23/06/2022
কষ্টিকাম CAUSTICUM HAHNEMANII [Caust]
-জটিল রোগ, শোক বা অন্য কোনরুপ মানসিক আঘাতের ফলে পক্ষাঘাত।
-বহুকালস্থায়ী শোক ও দুঃখের ফলে মন বিষণ্ণ ক্ষুব্ধ ও নিরাশাপূর্ণ।
-শরীর ছিরে ফেলার মতো বাতের ব্যথা, উত্তাপে বিশেষত বিছানার উত্তাপে উপশম।
-বার বার প্রস্রাবের বেগ, হাঁচি, কাশি বা নাক ঝড়লে অসাড়ে প্রস্রাব হয়ে যায়।
-ডান পাশে কোমরের ভিতরের দিকে সূচ ফোটানোর মত ব্যথা ও লিভারের নিচে, কিন্তু ইলিয়ামের উপরে, হাতের মুঠার ভিতর চেপে ধরার মতো সর্বদা ব্যথা।
-পোড়ার দাগ আবার পাকে ও উহাতে ব্যথা হয়।
-বসে পায়খানা করতে কষ্ট হয় কিন্তু দাড়িয়ে করলে সহজেই পায়খানা করা যায়।
-শরীরের টানটান অনুভূতির সঙ্গে পক্ষাঘাত, বিশেষত প্রসারক পেশীর (Extensor muscle) পক্ষাঘাত।
Alen
------
যাদের চুল কালো, বেশী শক্ত অথচ দুর্বল, সোরাদোষযুক্ত গায়ের চামড়া অত্যন্ত হলদে ও ময়লা, যাদের শ্বাস- যন্ত্র ও মূত্রযন্ত্র সংক্রান্ত অসুখ হওয়ার প্রবণতা, তাদের অসুখে উপযোগী ।
যে শিশুদের চুল ও চোখ কাল, নরম প্রকৃতি ও অনুভূতি প্রবণ, দাঁত ওঠার সময় যাদের মলদ্বার, কুঁচকি প্রভৃতি স্থানের ছাল উঠে যায় (লাইকো) বা ঐ সময় আক্ষেপ বা খিচুনি হয় তাদের ক্ষেত্রে উপযোগী (ষ্ট্যানাম) ।
মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের স্নায়ুতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগত ক্রিয়ার ব্যাঘাত হয়ে বা ক্ষয়কারী রোগ হয়ে বা মানসিক আঘাতে পক্ষাঘাত হলে ব্যবহার্য ।
মাথার খুলির চামড়া, গলা, শ্বাসনালী, রেক্টাম, মূত্রযন্ত্র, যোনি, জরায়ু প্রভৃতি স্থান হেজে যায় ও ঘা এর মত ব্যথা হয় (থেৎলে যাওয়ার মত ব্যথা- আর্নিকা, মচকে যাওয়ার মত—রাস-ট) ।
বিষাদভাব, দুঃখিত, হতাশা, শোক দুঃখ পেয়ে হতাশ সাথে কান্না, “সামান্য কারণেই শিশু কাঁদতে থাকে।” অপরের কষ্টে অত্যন্ত সহানুভূতি দেখায় ।
অনেকদিন যাবৎ দুঃখ কষ্ট ভোগ করার ফলে অসুস্থতা (এসিড-ফস) পর্যাপ্ত ঘুম না হয়ে, রাত জেগে অসুখ হলে (কক্কুলাস, ইগ্নে), আবেগ, ভয়, আতঙ্ক ও আনন্দ হঠাৎ হলে (কফিয়া, জেলস্); রাগ বা বিরক্ত হয়ে চর্মোদ্ভেদ বসে গিয়ে রোগ হলে প্রযোজ্য।
শিশু দেরীতে হাঁটতে শেখে (ক্যাল্ক-ফস)। শিশু দৃঢ়ভাবে হাঁটতে পারে। সহজেই পড়ে যায় ।
কোষ্ঠবদ্ধতা — বারে বারে নিস্ফল মলবেগ (নাক্স-ভ); দাঁড়ালে ভালভাবে মল ত্যাগ করতে পারে; অর্শ হয়ে মলত্যাগে বাধা, আঠাল, চটচটে চর্বির মত মল, শিশু রাতে বিছানায় প্রস্রাব করে, এইসব লক্ষণের সাথে কোষ্ঠবদ্ধতা।
কাশলে, হাঁচলে, নাক ঝাড়লে এমনি এমনি প্রস্রাব বার হয় (পালস, স্কুইলা, ভিরেট্রাম)।
কাশি — সাথে বুকে হাজাভাব ও ক্ষতবোধ, শ্লেষ্মা তুলতে পারে না তা গিলে ফেলতে বাধ্য হয় (আর্ণিকা, কেলি-কা);
জলপানে কাশির উপশম; শ্বাস ছাড়ার সময় কাশি (একোন); কাশি সাথে নিতম্বস্থানে ব্যথা, হুপিং কাশি কমে তারপর কাশি রাতে প্রধানতঃ শ্লেষ্মা ওঠে।
স্বরভঙ্গ – সাথে হাজাভাব ও গলা বসে যায়—সকালে বাড়ে । (সন্ধ্যায় বাড়ে–কার্ব-ভে, ফস)।
রাতে কোন অবস্থাতেই শান্তি পায় না, একটুও চুপ করে থাকতে পারে না (ইউপেটো, রাস-ট)। সর্বদা নড়াচড়া করে যদিও নড়াচড়াতে কোন উপশম হয়, গা ভালভাবে ঢেকেও গরম বোধ হয় না, কিন্তু গরমে কোন উপশম নাই। মৃর্চ্ছাভাব হয়ে দেহের শক্তিলোপ, দুর্বলতা ও কম্পন, ক্ষতচিহ্ন, বিশেষতঃ পোড়া ঘায়ের দাগ আবার পেকে ওঠে, নূতন করে ঘা হয়, পুরান ঘা আবার পেকে ওঠে, রোগী বলে-“পুড়ে যাওয়ার পর থেকে ঐ ঘা ভাল হয়নি।”
ঋতুস্রাব – শীঘ্র শীঘ্র, পরিমাণ খুব কম কেবল দিনে স্রাব হয়, শুলে বন্ধ হয়ে যায়।
পক্ষাঘাত — এক অঙ্গের, স্বরযন্ত্র, জিব, মুখ, চোখের পাতার, হাত পায়ের, মূত্রথলীর, সাধারণতঃ ডানদিকে হয়, ঠান্ডা হাওয়া বা ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা লেগে, টাইফয়েড ও টাই ফাস জ্বর বা ডিপথেরিয়ার পর পক্ষাঘাত পক্ষাঘাতের লক্ষণ ধীরে ধীরে দেখা দেয় ।
