 
                                                                                                    29/10/2020
                                            ☣️  #অপুষ্টি_বা_Malnutrition
☣️  #কারন_লক্ষন_প্রতিকারঃ
🔰অপুষ্টি (Malnutrition)  শাব্দিক অর্থে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, বিকাশ ও সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি (undernutrition) ও বৃদ্ধি (overnutrition) দুটোকেই বুঝালেও পুষ্টির ঘাটতিজনিত অবস্থা বুঝাতেই অপুষ্টি শব্দটি সচরাচর ব্যবহৃত হয়। খাদ্যে এক বা একাধিক বিশেষ করে আমিষ উপাদান এর স্তল্পতা অর্থাৎ সুষম খাদ্য এর দীর্ঘ অভাবই অপুষ্টির অন্যতম কারন। গত কয়েক দশকে খাদ্যশস্য, ডাল, শাকসবজি, ফল, মাছ, মাংস, দুধ ও তেল আহার যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। দানাশস্য ও ডাল খাওয়া হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১৯৬২-৬৪ সালের ৫৪৬ গ্রাম থেকে ১৯৯১-৯২ সালে ৪২৭ গ্রাম এবং ১৯৩৭ সালের ৪০ গ্রাম থেকে ১৯৯১-৯২ সালে ৭ গ্রাম। শাকসবজি গ্রহণের পরিস্থিতিও অভিন্ন, ১৯৩৭ সালের ২৮৪ গ্রাম থেকে ১৯৯১-৯২ সালে নেমে এসেছে ১৭৬ গ্রামে। ফল, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ও তেল খাওয়া কমে যাওয়াসহ মোট খাদ্যগ্রহণও  হ্রাস পেয়েছে যা গোটা সমাজ ও জাতির জন্য এক বড় সমস্যা। অপুষ্টিতে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদাত্রী মায়েরা।
🔰  #অপুষ্টি এর উপসর্গ - Symptoms of Malnutrition
✅অপুষ্টির উপসর্গগুলি পুষ্টির ঘাটতির উপর নির্ভর করে। বাচ্চাদের মধ্যে সাধারণ এবং বৈশিষ্ঠমূলক উপসর্গগুলি হল:
🔸দীর্ঘায়িত ক্লান্তি।
🔸সহজে ক্লান্ত হওয়া।
🔸শ্বাসকষ্ট।
🔸অজানা কারণে মাথা ঘোরা।
🔸শুষ্ক ত্বক।
🔸শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার খামতি।
🔸মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ।
🔸মাড়ি ফুলে যাওয়া।
🔸দাঁতের ক্ষয়।
🔸ওজন কমা।
🔸পেশীর দুর্বলতা।
🔸পেট ফোলা।
➡️অপুষ্টির কারণে মানসিক স্বাস্থ্যও প্রভাবিত হতে পারে। এর কয়েকটি উপসর্গ হল:
🔸মনঃসংযোগে মধ্যে অসুবিধা।
🔸শেখার অসুবিধা।
🔸গুলিয়ে ফেলা।
🔸মনোযোগ দিতে সমস্যা।
🔸সহজ সমস্যা সমাধানের অক্ষমতা।
🔸নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতির কারণে কয়েকটি নির্দিষ্ট উপসর্গের বিকাশ হতে পারে।
📍উদাহরণ স্বরূপ, লোহার ঘাটতি হলে ক্লান্তি বোধ হবে এবং মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা খুব তাড়াতাড়ি চলে যাবে। বাচ্চাদের আয়োডিনের ঘাটতি হলে মানসিক প্রতিবন্ধকতা এবং সাথে সাথে শারীরিক বৃদ্ধিতে সমস্যা হবে।
প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোরদের অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের (অপুষ্টি) উপসর্গগুলি হল:
🔰ওজন হ্রাস
➡️দেহের ওজন কমে যাওয়া অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের প্রধান লক্ষণ। অবশ্য এমনও হতে পারে যে একজন ব্যক্তির ওজন স্বাভাবিক বা অধিক আছে, কিন্তু সে অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের শিকার। অনিচ্ছাকৃত ভাবে 3 থেকে 6 মাসের মধ্যে 5-10% ওজন কমে যাওয়া অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের লক্ষণ হতে পারে। লক্ষণীয় ভাবে কম বি-এম-আই (বডি মাস ইনডেক্স) অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের ইঙ্গিত দেয়।
📌ওজন হ্রাস পাওয়া ছাড়াও অন্যান্য লক্ষণগুলি হল:
🔸ক্ষুধামান্দ্য।
🔸শক্তির অভাব।
🔸অভ্যস্ত সাধারণ কাজকর্মগুলি করার অক্ষমতা।
🔸মনোযোগ দেওয়া ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
🔸সব সময় ঠাণ্ডা লাগা।
🔸মেজাজের বদল হওয়া।
🔸মাঝে মাঝে বিষণ্ণতায় ডুবে থাকা।
🔸ক্ষত নিরাময় হতে একটি দীর্ঘ সময় লাগা।
🔸অজ্ঞাত কারণে উদ্যমহীনতা।
🔸প্রায়ই অসুস্থ থাকা।
🔰অপুষ্টি এর চিকিৎসা - Treatment of Malnutrition:
➡️অপুষ্টির চিকিৎসা তার কারণ এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে। এক জন অপুষ্টির রোগীকে তার বাড়িতে রেখেও চিকিৎসা করা যেতে পারে। কোন ক্ষেত্রে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে। চিকিৎসার প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে যাতে রোগের জটিলতা না বৃদ্ধি পায়।
♻️গৃহে রেখে চিকিৎসা
✅যদি চিকিৎসা বাড়িতেই করতে হয়, তাহলে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পরিবর্তনের রূপরেখা তৈরি করে দেবেন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী। আপনার এবং আপনার পরিবারের সাথে আলোচনা করে সঠিক যত্নের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের পরিকল্পনাও দেওয়া হবে।
