
16/08/2025
আপনি কি জানেন, আপনার শরীরের ওজন যখন মাত্র ৪৫০ গ্রাম বাড়ে, তখন হাঁটার সময় আপনার হাঁটুর জয়েন্টে প্রায় ৪ কেজি অতিরিক্ত চাপ পড়ে!
আমরা ভাবি, বয়স ৪০ পেরোলেই শরীর ভাঙতে শুরু করবে, জয়েন্টে ব্যথা হবে আর বুড়ো হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। The Diary of a CEO পডকাস্টে অর্থোপেডিক সার্জন এবং বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ডক্টর ভন্ডা রাইট বলেছেন, ৭০ বছর বয়সেও আপনার থাইয়ের মাসল হতে পারে একজন ৪০ বছরের অ্যাথলেটের মতো শক্তিশালী।
ডক্টর রাইট বলছেন, বয়স বাড়ার সাথে সাথে শরীর দুর্বল হয়ে যাবে - এই ধারণাটি একটি মাইন্ড ভাইরাস। এই ধারণাটি তৈরি হয়েছে এমন মানুষদের ওপর গবেষণা করে, যারা সারাজীবন নিষ্ক্রিয় জীবন কাটায়। বাস্তবতা হলো, আমাদের বার্ধক্যের ৭০-৯০% নির্ভর করে আমাদের লাইফস্টাইল এবং পছন্দের ওপর, আমাদের জিনের ওপর নয়।
আমাদের গড় আয়ু হয়তো ৮০-৮৫ বছর, কিন্তু আমাদের Health Span মাত্র ৬৩ বছর। এর মানে, জীবনের শেষ ২০-২২ বছর আমরা নানা রকম রোগে ভুগে কাটাই। ডক্টর রাইটের মতে, 40s হলো স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার শেষ সুযোগ। এই বয়সে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সুস্থ থাকতে পারবেন।
ডক্টর রাইট তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একজন ক্যানসার নার্স হিসেবে। তিনি একটি ভোরের গল্প বলেন, যেখানে এক মৃত্যুপথযাত্রী নারী শুধু তার বোনের বিয়ের পোশাক দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তার বোন পুরো পরিবারসহ বিয়ের সাজে হাসপাতালে এসেছিলেন তাকে শেষ দেখা দেখাতে। সেই ভোরে জীবন ও মৃত্যুর সেই মেলবন্ধন দেখে ডক্টর রাইট বোঝেন যে, মানুষের শুধু রোগের চিকিৎসা করাই যথেষ্ট নয়, তার পুরো জীবনটাকেই যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। এই ঘটনাই তাকে একজন Whole Person ডাক্তার হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
বিজ্ঞান বলছে, ৩০ বছর বয়সের মধ্যে আমাদের শরীরের হাড় এবং মাংসপেশির ঘনত্ব সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এরপর থেকে, যদি আমরা সক্রিয়ভাবে এর যত্ন না নিই, তাহলে তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অর্থাৎ, ৩০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিটি দিনই আপনাকে হয় শরীরকে ধরে রাখার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে, অথবা ক্ষয়কে মেনে নিতে হবে।
ডক্টর রাইট তিনটি MRI স্ক্যানের ছবি দেখান:
৪০ বছর বয়সী একজন ট্রাইঅ্যাথলেটের থাই: ঘন, শক্তিশালী এবং চর্বিহীন মাংসে পরিপূর্ণ।
৭৪ বছর বয়সী একজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তির থাই: মাংসপেশি প্রায় নেই বললেই চলে, পুরোটাই সাদা চর্বিতে ঢাকা।
৭০ বছর বয়সী একজন সাধারণ ট্রাইঅ্যাথলেটের থাই: অবিশ্বাস্যভাবে ৪০ বছর বয়সী অ্যাথলেটের মতোই শক্তিশালী এবং চর্বিহীন!