চোখের উপর পাতা ঝুলে পড়ে-চোখ খুলে রাখতে পারে না (কালো, জেলস, গ্র্যাফাই) [উভয় চোখের পাতা = সিপিয়া]।
বাতরোগ – সঙ্কোচক পেশীগুলো কুঁকড়ে থাকে, সন্ধিগুলিতে আড়ষ্টভাব, টানভাব, যেন ছোট হয়ে গেছে (এমন-মি, সাইমেক্স, গুয়াইকাম, নেট-মি)।
আঁচিল — বড় এবড়ো, থেবড়ো, বোটার মত ঝুলে থাকে, একটুতেই রক্ত বার হয় রস বার হয়, সারাদেহ ছোট ছোট আঁচিলে ভর্তি, চোখের পাতায়, মুখে, নাকের উপর আঁচিল। রোগ হলে রোগী সাময়িকভাবে উপশম পায় তারপর একই রকম থাকে (সোরিন, সালফ)।
সম্বন্ধ – অনুপূরক = কার্ব ভেজ, পেট্রোসেলি ।
শত্রু সম্বন্ধ — ফস, কখনই ফস-এর আগে বা পরে দেওয়া উচিৎ নয়। এসিড বা কফিয়া কখনই সামঞ্জস্য খায় না ।
তুলনীয় – শ্লেষ্মা গিলে ফেলে = আর্নিকা চোখের পাতা ঝুলে পড়ে = জেলস্ এ্যাফাই, সিপিয়া । স্বরভঙ্গে = রুমেক্স, কার্ব-ভে যখন বৃদ্ধি লক্ষণ সকালে না হয়ে সন্ধ্যায় বাড়ে। অনেকদিন ধরে স্বরলোপে= সালফ ।
বৃদ্ধি – পরিষ্কার সুন্দর আবহাওয়ায়, বাইরের খোলা হাওয়া থেকে গরম ঘরে আসলে (ব্রায়ো) ঠান্ডা বাতাস বিশেষতঃ ঝাপটা লেগে, ঠান্ডা লেগে, ভিজলে বা স্নান করার ফলে ।
উপশম – ভেজা স্যাঁৎসেঁতে জলহাওয়াতে, গরম বাতাসে ।
শক্তি — ৩০, ২০০ হতে উচ্চশক্তি, ০/১ হতে ০/৩০ শক্তি ।
Boric
-------
এই ঔষধটির কাজের প্রভাব বিশষভাবে দেখা যায়, পুরাতন বাত রোগ, সন্ধি বাত ও পক্ষাঘাত সংক্রান্ত উপসের্গ, পেশীতে, ফাইব্রাস. তন্তুতে ছিড়েফেলার মত, টেনে ধরার মত বেদনা, তৎসহ সন্ধির বিকৃতির দ্বারা নির্দেশিত হয়; ক্রমশঃ পেশীর ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে, পেশী বন্ধনীর সঙ্কোচন। স্বাস্থ্য ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বার্ধক্যের মত অবস্থা। শ্বাসনলীর সর্দিজনিত অবস্থা এবং এই জাতীয় ক্ষেত্রে এই ঔষধ কালো, দৃঢ় পেশীবহুল ব্যক্তির উপর ভালো কাজ করে। রাত্রে অস্থিরতা, তৎসহ সন্ধিস্থলে ও অস্থিতে ছিড়ে যাওয়ার মত বেদনা ও মূর্চ্ছা যাওয়ার মত দেহের শক্তি অবশ হয়ে আসে। এই দুর্বলতা ধীরে-ধীরে বাড়তে থাকে এবং এর শেষ পরিণতি পক্ষাঘাত, যত সময় পক্ষাঘাত দেখা না দেয় তত সময় দুর্বলতা বাড়তে থাকে। স্থানিক পক্ষাঘাত যেমন স্বরতন্ত্রীর পক্ষাঘাত, গলাধঃকরনের পেশীর পক্ষাঘাত, জিহ্বার, চোখের পাতার, মুখমন্ডল, প্রস্রাব থলি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পক্ষাঘাত দেখা দেয়। শিশু দেরিতে হাঁটতে শেখে। কষ্টিকামের রোগীর চর্ম মলিনসাদাটে তৎসহ আঁচিল বিশেষ করে মুখমন্ডল। রোগাজনিত কারণে শীর্ণতা, দুশ্চিন্তা প্রভৃতি থেকে শীর্ণতা এবং এই শীর্ণতা দীর্ঘকাল থাকে। জ্বালাকর, ক্ষতবৎ, এবং টাটানি ব্যথা এই গুলি এই ঔষদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ সমূহ।
মন— শিশু কিছুতেই একা বিছানায় যেতে চায় না। সামান্য জিনিসেই সে কাঁদে। দুঃখিত আশাহত। অত্যন্ত সহানুভূতি সম্পন্ন। দীর্ঘকালীণ কোন দুঃখ, হঠাৎ মানসিক আবেগ থেকে অসুস্থতা। রোগের কথা চিন্তা করলেই বৃদ্ধি, বিশেষ অর্শ।
মাথা — রোগীর মনে হয় কপাল ও মস্তিষ্কে মধ্যবর্তী অংশটুকু খালি আছে। কপালের ডানদিকের প্রবৰ্দ্ধিত অংশে বেদনা।
মুখমন্ডল – ডানদিকের মুখমন্ডলের পক্ষাঘাত। আঁচিল। মুখমন্ডলীয় অস্থির বেদনা। দাঁতে নলী ঘা। চোয়ালের বেদনা, তৎসহ মুখগহ্বর খুলতে কষ্ট হয়।
চোখ – ছানি তৎসহ চোখের মোটর স্নায়ু সম্পর্কিত গোলযোগ। চোখের পাতার প্রদাহ; ক্ষত। চোখের সামনে আগুনের স্ফুলিঙ্গ এবং কালো কালো ছোপ যুক্ত বস্তু দেখে। চোখের পাতা অর্ধ বোঁজা (জেলস)। দৃষ্টির অস্বচ্ছতা বা দৃষ্টির স্বল্পতা, রোগীর মনে হয় চোখের সামনে একটা ফিল্ম রয়েছে। ঠান্ডালাগার পর চোখের পেশীর, বিশেষ করে দৃষ্টি সম্পর্কিত পেশীর পক্ষাঘাত।
কান – কানের ভিতর ঝিনঝিন, গর্জন, দপদপানি, তৎসহ বধিরতা; শোনা কথার শব্দ এবং হাঁটার সময় পায়ের শব্দ কানের ভিতরে খোলের জমা হওয়া।
নাক – সর্দি, তৎসহ-স্বরভঙ্গ। নাকের ভিতর আঁশের মত চামাটি। নাসারন্ধক্ষতযুক্ত। ফুস্কুড়ি ও আঁচিলসমূহ।
মুখমন্ডল – চর্বনের সময় গালের ভিতরের অংশ কামড়ে ফেলে। জিহ্বার পক্ষাঘাত, তৎসহ অস্ফুট কথা। নিম্ন চোয়ালের সন্ধি স্থানের বাত। মাঢ়ী থেকে সহজেই রক্ত পাত হয়।
পাকস্থলী — মুখের আস্বাদ চর্বির মত। মিষ্টি দ্রব্যে অনিচ্ছা। রোগীর মনে হয় পেটের ভিতর চুন ফুটছে। তাজা মাংস খাবার পরে বৃদ্ধি; কষা মাংস পছন্দ করে। বলের মত গোলাকার কোন বস্তু গলার উপর ঠেলে আসছে, এই জাতীয় অনুভূতি। অম্ল, অজীর্ণ।
মল – নরম ও অল্প অল্প। (ফসফরাস) শক্ত, শ্লেষ্মা জড়িত; চর্বির মত চকচকে; ছোট-ছোট টুকরার মত; মল ত্যাগকালে প্রচন্ড কোঁথ দিতে হয়, অথবা কেবলমাত্র দাঁড়িয়ে মলত্যাগ করতে হয়। মলদ্বারে চুলকানি। সরলান্ত্রের আংশিক পক্ষাঘাত। সরলান্ত্রের টাটানি ব্যথা ও জ্বালা। নলী ঘা ও অর্শ।
প্রস্রাব – কাশির সময়, হাঁচির সময় অসাড়ে প্রস্রাব (পালস) খুব ধীরে ধীরে প্রস্রাব হয় এবং কোন কোন সময় বাধা প্রাপ্ত। রাত্রে ঘুমের প্রথমাবস্থায় বিছানায় প্রস্রাব; এছাড়াও সমান্য উত্তেজনায় প্রস্রাব করে ফেলে। অস্ত্রোপচারের পর মূত্ররোধ। প্রস্রাব করার সময় অনুভূতির আভাব।
স্ত্রীরোগ – প্রসবকালে জরায়ুর নিষ্ক্রিয় অবস্থা। মাসিক ঋতুস্রাব রাত্রে বন্ধ থাকে; কেবলমাত্র দিনের বেলায় স্রাব হয়। (সাইক্লামেন; পালস)। রাত্রে প্রদরস্রাব, তৎসহ প্রচন্ড দুর্বলতা। (নেট্রাম মিউর)। ধাতুস্রাব দেরি করে হয়। (কোনিয়াম); গ্রাফাইটিস; পালস।
শ্বাস-প্রশ্বাস – স্বরভঙ্গ, তৎসহ বুকের বেদনা; স্বরলোপ। কণ্ঠনলীর টাটানি ব্যথা, কাশি, তৎসহ বুকের ক্ষততার অনুভূতি। সামান্য শ্লেষ্মা উঠে; অবশ্যই শ্লেষ্মা গিলে নেয়। কাশি, তৎসহ নিতম্ব সন্ধি বা হিপজয়েন্টে বেদনা, বিশেষকরে বাম দিকে, সন্ধ্যায় বৃদ্ধি; ঠান্ডা জলপানে উপশম; বিছানার গরমে বৃদ্ধি। শ্বাসনলীর ভিতর দিয়ে নীচের দিক। বরাবর একটি টাটানি ব্যথার রেখা। বুক্কাস্থির ঠিক নীচে শ্লেষ্মা, যা রোগী কেশে ভার করে। তুলতে পারে না। বুকে বেদনা, তৎসহ হৃদকম্প। রাত্রে কিছুতেই শুয়ে থাকতে পারেনা। কণ্ঠস্বরের প্রতিধবনি হয়। নিজের গলার স্বর কানের ভিতর গর্জন করে এবং যা বিরক্তিকর। গায়ক ও বক্তাদিগের কণ্ঠস্বর সম্পর্কিত কষ্ট (রয়্যাল)।
পিঠ — দুই দিকের ঘাড়ের মধ্যবর্তী অংশের আড়ষ্টতা। গ্রীবার পিছনের অংশে মৃদু বেদনা।
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ – বামদিকের সাইয়েটিকা, তৎসহ অসাড়তা। একাঙ্গীন পক্ষাঘাত। হাত ও বাহুতে ছিঁড়ে ফেলার মত, মৃদু বেদনা। ভারবোধ ও দূর্বলতা। সন্ধিস্থানে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা। অগ্রবাহু ও হাতের পেশীর দৃঢ়তার অভাব। অসাড়তা; হাতে অনুভূতির জ্ঞানের লোপ। পেশীবন্ধনীতে সঙ্কোচন, গোড়ালির দূর্বলতা। কষ্ট না করে, কিছুতেই হাঁটতে পারে না। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বাতজনিত কারণে ছিঁড়ে ফেলার মত বেদনা; উত্তাপে উপশম, বিশেষকরে বিছানার গরমে। সন্ধি স্থানে জ্বালা। দেরিতে হাঁটতে শেখে টলমলে হাঁটা-চলা এবং খুব সহজেই পড়ে যায়। রাত্রে পায়ের অস্থিরতা। হাঁটুর ভিতর কটু শব্দ ও টেনে ধরার মত অনুভূতি হাঁটুর সন্ধির গর্তগুলিতে আড়ষ্টতা। পায়ের পিছনের অংশে চুলকানি।
চামড়া – চামড়ার ভাঁজে-ভাঁজে, কানের পিছনের অংশে, দুটি ঊরুর মধ্যবর্তী অংশে টাটানি ব্যথা। আঁচিল-গুলি বড়ো, খাঁজকাটা, খুব সহজেই আঁচিল থেকে রক্তপাত হয়, হাতের আঙ্গুলের অগ্রভাগে ও নাকে আচিল দেখায়। পুরাতন পোড়া ঘা যা কিছুতেই ভালো হয় না এবং পোড়ার কুফল সমূহ। পুড়ে যাবার পরে যন্ত্রণা। ক্ষতের দাগ গুলি তাজা হয়ে উঠে; পুরাতন আঘাত প্রাপ্ত স্থান নতুন করে জেগে উঠে। দাঁত উঠার সময় গায়ের ত্বক হাজা যুক্ত হয়।
ঘুম — প্রচন্ড ঝিমুনিভাব; খুব কষ্ট করে জেগে থাকতে হয়। রাত্রিকালীন জাগরিত অবস্থা, তৎসহ গায়ের চামড়া শুষ্ক ও উত্তপ্ত, অস্থিরতা।
