23/09/2025                                                                            
                                    
                                                                            
                                            ক্যানসার আজ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০২৪) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে অন্তত একটি হয় ক্যানসারে। এর ৭০ শতাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতার সীমাবদ্ধতা রোগের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে তোলে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। 
বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। দেশে এখন প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ক্যানসার রোগী। প্রতিবছর ২ থেকে ২ দশমিক ৫ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে মারা যান। এদের অধিকাংশেরই (৭৫ শতাংশ) ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে রোগের জটিল অবস্থায়, তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে। স্বাস্থ্য গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট মৃত্যুর ১৫ শতাংশ হবে ক্যানসারের কারণে।
বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো, এর সুযোগ-সুবিধা রাজধানীকেন্দ্রিক। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের একজন রোগীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হলে বিপুল অঙ্কের আর্থিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। রোগীর শারীরিক কষ্টও কম হয় না। এ অবস্থায় অনেকেই চিকিৎসা থেকে দূরে থাকেন। এ সংকট থেকে উত্তরণে এগিয়ে এসেছে টিএমএসএস। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক ও সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারের যাত্রা শুরু হয় ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। সেই থেকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত ২৫০ শয্যার এই আধুনিক হাসপাতালটি একটি ‘আশার আলো’ হিসেবে কাজ করছে। কমিউনিটি সচেতনতা থেকে শুরু করে স্ক্রিনিং, প্রিসিশন মেডিসিন, কেমো-রেডিওথেরাপি এবং প্যালিয়েটিভ কেয়ার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা এক ছাদের নিচেই দেওয়া হচ্ছে।
স্ক্রিনিংসেবা
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার স্বল্প মূল্যে স্তন ক্যানসার (ব্রেস্ট সেলফ একজামিনেশন, ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট একজামিনেশন, ম্যামোগ্রাফি), জরায়ুর মুখ ক্যানসার (প্যাপ স্মিয়ার, ভিআইএ টেস্ট, এইচপিভি টেস্ট) এবং অন্য ক্যানসারের নিয়মিত স্ক্রিনিংসেবা দিয়ে থাকে।
এইচপিভি টিকাদান
জরায়ুর মুখ ক্যানসারের প্রধান কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (HPV) বিরুদ্ধে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
খবরের কাগজ
 
বিশেষ সংখ্যা
ক্যানসার মোকাবিলার মন্ত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ডা. মো. মতিউর রহমান উপ-নিবার্হী পরিচালক টিএমএসএস
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৭ এএম
আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
ক্যানসার মোকাবিলার মন্ত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টা
ডা. মো. মতিউর রহমান উপ-নিবার্হী পরিচালক টিএমএসএস
ক্যানসার আজ বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে মারা যান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (২০২৪) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ছয়টি মৃত্যুর মধ্যে অন্তত একটি হয় ক্যানসারে। এর ৭০ শতাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে স্বাস্থ্যসেবা ও সচেতনতার সীমাবদ্ধতা রোগের ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে তোলে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। 
বাংলাদেশও এই সংকটের বাইরে নয়। দেশে এখন প্রায় ১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ক্যানসার রোগী। প্রতিবছর ২ থেকে ২ দশমিক ৫ লাখ নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক। প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ মানুষ ক্যানসারে মারা যান। এদের অধিকাংশেরই (৭৫ শতাংশ) ক্যানসার শনাক্ত হয়েছে রোগের জটিল অবস্থায়, তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে। স্বাস্থ্য গবেষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট মৃত্যুর ১৫ শতাংশ হবে ক্যানসারের কারণে।
বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম হলো, এর সুযোগ-সুবিধা রাজধানীকেন্দ্রিক। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের একজন রোগীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসতে হলে বিপুল অঙ্কের আর্থিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। রোগীর শারীরিক কষ্টও কম হয় না। এ অবস্থায় অনেকেই চিকিৎসা থেকে দূরে থাকেন। এ সংকট থেকে উত্তরণে এগিয়ে এসেছে টিএমএসএস। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় আধুনিক ও সমন্বিত ক্যানসার চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারের যাত্রা শুরু হয় ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। সেই থেকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য বগুড়ায় প্রতিষ্ঠিত ২৫০ শয্যার এই আধুনিক হাসপাতালটি একটি ‘আশার আলো’ হিসেবে কাজ করছে। কমিউনিটি সচেতনতা থেকে শুরু করে স্ক্রিনিং, প্রিসিশন মেডিসিন, কেমো-রেডিওথেরাপি এবং প্যালিয়েটিভ কেয়ার পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা এক ছাদের নিচেই দেওয়া হচ্ছে।
×
Ezoic
প্রতিরোধ ও প্রাথমিক শনাক্তকরণ
‘প্রতিরোধ, চিকিৎসার চেয়ে উত্তম’ এই দর্শন সমুন্নত রেখে টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার কাজ করছে।
সচেতনতা কার্যক্রম
টিএমএসএসের ১ হাজার ৮৫৮টি শাখা অফিসের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামীণ পর্যায়ে ক্যানসার সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন। বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের মধ্যে জরায়ুর মুখ ও স্তন ক্যানসার সম্পর্কে বিশেষ ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।
×
Ezoic
স্ক্রিনিংসেবা
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার স্বল্প মূল্যে স্তন ক্যানসার (ব্রেস্ট সেলফ একজামিনেশন, ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট একজামিনেশন, ম্যামোগ্রাফি), জরায়ুর মুখ ক্যানসার (প্যাপ স্মিয়ার, ভিআইএ টেস্ট, এইচপিভি টেস্ট) এবং অন্য ক্যানসারের নিয়মিত স্ক্রিনিংসেবা দিয়ে থাকে।
এইচপিভি টিকাদান
জরায়ুর মুখ ক্যানসারের প্রধান কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (HPV) বিরুদ্ধে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
×
Ezoic
আধুনিকতম প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ভুল চিকিৎসা
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীদের বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে।
ইমেজিং ও ডায়াগনস্টিকস
এখানে অত্যাধুনিক সিটি স্ক্যান, এমআরআই, প্যাথলজি, সাইটোলজি, হিস্টোপ্যাথলজির মতো উন্নত ডায়াগনস্টিক সুবিধা রয়েছে, যার মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে। 
রেডিওথেরাপি
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারে লিনিয়ার এক্সিলারেটর (Varian Vital Beam) এবং HDR ব্র্যাকিথেরাপির মতো আধুনিক মেশিন ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসায় 3D-CRT, IMRT, VMAT/Rapid Arc, IGRT-এর মতো রেডিওথেরাপি পরিষেবাগুলো নিয়মিতভাবে দেওয়া হচ্ছে।
টোমোথেরাপি
সম্প্রতি এই সেন্টারে চালু করা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম AI টেকনোলজিভিত্তিক ‘টোমোথেরাপি’ মেশিন। যার মাধ্যমে উচ্চ-নির্ভুলতাসম্পন্ন রেডিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই প্রযুক্তি ক্যানসার আক্রান্ত টিস্যুকে আরও নিখুঁতভাবে টার্গেট করে পার্শ্ববর্তী সুস্থ টিস্যুকে রক্ষা করে।
জিনোমিক প্রোফাইলিং (Next-Generation Sequencing- NGS)
এখানে উত্তরাঞ্চলের প্রথম এবং বাংলাদেশের অন্যতম অত্যাধুনিক বায়োমলিকিউলার ল্যাবের মাধ্যমে NGS টেকনোলজি ব্যবহার করে ক্যানসার রোগীর কোষের জিনগত গঠন বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ান বায়োটেকনোলজি কোম্পানি জিং গ্রুপ হোল্ডিংসের সহায়তায় আইএসও ১৫১৮৯ কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একটি বিশেষজ্ঞ দল এই কাজে নিয়োজিত আছে, যারা ক্যানসারের ধরন ও উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম। এখানে অত্যাধুনিক প্রিসিশন মেডিসিনের ভিত্তি তৈরি করে রোগীর জন্য টার্গেটেড থেরাপি বা লক্ষ্যভিত্তিক থেরাপি নির্বাচন করা হয়, যা কেবলমাত্র ক্যানসার কোষকেই ধ্বংস করে, স্বাস্থ্যকর কোষের ক্ষতি কমায় এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত চিকিৎসা নিশ্চিত করে। 
রক্তের ক্যানসার ও রক্তরোগের চিকিৎসা
হেমাটোলজি ও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সেন্টার নামে টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারে একটি অত্যাধুনিক বিশেষায়িত ইউনিট রয়েছে। এটি রক্তের বিভিন্ন জটিল রোগ ও ক্যানসারের বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। রক্তের ক্যানসার যেমন-লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মাল্টিপল মায়োলোমাসহ অন্য রক্তজনিত রোগ যেমন- থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া, রক্তশূন্যতা, রক্তপাত ও জমাট-সম্পর্কিত রোগের সফল চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। ঢাকা এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহের নেতৃত্বে এই সেন্টারটি একটি পূর্ণাঙ্গ থ্যালাসেমিয়া সেন্টার এবং বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সুবিধা প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক ও মানবিক সহমর্মিতার সমন্বয় করে সেন্টারটি বাংলাদেশে বিশ্বমানের হেমাটোলজি চিকিৎসা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।
