19/09/2024
শিশুর শরীরে প্রোটিনের ঘাটতির লক্ষণ এবং প্রতিকারের উপায়
-----------------------------------------
শিশুর শরীর গঠনে প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য উপাদান। চুল, ত্বক, পেশি, হরমোন ইত্যাদি গঠনে প্রোটিন আবশ্যক। এ ছাড়া শক্তির অন্যতম উল্লেখযোগ্য উৎস এটি। কিন্তু শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় এবং শিশুর নানান স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
,শিশুর বারবার খিদে পেলে বুঝতে হবে তাদের শরীরে প্রোটিনের অভাব রয়েছে।প্রোটিনের ঘাটতি হলে শরীর ক্ষুধা বাড়িয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু প্রোটিনের গুরুতর অভাব থাকলে শিশুর খিদা কমে যেতে পারে।
আর হাড় গঠন ও মজবুত করার জন্য ক্যালশিয়ামের মতোই প্রোটিনও উপযোগী। প্রোটিন হাড়ের শক্তি ও ঘনত্ব বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে হাড় দুর্বল হতে পারে। যার ফলে শিশুর হাড় সামান্য আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এ ছাড়া মনোযোগের অভাব হলে কোষের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য মস্তিষ্কে এক ধরনের রসায়নের প্রয়োজন হয়, যার অধিকাংশই অ্যামিনো অ্যাসিড নামক প্রোটিনের দ্বারা তৈরি। প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফলে শিশুরা মেজাজ হারায়, তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন হয় ও মনোযোগ কমতে শুরু করে।
শিশুর প্রোটিনের অভাবে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়। এতে শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। রক্তে উপস্থিত অ্যামিনো অ্যাসিড অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সাহায্য করে, যা রোগপ্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। তাই শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে শিশু ঘন ঘন ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।
আবার শুকনো, খসখসে, ফাটল ধরা ত্বক, চুল পাতলা ও সাদা হয়ে যাওয়া, চুল ঝরা, ভঙ্গুর নখ প্রোটিনের ঘাটতির অন্যতম লক্ষণ। কারণ ত্বক, চুল ও নখের অধিকাংশ প্রোটিন দ্বারা গঠিত।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ না করলে পেশি মজবুত হয় না। পাশাপাশি শরীরের মেটাবলিজম কমে যায়। এ ছাড়া প্রোটিনের ঘাটতি অ্যানিমিয়ার অন্যতম কারণ। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের মধ্যে আলস্য বাড়তে থাকে।
শিশুর শরীরের বৃদ্ধি ও কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে প্রোটিন। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ আবশ্যক। তা না হলে শিশুর বৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়।
প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে শিশুকে যা খাওযাবেন:
------------------------------------
ডাল : শিশুর খাদ্যতালিকায় বিভিন্ন রকম ডাল রাখুন। কারণ ডালে প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন, খনিজও রয়েছে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে।
সেদ্ধ ডিম: রোজ একটি করে সেদ্ধ ডিম রাখুন শিশুর পাতে। এতে প্রোটিন তো আছেই পাশাপাশি আছে ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, বি ১২, বি ৫, ভিটামিন ডি, জিঙ্কের মতো উপকারি সব উপাদান।
ছোট মাছ: শিশুরা ছোট মাছ একদমই খেতে চায় না। তবে প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে অবশ্যই এমন মাছ খেতে হবে। মৌরলা, দেশি ট্যাংরা, কাজরি, ফলুইতে ভরপুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন থাকে ভরপুর মাত্রায়। গরু বা খাসির মাংস যত কম খাওয়াবেন ততই ভালো। এর বদলে কম তেল ও মশলা দিয়ে রান্না করা মুরগির মাংস খাওয়া। সবজি দিয়ে রান্না করা চিকেন স্যুপও বেশ উপকারি।
এছাড়া শিশু আমিষ খেতে চাইলে খাবার তালিকায় দুধ, সয়াবিন রাখা যেতে পারে। প্রোবায়োটিকের জন্য দই খাওয়ান। তবে মিষ্টি দই নয়। ঘরে পাতা টক দই খাওয়ান। খাওয়াতে পারেন বাদামও। চিনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তা, আখরোট খেলে প্রোটিনের চাহিদা তো মিটবেই সেই সাথে পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডও।