10/09/2024
এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতা কি?
সুস্থ শিশু মানেই হাসিখুশি ও দুরন্তপনা। সুস্থ–স্বাভাবিক শিশু খানিকটা চঞ্চল হবেই। তবে অতিচঞ্চল শিশুর সমস্যাকে বলা হয় এ ডি এইচ ডি, কথাটির পুরো অর্থ হল Attention deficit hyperactivity disorder (ADHD). এটি একটি neurodevelopmental disorder যা শিশুদের মধ্যে প্রচুর দেখা যায় এবং বড় হওয়ার পরও অনেক সময় এটা থেকে যায়।
যেসব শিশুরা ADHD তে ভোগে তাদের যেকোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে সমস্যা হয়, ইম্পালসিভ বিহেভিয়ার কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না (সেই কাজের কি ফল হবে তা না ভেবেই কাজটা করে ফেলে), অথবা অতিরিক্ত পরিমানে সক্রিয় হয়ে যায়।
যেসব শিশুরা ADHD তে ভোগে তাদের ভেতর কম আত্মমর্যাদা, বিভিন্ন সম্পর্কে সমস্যা এবং বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পারফরম্যান্সে সমস্যা দেখা যায়। এইসব লক্ষন বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে, তবে কারো কারোর ক্ষেত্রে বড় বয়সেও এই সমস্যাগুলো থেকে যায় এবং কখনই পুরোপুরি সারে না। তবে বিভিন্ন পদ্ধতির দ্বারা এই সব সমস্যার সমাধান করা এদের শেখানো হয়। এলোপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে ADHD কে সারানো যায় না, তবে লক্ষনগুলো কম রাখতে সাহায্য করে। ওষুধ ও ব্যবহারিক পরিবর্তন হল চিকিৎসার অঙ্গ।
তবে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমে ADHD কে পুরোপুরি সারানো যায়, প্রথম থেকে চিকিৎসা শুরু হলে খুব ভালো ফলাফল দেখা যায়।
কখন বলব এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতা-
যখন শিশুর চঞ্চলতার কারণে সে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় (পড়ে যাওয়া, আঘাত পাওয়া ইত্যাদি), অন্যের ক্ষতির কারণ হয়, প্রায়ই এমন আচরণ করে (জিনিসপত্র ভাঙা, অযথা ছোটাছুটি করে অন্যের কাজে বাধা দেওয়া ইত্যাদি) কিংবা শিশুর সামাজিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় (যেমন চঞ্চলতার কারণে কেউ তার সঙ্গে মেশে না, খেলে না এবং তাকে এড়িয়ে চলে), তখন সেই চঞ্চলতাকে অতিচঞ্চলতা বা ADHD বলে।
এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতা কেন হয় ?
বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত এ ডি এইচ ডি ঠিক কী কারণে হয় সেকথা বিশদভাবে নির্ধারন না করতে পারলেও একথা বুঝতে পেরেছেন যে, নিউরোট্রান্সমিটার-এর সক্রিয়তা নিম্নমাত্রায় থাকার ফলে মস্তিষ্ক সঠিক সংবাদ গ্রহণ করতে পারছে না। এই নিউরোট্রান্সমিটার সঠিক সংবাদ না পাঠাতে পারলে মনোযোগ, আবেগ প্রশমন, সংগঠিত চিন্তাধারা এবং উচিত-অনুচিত বোঝার শক্তি থাকে না। যার ফলে ব্যবহারে অসমানতা পরিলক্ষিত হয়।
এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতা এর সমস্যা নিম্নলিখিত কারণে উৎপন্ন হয় –
@@@ #বংশগত কারণ–
বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে, ৮০ শতাংশ রোগীর এই সমস্যা তাঁদের জেনেটিক কাঠামোর থেকে উৎপন্ন হয়েছে।
@ পরিবেশজনিত সমস্যা– দেখা গেছে যে, যদি কোনও গর্ভবতী মহিলা সিগারেট বা মদ খান, সেক্ষেত্রে তাঁদের শিশুদের এ ডি এইচ ডি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
@ মানসিক কারণ– একথাও প্রমাণিত হয়েছে যে, যদি দীর্ঘদিন ধরে শিশুরা কোনও কারণে অযত্নের সম্নুখীন হতে বাধ্য হয় তাহলে তাঁদের মধ্যে এ ডি এইচ ডি এর সমস্যা উৎপন্ন হয়।
@ ব্যবহারজনিত সমস্যা– কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, শিশুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও মানসিক যাতনার কারণেও শিশুদের মধ্যে এ ডি এইচ ডি-র সমস্যা উৎপন্ন হয়।
যা দেখে বোঝা যায় শিশুটি এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতা-
কোনো বিষয়ের প্রতি বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা।
সারাক্ষণ ছোটাছুটি করা, চিন্তাভাবনা না করে হঠাৎ কিছু করে ফেলা।
স্থির হয়ে বসে থাকতে না পারা।
বই-কলম প্রায়ই হারিয়ে ফেলা।
লাফিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া।
প্রশ্ন শোনার আগে জবাব দেওয়া।
পড়ালেখা এমনকি খেলাধুলায় মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা।
বড়দের কাজে বা কথার মধ্যে বাধা দেওয়া।
একসঙ্গে অনেক কিছু করার চেষ্টা করা, তবে কোনোটাই শেষ করতে না পারা।
অতিচঞ্চলতার এই লক্ষণগুলো যদি সাত বছরের কম বয়সী শিশুর মধ্যে কমপক্ষে ছয় মাস ধরে দেখা যায় এবং এ কারণে যদি তার পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হতে থাকে, তখন সেটিকে এডিএইচডি বলা হয়।
এ ডি এইচ ডি (ADHD) বা অতিচঞ্চলতায় করণীয়-
যদি শিশুর মধ্যে অতিচঞ্চলতার লক্ষণ থাকে, তাহলে একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
শিশুর জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন। বাড়ির সবাই সঠিক নিয়ম মেনে চলুন। যেমন নির্দিষ্ঠ সময়ে ঘুমানো, সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া ও খেলার সময়ে খেলা ইত্যাদি।
শিশুকে কোনো নির্দেশ দিলে সেটি তাকে বুঝিয়ে বলবেন। রূঢ় আচরণ করবেন না।
শিশুর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, কখনো তাকে পুরস্কৃত করুন।
শিশুর খাদ্যতালিকায় কৃত্রিম রং ও মিষ্টির পরিমাণ কমিয়ে তাজা ফলমূল যুক্ত করুন।
চিকিৎসার মাধ্যমে ADHD কে পুরোপুরি সারানো যায়, তাই প্রথম থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শুরু করুন। বাচ্চাকে সুস্থ রাখেন।