সম্বন্ধ – বেল শহরের ডাঃ ওয়াগনারের সর্তকতাপূর্ণ গবেষনা থেকে জানা যায় যে, কষ্টিকাম, এমনকষ্টিকাম ৪ x এর সমতুল্য। কষ্টিকামের সঙ্গে ফসফরাসের প্রতিবন্ধক সম্পর্ক; এই দুটি ঔষধ কখনই একটির পরে অপরটি ব্যবহার করা যাবে না। পুরাতন ব্রঙ্কাইটিস রোগে কষ্টিকামের পারে, ডিফথিরিনাম ঔষধটি ভালো কাজ করে।
দোষগ্ন – সীসা থেকে পক্ষাঘাতের ক্ষেত্রে।
পরিপূরক – কার্বোভেজ; পেট্রোসেল।
তুলনীয় – রাসটক্স; আর্সেনিক; এমন ফস (মুখমন্ডলের পক্ষাঘাত)।
কমা-বাড়া – বৃদ্ধি, শুষ্ক, ঠান্ডা বাতসে, পরিষ্কার ঝকঝকে আবহাওয়ায়, ঠান্ডা বাতাসে; গাড়ীতে চলার সময়।
উপশম — ভিজে-স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া; উত্তাপে। বিছানার গরমে।
শক্তি – ৩য় থেকে ৩০ শক্তি। পুরাতন রোগে এবং বিশেষ করে পক্ষাঘাত অবস্থায়, উচ্চতর শক্তি সপ্তাহে বা দুই সপ্তাহ অন্তর একমাত্রা।
Kent
--------
কষ্টিকাম একটি অনুসন্ধানসাপেক্ষ ঔষধ, পুরাতন রোগ ভোগকারী, বৃদ্ধ, ভগ্নস্বাস্থ্য ধাতুতে উপযোগী। কেবলমাত্র, কখন কখন ইহা তরুণ রোগে প্রযোজ্য হয়। ইহার রোগগুলি ক্রমবর্ধমানশীল, ধীরগতি এবং শারীরিক বিধানের ক্রমিক ক্ষয়ের সহিত সংযুক্ত। পৈশিক শক্তির ক্রমিক হ্রাস, পক্ষাঘাত। গলনলীর পক্ষাঘাত, গলার পক্ষাঘাত, যেমনটি ডিপথেরিয়া রোগে ঘটে; চক্ষুর উপর পাতার পক্ষাঘাত, মূত্রস্থলীর পক্ষাঘাত, অঙ্গাদির, নিম্ন অঙ্গের পক্ষাঘাত; শরীরের অত্যন্ত অবসন্নতা, পেশীর শিথিলতা, অবর্ণনীয় ক্লান্তি, দেহের ভারবোধ। আর এই সঙ্গে, কম্পন, থরথর করা, ঝাঁকি মারা; পেশীসমূহের উৎক্ষেপ, নিদ্রার মধ্যে উৎক্ষেপ।
পরবর্তী অত্যাশ্চর্য লক্ষণ পাওয়া যায় বন্ধনীগুলিতে; ঐগুলি ছোট হইয়া যায়, ফলে সাময়িক বা স্থায়ী সঙ্কোচন উপস্থিত হয় এবং আক্রান্ত অঙ্গ আকৃষ্ট হইয়া পড়ে। সম্মুখ-বাহুর বন্ধনী সঙ্কুচিত হয় এবং ক্রমশঃ বর্ধনশীল পেশী সঙ্কোচন উপস্থিত হয়। সময়ে সময়ে সমুদয় পেশীটি কঠিন ও ছোট হইয়া যায়, ফলে হাত দিয়া উহাকে একটা কঠিন দড়ির ন্যায় অনুভব করা যায়। পেশী ও বন্ধনীসমূহের সঙ্কোচন।
ইহার সহিত থাকে সন্ধির চারিদিকের পেশী ও বন্ধনীসমূহের বাত অবস্থা, কখন কখন উহা স্ফীতিযুক্ত হয় কিন্তু সর্বদাই যন্ত্রণা থাকে, এবং পরিশেষে সন্ধির আকুঞ্চন, সন্ধির টান টানভাৱ দেখা যায়, ফলে গ্রন্থি-অস্থিসকল জুড়িয়া যাওয়া জনিত আড়ষ্টতা উপস্থিত হয়। সন্ধিগুলির অত্যন্ত আড়ষ্টতা, আর যখন এইরূপ চলিতে থাকে, তখন রোগী ক্রমশঃ অধিকতর দুর্বল হইতে থাকে, বিমর্ষ, নিরাশ, উদ্বেগপূর্ণ ও ভীত অবস্থার দিকে অগ্রসর হইতে থাকে। সৰ্ব্বদাই তাহার মনে নৈরাশ্য বর্তমান থাকে, যেন তাহার উপর কিছু ঝুলিতেছে, যেন কোন কিছু ঘটিতে চলিয়াছে—এরূপ অনুভূতি থাকে। এইগুলি কষ্টিকামের সাধারণ লক্ষণ। এইগুলি অবিচ্ছেদ্য এবং এইগুলির সম্মিলনে কষ্টিকামের চিত্র গঠিত হয়।
কষ্টিকামের আর একটি বর্ধনশীল উপসর্গ হিষ্টিরিয়া। ক্রমবর্ধমান হিষ্টিরিয়া। হিষ্টিরিয়াজনিত খালধরা। স্ত্রীলোক নিজের উপর সমস্ত আধিপত্য হারাইয়া ফেলে এবং বোকার মত কথা বলিতে থাকে। তাহার স্নায়ুমণ্ডল শব্দে, স্পর্শে, উত্তেজনায় বা যে-কোন অসাধারণ ব্যাপারে অত্যনুভূতিযুক্ত হইয়া পড়ে। সামান্য শব্দে সে চমকিয়া উঠে, ঘুমের মধ্যে চমকিয়া উঠে; পেশী সঙ্কোচন ও উৎক্ষেপ দেখা দেয়, শিশু সহজেই চমকিয়া উঠে অথবা বিনা কারণেই চমকিয়া উঠার ন্যায় ব্যবহার করে।
বাতরোগপ্রবণতার সহিত পক্ষাঘাতিক দুর্বলতার সংযোগ থাকে। বাত অবস্থাটি অদ্ভুত। রোগী নিজে উত্তাপ বা ঠান্ডা কিছুই সহ্য করিতে পারে না। দুইটিতেই বাতজ অবস্থা, স্নায়বিক অবস্থা এবং সাধারণভাবে রোগীকে উপচয়যুক্ত করে। তাহার বেদনা উত্তাপে উপশমিত হইলেও গরম আবহাওয়ায় বর্ধিত হয়। সন্ধিগুলি অত্যন্ত বিকৃত হয়, ঐগুলি বর্ধিত, কোমল ও রসপ্রসেকযুক্ত হয়, এবং সৰ্ব্বদা গরম আবহাওয়ায় বৃদ্ধি-লক্ষণযুক্ত থাকে, শুষ্ক আবহাওয়ায় আরও অধিক বেদনা ও কামড়ানি উপস্থিত হয়। বাতে পেশী ও সন্ধি উভয়ই আক্রান্ত হয়। এই প্রকার রোগী আবার ঠান্ডা ও শুষ্ক বাতাসে উন্মুক্ত থাকায় বৃদ্ধিযুক্ত