সঠিক লাইফস্টাইলের মাধ্যমে আপনি বয়সকে শুধু একটি সংখ্যায় পরিণত করতে পারেন।
সারাদিন এক জায়গায় বসে কাজ করার অভ্যাস আমাদের মধ্যে ৩৩টিরও বেশি ক্রনিক রোগের জন্ম দেয়, যার মধ্যে আছে হার্টের সমস্যা, স্ট্রোক, ক্যানসার এবং ডায়াবেটিস। ডক্টর রাইট একে বলছেন Sedentary Death Syndrome. এর থেকে বাঁচার উপায় হলো সারাদিন সচল থাকা। ফোনে কথা বলার সময় হাঁটুন বা প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার উঠে দাঁড়ান।
শরীরকে চিরতরুণ রাখার FACE ফর্মুলা:
F (Flexibility): শরীরকে নমনীয় রাখতে প্রতিদিন স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করুন।
A (Aerobic): হার্টকে সুস্থ রাখতে এবং চর্বি কমাতে কার্ডিও (দৌড়ানো, সাইক্লিং) করুন।
C (Carry): ভারী ওজন তুলুন। শক্তিশালী মাংসপেশিই হলো দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি।
E (Equilibrium): ভারসাম্য রক্ষার ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন দাঁত ব্রাশ করার সময় এক পায়ে দাঁড়ানোর মতো সহজ অভ্যাস আপনার পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কমাবে।
আপনার শরীরের ওজন যখন মাত্র ১ পাউন্ড (৪৫০ গ্রাম) বাড়ে, তখন হাঁটার সময় আপনার হাঁটুর জয়েন্টে ৯ পাউন্ড (প্রায় ৪ কেজি) অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এর মানে হলো, মাত্র কয়েক কেজি ওজন কমালেই আপনার জয়েন্টের ব্যথা ড্রামাটিকালি কমে আসতে পারে।
আমাদের লক্ষ্য শুধু ওজন কমানো হওয়া উচিত নয়, বরং শরীরের গঠন পরিবর্তন করা। ডক্টর রাইট বলেন, শুধু ক্যালরি কমিয়ে ডায়েট করলে আমরা ২৫-৫০% পর্যন্ত মাংসপেশি হারাই। তাই চর্বি কমানোর পাশাপাশি মাংসপেশি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
চিনি আমাদের শরীরে মারাত্মক প্রদাহ (inflammation) সৃষ্টি করে, যা ক্রনিক রোগের মূল কারণ। এটি আমাদের শরীরের প্রোটিনগুলোকে ক্যারামেলাইজড করে ফেলে, যা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ডক্টর রাইটের মতে, চিনি বাদ দেওয়া স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রথম ধাপ।
শক্তিশালী হাড়ের জন্য শুধু দুধ বা ক্যালসিয়াম যথেষ্ট নয়। আপনাকে হাড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দৌড়ানো, লাফানো বা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামার মতো ইমপ্যাক্ট এক্সারসাইজ হাড়কে নতুন করে তৈরি হতে সংকেত পাঠায়। এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম গ্রহণ করাও জরুরি।
মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ায় নারীদের শরীরে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। জয়েন্টে তীব্র ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার (কাঁধ জমে যাওয়া), মাংসপেশি কমে যাওয়া এবং দ্রুত ওজন বাড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়ে নারীদের জন্য ভারী ওজন তোলা এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা অপরিহার্য।
ডক্টর রাইট বলেন, লম্বা সময় ধরে হালকা দৌড়ানোর চেয়ে ছোট ছোট স্প্রিন্ট অনেক বেশি কার্যকরী। সপ্তাহে মাত্র দু'দিন, ৩০ সেকেন্ডের জন্য আপনার সর্বোচ্চ গতিতে দৌড়ান এবং ২-৩ মিনিট বিশ্রাম নিন। এভাবে কয়েকবার করুন। এই পদ্ধতিটি সাধারণ HIIT (High-Intensity Interval Training) থেকেও ৪০% বেশি চর্বি গলাতে সাহায্য করে।