02/06/2025
১৮টি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ যেগুলো এন্টিবায়োটিকের মত দ্রুত কাজ করে:---
🍒-------------------------------------------------------🍒
১.✒️Aconitum napellus :- যে-কোন রোগই হউক না কেন, যদি সেটি হঠাৎ করেই শুরু হয় এবং শুরু থেকেই মারাত্মকরূপে দেখা দেয় অথবা দুয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেটি মারাত্মক আকার ধারণ করে, তবে একোনাইট হলো শ্রেষ্ট এন্টিবায়োটিক। রোগের উৎপাত এত বেশী হতে পারে যে, তাতে রোগী মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে।
২.✒️Bryonia alba : যদি রোগীর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকে, অনেকক্ষণ পর পর বেশি পরিমানে পানি পান করতে চায়, নড়াচড়া করলে রোগীর কষ্ট বৃদ্ধি পায়, পায়খানা শক্ত ইত্যাদি লক্ষণ থাকে, তবে হোউক না তা টাইফয়েড, এপেন্ডিসাইটিস, নিউমোনিয়া বা আরো মারাত্মক কোন ইনফেকশান, ব্রায়োনিয়াই হবে তার শ্রেষ্ট এন্টিবায়োটিক। উচ্চ শক্তিতে (১০০০, ১০০০০, ৫০০০০) এক ডোজ ব্রায়োনিয়া খাইয়ে দিন ; সম্ভবত দ্বিতীয় ডোজ খাওয়ানোর আর প্রয়োজন হবে না।
৩.✒️Belladonna : যে-কোন রোগে যদি সারা শরীরে বা আক্রান্ত স্থানে উত্তাপ বেশী থাকে, আর যদি আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে যায়, শরীর জ্বালা--পোড়া করতে থাকে, তাহলে বেলেডোনাই হলো তার শ্রেষ্ট এন্টিবায়োটিক। যে কোন রোগের সাথে যদি রোগী প্রলাপ বকতে থাকে (অর্থাৎ এলোমেলোভাবে কথা বলতে থাকে), তাহলে বুঝতে হবে যে রোগীর ব্রেনে ইনফেকশান হয়েছে এবং এসব ক্ষেত্রে বেলেডোনা হলো তার সেরা এন্টিবায়োটিক।
৪.✒️Arsenicum album :যে-কোন রোগে বা ইনফেকশনের সাথে যদি রোগীর মধ্যে প্রচণ্ড অস্থিরতা (অর্থাৎ রোগী নড়াচড়া ছাড়া থাকতে পারে না), শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভীষন জ্বালা পোড়া ভাব, অল্পতেই রোগী দুর্বল বা কাহিল বা নিস্তেজ হয়ে পড়ে, যাতে অতিমাত্রায় মৃত্যুভয়, রোগী মনে করে ঔষধ খেয়ে কোন লাভ নেই, তার মৃত্যু নিশ্চিত ইত্যাদি লক্ষণ থাকে, তাহলে আর্সেনিক হলো তার শ্রেষ্ট এন্টিবায়োটিক।
৫.✒️Baptisia tinctoria : যদিও ব্যাপটিশিয়া ঔষধটি হোমিওপ্যাথিতে টাইফয়েড জ্বরের চিকিৎসায় বেশী ব্যবহৃত হয় কিন্তু এই ঔষধটির লক্ষণসমূহ পাওয়া গেলে যে-কোন মারাত্মক ধরনের ইনফেকশনে এটি চমৎকার এন্টিবায়োটিকের কাজ দেবে। ব্যাপটিশিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো অবশ-অবশ ভাব থাকে, এখনই প্যারালাইসিস হয়ে যাবে এমন ভয় হওয়া, চেতনা আধা লোপ পেয়ে যায় (অনেকটা মাতালদের মতো করে), সারা শরীরে যেন ঘাঁ হয়ে গেছে এমন ব্যথা, মুখ থেকে এবং নিঃশ্বাসে মরা লাশের গন্ধ থাকে, ঘুমঘুম ভাব থাকে, কথা শেষ করার আগেই ঘুমিয়ে পড়ে, মনে করে তার শরীর টুকরা টুকরা হয়ে সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।
৬.✒️Ferrum phosphoricum : ফেরাম ফস ঔষধটি যে-কোন নতুন ইনফেকশানে ব্যবহার করে দারুণ ফল পাবেন। ইনফেকশনের মূল ঝামেলা হলো স্থানীয় রক্ত সঞ্চয় (Local congestion) এবং ফেরাম কনজেশান দূর করতে সেরা ঔষধ। সাধারণত অন্যকোন ঔষধের লক্ষণ পাওয়া না গেলে যে-কোন ইনফেকশনে ফেরাম ফস একটি উৎকৃষ্ঠ এন্টিবায়োটিকের কাজ দেবে।
