথিতযশা মানুষও পাওয়া যাবে কি না তা অধমের জানা নাই। এই গোলামীটি বা দাসত্বটি দু'প্রকার একটি জাগতিক আরেকটি আত্ত্বিক। জাগতিকটা দিয়ে শুরু করতে হয় এবং আত্ত্বিকটা দিয়ে শেষ করতে হয়। এই শুরুটা এবং শেষটা দুটোই অনেকটা তকদিরের উপর নির্ভরশীল। আর এই তকদিরটি খণ্ডানোর জন্য প্রয়োজন একজন কামেল গুরুর। যিনি সালেকে মঞ্জুব নামে অভিহিত। যিনি আপন খান্নাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন। যিনি আপন ইচ্ছায় কোনো কর্ম করেন না। যিনি উচ্চ পরিষদের সদস্য। যার হাতটি আল্লাহর হাতে পরিণত হয়েছে। যদিও দেখতে একেই রকম মনে হবে, কিন্তু আকাশ পাতাল ব্যবধান। যা এই চর্ম চোখে দেখা যায় না। যা দেখতে হলে অন্তর চক্ষুর প্রয়োজন। যা শুনতে হলে অন্তরের কানের প্রয়োজন। সে মানুষটি আমাদের মতই খায়, ঘুমায়, মৈথুন করে, সংসার করে, ছেলে মেয়ে এমন কি ব্যবসা বানিজ্যও করে থাকেন। কিন্তু দেখতে এক হলেও তার সাথে এবং সাধারণ মানুষের সাথে কোনো মিল নাই।
তিনি বাশার। তিনি আদম। তিনি একজন নবী। তিনি একজন রসুল। তিনি একজন উলিল আমর। তার এই দায়িত্বগুলো যারা বুঝার তারা বুঝেন। তিনি হাঁসের মতো। হাঁস যেমন সারাদিন পানিতে বাস করে বিকালে পানি হতে উঠার পর এক ফোটা পানিও হাঁসের শরীরে আর থাকে না। তেমনি নবী রসুলগণ যদিও এই ধরাধামে সাধারণ মানুষের সাথে বসবাস করেন এবং তাদের সাথে জীবন যাপন করেন। কিন্তু তাদেরকে এই লোভ মোহ মায়া তথা ষড়রিপুর বন্ধন কখনও আটকে রাখতে পারে না। তারা এই জগতে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এই কর্মগুলো করে থাকেন। কখনো নিজেদের জন্য নয়। আমাদের মহানবী (সঃ) যে হেরা গুহায় ধ্যান সাধনা করেছেন তা তিনি নিজের জন্য করেন নাই বরং উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই করেছেন। কারণ তিনি জন্মের আগেই হায়াতুন নবী। কিন্তু জগতের মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্যই, তাঁর উম্মতদেরকে দেখিয়ে দিলেন যে, আমি মহানবী হয়েও যদি এতটা বৎসর ধ্যান সাধনা করতে পারি, তাহলে তোমরা কি চারটা মাস ধ্যান সাধনা করে সত্যকে জানতে পারো না? পরিশেষে বাংলার বাউল সম্রাট বাবা লালন শাহের কয়েকটি কথা লিখে দ্বিতীয় খণ্ডের সমাপ্তি করছি।
"সময় গেলে সাধন হবে না / অসময়ে বীজ বুনিলে গাছ যদি হয় । বীজের জোরে তাতে ফল ধরে না।"