
05/08/2025
একই মাসে দুইবার মা! বিরল শারীরিক অবস্থার কারণেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন আরিফা সুলতানা!
ঘটনাটি ২০১৯ সালের। যশোরের ২০ বছর বয়সী তরুণী আরিফা সুলতানা এমন এক বিরল চিকিৎসাজনিত ঘটনায় পড়েন, যা শুধু দেশ নয়, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।
সবকিছু স্বাভাবিকভাবে শুরু হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি জন্ম দেন একটি পুত্রসন্তানের। সন্তান জন্মের পর সবাই ভেবেছিল মা ও নবজাতক এখন বিশ্রামে যাবেন এক প্রশান্ত সময়ে। কিন্তু ২৬ দিন পেরোতেই আচমকা শুরু হয় তীব্র পেটব্যথা—আরও একবার প্রসববেদনা। পরিবারের সদস্যরা হতবাক হয়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে এমন এক সত্য জানতে পারেন, যা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি—আরিফা আবারও মা হতে যাচ্ছেন! এবং এবার যমজ সন্তান—একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।
চিকিৎসকরা জানান, আরিফার শরীরে ছিল একটি 'দ্বৈত জরায়ু', যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে বলা হয় "Uterus Didelphys"—একটি অত্যন্ত বিরল শারীরবৃত্তিক অবস্থা। এই অবস্থায় নারীর শরীরে দুটি আলাদা জরায়ু গঠিত হয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ২,০০০ জন নারীর মধ্যে একজনের এমন জরায়ু থাকতে পারে। কিন্তু উভয় জরায়ুতে একই সময়ে গর্ভধারণের ঘটনা ঘটে প্রায় ২৫,০০০ জনে একজনের ক্ষেত্রে।
আরিফা কখনো গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাননি, ফলে প্রথম সন্তানের জন্মের সময় দ্বিতীয় গর্ভের অস্তিত্ব জানা সম্ভব হয়নি। যখন দ্বিতীয়বার প্রসবব্যথা শুরু হয়, তখনই ধরা পড়ে দ্বিতীয় জরায়ুতে গর্ভধারণের বিষয়টি। এরপর সফল সিজারিয়ানের মাধ্যমে যমজ সন্তানের জন্ম হয়—কোনো জটিলতা ছাড়াই।
এই ঘটনা শুধু চিকিৎসাবিদ্যার চোখে বিস্ময়কর নয়, বরং এক প্রাকৃতিক অলৌকিকতার নিদর্শনও বটে। একই নারীর শরীরে, মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে, দুটি আলাদা জরায়ু থেকে জন্ম নেয় তিনটি শিশু—এমন ঘটনা বিশ্বজুড়েই হাতে গোনা কয়েকটির মধ্যে একটি।
চিকিৎসকদের মতে, সময়মতো চিকিৎসা না পেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত। কিন্তু ভাগ্যক্রমে মা ও তিন শিশুই সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হলো, নারীর শরীর এক অভাবনীয় জটিলতা ও সম্ভাবনার আধার। আরিফা সুলতানার ঘটনাটি আজও চিকিৎসাশাস্ত্রে এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ হয়ে রয়েছে।
- সাইকোলজিক্যাল পাওয়ার