৭.✒️Hepar sulph : হিপার সালফ চর্ম (skin) এবং কোমল কলাতন্তু (soft tissue) একটি শ্রেষ্ঠ এন্টিবায়োটিক। সাধারণত ফোড়া (abscess), দাঁতের গর্তের (caries) ইনফেকশান, ইরিসিপেলাস, কান পাকা (Otitis media) ইত্যাদি রোগে ইহার প্রয়োগ বেশী হয়ে থাকে। পাশাপাশি ফুসফুসের রোগেও এটি একটি সেরা এন্টিবায়োটিক। কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগেও হিপারের কথা এক নাম্বারে মনে রাখা দরকার। হিপার সালফের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত স্থানে এতো ব্যথা থাকে যে স্পর্শই করা যায় না এবং ঠান্ডা বাতাসে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
৮.✒️Arnica montana : আমরা জানি যে, আঘাতের ব্যথার জন্য আনির্কা একটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। কিন্তু আনির্কা যে একটি শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক বা জীবাণু বিনাশী ঔষধ তা আমরা অনেকেই জানি না। টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, হুপিং কাশি ইত্যাদির মতো মারাত্মক ইনফেকশনেও লক্ষণ থাকলে চোখ বুজে আনির্কা দিতে পারেন। সাধারণত যে কোন ধরনের আঘাত, মচকানো, থেতলানো, ঘুষি, মোচড়ানো, লাঠির আঘাত অথবা উপর থেকে পড়ার কারণে ইনফেকশান বা ক্ষত হলে; এমনকি গ্যাংগ্রিন হলেও আনির্কা হবে তার শ্রেষ্ঠ এন্টিবায়োটিক। আনির্কার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত স্থানে এমন তীব্র ব্যথা থাকে যে, কেউ তার দিকে আসছে দেখলেই সে ভয় পেয়ে যায় (কারণ ধাক্কা লাগলে ব্যথার তীব্রতায় তার প্রাণ বেরিয়ে যাবে), রোগী ভীষণ অসুস্থ হয়েও সে মনে করে তার কোন অসুস্থ্যতা নেই, সে খুব ভালো আছে ইত্যাদি ।
৯.✒️Mercurius solubilis : মার্ক সল একটি বহুমুখী কাযর্সম্পন্ন (multi-functional) হোমিওপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো প্রচুর ঘাম হয় কিন্তু রোগী আরাম পায় না, প্রচুর ঘামে এবং মুখে দুর্গন্ধ থাকে, তার পায়খানা করার সময় কোথনি লাগে, অধিকাংশ রোগ রাতের বেলা বেড়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। মারকারী গ্রুপের অন্যান্য ঔষধগুলিও একই রকম এন্টিবায়োটিক ক্ষমতাসম্পন্ন ঔষধ। যেমন- Mercurius Cor, Mercurius Cyan, Mercurius Dul, Mercurius Iodatus Flavus, Mercuric Potassium Iodide, Mercurius Viv ইত্যাদি।
১০.✒️Lycopodium clavatum : লাইকোপোডিয়াম একটি প্রথম শ্রেণীর হোমিওপ্যাথিক এন্টিবায়োটিকের মযার্দা রাখে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো রোগের মাত্রা বিকাল ৪-৮ টার মধ্যে বৃদ্ধি পায়, এদের সকল রোগ ডান পাশে বেশী হয়, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, সারা বৎসর প্রস্রাবের অথবা হজমের সমস্যা লেগেই থাকে, এর রোগীদের দেখতে তাদের বয়সের চাইতেও বেশী বয়ষ্ক মনে হয়, তাদের স্বাস্থ্য খারাপ কিন্তু মেধা খুব ভালো, এরা খুবই স্পর্শকাতর, এদের ধন্যবাদ দিলেও কেদে ফেলে ইত্যাদি।
১১.✒️Veratrum album : রোগী যে কোন মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে এমন মারাত্মক ধরণের ইনফেকশনে ভিরেট্রাম এলবামের উপর নির্ভর করতে পারেন। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো রোগী খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়তে পারে, ঠান্ডা ঘাম ঝরেতে থাকে এবং এদের নিঃশ্বাসেও ঠান্ডা বাতাস বের হয়, এদের চামড়া নীল বা বেগুনী রঙ ধারন করে, চামড়া ঠান্ডা হয় এবং কুচঁকে যায়, শরীরের কোথাও চাপ দিলে সেখানে গর্ত হয়, হাত, পা, মুখ বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায় ইত্যাদি।
১২.✒️Kali bichromicum : ক্যালি বাইক্রোম হলো নাক-কান-গলার রোগের একটি শ্রেষ্ঠ এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান লক্ষণ হলো কফ, থুথ ( লালা ), বমি, নাকের শ্লেষ্মা ইত্যাদি খুবই আঠালো হয় এবং কোন কাঠিতে (বা আঙুলে) লাগিয়ে টানলে রশির বা সুতোর মতো লম্বা হয়, ব্যথা আঙুলের মাথার দ্বারা ঢাকা যায় এমন খুবই অল্প জায়গায় হয়ে থাকে, ব্যথা ঘন ঘন জায়গা বা অঙ্গ বদল করে, ঘায়ের বা ক্ষতের চেহারা থাকে খাচকাটা ধারালো ইত্যাদি।
১৩.✒️Ipecac : ইপিকাক সাধারণত পেটের অসুখ এবং ফুসফুসের অসুখের একটি সেরা এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো বমি থাকে অথবা বমিবমি ভাব থাকে এবং জিহ্বা পরিষ্কার থাকে।
১৪.✒️Pulsatilla pratensis : পালসেটিলাকে বলা যায় একটি বহুমুখী কাযর্সম্পন্ন (multi-functional) হোমিওপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো গলা শুকিয়ে থাকে কিন্তু কোন পানি পিপাসা বা তৃষ্ণা থাকে না, তাদের ঠান্ডা বাতাস, তাদের ঠান্ডা খাবার, তারা ঠান্ডা পানি পান করতে পছন্দ করে, গরম আলো-বাতাসহীন বদ্ধ ঘরে রোগীনী বিরক্ত বোধ করে, খুবই আবেগপ্রবন, সে অল্পতেই কেঁদে ফেলে এবং যত দিন যায় ততই মোটা হতে থাকে ইত্যাদি।
১৫.✒️Cantharis : ক্যান্থারিস প্রধানত মূত্রতন্ত্রের ইনফেকশনের জন্য একটি শ্রেষ্ঠ এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো জ্বালা-পোড়া এবং ছিড়ে ফেলার মতো ব্যথা। কাজেই ভীষণ জ্বালাপোড়া থাকলে যে-কোন রোগে ক্যান্থারিস ব্যবহার করতে পারেন। এটি জলাতঙ্ক রোগের জন্যও একটি শ্রেষ্ট এন্টিভাইরাল ঔষধ। অল্প থেকে বেশী যে কোন ধরনের পোড়ার (burn) ব্যথা এবং ইনফেকশান দূর করতে ক্যান্থারিসের জুড়ি নাই।
১৬.✒️ Eupatorium perfoliatum : ইউপেটোরিয়াম পারফো নামক ঔষধটি আরেকটি উৎকৃষ্ঠ এন্টিবায়োটিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো শরীরে এমন প্রচণ্ড ব্যথা থাকে যেন মনে হয় কেউ শরীরের সমস্ত হাড় পিটিয়ে গুড়োঁ করেছে, পানি অথবা খাবার যাই পেটে যায় সাথে সাথে বমি হয়ে যায় ইত্যাদি।
১৭.✒️Echinacea angustifolia : ইচিনেশিয়া'কে বলা হয় একেবারে হোমিওপ্যাথিক এন্টিবায়োটিক। যে-কোন ধরনের পুরনো বা দীঘর্মেয়াদী ইনফেকশানে ইচিনেশিয়া ব্যবহার করতে পারেন। যেমন - অনেক দিনের পুরনো কাশি, জ্বর, ঘাঁ ইত্যাদি যা অন্য অনেক ঔষধ প্রয়োগেও পুরোপুরি সারেনি।
১৮.✒️Pyrogenium : পাইরোজিনিয়াম একেবারে আগাগোড়াই এন্টিবায়োটিক গুণসম্পন্ন ঔষধ ; কেননা এটি তৈরীই করা হয়েছে জীবাণু থেকে (nosode)। যেকোন ধরনের নতুন অথবা পুরনো, স্বল্পমেয়াদী বা দীঘর্মেয়াদী সংক্রমনে পাইরোজিনিয়াম ব্যবহার করতে পারেন।
পোস্টটা নবীন ডাক্তারদের জন্য লিখিত, সর্বসাধারণের জন্য নয়। সুতরাং হোমিওপ্যাথি অর্গানন রোগীলিপি রেপার্টরী শক্তি মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে নিজে নিজে ঔষধ সেবন করতে যাবেন না।