01/03/2024
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (Irritable bowel syndrome or IBS)
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম সংক্ষেপে যাকে বলা হয় আইবিএস (IBS)। এটি বৃহদন্ত্রের কার্যক্রমের একটি সাধারণ রোগ। সাধারণত মহিলারা পুরুষদের চেয়ে এ সমস্যায় বেশি ভোগেন। এক্ষেত্রে পেট কামড়ানো, পেট ব্যথা, পেটে গ্যাস হওয়া, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা উভয় সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। আইবিএস হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা যা রোগীকে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ভিতবে আইবিএস এর জন্য আন্ত্রিক টিস্যুর কোনো পরিবর্তন হয় না বা কোলোরেক্টাল ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায় না।
প্রকারভেদঃ (Type)
আইবিএস সাধারণত: তিন প্রকার। যথা-
১. পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া প্রধান (Diarrhoea predominant) আইবিএস।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য প্রধান (Constipation predominant) আইবিএস।
৩. কখনও পাতলা পায়খানা কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য কেন্দ্রিক (Alternating stool pattern) আইবিএস।
কারণঃ (Cause)
এ রোগের সঠিক কারণ এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। তথাপি কোন একটা মাত্র নির্দিষ্ট কারণ এ রোগের জন্য দায়ী নয়।
১. এটি অন্ত্রের কার্যকারিতার সমস্যা অর্থাৎ বৃহদান্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটলে এ সমস্যা দেখা দেয়। তবে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বৃহদান্ত্রে কোনো ধরণের গাঠনিক ত্রুটি বা অসামঞ্জস্য দেখা যায় না।
২. মানসিক ও সামাজিক সমস্যাঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও মানসিক রোগ মানুষের পৌষ্টিক নালীর স্বাভাবিক গতিকে পরিবর্তন করে। এ সমস্ত মানসিক ও সামাজিক সমস্যার মধ্যে অতিরিক্ত চিন্তা-ভাবনা, অবসন্নতা, আতঙ্কিত হওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য।
৩. পৌষ্টিক নালীর স্বাভাবিক গতির পরিবর্তন পৌষ্টিক নালীর স্বাভাবিক গতির পরিবর্তনের কারণে সাধারণত আইবিএস এর রোগীরা ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এসে থাকেন।
৪. পৌষ্টিক নালীর অস্বাভাবিক সংবেদনশীলতা।
৫. পৌষ্টিক নালীর অভ্যন্তরীন সমস্যাঃ শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ রোগীর আইবিএস রোগটি সাধারণত পৌষ্টিক নালীর প্রদাহ হওয়ার পরবর্তী সময়ে দেখা দেয়।
৬. অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় এ রোগটির জন্য তার দৈনন্দিন জীবনের কতগুলো খাবার প্রধানত দায়ী। যেমন- দুধ, দুধের তৈরী খাবার (মিষ্টি ও মিষ্টান্ন), শশার সালাদ, গম ও গমের তৈরী বিভিন্ন প্রকার খাবার, অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার।
মশলাদার খাবার, কফি, চকলেট, কোমল পানীয় ইত্যাদি; ৭. খাবারের পরিমাণও এ রোগে অস্বস্তির কারণ। এক সাথে বেশি পরিমাণ খাবার খাওয়াও এ রোগের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়।
৮. সেরোটোনিন ও গ্যাস্ট্রিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার এর প্রভাবে উক্ত সমস্যার সৃষ্টি হয় বলে ধারণা করা হয়।
৯. আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া 'মাইক্রোফ্লোরা" এর পরিবর্তন।