✅বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্য, যেমন, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাটের পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধির সুপারিশ করা হবে। যদি কোনও বিশেষ একটি পরিপোষক পদার্থের ঘাটতি থাকে, তাহলে তার একটি সম্পূরক বস্তুও সুপারিশ করা হতে পারে। যদি রোগী প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করতে না পারে, তাহলে কৃত্রিম উপায়ে, যেমন নল দিয়ে খাওয়াতে হবে। এই নলগুলি হাসপাতালে লাগান হয়, তবে বাড়িতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
♻️হাসপাতালের চিকিৎসার অন্তর্গত হতে পারে
🔸সর্বদা চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকবেন।
🔸ডায়েটিশিয়ান উপস্থিত থাকবেন।
🔸কাউনসেলার উপস্থিত থাকবেন।
🔸সমাজ সেবী উপস্থিত থাকবেন।
🔸একজন ব্যক্তির খাবার খাওয়া এবং হজম করার ক্ষমতা মূল্যায়ন করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে ফিডিং টিউব ব্যবহার করা হতে পারে। ফিডিং টিউবটিকে নাক দিয়ে ঢুকিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছে দেওয়া হয়। অথবা, পেটে অস্ত্রোপচার করে নলটি সরাসরি পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। সাধারণত ব্যক্তিটির সঠিক মূল্যায়ন করার পরে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশ্য, রোগীকে প্রতি সপ্তাহে একবার করে হাসপাতালে গিয়ে তার স্বাস্থ্যের উন্নতির পরিমাপ করতে হবে যাতে বোঝা যায় যে খাদ্যের পরিকল্পনা সঠিক ভাবে রূপায়ন করা হচ্ছে।
♻️নল দিয়ে খাদ্য প্রেরণ
✅এই পদ্ধতিতে ড্রিপ দিয়ে পুষ্টি সরাসরি শিরাতে পাঠান হয়। খাদ্যের মাধ্যমে যে পুষ্টি শরীরে প্রবেশ না করতে পারে, এই পদ্ধতিতে সেই পুষ্টিকে শরীরে প্রবেশ করানো যায়। প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটগুলির দ্রবন ড্রিপের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।    
🔰জীবনধারার ব্যবস্থাপনা
✅জীবনধারার যে সকল পরিবর্তন অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের সমস্যাকে অতিক্রম করতে পারে, সেইগুলি নিচে আলোচিত হল:
✅কয়েক ঘণ্টা পরে পরে অল্প করে আহার করুন। দিনে অন্তত তিনবার ভারি ভোজন করুন এবং সেগুলির মাঝে মাখে কিছু হাল্কা খাবার খেয়ে নিন। এতে আপনার শরীরে শক্তির মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
✅খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এবং মিনারেল থাকতে হবে।
✅খাবার খাওয়ার কিছু সময় পরে জল পান করবেন। ভোজনের আগে বেশি জল পান করলে পেট ভর্তি লাগবে।
✅মদ্যপান সীমিত করুন।
✅ক্যাফিন গ্রহণ হ্রাস করুন, বিশেষত যদি আপনার ওজন কম থাকে।
✅সারা দিনের শক্তির মাত্রা উঁচু রাখতে প্রোটিন সমৃদ্ধ প্রাতরাশ গ্রহণ করুন।
✅মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিন।
✅আপনার পুষ্টির মাত্রা বৃদ্ধি করতে প্রচুর ফল ও কাঁচ সবজি খান। ফল খেলে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা কমবে। কাঁচা সবজিতে প্রচুর মিনারেল এবং ভিটামিন থাকে যা নিরাময়ে সাহায্য করবে। দুটি ভোজনের মধ্যবর্তী সময়ে ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন, কারণ এগুলিতে বেশি মাত্রায় প্রোটিন বা ক্যালোরি নেই।
✅স্ন্যাকস হিসাবে বাদাম খান। প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বর্জন করুন।
✅যদি আপনি দেহের ওজন বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করছেন, তাহলে ডেয়ারি-জাত খাদ্য যেমন ডিম, দুধ, দই এবং চিজ খান।
✅তাৎক্ষণিক ভাবে শক্তি পাওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, যেমন আলু এবং ভাত খান।
✅বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময়ে সাথে তরল পদার্থ রাখুন, যেমন ফলের রস, জল এবং ওড়াল রেহাইড্রেশান সল্ট। এতে জল-বিয়োজনের প্রতিরোধ করা যাবে। এনার্জি-ড্রিঙ্কগুলি বর্জন করুন কারণ এগুলিতে ক্যাফিন এবং চিনি থাকে যা আপনার রক্তের গ্লুকোজের মাত্রার পরিবর্তন করতে পারে।
✅প্রতিদিন ব্যায়াম করুন যাতে স্বাভাবিক ভাবে আপনার ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়।
আপনি যদি খাওয়ার সমস্যা নিয়ে জর্জরিত থাকেন তাহলে সাহায্যকারী দল আপনাকে সাহায্য করতে পারবে। তারা বিভিন্ন মানুষদের নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা আপনার সাথে ভাগ করে নিতে পারবে।
✅নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরী যাতে বোঝা যায় যে আপনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।
 #সচেতন_থাকুন, #নিজেকে_সুস্থ_রাখুন
Blood Donors Association, Bangladesh (BDAB).                                        
 
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                                                                                     
                                         
   
   
   
   
     
   
   
  