
07/08/2025
আমরা আসলে অলস না, আমাদের ব্রেইন আসলে এনার্জি সেইভ করতে চাওয়ার জন্য ডিজাইন করা।
মানবজাতি তার পুরোটা ইতিহাসে এনার্জি ডেফিসিটে ভুগেছে। আমাদের এনার্জি ডেফিসিটে থাকার সবচেয়ে বড় কারন কি কি একটু বলি।
১)আমাদের লিভার ম্যাক্সিমাম ১০০-১২০ গ্রাম গ্লাইকোজেন স্টোর করতে পারে, আর আমাদের ব্রেইন দিনে খরচ করে প্রায় ৪০০-৮০০ ক্যালরি। ফলে, না খেয়ে থাকা মানেই ব্রেইন এনার্জি ডেফিসিট হয়ে পড়া। ফলে ব্রেইন আপনাকে খেতে বাধ্য করবেই।
২)আমরাই একমাত্র প্রজাতি যারা নিজেদের শারীরিক গঠনের লিমিটের বাইরের অনেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছি। আমাদের শরীর উপযোগী ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিরক্ষীয়/ক্রান্তীয় অঞ্চলের জন্য, যার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা হবে ০-১০০০ মিটার। ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতার মরুভুমি বা -২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস শীতের মেরুবৃত্তীয় অঞ্চল/উপমেরুবৃত্তীয় অঞ্চলে আমাদের বাস করার কথা না। কিন্তু আমরা ঠিকই সেখানে বাস করি। ফলে আমাদেরকে নিজের শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এনার্জি ডেফিসিটে থাকতে হয়।
৩)আমাদের শরীর গ্লুকোজ বার্ন করে চলার জন্য এডাপ্টেড। ফলে বারবার আমাদের ব্লাড গ্লুকোজ ঠিক রাখার জন্য খেতে হয়।
৪)আমাদের একটা বডি ফ্যাট পার্সেন্টেজ শরীরে ধরে রাখতে হয় ফার্টিলিটির জন্য। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটার অপটিমাম-২৫-৩৩%, ছেলেদের ক্ষেত্রে ১০-১৮%। এর কম ফ্যাট শরীরে থাকলে আমরা যথেষ্ট স্টেরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারি না।
এই সমস্ত কারনে, এবং আমাদের ডিএনএতে থাকা খাদ্যাভাবের ভয়ের কারনে, আমরা যথাসম্ভব কম মুভমেন্ট করার জন্য ডিজাইন্ড। মানুষের শরীর চাইলে সুপারম্যারাথন করতে পারে, কিন্তু মানুষের মস্তিষ্ক সেটাকে ঘৃনা করে।
এজন্য আমাদের মধ্যে একটা টেন্ডেন্সি কাজ করে, কত কম পরিশ্রম করে আমরা বেশি খাবার(এখন এটা হয়ে গেছে টাকা) যোগাড় করতে পারি, এটা আমাদের জন্য একটা লাইফলাইন।
এজন্য, আমরা আসলে ব্যায়াম করতে চাই না।
কিন্তু ব্যায়াম না করলে কি হয়, সেইটাও তো একটু বোঝা দরকার।
মাত্র এক সপ্তাহ সম্পুর্ন শুয়ে বসে কাটালে আমাদের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স প্রায় ৭০০% বেড়ে যায়, যদিও ব্যাপারটা সাময়িক। কিন্তু ৮-১২ সপ্তাহ যদি কেউ উল্লেখযোগ্য চলাফেরা-ব্যায়াম ছাড়াই কাটিয়ে দেয়, তাহলে ব্যায়াম শুরু করার পরেও অনেক সপ্তাহ যাবত এই ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স স্বাভাবিকের প্রায় দ্বিগুন থেকে যায়।
কেন এত দ্রুত এমন হয়??
আসলে, এই প্রক্রিয়াটা আমাদের ব্রেইন অসম্ভব নিখুতভাবে ঘটায়। আপনি শরীরের যে অংশের মাসল যত কম কাজে লাগাবেন, সে অংশটা তত দ্রুত ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাবে। উদাহরন দেই, কারো একটা পা ভেঙ্গে গেলে তো ক্রাচে আটকে রাখা হয়। গবেষনায় দেখা গেছে, ক্রাচে আটকে রাখা পা সুস্থ পা টার চেয়ে দ্বিগুন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছে মাত্র এক সপ্তাহেই।
এই রকমভাবে, আমরা যত কম মুভমেন্ট করি, আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের মাসল তত বেশি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হতে থাকে।
মাসল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট না হওয়া পর্যন্ত সাধারনত আমাদের লিভার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হয় না।
তাই, ডায়বেটিস যদি কেউ এড়াতে চান, ওজন কমাতে চান বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স থেকে যদি বাচতে চান, অবশ্যই, আপনাকে যে কাজটা বাদ দেয়া যাবে না, তা হল ব্যায়াম।
আপনার ব্রেইন প্রোগ্রামড যেন আপনি কম মুভমেন্ট করেন। কিন্তু সেই কম মুভমেন্টের চেয়েও আমরা আসলে কম মুভমেন্ট করি৷ আমরা এত কম মুভমেন্ট করি যা পঞ্চাশ বছর আগে কল্পনাও করা সম্ভব ছিল না।
তাই আপনি অবশ্যই মুভ করবেন। শারীরিক পরিশ্রম আপনার কত বড় বন্ধু ছিল, যত বয়স বাড়বে তত ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
C