১০. আন্ত্রিক প্রদাহ।
১১. খাদ্যনালী থেকে মস্তিষ্কে এবং মস্তিষ্ক থেকে খাদ্যনালীতে যে স্নায়বিক সংকেতগুলো আসা যাওয়া করা জরুরী, সে পথের কোথাও কোনো বিঘ্ন ঘটলে।
১২. মেয়েদের মাসিক চলাকালীন সময়ে হরমোনের প্রভাবেও কখনো কখনো আইবিএস এর উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে।
১৩. বংশগত কারণেও হতে পারে।
লক্ষণ (Symptom)
আইবিএস প্রকৃত অর্থে কোনো রোগ নয়, এটি কতগুলো লক্ষণের সমষ্টি।
পরিপাকতন্ত্রের লক্ষণ (Gastrointestinal feature)
১. প্রায়ই পেটে কামড় বা মোচড় দিয়ে দিনে ৩-৪ বার নরম, পিচ্ছিল পায়খানা হওয়া।
৩. প্রায়ই পেটের ভিতরে শব্দ অনুভূত হওয়।
২. পায়খানার ধরণে পরিবর্তন; অর্থাৎ কখনও ডায়রিয়া কখনও কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা কখনো দুটোই হওয়া।
৪. খাওয়ার পর বদহজম হওয়া বা কিছু খেলেই অদ্বন্তি ভাব ও গ্যাস হওয়া।
৫. খাবার পরই প্রচন্ড পায়খানার বেগ হওয়া, পেটে মোচড় দেওয়া ও ব্যথা অনুভূত হওয়া। সাধারণত মলত্যাগের পর ব্যথা সেরে যায়।
৬. হঠাৎ করেই পায়খানার বেগ হয়ে তা তীব্র হয়ে যাওয়া।
৭. মলত্যাগের পরও পেট পরিষ্কার হয়নি এমন অনুভূত হওয়া।
তবে এ রোগে এত সমস্যার পরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে অস্ত্রে তেমন কোনো অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায় না।
পরিপাকতন্ত্রের বাইরের লক্ষণঃ (Non-gastrointestinal feature)
ক) গাইনিকোলজিক্যাল (Gynaecological)
১. ব্যথাযুক্ত ঋতুস্রাব (Dysmenorrhoea)।
২. যৌনসঙ্গম পরবর্তী ব্যথা (Dyspareunia)।
৩. মেয়েদের মাসিকস্রাব আরম্ভের সময়ে মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা।
খ) মূত্রতন্ত্রীয় (Urinary)।
১. বারবার প্রস্রাবের বেগ হওয়া (Frequency)।
২. হঠাৎ করে প্রস্রাবের তীব্রবেগ (Urgency)।
৩. রাত্রিকালে অতিরিক্ত প্রস্রাব (Nocturia)।
৪. মূত্রথলিতে মূত্র রয়ে গেছে এমন অনুভূতি।
গ) অন্যান্য (Others)
১. পিঠে ব্যথা (Back pain)।
২. মাথা ব্যথা (Headache)।
৩. মুখের দুর্গন্ধ, মুখে অপ্রীতিকর স্বাদ।
৪. ঘুমের সমস্যা।
৫. অবসাদ (Fatigue)।
পরামর্শঃ
সাধারণত, খাদ্য ও দৈনন্দিন কাজকর্মে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আইবিএসজনিত সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যেমন-
১. কফি, চা, সোডা পরিহার করতে হবে।
২. প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে, যেমন- তাজা ফল, শাক সবজি, বাদাম, শস্য জাতীয় খাবার খেতে হবে।
৩. ধূমপান বর্জন করতে হবে।
৪. দুধ ও পনির জাতীয় খাবার কমাতে হবে।
৫. একেবারে বেশি না খেয়ে অল্প করে বারে বারে খাবেন।
৬. কোন খাবার খেলে আপনার আইবিএস এর সমস্যা বাড়ে তা স্মরণ রাখলে আইবিএস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে।
৭. সারাদিনের কাজের পর বা মানসিক চাপ দূর করার জন্য কিছু সময় বিশ্রাম গ্রহণ করুন।
৮. যদি ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে থাকেন তাহলে তা অন্য কোন উৎস থেকে নিতে পারেন; যেমন- ব্রকলি, পালং শাক, শালগম, টক দই, কাটাসহ স্যামন মাছ, সামুদ্রিক সার্ডিন মাছ, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট ইত্যাদি খেতে পারেন।
👉👉আরো বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন 01316-340450.অথবা 01827974027