হয়। বহু ব্যক্তি পূৰ্বাঞ্চলের নিম্নভূমি হইতে কলোরেডো গিয়া সেখানকার ঠান্ডা শুষ্ক হাওয়ায় বাতে শয্যাগত হইয়া পড়ে। আমি যেরূপ বর্ণনা করিয়াছি, সেইরূপ রোগী শীতল হ্রদের হাওয়ায় ঘোড়ায় চড়িয়া বেড়াইলে, তাহার মুখের যে-পার্শ্ব বায়ুতে উন্মুক্ত থাকিবে, সেই পার্শ্ব পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইবে। বহুক্ষণ ধরিয়া মুখে পূৰ্ব্বদিক হইতে প্রবাহিত বায়ু লাগাইয়া, গাড়ী চড়িয়া বেড়াইলে পরদিন মুখের ঐ অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হইবে। এইরূপ পক্ষাঘাত প্রায় সর্বদাই কষ্টিকাম দ্বারা আরোগ্য হয়।
বিদীর্ণকর, ছিন্নকর, পক্ষাঘাতিক যন্ত্রণা অসাড় করিয়া দেয়, এত ভীষণ যন্ত্রণা হয় যে, তাহাতে জীবন বাহির হইবার মত হয়। ঐ বেদনা সাধারণতঃ একই স্থানে বহুসময় থাকে। কশেরুক মাজ্জেয় ক্ষতরোগের বিদ্যুৎ বেদনা কষ্টিকাম দ্বারা যথেষ্ট উপশমিত হয়।
তারপর এইসকল যন্ত্রণার সহিত রোগী ধীরে ধীরে অধিকতর দুর্বল হইতে থাকে, শেষ পর্যন্ত সে আর হাঁটিতে পারে না, সে আর বসিতে পারে না; সে এত শ্রান্ত ও দুর্বল হয় যে, তাহাকে শুইয়া থাকিতে হয়। সে দৈহিকভাবে এবং মানসিকভাবে দুর্বল হইয়া পড়ে। ইহা পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা।
আক্ষেপিক লক্ষণ। খালধরা কখন এখানে, কখন সেখানে। যদি সে ভয় পায়, নিশ্চয়ই তাহার কোন-না-কোন রকম আক্ষেপ দেখা দিবে। হিষ্টিরিয়াগ্ৰস্তা স্ত্রীলোকেরা ভয় হইতে মূর্চ্ছাগ্রস্তা হইবে, স্নায়বিক বালিকাদের তান্ডবনৰ্ত্তন-লক্ষণ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনাই অধিক, তাহাদের পেশীগুলিতে ঝাঁকি দিতে থাকিবে, এবং উহা দিনরাত চলিতে থাকিবে। রাত্রে তান্ডবরোগ। স্থানিক তান্ডব, বিশেষ অঙ্গের উৎক্ষেপ, জিহ্বার বা মুখের এক পার্শ্বের তান্ডবনৰ্ত্তন।
যৌবনোপাম বয়সে ভয় হইতে, ঠান্ডা লাগায়, বা আবহাওয়ার বেশী পরিবর্তনকালে অনাবৃত থাকায় অপস্মাররোগ। অপস্মার, তান্ডবনৰ্ত্তন, পক্ষাঘাত, হিষ্টিরিয়াজনিত মূর্চ্ছা, ঋতুকালে বৃদ্ধি। আমরা জানি যে, কষ্টিকাম একটি গভীরক্রিয় ঔষধ। ইহার বৃদ্ধি শীতল, শুষ্ক বাতাসে উন্মুক্ত থাকায়। ইহাতে আরও বাতজ উপসর্গ আছে, উহার বৃদ্ধি গরম ভিজা দিয়া, বর্ষাকালীন আবহাওয়া, কিন্তু উহা সেরূপ লক্ষণীয় নহে।
আমি সে সকল রোগের উল্লেখ করিয়াছি, তাহার যে-কোনটি ঠান্ডা জলে স্নান করায় উপস্থিত হইতে পারে। দীর্ঘকালস্থায়ী শুষ্ক শীতল বায়ুপ্রবাহে বাতজনিত উপসর্গ বর্ধিত হয়, ভিজিয়া যাওয়ায়, অথবা স্নান করিয়া ঠান্ডা লাগায় উহার আরম্ভ হয়।
কষ্টিকামে উন্মাদরোগ আরোগ্য হইয়াছে; ভীষণ প্রলাপযুক্ত তরুণ উন্মাদ নহে, কিন্তু অপ্রবল প্রকৃতির মানসিক উদভ্রান্তি, যেখানে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হইয়া পড়ে। দীর্ঘকাল যন্ত্রণা এবং অনেক রোগ ভোগ করিয়া স্বাস্থ্যভঙ্গ হইয়াছে এবং পরিশেষে মনের গোলমাল দেখা দিয়াছে, এরূপ অবস্থা। প্রথমে রোগী তাহার কোন কিছু করিবার অক্ষমতা জানিতে পারে, তাঁহার পর তাহার মনে পূৰ্বানুভূতি জন্মে যে, তাহার কিছু ঘটিবার উপক্রম হইয়াছে। সে চিন্তা করিতে পারে না, সুতরাং বিষয়কৰ্ম্মও চালাইতে পারে না। তাহার মানসিক জড়ভাব দেখা দেয়। ভয়সূচক কল্পনায় পূর্ণ থাকে। “ভয়সূচক উৎকণ্ঠা।” ভীতিপূর্ণ কল্পনায় অভিভূত। প্রতি পদক্ষেপে ভয় হয়, যেন কিছু ঘটিতে চলিয়াছে। মৃত্যুর ভয়, যেন পরিবারের মধ্যে কোন কিছু ঘটিতে চলিতেছে। সৰ্ব্বদাই কোন ভীতিজনক ঘটনার আশঙ্কা করে। কষ্টিকামের মানসিক অবস্থার ইহা একটি অদ্ভুত লক্ষণ। ইহা দীর্ঘকাল উৎকণ্ঠার পর, দীর্ঘকালব্যাপী কোন প্রকার কষ্টভোগ করার পর জীর্ণ, ভগ্নস্বাস্থ্য মানসিক রোগীদিগের মধ্যে দেখা যায়। নিদ্রিত হইবার পূর্বে উৎকণ্ঠা। ইহার সহিত কষ্টিকাম রোগীর মানসিক সমতার অভাব থাকে। প্রত্যেক জিনিষেই তাহার উত্তেজনা দেখা দেয়। সে তাহার উপসর্গগুলি সম্বন্ধে যতই ভাবে, ততই বেশী খারাপ হইয়া পড়ে। দীর্ঘকালস্থায়ী শোক ও দুঃখ হইতে মানসিক ও অন্যান্য উপসর্গ। ভয় ও দীর্ঘকালস্থায়ী বিরক্তির অনিষ্টকর ফল। বিষয়কর্মের বিরক্তিজনিত কান্তি।
