12/08/2023
দাঁতের চিকিৎসার সময় যে তথ্যগুলো গোপন করবেন না
দাঁতের চিকিৎসার সময় অনেকেই ভুলে যান যে দাঁতের সাথে আমাদের শরীরের অন্যান্য অঙ্গ জড়িত তাই অনেক সময় চিকিৎসক কে সব কিছু খুলে বলার প্রয়োজন মনে করেন না ; আবার সংরক্ষণশীল সমাজের অংশ হিসেবে অনেকে লজ্জায় অনেক তথ্য গোপন করে যান ফলশ্রুতিতে চিকিৎসা প্রদানে অনেক ক্ষেত্রেই বিরূপ পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় ডাক্তার এবং রোগী উভয়কেই। আজ আপনাদের এমন কিছু সাধারন বিষয় নিয়ে আলোকপাত করবো যেগুলো চিকিৎসককে জানানো খুবই জরুরি ।
আপনি যদি গর্ভবতী হন অথবা গর্ভ ধারণের জন্য চেষ্টারত হনঃ
একজন গর্ভবতী মায়ের সাথে দুইটি জীবন জড়িয়ে থাকে, মায়ের গর্ভস্থ শিশুটির জন্য অনেক ওষুধ বিষ হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের অবশ্যই জানানো উচিত উনার কত সপ্তাহ চলছে। এতে চিকিৎসক নিরাপদ ওষুধ প্রদান করবেন এবং এক্স-রে কিংবা অন্যান্য কার্যপ্রণালী নির্বাচনে সতর্ক থাকতে পারবেন। দাঁতের রোগীরা বেশির ভাগ সময় ব্যথা নিয়ে আসেন। অনেকে ফার্মেসী থেকে ব্যথার জন্য "ইটোরিক্স" জাতীয় ওষুধ কিনে খান । জেনে রাখবেন গর্ভের সন্তানের জন্য অধিকাংশ ব্যথার ওষুধ ক্ষতিকর। আপনার সন্তান যদি বুকের দুধ খায় সেটাও ডেন্টাল সার্জনকে অবহিত করবেন কারন কিছু ওষুধ বুকের দুধের সাথে নিঃসরণ হয়- যা শিশুর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দম্পতি আছেন গর্ভধারণের জন্য চেষ্টায় আছেন কিন্তু এখনো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন নাই। এমন মহিলাদেরও উচিত চিকিৎসককে এটা অবহিত করা। কারন গর্ভ ধারনের পরে প্রথম ৩ মাস অনেক সতর্ক থাকতে হয় ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে।
আপনার যদি কোন ক্রনিক রোগ যেমন – ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, এ্যাজমা ইত্যাদি থাকেঃ
ডায়াবেটিস এর রোগীদের মাড়ির ইনফেকশন বেশি হয় এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে শরীরের যেকোন ক্ষত সহজে শুকাতে চায়না। সুতরাং আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার কে অবহিত করুন। অনেক ক্ষেত্রেই ইনফেকশন বেশি বা অনিয়ন্ত্রিত সুগার এর রোগিদের এন্টিবায়োটিকের মাধ্যমে ইনফেকশন কমিয়ে তারপর দাঁত তোলা বা অন্যান্য দাঁতের চিকিৎসা করা হয়। প্রেসারের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত রক্তপাত একটি সাধারন সমস্যা। একই সাথে আপনার যদি উচ্চ কোলেস্টোরল এর সমস্যা থাকে তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা রক্ত পাতলা করার উপাদানযুক্ত ওষুধ যেমন ইকোস্প্রিন, Clopidogrel, warfarin ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এই জাতীয় ওষুধগুলো দাঁত তোলা বা যেকোন অস্ত্রোপচারের অন্তত ৫ দিন আগে থেকে বন্ধ না রাখলে সার্জারির পরে রক্তপাত বন্ধ করা কঠিন হয়ে যায়। কিডনির রোগে আক্রান্ত রোগীদের অনেক ওষুধ দেয়া যায় না। তাই আপনি যদি নিয়মিত কোন ওষুধ খান সেগুলোর প্রেস্ক্রিপশন ডেন্টাল সার্জনকে দেখাবেন এবং আপনার সকল রোগের ব্যাপারে উনাকে অবহিত করবেন ।
