12/10/2025
প্রতিবছর ১২ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে আর্থ্রাইটিস বা বাতরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণকে উৎসাহিত করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি সামাজিক সহমর্মিতা গড়ে তোলা।
আর্থ্রাইটিস কী
‘আর্থ্রাইটিস’ শব্দটির অর্থই হলো জয়েন্টের প্রদাহ বা গাঁটের ব্যথা ও ফুলে যাওয়া। এটি একক কোনো রোগ নয়। বরং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট, লুপাস/এসএলই, স্পনডিলাইটিসসহ শতাধিক রোগ আর্থ্রাইটিসের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিসের/এসএলই এবং অস্টিওআর্থ্রাইটিসের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বব্যাপী ৫০ কোটির বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন। তাঁদের একটি বড় অংশ দৈনন্দিন কাজ, চলাফেরা বা চাকরিজীবনে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হন। অনেক সময় সামাজিক অজ্ঞতা, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও চিকিৎসার বিলম্ব রোগের জটিলতা বাড়িয়ে তোলে। এখনো সাধারণ মানুষ আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে খুব কমই জানেন। এটির যে ভালো চিকিৎসা আমাদের দেশেই সম্ভব, তা অনেকে জানেন না।
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস ২০২৫
২০২৫ সালের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—অ্যাচিভ ইওর ড্রিমস (তোমার স্বপ্ন অর্জন করো)। একজন আর্থ্রাইটিস রোগী চেষ্টা করলে তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন, লক্ষ্য জয় করতে পারবেন। শারীরিক কোনো বাধা তাঁর প্রতিবন্ধকতা হতে পারবে না—এটিই এই বছরের বার্তা।
প্রতিরোধ ও যত্নের কিছু উপায়
নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা সাঁতার জয়েন্টের নড়াচড়া বজায় রাখে। সুষম খাদ্য গ্রহণ, যেমন—ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবার হাড় ও জয়েন্টকে মজবুত রাখে। অতিরিক্ত ওজন হাঁটু ও কোমরের জয়েন্টে চাপ বাড়ায়। এ কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে, কারণ এগুলো প্রদাহজনিত প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা
আর্থ্রাইটিস হলে সেটা যে কারণেই হোক না কেন, নিয়মিত চেকআপ প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শে দেওয়া ওষুধ নিয়মিত না খেলে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা জটিল হয়ে যায়, এটাও মনে রাখা জরুরি। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অনেকে প্রয়োজন ব্যতিরেকে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ফার্মেসি থেকে স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ সেবন করেন, যা শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। তাই এ রোগের প্রতিটি ওষুধ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে নিতে হবে।
সামাজিক দায়িত্ব
আর্থ্রাইটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা অনেক সময় শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি মানসিক অবসাদেও ভোগেন। তাই সমাজের প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো তাঁদের প্রতি সহমর্মী হওয়া, কর্মক্ষেত্রে তাঁদের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং চিকিৎসা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস ২০২৫ আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয় যে আর্থ্রাইটিস মানেই জীবন থেমে যাওয়া নয়। সচেতনতা, নিয়মিত চিকিৎসা ও ইতিবাচক মানসিকতা জীবনকে আবারও সচল করতে পারে, সুন্দর করতে পারে