উদ্ভেদ লোপ পাইয়া, মানসিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। জিঙ্কঘটিত মলম দ্বারা উদ্ভেদ লোপ করার পর, মানসিক অবসন্নতা, নৈরাশ্য, হতাশা। যতদিন উদ্ভেদ ছিল, সে একরূপ ভালই ছিল, কিন্তু যেই ঐগুলি অদৃশ্য হইল, অমনি মানসিক লক্ষণগুলি প্রকাশিত হইল। মাথার পার্শ্বে ও মুখমন্ডলে উদ্ভেদ, উহা সমগ্র মাথায় বিস্তৃত হইতে থাকে। পুরু মামড়ীযুক্ত উদ্ভেদ, সমস্ত মস্তক-ত্বক ঢাকিয়া ফেলে। শিশুদের এইরূপ উদ্ভেদ লোপ করিয়া দিলে, তান্ডবনৰ্ত্তনরোগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা। বয়স্কগণের কম্পন, পক্ষাঘাতিক দুর্বলতা, মানসিক লক্ষণ, ও কখন কখন স্নায়ুসমূহে যন্ত্রণা দেখা দিবে। মুখের উদ্ভেদ ভিতরে তাড়াইয়া দিলে, সচরাচর মুখের পক্ষাঘাত উপস্থিত হয়। পুরাতন ক্ষত উত্তেজক লোশন বা মলম দিয়া আরোগ্য করিলে ঐ একইরূপ পরিণাম হইবে। তারপর সে ভীষণ শিরঃপীড়ায়, রক্তসঞ্চয়বিশিষ্ট দপদপকর, শিরঃপীড়ায়, মাথায় সূঁচ ফোটার ন্যায় ভীষণ যন্ত্রণায় আক্রান্ত হইবে, উহার বৃদ্ধি সন্ধ্যার দিকে। কিন্তু এই শিরঃপীড়া সবসময়েই অবর্ণনীয়, কেবলমাত্র কখন কখন আমরা কষ্টিকামের শিরঃপীড়া একক প্রকাশিত হইতে দেখি। ইহা সাধারণতঃ বাত ও গেঁটেবাত অবস্থার সহিত সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহাও আবার মস্তক-তুককে আক্রমণ করে। অন্যান্য অঙ্গের সঙ্কোচনের ন্যায়, মস্তক-ত্বকও স্থানে স্থানে সঙ্কুচিত ও টানটান হইয়া পড়ে। বাতজ শিরঃপীড়া, সময়ে সময়ে যন্ত্রণা এত ভীষণ হয় যে বমনেচ্ছা ও বমন দেখা দেয়। দৃষ্টিলোপকারক শিরঃপীড়ার পর পক্ষাঘাত হয়।
গ্রীবাস্তম্ভ। ঘাড়ের পেশীগুলির হ্রস্বতাবশতঃ সময়ে সময়ে মস্তক একপার্শ্বে আকৃষ্ট হয়। কন্ডরা ও পেশীর এরূপ হ্রস্বতায় কষ্টিকাম একটি আরোগ্যকর ঔষধ।
কষ্টিকামে প্রচুর চক্ষু-লক্ষণ আছে। রোগী প্রায়ই বলে যে, চক্ষুর পাতা দুইটি এত ভারী বোধ হয় যে, সে অতিকষ্টে উহাদিগকে তুলিতে পারে। এই ভাবে ক্রমশঃ বাড়িতে বাড়িতে প্রকৃত পক্ষাঘাত দেখা দেয়। সময়ে সময়ে চক্ষুর সম্মুখে জালের মত দেখে, কুয়াসাচ্ছন্ন দৃষ্টি। চক্ষুর সম্মুখে আলোর মত দপদপ করে। বায়ুমন্ডল কাল কাল, ক্ষুদ্র পতঙ্গে পূর্ণ বোধ হয়। তারপর বড় বড় কাল অথবা সবুজ দাগ দেখা যায়। আলোকের দিকে তাকাইলে, একটি সবুজ দাগ দেখা যায়। উহা দৃষ্টিপথে বহুক্ষণ থাকিয়া যায়। দ্বিদৃষ্টি। আর, দৃষ্টিশক্তি ক্রমশঃ দুর্বল। হইতে হইতে অবশেষে লোপ পায়। চক্ষুর স্নায়ুর পক্ষাঘাত। অশ্রুস্রাব, চক্ষুর জল বিদাহী, জ্বালাকর; চক্ষুতে ক্ষত, চক্ষু হইতে প্রচুর স্রাব, চক্ষুর পাতা জুড়িয়া যায়, চক্ষুপেশীর পক্ষাঘাত। কষ্টিকাম গন্ডমালা ধাতুতে, কনীনিকায় ক্ষুতযুক্ত চক্ষুপ্রদাহ, পুঁজস্রাবী পুরাতন সোরাদোষজ চক্ষু প্রদাহ, পুঁজস্রাবী পুরাতন সোরাদোষজ চক্ষু-প্রদাহ আরোগ্য করে। কনীনিকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিরায় আচ্ছন্ন থাকে।
এই ঔষধের আর একটি প্রবল লক্ষণ, আঁচিল জন্মাইবার প্রবণতা। মুখের উপর, নাকের ডগায়, “আঙ্গুলের ডগায়, হাতের উপর আঁচিল। শরীরের নানা স্থানে কঠিন, শুষ্ক, শিংয়ের ন্যায় আঁচিল জন্মে।
শ্লৈষ্মিক ঝিল্লী হইতে প্রচুর, ঘন, চটচটে, আঠার মত স্রাব উৎপাদন করা এই ঔষধের স্বাভাবিক লক্ষণ। সর্দিজ অবস্থা ইউষ্টেচিয়ান নলে প্রবেশ করে, নাক হইতে গলায়, তথা হইতে কানে যায়, ফলে কর্ণের মধ্যে গর্জনবৎ, খড়খড় শব্দ এবং শব্দের প্রতিধ্বনি শুনা যায়। কানে প্রচুর খইল জন্মে; সর্দি হইতে উৎপন্ন বধিরতা এবং কর্ণের স্নায়ুসমূহের পক্ষাঘাতজনিত বধিরতা দেখা দেয়। কর্ণে ভীষণ টানিয়া ধরার ন্যায় যাতনা।
নাকের সর্দি অত্যন্ত কষ্টকর। সমুদয় নাসারন্ধ্র জুড়িয়া মামড়ী সঞ্চয়বিশিষ্ট, পুরাতন ক্ষয়কর সর্দি, নাসিকার পশ্চাৎরন্ধ্রের সর্দির সহিত ক্ষত, মাংসাঙ্কুর এবং প্রচুর, ঘন অথবা হরিদ্রাভ সবুজ স্রাব, নাসাপথে রক্তস্রাব, পুনঃ পুনঃ বিদাহী জলবৎ সর্দি। নাকের মধ্যে অত্যধিক চুলকানি। নাকের ডগায় আঁচিল জন্মে।
মুখের তীব্র যন্ত্রণা। ঠান্ডায় উন্মুক্ত থাকায় স্নায়ুশূল। এইরূপ যন্ত্রণার সহিত কখন কখন মুখের পক্ষাঘাত উপস্থিত হয়। মুখমন্ডলে ছিন্নকর বেদনা সূঁচীবিদ্ধবৎ বেদনা, বাতপ্রকৃতির বেদনা।
মুখগহ্বর ও নাসিকার চারিদিকে ক্ষত। ওষ্ঠে, নাকের পাখায় এবং চক্ষুর কোণে ফাটা। সামান্য কারণেই ফাটা জন্মে। মলদ্বারে এবং সন্ধিস্থানের চর্মে ফাটা। পুরাতন বাতরোগীর সন্ধিস্থানের বাঁকে বাঁকে ফাটা। নানা ক্ষতের দেওয়ালগুলি কঠিনতাপ্রাপ্ত।
মাড়িগুলি স্কার্ভিরোগগ্রস্ত হয় এবং দাঁত হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়ে, মাড়ি হইতে রক্তপাত ও মাড়িতে ক্ষত। হাওয়ায় গাড়ী-ঘোড়া চড়িলে দাঁতের গোড়ায় ভীষণ ছিন্নকর যাতনা। পুরাতন বাতগ্রস্ত রোগীরা প্রত্যেকবারের শুষ্ক বায়ুপ্রবাহেও দন্তশূলে কষ্ট পায়। দাঁতে, এমন কি ঠান্ডা বায়ুতে নিঃশ্বাস লইলে শক্ত দাতেও সূঁচীবিদ্ধবৎ, ছিন্নকর, দপদপকর যাতনা হয়। দাতের মাড়িতে পুনঃ পুনঃ ফোড়া উঠে। মুখে পচা, টক ও তিক্ত আস্বাদ।
যখন পক্ষাঘাত অবস্থা জিহ্বাকে আক্রমণ করে, তখন তোতলামি দেখা দেয়। এমন অবস্থাও দেখা যায়, যখন গলকোষ ও অন্ননলীর সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত উপস্থিত হয়। সুতরাং কষ্টিকাম ডিপথেরিয়ার কুফলে, উহার সুচিকিৎসা না হইলে অথবা ঔষধক্রিয়ায় সম্পূর্ণ আরোগ্য না হইলে উপযোগী। খাদ্য বিপথে চলিয়া গিয়া গলনলী বা পশ্চাৎ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করে। বাক্যন্ত্রের পক্ষাঘাত, জিহ্বার পক্ষাঘাত, কথা বলায় আড়ষ্টতা, চিবাইবার সময় আড়ষ্টতা, চিবাইবার সময় জিহ্বা ও গাল কামড়াইয়া ফেলে। ডিপথেরিয়ার পরবর্তী পক্ষাঘাত একটি সাঘাতিক অবস্থা এবং খুব অল্প সংখ্যক ঔষধই উহা আরোগ্য করিতে পারে। কষ্টিকাম ঐগুলির অন্যতম। ল্যাকেসিস’ ও ককুলাস’ও প্রয়োজনীয় ঔষধ। মুখ ও গলার শুষ্কতা, গলায় হাজাবোধ, গলায় একপ্রকার পূর্ণতাবোধ, গলায় একপ্রকার স্নায়বিক অনুভূতির জন্য তাহাকে সর্বদাই ঢোক গিলিতে হয়। এই লক্ষণগুলিই প্রায়শঃ পক্ষাঘাতের পূর্বদূত। ষ্ট্যাফিসাগ্রিয়া’র রোগীও উত্তেজিত হইলে অবিরত ঢোক গেলে, এবং যতক্ষণ পর্যন্ত উহা অত্যন্ত বিরক্তির কারণ না হয়, ততক্ষণ উহা চলিতে থাকে। গলায় জ্বালা, গলার মধ্যে ঝাঁকি দিয়া উঠা; সর্বদা কণ্ঠনলী হইতে ঘন, শক্ত শ্লেষ্মা গলা খেঁকারি দিয়া তুলে। কোথা হইতে শ্লেম্মা আসিতেছে তাহা বুঝিবার জন্য রোগী যেরূপ শব্দ করে, তাহা লক্ষ্য কর। স্বরভঙ্গ বর্তমান থাকায় বুঝা যায় যে, রোগটি কণ্ঠনালীতেই অবস্থিত।
কষ্টিকামের রোগী ক্ষুধার্ত হইয়া আহারের টেবিলে বসে, কিন্তু খাদ্য দ্রব্য দেখিলেই তাহার ক্ষুধা চলিয়া যায়। খাদ্যের চিন্তা, খাদ্যদর্শন ও খাদ্যের গন্ধে তাহার ক্ষুধা লোপ পায়। গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের মধ্যে ইহা একটি সাধারণ লক্ষণ। ক্ষুধার্ত হওয়া সত্ত্বেও, টেবিলে বসিলে আর তিনি খাইতে পারেন না। ক্যালি কার্বনিকামে’ খাদ্যে অপ্রবৃত্তির সহিত পাকস্থলীতে একপ্রকার শূন্যতাবোধ থাকে। চায়না’য় রাক্ষুসে ক্ষুধা আছে, কিন্তু খাদ্য দেখিলে উহা আর খাইতে ইচ্ছা হয় না।
আহারের পর তৃষ্ণা; জলে অপ্রবৃত্তির সহিত ঠান্ডা পানীয়ের তৃষ্ণা; বিয়ার, ধূমশুষ্ক মাংস, ঝাল জিনিষ খাইতে চায়; মিষ্ট দ্রব্য এবং সুস্বাদু খাদ্য খাইতে চায় না। যে-সকল ঔষধে ক্ষুধানাশ আছে, তাহাদের অধিকাংশেরই মিষ্ট জিনিষ, পিঠা প্রভৃতি স্পৃহা থাকে। ইহার পানীয়ে অপ্রবৃত্তির সহিত তৃষ্ণা লক্ষণটি অনেকটা ল্যাকেসিস সদৃশ। দুইটি ঔষধই গলার পক্ষাঘাত অবস্থায় ঘনিষ্ঠভাবে সদৃশ হইয়া থাকে।
