16/04/2023
সবকিছুরে পজিটিভ বলতে বাধ্য করাও এক ধরণের টক্সিসিটি। এইটারে বলে, টক্সিক পজিটিভিটি।
আমি আমার পছন্দের কথাও যেমন বলার অধিকার রাখি, অপছন্দের কথাও তেমন বলার অধিকার রাখি।
কোনকিছুর পক্ষে কথা বলার অধিকার রাখি, বিপক্ষে বলার অধিকারও রাখি।
চঞ্চল চৌধুরী থেকে শুরু করে শাকিব বিন রশিদসহ সকল লিবারেল সুশীলদের এবারের স্লোগান ছিলো, মঙ্গল শোভাযাত্রায় ইচ্ছা হলে যাবেন বা যাবেন না বাট এইটার বিরোধিতা করবেন না।
হোয়াই? আপনি ফেসবুকে এসে মঙ্গল শোভাযাত্রা আপনার ভালো লাগে বলতে পারবেন, তাইলে আমি কেন বলতে পারবো না যে মঙ্গল শোভাযাত্রা আমার ভালো লাগে না?
দেখেন, একজন বাংলাদেশি হিসেবে পহেলা বৈশাখ আমি ওউন করি। বৈশাখী মেলা আমার ভালো লাগে, বৈশাখের হালখাতা আমার ভালো লাগে, বৈশাখে লোকজন যে সাদা পাঞ্জাবী আর সাদা শাড়ি পরে ঘুরাফিরা করে, এইটাও আমার খুব ভালো লাগে।
আমার মনে আছে, ছোটবেলায় রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে পহেলা বৈশাখে বিকেল থেকেই গানের কনসার্ট শুরু হয়ে যেত, আমি ঐ কনসার্টগুলোতে গিয়েছিও।
গ্রামে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে একটা বিশাল অর্থনৈতিক যজ্ঞ চলে, লোকজন কেনাকাটা করে, ছেলে মেয়েরা সেজেগুজে রাস্তায় বের হয়, এইসব দৃশ্য দেখতেও তো আনন্দ লাগে, বলতে ইচ্ছা করে, আনন্দ ধারা বহিছে এই ভুবনে.....
বাট মঙ্গল শোভাযাত্রার ক্ষেত্রে এই ভালো লাগাটা কখনোই কাজ করে নাই। কারণ, প্রথমত, এই কালচারটা না হিন্দুদের কালচার, না মুসলিমদের কালচার, না বাঙালিদের কালচার।
দ্বিতীয়ত, অ্যাজ আ মুসলিম, আমি সব পাপ করতে পারি, বাট শিরকের পাপটা আমি করতে পারি না। আগেই বলেছি, আমি প্র্যাকটিসিং মুসলিম না, গান বাজনা, মেলায় যাওয়া নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই, তবে শিরক করা নিয়ে আমার সিরিয়াস সমস্যা আছে।
আমি যদি ভুল না করে থাকি, শুধুমাত্র আল্লাহ বাদে কারো কাছে মঙ্গল প্রত্যাশা করার কোন অনুমতিই ইসলামে নাই। এমনকি কোন ওলি, আউলিয়া, পীর মাশায়েখের কাছেও না। মুর্তি আর পুতুল তো বহু দূরের পথ।
এখন প্রশ্ন হলো, আপনি প্রেমিক প্রেমিকার কনসার্টে যাওয়ার মধ্যে সমস্যা দেখেন না, শোভাযাত্রার মধ্যে সমস্যা দেখেন কেন? কারণ, প্রেম করা, গান শোনা বা মেলায় যাওয়ার পাপ ক্ষমাযোগ্য, আল্লাহ মাফ করে দেন। বাট শিরকের গুণাহ হইলো প্লাস্টিকের মতো। ডিগ্রেডেবল না। এইটা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না, এবং এইটা তিনি বারবার সাবধান করে দিসেন।
কাজেই, একজন মুসলিম হিসেবে আমি যত পাপই করি, শিরকের পাপের ক্ষেত্রে আমি সেপ্সিটিভ। এবং এই পাপটা আমি যে কোন মূল্যে এড়াইতে চাইবো।
এখন প্রশ্ন হলো, মঙ্গল শোভাযাত্রায় আমি এটেন্ড করবো না, বাট সম্মান করতে সমস্যা কোথায়?
উত্তর হলো, কেন আমাকে সম্মান করতে হবে? আমি সম্মান না করলেই বা সমস্যা কোথায়?
এইটা কি হিন্দুদের কোন সংস্কৃতি? না। মুসলমানদের? না। বাঙালীদের? তাও না। তাইলে? একটা চারুকল্ ইউনিট থেকে শুরু করা কিছু লোকের উদ্ভট একটা প্রোগ্রাম, যার সাথে বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম মানুষের (হিন্দু, মুসলিম) কোন যোগ নাই, সেই প্রোগ্রামকে কেন আমার সম্মান করতে হবে?
সাকিব বিন রশিদ বলার চেষ্টা করলো, তুমি না যাবা, না যাও, তাই বলে বাঁধা দেওয়ার অধিকার তোমার নাই।
কী হাস্যকর ইনসিকিউরিটি!! কে কাকে কবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাইতে বাধা দিলো? আমি মঙ্গল শোভাযাত্রা পছন্দ করি না, আমার কাছে এইটা প্রবলেম্যাটিক লাগে, এই কথা বলা আর কাউকে যাইতে বাধা দেওয়া দুইটা এক জিনিস কবে থেকে হলো?
এই টক্সিক পজিটিভিটির ক্লাউনরা নিজেরাই যে একটা জনবিচ্ছিন্ন উৎসবকে চাপাইয়া দিয়ে আবার নিজেরাই ভিক্টিম সাজতেসে, এই হিপোক্রেসিটুকু করতে এদের লজ্জাও লাগে না?
0 comments