আপনার মেডিকেল ইতিহাস : কোনদিন কোন দুর্ঘটনায় কেটে যাবার পরে আপনার কি রক্তপাত বন্ধ হতে অনেক সময় নিয়েছিলো? ছোটবেলায় মুসলমানির পরে কি অতিরিক্ত রক্তপাত হয়েছিলো? যদি এমন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে তবে হয়তো আপনার রক্তপাত জনিত জটিলতা (Bleeding disorders) থাকতে পারে। আগে থেকে জানা না থাকলে এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে সার্জন এবং রোগী উভয়কেই। তাই এধরনের ইতিহাস ডাক্তারের কাছে খুলে বলা জরুরী। এক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাবস্থা এবং সতর্কতার সাথে অপারেশন করা হয়। এছাড়াও কোন বড় অপারেশন হয়ে থাকলে , অতীতে কোন বিশেষ ওষুধ খাবার পরে এলার্জি বা অসুবিধা হয়ে থাকলে, রিউমেটিক ফিভার এ আক্রান্ত হলে, ক্যান্সারের রোগী , কোন সংক্রমন ব্যাধি যেমন- হেপাটাইটিস, এইডস ইত্যাদি থাকলে অবশ্যই জানানো উচিত। অনেক সময় কেমো-রেডিও থেরাপীর রোগী দাঁত তুলতে আসেন – কিন্তু রেডিয়েশনের প্রভাবের কারনে সেই দাঁত স্বাভাবিকভাবে তোলা অসম্ভব হয়ে যায়। হেপাটাইটিস বা এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যাবস্থা নিতে হয় যেন জীবানু না ছড়ায়। এসব গোপন করলে রোগী এবং সমাজের সকলেরই ক্ষতি হয়।
আপনার কোন বদ অভ্যাস থাকলেঃ
একবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এক রোগীর দাঁত তুলার জন্য চেতনা নাশক ইঞ্জেকশন কিছুতেই কাজ করছিল না। যতটুকু দেয়া যায় পুরোটাই দিয়ে অবশ করতে ব্যর্থ হবার পরে ততকালীন আউটডোর প্রধান রফিকুল্লাহ স্যারকে ডাকতে বাধ্য হলাম। স্যার রোগী কে বললেন- “ দুই জাতের মানুষের কাছে কখনো মিথ্যা বলতে হয়না – এক উকিল আর দুই ডাক্তার, এখন বলেন কি খান ?” রোগী জানালো সে হেরোইনসেবী এবং আসার আগেও খেয়ে এসেছে ব্যথা লাগবে না এই আশায়। সুতরাং যেকোন ধরনের নেশা সেটা সিগারেট থেকে হেরোইন পযন্ত যাই হোক না কেন ডাক্তারের কাছে লুকানো যাবে না। এমনকি সিগারেট খেলে আমাদের মুখের ভেতরের যেকোন ক্ষত শুকাতে বিলম্ব হয়। এভাবে প্রতিটা নেশা উপাদানেরই কিছু না কিছু প্রভাব আছে যা ডেন্টাল সার্জন রা বুঝতে পারেন , রোগী বললে ডায়াগনোসিস আরো সুবিধা হয়। এছাড়া দাঁত দিয়ে নখ কাটা, সুতা কাটা, ড্রিংসের বোতলের মুখ খোলা এসব বদ অভ্যাসের প্রভাব দাঁতের উপর পরে। সুতরাং স্থায়ী সমাধানের জন্য এসব অভ্যাস গোপন না করে ডাক্তারের কাছে জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ।
- কালেক্টেড পোস্ট।