পাকস্থলীতে একপ্রকার অদ্ভুত অনুভূতি থাকে, যেন ঐ স্থানে চুন ফুটিতেছে। পাকস্থলীর মধ্যে কম্পন, জ্বালা। রুটি খাইলে ভার ও চাপের অনুভূতি উৎপন্ন হয়। কফি পান করিলে পাকস্থলীর সকল লক্ষণই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু ঠান্ডা জল গিলিলে উপশম হয়। জল গিলিলে এই ঔষধের অনেক লক্ষণের উপশম হয়। ভয়ঙ্কর আক্ষেপিক কাশি এক ঢোক ঠান্ডা জল পান করিলে তৎক্ষণাৎ থামিয়া যাইতে পারে। ঠান্ডা জলে বোধ হয় পক্ষাঘাতিক অবস্থার উন্নতি হয়। হাতে উষ্ণ জল লাগাইলে, মেরুদন্ডের পুরাতন স্পর্শকাতর অবস্থায় যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। ঠান্ডা জলে গা ধোয়াই ঐ অবস্থায় একমাত্র উপশমকর ব্যবস্থা।
কষ্টিকাম ঢেকুর উঠা, বমনেচ্ছা, বমন এবং পাকস্থলীতে তীব্র বেদনা আছে। চিমটি কাটার ন্যায় শূলব্যথা। শরীরের অন্যান্য অংশে যেরূপ দেখা যায় সরলান্ত্রেও সেইরূপ পক্ষাঘাতিক দুর্বলতার প্রবণতা আছে। উহা নিষ্ক্রিয় হইয়া পড়ে এবং শক্ত শক্ত মলে পূর্ণ হয়; ঐ মল অনিচ্ছায় এবং অসাড়ে নির্গত হয়। এলো’তে শিশু ছোট ছোট কঠিন মল, বিশেষতঃ অজ্ঞাতে নির্গত হইতে দেখা যায়। এমনকি এই ব্যাপার বুঝিবার মত বড় হইয়া থাকিলেও, তাহারা অনিচ্ছায় ছোট ছোট মলের গোলা নির্গত করে।
পক্ষাঘাতিক অবস্থার জন্য রোগী দাঁড়াইয়া থাকিয়া কম বেগ দিনেই মল নির্গত হয়। দাঁড়াইয়া থাকার সময় ব্যতীত মূত্ররোধ, সার্সাপ্যারিলা’র ন্যায়, অন্য কোন অবস্থানে মূত্র নির্গত করিতে পারে না। কোষ্ঠবদ্ধতা, পুনঃপুনঃ নিষ্ফল মলবেগ। মল শক্ত ও চকচকে’ এবং অনেক কষ্টে ও অনেক কোঁথ দিয়া নির্গত করিতে হয়।
মলদ্বার বিদারণ, সরলান্ত্রে চুলকানি ও সূঁচ ফোটার ন্যায় যন্ত্রণা, দিবারাত্র অত্যন্ত চুলকানি; অর্শ, মূলাধারে দপদপানি, মলদ্বারের ফাটা ও অর্শবলি দপদপ করে ও আগুনের ন্যায় জ্বালা করে। অর্শবলি রসপ্রসেকযুক্ত ও কঠিনতাপ্রাপ্ত হয়।
এই ঔষধে মূত্রস্থলীর দুই প্রকার পক্ষাঘাত আছে, একপ্রকার মূত্রনির্গমনকারী পেশীসমূহ আক্রান্ত হয় এবং মূত্রাবরোধ ঘটে, আর অন্য প্রকারে মূত্রদ্বারের সঙ্কোচক পেশীকে আক্রমণকেন্দ্র করিয়া অবারিত মূত্রের সৃষ্টি করে। “সে এত সহজে মূত্রত্যাগ করে যে, মূত্রধারার কথা জানিতেই পারে না এবং অন্ধকারে বিশ্বাসই করে না যে, সে মূত্রত্যাগ করিতেছে এবং অবশেষে স্পর্শ দ্বারা বুঝিয়া লয়।” কষ্টিকামে মূত্রধারা নির্গমনের অনুভূতি থাকে না। যে-সকল শিশুর শয্যামূত্র রোগ আছে কষ্টিকাম তাহাদের পক্ষে বিশেষ উপযোগী ঔষধ। বিশেষভাবে ইহা স্ত্রীলোকদের পক্ষে এক আশ্চর্য্য ঔষধ। কাশিবার সময় অসাড়ে মূত্র নির্গত হয়। স্ত্রীলোকদিগের মূত্রাবরোধ। প্রসবের পর মূত্রাবরোধ। মূত্রস্থলীর পক্ষাঘাত। যে স্ত্রীলোক লোকজনের ভিড়ের মধ্য দিয়া রেলগাড়ীর কামরার শেষের দিকের পায়খানায় যাইতে খুব বেশী সঙ্কুচিতা হন, তিনি ভ্রমণের শেষে দেখেন যে, মূত্রত্যাগ করিতে অসমর্থ হইয়া পড়িয়াছেন। মূত্রস্থলীর পেশীতে অত্যন্ত চাপ পড়ায় মূত্রাবরোধ। রোগীর যদি এই সময়ে ঠান্ডা লাগিয়া থাকে, তাহা হইলে ‘রাস ঔষধ হইতে পারে। রাস’ ও কষ্টিকাম ঔষধ দুইটি অতিচেষ্টা অথবা অতিচেষ্টা ও ঠান্ডা লাগার ফলে পেশীসমূহের পক্ষাঘাতিক দুর্বলতার পক্ষে অতি প্রয়োজনীয় ঔষধ।
ঋতুকালে অত্যন্ত দুর্বলতা। ঋতুর পূর্বে উৎকণ্ঠাপূর্ণ স্বপ্ন, বিমর্ষতা খালধরার ন্যায় আক্ষেপ, পৃষ্ঠে বেদনা। ঋতুকালে স্ত্রীলোক অনেক প্রকার উপসর্গে কষ্ট পান। ঠিক ঋতুপ্রবাহ দেখা দিবার পূর্বে, খালধরার ন্যায় ভীষণ যন্ত্রণা উপস্থিত হয়। যে-স্ত্রীলোক শিশুকে স্তন্যদান করে, তাহার ক্লান্তি, রাত্রিজাগরণ ও উৎকণ্ঠার ফলে দুধ প্রায় অদৃশ্য হইয়া যায়। স্তনবৃন্ত ক্ষতযুক্ত হয় ও ফাটিয়া যায়, ইহা ঔষধটির ফাটা উৎপন্ন করিবার প্রবণতার আর একটি উদাহরণ।
কষ্টিকাম রোগীর স্বরসংক্রান্ত উপদ্রব আছে। তোমাদের মনে আছে যে, যখন আমি কার্বো ভেজে’র লক্ষণ সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছিলাম, তখন আমি বলিয়াছিলাম যে, স্বরভঙ্গ সন্ধ্যাকালেই বেশী হয়। এখন লক্ষ্য কর যে কষ্টিকামের স্বরভঙ্গ প্রাতঃকালেই অধিক। সে স্বরভঙ্গ লই