সহায়ক ও পুনর্বাসন সেবা
রোগী কাউন্সেলিং, হসপিটাল ডায়েট ও পুষ্টি পরামর্শ, ফিজিওথেরাপি, প্যালিয়েটিভ কেয়ার, নিজস্ব ফার্মেসি, ডিসকাউন্ট সহায়তা, সার্বক্ষণিক আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স এবং রোগী পরিবহনব্যবস্থা রয়েছে।
সেবার পরিসংখ্যান
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টার থেকে (জুলাই ২০২৪-জুন ২০২৫) অর্থবছরে ১৪ হাজার ৬৫৯ জন ক্যানসার রোগী আউটডোরে ও ভর্তি হয়ে সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ১৩৫ জনের কেমোথেরাপি এবং ১ হাজার ২৬৩ জন রোগীর রেডিওথেরাপি চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে। রেডিওথেরাপির মাধ্যমে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত ৩১৫ জন, মাথা ও গলার ক্যানসার আক্রান্ত ৩০৬ জন, হাড়/মস্তিষ্কে মেটাস্ট্যাসিস ক্যানসারে আক্রান্ত ২০০ জন, জরায়ুর মুখ ক্যানসারে আক্রান্ত ১০২ জন, ফুসফুসের ক্যানসারের ৯৪ জন, পায়ুপথের ক্যানসারের ৬০ জন, অন্ননালির ক্যানসারে আক্রান্ত ৪০ জন, মুখগহ্বরের ক্যানসারের ১২ জনসহ প্রস্টেট, মূত্রথলি, চর্মসহ অন্য ক্যানসারে আক্রান্ত প্রায় ১০০ জন রোগীকে সফল চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়।
 
রোগীদের জন্য অন্য সহায়ক সেবা ও সুযোগ-সুবিধা
টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীরা প্রতিনিয়ত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করছেন। তাই রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য সহায়ক সেবা ও সুযোগ-সুবিধা এবং সুরক্ষা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করা আছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের ভেতরেই এসি/নন-এসি কেবিন এবং ডরমেটরি সুবিধা রয়েছে, যেখানে রান্নার গ্যাসসহ সব ব্যবস্থা আছে। দীর্ঘমেয়াদি রেডিওথেরাপির রোগীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
বাংলাদেশে নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই ক্যানসার একটি ভয়াবহ ও ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্যসংকট। নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুর মুখের ক্যানসার এবং পুরুষদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার, প্রস্টেট ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের উচ্চ প্রাদুর্ভাব একটি গভীর জনস্বাস্থ্য ইস্যু, যা দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপের দাবি রাখে। তবে আশার কথা হলো, এই ক্যানসারগুলোর একটি বড় অংশই জীবনধারার পরিবর্তন, সচেতনতা, নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং টিকাদানের মতো প্রতিরোধযোগ্য উপায়ের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এই সংকট মোকাবিলায় সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (যেমন টিএমএসএস ক্যানসার সেন্টারের মতো), চিকিৎসক সম্প্রদায়, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। প্রয়োজন একটি শক্তিশালী জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, যা প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ, স্ক্রিনিংসেবার বিস্তার এবং রাজধানীর বাইরে সর্বত্র সাশ্রয়ী ও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। টিএমএসএসের মতো প্রতিষ্ঠান তার আধুনিক প্রযুক্তি ও রোগীকেন্দ্রিক সেবার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে সঠিক পরিকল্পনা ও অঙ্গীকার থাকলে এ লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
কিন্তু কেবল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের একার পক্ষে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। আমাদের প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে পরিবার এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা গড়ে তোলা। ধূমপান ত্যাগ করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, এইচপিভি টিকা গ্রহণ এবং নারী-পুরুষ উভয়কে নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ে উৎসাহিত করার মাধ্যমেই কেবল আমরা ক্যানসারকে কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে পারি। আসুন, আমরা সম্মিলিতভাবে সচেতনতা থেকে সুরক্ষার পথে এগিয়ে যাই, ভয় দূর করি এবং একটি স্বাস্থ্যকর, ক্যানসারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলি। কারণ সচেতনতাই পারে ক্যানসারকে পরাজিত করতে এবং হাজার হাজার মূল্যবান জীবন রক্ষা করতে।
তথ্যসূত্র: International Agency for Research on Cancer (IARC). (2022). GLOBOCAN 2022: Bangladesh Fact Sheet. World, National Institute of Cancer Research and Hospital (NICRH), Bangladesh Annual Report 2020-2021. World Health Organization (WHO)- Bangladesh Country Office, Bangladesh Cancer Society. (2022). Cancer Awareness and Prevention Guidelines.