11/07/2015
রাত্রে খাওয়া দাওয়া শেষে গোল্ডলিফ সিগারেট ধরিয়ে আব্বা যখন বারান্দা্র চেয়ারটায় বসে তখন আব্বার মেজাজ থাকে চৈত্র মাসের গরমে তাল পাখার বাতাসের মত ফুরফুরা। আমার টার্গেট ঐ সময়টাই...
স্কুলের রেজাল্ট কার্ড আব্বার হাতে যাওয়ার পর আম্মা আশেপাশে থাকলে সুবিধা হত, আব্বা কতৃক বিভিন্ন শারীরিক অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার জন্য ঢাল ছিল আম্মা। বড় হওয়ার পরে আব্বার সাথে আমার ব্যাক্তিগত আলোচনায় আম্মা থাকলেই ব্যাঘাত ঘটায়। আজকের আলোচনায় আম্মা থাকলে আমার সাড়ে তিন মাসের স্বপ্ন হিন্দি সিরিয়ালের ঠাস ঠাস ক্লোজ শটের মত ভেঙে যাবে।
আম্মারে চা বানানোতে ব্যাস্ত রেখে চুপি চুপি আব্বার পেছনে দাড়ালাম, আধ টাক মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম
"তোমার এই অর্ধ টাক হইল আমাদের বংশ পরিচয়, আমার নাতি্র মাথা দেখেও অনেকেই তোমার কথা স্মরণ করবে"
সিগারেটটা স্ট্রেতে রাখতে রাখতে মুচকি হাসি হেসে আব্বা বলল "তোমার আম্মারেও ঢেউ খেলানো চুলের মোহ দেখিয়ে বিয়েটা করছিলাম, বিয়ের পরে তোমার মা মাস শেষে বাজারের খরচটায় দেখে, আমার মাথার চুল না থাকলেও তার কিচ্ছু যায় আসে না"
" আমার এক্ষুনি যে অবস্থা, চুল দেখিয়ে বিয়ে আমি করতে পারব না, তোমার মাথার দিকে তাকালে আমারে কেও মেয়ে দিবে বলে মনে হচ্ছে না" আব্বার হাসিটা লম্বা করে দিলাম,এইবার আমার কথাটা পাততে হবে।
"আচ্ছা, তোমার জন্য মেয়ে দেখতে গেলে আমি যাব না" সিগারেটে আরেকটা টান দিয়ে আব্বা কাশি দিতে দিতেই হাসিটা দিল।
আর সময় নস্ট করা যাবে না, চা এর ঘ্রান আসতেছে, তার মানে আম্মা রেডি। গুলি বন্দুক থেকে বের করতে হবে, না হয় আমার ছোটবেলার আর আব্বার বর্তমান ঢাল , আমার আম্মাজান যদি মাঝখানে চলে আসে, তাহলে সবি বৃথা।
"আব্বা,ঈদ তো চলেই আসল, এই ঈদে একটা "Turbo Runner" বাইক দিবা ওয়াদা করছিলা, মানে সমস্যা থাকলে লাগবে না, কিন্তু তোমার ওয়াদার তো একটা মূল্য আছে, তাই আর কি!!!"
শেষ কথা গুলা বলার সময়ে গলার সুর নরম হয়ে এল, অন্ধকারে আব্বার হাসিটা আর দেখা যাচ্ছে না। দুই মাস আগে কেনা "TVS Apache" এখন গ্যারেজেই পরে থাকে, ওটাতে আমার আর আগ্রহ নাই, এখন নতুন বাইকের জন্য আব্বার কাছে দাবি জানানোটা ন্যায়ের কিছু না, তবে বাপদের কাছে সন্তানের দাবি অন্যায় ও না।
আব্বা চুপ করে রইল, আম্মা চা হাতে চলে এসেছে। তাইলে এইবারো বাইকটা হাতছাড়া হয়ে গেল???!!! আব্বা চা এর বড় মগটা হাতে নিয়ে আমার দিকে মুখ করল। চোখে হাসি হাসি, কিন্তু পুরা চেহারাটা রাগী রাগী ভাব। তাইলে কি এই ঈদেও নতুন বাইকে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে না??
"গ্যারেজে যাও, মতিন মিয়ারে বলো চাবি দিতে, বাইক পেছনে রাখা আছে" বলেই আব্বা চায়ের কাপে চুমুক দিল।আব্বার টাক মাথায় দুইটা টোকা মারলাম আনন্দে। আম্মা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমি দৌড় দিলাম।
দৌড়াতে দৌড়াতেই ঘুমটা ভেঙে গেল!!!! ঘুম ভাঙার পরে মধ্যবিত্ত বাপের প্রথম দিন কিনে দেয়া সাইকলেটার কথা মনে পরল, চার হাজার টাকায় কিনে দেয়া হাসিটাও উকি দিল। কেমন করে জানি তখনি আব্বা আমারে ফোন দিল...
"তুমি তো বাড়ির কথা ভুলেই গেছো, কালকে সকালে উইঠা বাড়ি আসবা"
মধ্যবিত্ত বাপের দেয়া আদেশ, আমার জগতের শ্রেস্ট মানুষটার ভালোবাসার আদেশ। অমান্য করি কিভাবে???
নাজিরুল ইসলাম নাদিম